জার্মান চ্যান্সেলার ম্যার্কেল, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ সহ ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বললেন জো বাইডেন।
বিজ্ঞাপন
ডনাল্ড ট্রাম্প হার স্বীকার করেননি, বাইডেনকে তিনি প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট বলেও মানছেন না। এখনো সরকারিভাবে ফলাফল প্রকাশিত হয়নি। তা সত্ত্বেও অবিচলিত বাইডেন। তিনি বলেছেন, তাঁর প্রেসিডেন্ট হওয়া কেউ আটকাতে পারবে না। ট্রাম্পের চলে যাওয়া ও তাঁর হোয়াইট হাউজে প্রবেশের পথে কোনো বাধা থাকবে না বলেই তিনি মনে করছেন। ট্রাম্পের অনমনীয় মনোভাবকে 'কিঞ্চিত অস্বস্তি' বলে অভিহিত করেছেন তিনি।
আগামী ২০ জানুয়ারি বাইডেনের দায়িত্ব নেয়ার কথা। তার আগেই তিনি কার্যত কাজ শুরু করে দিয়েছেন। করোনা নিয়ে টাস্ক ফোর্স গঠন করেছেন। কথা বলতে শুরু করেছেন বিভিন্ন রাষ্ট্র নেতাদের সঙ্গে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। তার মধ্যে ম্যার্কেল, মাক্রোঁ, জনসন আছেন।
জার্মানির চ্যান্সেলার ম্যার্কেলের অফিস থেকে জানানো হয়েছে, তিনি ফোনে জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিসের সঙ্গে কথা বলেছেন। ট্রাম্পের আমলে অ্যামরিকার সঙ্গে জার্মানির সম্পর্ক খুব একটা মধুর ছিল না। জার্মান নেতারা স্পষ্টভাবেই জানিয়েছিলেন, তাঁরা চান বাইডেন জিতুন। ম্যার্কেলের মুখপাত্র জানিয়েছেন, জার্মান চ্যান্সেলার দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বাইডেনের আমলে দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে সম্পর্ক স্থাপিত হবে।
জো বাইডেনের জীবনের গল্প
২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের জীবনের গল্প দেখুন এই ছবিঘরে৷
ছবি: Kevin Lamarque/Reuters
জন্ম ও পরিবার
১৯৪২ সালের ২০ নভেম্বর স্ক্র্যানটন পেনসিলভ্যানিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন জোসেফ রবিনেট বাইডেন জুনিয়র বা আজকের ‘জো বাইডেন’৷ জীবনের প্রথমভাগ বাইডেন কাটান দাদা-দাদির সাথে৷ পরিবারে আর্থিক অনটন থাকলেও বাইডেন স্কুলজীবনে তুখোড় ফুটবল, বেসবল খেলোয়াড় ছিলেন, যা পরে বিশ্ববিদ্যালয়েও তাঁকে জনপ্রিয় করে তোলে৷ জানা যায়, ছোটবেলায় বাইডেন কথা বলতে গেলে তোতলাতেন, যা কবিতা আবৃত্তি করার মাধ্যমে পরে নিয়ন্ত্রণে আনেন তিনি৷
ছবি: Handout Joseph Biden/AFP
তারুণ্য
প্রথমে ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক হবার পর আইনে স্নাতকোত্তর স্তরের পড়াশোনা করতে বাইডেন পাড়ি দেন নিউ ইয়র্কের সাইরাক্যুজ বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ সেখানেই তাঁর পরিচয় নেলিয়া হান্টারের সাথে৷ ১৯৬৬ সালে নেলিয়া ও বাইডেন বিয়ে করেন৷
ছবি: Keystone/dpa/picture-alliance
রাজনীতিতে পদার্পণ
১৯৭২ সালে মাত্র ২৯ বছর বয়েসে ডেলাওয়ারে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান সেনেটর কেলেব বগসের বিরুদ্ধে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে লড়েন বাইডেন৷ অর্থাভাব, রাজনীতির ময়দানে অনভিজ্ঞতা সত্ত্বেও পারিবারিক সহায়তা ও মাঠপর্যায়ে প্রচার চালিয়ে গবসকে পরাজিত করেন বাইডেন৷ সেখান থেকেই ডেমোক্র্যাট হিসাবে তাঁর উত্থানের সূত্রপাত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Keystone
পারিবারিক বিপর্যয়
সেনেটর নির্বাচিত হবার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বাইডেনের জীবনে আসে বিপর্যয়৷ একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় তাঁর স্ত্রী নেলিয়া ও কন্যা নাওমির মৃত্যু হয়৷ মারাত্মকভাবে জখম হন তাঁর দুই পুত্রও৷ এই বিপর্যয়ের কারণে রাজনীতি ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন বাইডেন৷ কিন্তু দলের জোরাজুরিতে হাসপাতালেই সেনেটর পদে শপথগ্রহণ করেন বাইডেন৷ পরে ১৯৭৭ সালে জিল জেকবসকে বিয়ে করেন বাইডেন৷ তাঁদের একটি কন্যা রয়েছে, নাম অ্যাশলি৷
ছবি: Kevin Larkin/AFP/Getty Images
রাজনীতির চেয়ে পরিবারকে প্রাধান্য
বাইডেনের পারিবারিক জীবনে আবার বিপর্যয় আসে ২০১৫ সালে৷ ভাইস-প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ব্রেন টিউমারজনিত জটিলতায় তিনি তাঁর পুত্র জোসেফকে হারান৷ পরের বছর ২০১৬ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসাবে লড়ার পরিকল্পনা থাকলেও পরিবারকে সময় দিতে নির্বাচন থেকে সরে আসেন বাইডেন৷
ছবি: Kevin Lamarque/REUTERS
তবুও উত্তরণ
এর আগে ১৯৮৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রাথমিকভাবে অংশগ্রহণ করলেও প্রাইমারি নির্বাচনের আগেই নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন৷ কিন্তু সেনেটর হিসাবে কাজ করে যান তিনি৷ ২০০৮ সালেও প্রথমে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন তিনি৷ জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রতীক হিসাবে ২০১৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাঁকে ‘প্রেসিডেনশিয়াল মেডাল অফ ফ্রিডম’ প্রদান করেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Kamm
গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ
রাজনীতির শুরু থেকেই বাইডেন ক্রেতা সুরক্ষা ও পরিবেশবিষয়ক ইস্যু নিয়ে সোচ্চার থেকেছেন৷ ২০১০ সালের ‘পেশেন্ট প্রোটেকশান অ্যান্ড অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার’ আইনের বাস্তবায়নে তাঁর ভূমিকার কথা বারবার আলোচিত হয়েছে৷ শুধু তাই নয়, ১৯৯২ সাল থেকেই আইনি কড়াকড়ি বাড়ানো ও সাজার মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে তাঁর অবস্থান তিনি স্পষ্ট করেছেন, যা অনেক ক্ষেত্রেই তাঁর দলের নীতির সাথে পুরোপুরি খাপ খায়নি৷
ছবি: Jim Watson/AFP/Getty Images
বাইডেনকে ঘিরে বিতর্ক
১৯৮৮ সালের নির্বাচনি প্রচারের সময় বাইডেনের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ লেবার পার্টির নিল কিনকের বক্তব্য চুরির অভিযোগ ওঠে৷ এছাড়া অ্যামেরিকার দক্ষিণাঞ্চলের বর্ণভিত্তিক বিভেদপন্থিদের সাথে সুর মিলিয়ে আদালতের রায়ের বিরোধিতা করে সমালোচিত হন বাইডেন৷ ২০১২ সালেও সমকামী জুটিদের বিয়ের অধিকারের পক্ষে কথা বলে বাইডেন শিরোনামে উঠে আসেন৷
ছবি: Carolyn Kaster/AP/picture alliance
যৌন নির্যাতনের অভিযোগ
২০২০ সালের মার্চ মাসে টারা রিড অভিযোগ আনেন যে ১৯৯৩ সালে জো বাইডেন তাঁকে যৌন নির্যাতন করেছিলেন৷ সেনেটর থাকাকালীন বাইডেনের অফিসে সহযোগী হিসাবে কাজ করতেন রিড৷ ১৯৯৩ সালে বিষয়টি আলোচিত হবার পর নতুন করে এবছর আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রেক্ষিতে সেটি আলোচনায় উঠে আসে৷ এই অভিযোগ বাইডেন উড়িয়ে দিলেও আরো কয়েকজন নারী বাইডেনের বিরুদ্ধে অসঙ্গত আচরণের অভিযোগ এনেছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Locher
বাইডেনের যত নাম
গণমাধ্যমে বাইডেনের নামের সাথে জুড়েছে নানা ধরনের বিশেষণ৷ জীবনের গোড়ার দিকের অর্থনৈতিক বাস্তবতার কারণে কখনো তাঁর নাম হয়েছে ‘মিডল ক্লাস জো’৷ ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণের সময় বয়সের কারণে ডনাল্ড ট্রাম্প তাঁকে তাচ্ছিল্য করে বলেন ‘স্লো জো’ ও ‘স্লিপি জো’৷
ছবি: Jim Watson/AFP/Getty Images
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ
২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসাবে অংশগ্রহণ করেন জো বাইডেন৷ তার পক্ষে ব্যাপকভাবে প্রচারে নামেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা৷ টুইটার-ইন্সটাগ্রামে পাশে দাঁড়ান সেলেব্রেটিরাও৷ নির্বাচনে ডনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে বিজয়ী হন তিনি৷ বাইডেনের নির্বাচনসঙ্গী কমলা হ্যারিস দেশের প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত, প্রথম আফ্রিকান-অ্যামেরিকান ও প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়ে ইতিহাস গড়েন৷
ছবি: Carolyn Kaster/AP Photo/picture alliance
11 ছবি1 | 11
ট্রাম্প যখন জিতে এসেছিলেন তখন ম্যার্কেল তাঁকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বজায় রাখার কথা বলেছিলেন। এখন বাইডেনের ক্ষেত্রে তাঁর প্রতিক্রিয়া একেবারে আলাদা। তিনি জার্মানি ও অ্যামেরিকার সম্পর্ক ভালো করার উপরেই জোর দিয়েছেন।
ম্যার্কেল ছাড়াও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সঙ্গে কথা বলেছেন বাইডেন।
মাক্রোঁর অফিস জানিয়েছে, বাইডেন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করার কথা বলেছেন। সেই সঙ্গে তিনি জলবায়ু পরিবর্তন, বিশ্বের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়েও একসঙ্গে চলার কথা বলেছেন। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে প্যারিস চুক্তি থেকে ট্রাম্প বেরিয়ে যাওয়ার পর ইউরোপীয় নেতারা ধাক্কা খেয়েছিলেন। বাইডেন আসায় অ্যামেরিকা আবার চুক্তিতে সামিল হবে বলে তাঁরা মনে করছেন।
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী জনসনের সঙ্গে অবশ্য ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তাই বাইডেনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কীরকম দঁড়াবে তা নিয়ে জল্পনা আছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে জানানো হয়েছে, বাইডেন ও জনসনের মধ্যে নানা বিষয়ে কথা হয়েছে। জনসন তাঁকে উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়েছেন।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন জানিয়েছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশের ব্লক এ বার বাইডেনের সঙ্গে আঞ্চলিক সহযোগিতা ও রাজনৈতিক প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলবে।