চাকরি পেতে এক তরুণকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁর শুধু ‘রাস্তা পেরোনোর’ পরামর্শ দেওয়ার ভিডিও ভাইরাল হলে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন তিনি৷ তবে জোনাথন জাহান নামের ওই তরুণ চাকরি পেয়েছেন, এখন তিনি বাসচালক৷
বিজ্ঞাপন
মাসের প্রথম দিকে প্যারিসে এলিসি প্রাসাদের সামনে জনতার সঙ্গে উন্মুক্ত আলোচনার সময় ওই তরুণ অভিযোগ করেন মাক্রোঁর কাছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার বয়স ২৫ বছর৷ আমি বিভিন্ন জায়গায় আমার সিভি পাঠিয়েও কোনো ফল পাচ্ছি না৷’’
জবাবে মাক্রোঁ তাঁকে বলেন, হসপিটালিটি ও নির্মাণ কাজের মতো খাতগুলোতে সহজেই চাকরি খুঁজে পাওয়া সম্ভব৷ বলেন, ‘‘যদি আপনার সত্যিকারের ইচ্ছা থাকে তাহলে অসুবিধা হবে না, রেস্টুরেন্ট, কন্সট্রাকশন, এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে আমি গিয়ে জনবলের অভাব দেখিনি৷’’
তরুণকে ক্যাফে ও রেস্টুরেন্টের এলাকা প্যারিসের মঁপারনাসে খোঁজ নেয়ার পরামর্শও দেন৷ কাজ খুঁজে পাওয়ার নিশ্চয়তা দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘রাস্তা পেরোলেই আমি কাজ খুঁজে দিতে পারব৷’’
আকর্ষণীয় কয়েকজন সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান
শুধু সৌন্দর্য্য নয়, আচরণ এবং ব্যক্তিত্বও মানুষের চেহারায় ফুটিয়ে তোলে আকর্ষণের ছাপ৷ নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান জায়গা করে নিচ্ছেন বিশ্ববাসীর মনে৷ এমন কয়েকজনকে নিয়েই আজকের ছবিঘর৷
ছবি: Getty Images/AFP/STR
কোলিন্ডা গ্রাবার-কিটারোভিচ
বিশ্বকাপ ফুটবলে গ্যালারিতে সবার নজর কেড়েছিলেন ক্রোয়েশিয়ার সুন্দরী প্রেসিডেন্ট কোলিন্ডা গ্রাবার-কিটারোভিচ৷ ২০১৫ সাল থেকে তিনি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন৷ তবে তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বর্ণাঢ্য৷ প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে কাজ করেছেন ইউরোপ বিষয়কমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে৷ ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘে ক্রোয়েশিয়ার দূত ছিলেন কোলিন্ডা৷
ছবি: Reuters/D. Sagolj
ভ্লাদিমির পুটিন
১৯ বছর ধরে কখনও সরকারপ্রধান, কখনও রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন সাবেক এই রুশ গোয়েন্দা৷ ১৯৯৯ থেকে ২০০০ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী, ২০০০ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি, ২০০৮ থেকে ২০১২ পর্যন্ত আবার প্রধানমন্ত্রী, এবং এরপর থেকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন পুটিন৷ ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনের পর বিশ্ব রাজনীতিতে রাশিয়া যে অবস্থান খুইয়েছিল, তার অনেকটাই পুনরুদ্ধার করেছেন পুটিন৷
ছবি: Reuters/G. Dukor
এমানুয়েল মাক্রোঁ
ফ্রান্সের ইতিহাসে সবচেয়ে কমবয়সি প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ৷ ২০১৭ সালে মাত্র ৩৯ বছর বয়সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি৷ তরুণ রাজনীতিবিদ হলেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাজনীতিতে তাঁর ভূমিকা প্রশংসা পেয়েছে বিশ্বনেতাদের কাছে৷ বিশ্বকাপ ফাইনালে ফ্রান্সের খেলা চলাকালীন সময়ে ভিআইপি গ্যালারিতে মাক্রোঁ’র উত্তেজনা নজর কেড়েছে অনেকের৷
ছবি: Reuters/C. Platiau
জাস্টিন ট্রুডো
৪৪ বছর বয়সে ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে সাড়া ফেলেছিলেন ট্রুডো৷ সুদর্শন এই তরুণের মন্ত্রিসভাকে বিশ্বের সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় মন্ত্রিসভা হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়৷ তাঁর মন্ত্রিসভায় আদিবাসী ছাড়াও বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের ক্যানাডিয়ান পেয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব৷ এছাড়াও বৈশ্বিক বিভিন্ন ইস্যুতে তাঁর প্রগতিশীল চিন্তাভাবনাও তাঁকে তরুণদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় করে তুলেছে৷
ছবি: picture-alliance/empics/A. Wyld
বরুট পাহো
২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত স্লোভেনিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পর ২০১২ থেকে দেশটির প্রেসিডেন্ট পাহো৷ অনেকটা আনুষ্ঠানিক পদ হলেও প্রেসিডেন্ট হিসেবে পাহো বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখার চেষ্টা করে চলেছেন৷ ইউক্রেন সংকট নিরসন এবং ট্রাম্প-পুটিন বৈঠকে তাঁর আন্তরিক চেষ্টা ইউরোপের রাজনীতিতে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছিল৷
ছবি: Reuters/S. Zivulovic
এনরিকে পেনিয়া নিয়েটো
২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মেক্সিকোর প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে ছিলেন সুদর্শন এই মেক্সিকান৷ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের একচেটিয়া আধিপত্য ভাঙা, জ্বালানি খাত আধুনিকায়ন, রাষ্ট্রীয় শিক্ষা ব্যবস্থার অর্থায়নসহ নানা উদ্যোগে মেক্সিকোর তরুণদের মধ্যে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/Zumapress
6 ছবি1 | 6
তবে কাজ পাওয়ার জন্য মঁপারনাস এলাকায় যেতে হয়নি জাহানকে৷ খণ্ডকালীন কাজের একটি সংস্থা তার সঙ্গে যোগাযোগ করে বাসচালকের চাকরির প্রস্তাব দেয়৷ হর্টিকালচারের ছাত্র জাহান তাতে রাজি হয়ে যান৷
ফরাসি সম্প্রচারমাধ্যম বিএফএম টিভিকে তিনি বলেছেন, ‘‘আমি খুশি৷ কারণ আমি কাজে যাচ্ছি, যা আমি পছন্দ করি৷’’
এর আগে ২০টি চাকরির জন্য আবেদন করে ব্যর্থ হয়েছেন বলে জানান তিনি৷
ফ্রান্সে এখন বেকারত্বের হার ৯ শতাংশ৷ এই প্রেক্ষাপটে চাকরিপ্রত্যাশী এক তরুণের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের ওই কথোপকথন ভালোভাবে নিতে পারেননি অনেকে৷
তাদের ওই কথোপকথনের ভিডিও মুহূর্তের মধ্যেই অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে৷ মাক্রোঁ সাধারণ জনগণ থেকে ‘অনেক দূরে' অবস্থান করাতেই এ ধরনের কথা বলতে পেরেছেন বলে অভিযোগ করা হয়৷
সোশ্যালিস্ট এমপি ইয়ান বোঁসাঁ বলেন, আসল সমস্যার দিকে নজর না দিয়ে প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ সেই তরুণকেই অপরাধী প্রমাণ করার চেষ্টা চালিয়েছেন৷
এক টুইটার ব্যবহারকারী লেখেন, মাক্রোঁ ফরাসিদের বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছেন৷ আরেকজন প্রশ্ন তোলন, ‘‘মাত্র ৩০ সেকেন্ডে কীভাবে একজন ব্যক্তি এতটা অবমাননা, সমানুভূতির অভাব ও অজ্ঞতা দেখাতে পারেন?’’