বন্দিদশায় মাছ কেমন থাকে? আসলে মানুষের মতোই খাদ্য মাছের ভালো থাকার চাবিকাঠি৷ যেমন কার্প বা রুই জাতীয় মাছ সর্বভুক৷ তবে তাদের প্রোটিনেরও চাহিদা রয়েছে৷ প্রজনন ক্ষেত্রে তাদের বেশি মাছ খাওয়ানো উচিত নয়৷ তার বদলে প্রোটিনে ভরপুর ডাকউইড আরও ভালো বিকল্প৷
জুরিখ ফলিত বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী লিন্ডা চিরেন মাছের কল্যাণ নিয়ে গবেষণা করছেন৷ কার্প মাছ ডাকউইড খেতে ভালোবাসে কিনা এবং সেটি খেলে ভালো হজম হয় কিনা, তিনি সেই পরীক্ষা করছেন৷ লিন্ডা মনে করেন, ‘‘পানির মানের পাশাপাশি খাদ্যও মাছের ভালো থাকার জন্য অত্যন্ত জরুরি৷ ঠিকমতো পুষ্টি না পেলে ভালো থাকা সম্ভব নয়৷’’
ডাকউইড কার্প মাছের কোনো ক্ষতি করছে কিনা, এক মরা মাছের মধ্যেই তিনি সেই তথ্য যাচাই করতে পারেন৷ একটি বালতির মধ্যে তিনি ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে মাছগুলিকে অজ্ঞান করে দিয়েছেন৷ মনে রাখতে হবে, মুরগি, শূকর ও গরু পালন করার সময় কী প্রয়োজন হয়, তা সবার জানা৷ মাছের চাহিদা সম্পর্কে সে তুলনায় জ্ঞান বেশি নেই৷ সে কারণেই মাছের কল্যাণে বড় আকারের এক গবেষণা প্রকল্প চালানো হচ্ছে৷
নানা প্রজাতির দেশি মাছ এখন চাষ করা হলেও পুকুর, ডোবা, খাল, বিল, হাওর বা নদীর মাছের স্বাদই আলাদা৷ প্রাকৃতিক বিভিন্ন উৎস থেকে অল্প পরিমাণে দেশি মাছ পাওয়া যায় বলে এর দামও বেশি৷
ছবি: bdnews24.comকৈ, শিং, মলা, পুঁটি, বাতাসিসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ এখন বাণিজ্যিকভাবে পুকুরে চাষ হচ্ছে৷ ফলে অনেকটা বিলুপ্তির পথে চলে যাওয়া এসব মাছ এখন সব অঞ্চলেই পাওয়া যায়৷
ছবি: bdnews24.comনানা রকমের মাছের মিশেল থাকে বলে এক পাঁচমিশালি নামে ডাকা হয়৷ দেশি এসব মাছের স্বাদ আসলেই অন্য রকম, তাই চাহিদাও বেশি৷
ছবি: bdnews24.comবাইম বা গুচি যে নামেই ডাকা হোক না কেন নদীর এই মাছের চাহিদা থাকে সারা বছরই৷ অনেকে মনে করেন, বড় বাইম মাছের স্বাদ মাংসের চেয়েও বেশি৷
ছবি: bdnews24.comনদী থেকে ধরা এসব চিংড়ির পেটে ডিম থাকে বলে এগুলোকে স্থানীয়ভাবে ডিমা চিংড়ি বলা হয়, এর স্বাদও বেশ৷
ছবি: bdnews24.comচাষ করা বেলে মাছ তো অনেক খেয়েছেন, নদীর বেলে মাছের স্বাদ নিতে চান? তাহলে এক কেজি বেলে কেনার জন্য মানিব্যাগে ভরে ফেলুন ১২০০-১৩০০ টাকা৷
ছবি: bdnews24.comনদীর মাছের চাহিদা সব সময়ই রয়েছে, আর বোয়াল হলে তো কথাই নেই৷ সম্প্রতি কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার পলতাকান্দা বাজারে পাঁচ কেজি ওজনের একটি নদীর বোয়াল মাছ চার হাজার ৭৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে৷
ছবি: bdnews24.comবিভিন্ন প্রাকৃতিক উৎসের সঙ্গে এখন পুকুরেও চাষ হচ্ছে পাবদা মাছ৷ তবে চাষের পাবদার থেকে নদীর পাবদা স্বাদে ভিন্ন৷
ছবি: bdnews24.comছবিতে বোয়াল ও রুই মাছের সঙ্গে একটু কালচে রঙের যে মাছ দুটো দেখছেন, সেটিই কালিবাউশ মাছ৷ এই প্রজাতির মাছ এখন আর খুব একটা পাওয়া যায় না৷
ছবি: bdnews24.comদেখতে অনেকটা বাতাসি মাছের মতো হলেও এগুলো বাচা মাছ৷ নদীর বাচা মাছ কিনতে হলে কেজিতে অন্তত হাজার টাকা গুণতে হবে৷
ছবি: bdnews24.comএসব মাছের জন্য আগে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উৎসের উপর নির্ভর করতে হতো, ত্বে এখন কেউ কেউ স্বল্প পরিসরে চাষেও সফলতা দেখাচ্ছেন৷
ছবি: bdnews24.comগ্রামাঞ্চলে গেলে নানা প্রজাতির দেশি মাছের দেখা পাওয়া যায়৷ কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার পলতাকান্দা বাজারে দেশি মাছ নিয়ে বসে আছেন এক বিক্রেতা৷
ছবি: bdnews24.com এই প্রক্রিয়ার সব ধাপ আগে থেকেই নির্ধারিত রয়েছে৷ সবার আগে কার্পের রক্ত সংগ্রহ করা হয়৷ রক্তে কর্টিসলের মাত্রা পরখ করলে বোঝা যায়, প্রাণীটি মানসিক চাপে ছিল কিনা৷ তাছাড়া মস্তিষ্ক, অন্ত্র ও যকৃতও আলাদা করা হয়৷ লিন্ডা চিরেন বলেন, ‘‘ডাকউইডের প্রভাব সম্পর্কে জানতেই আমরা যকৃৎ ও অন্ত্র বার করে নেই৷ ডার্কউইড মাছের জন্য ভালো না হয়ে থাকলে আমরা ধরে নেই, যে সেটি অপুষ্টিতে ভুগছে৷ বিশেষ করে অ্যাকোয়াকালচারের ক্ষেত্রে খোরাক মাছের চাহিদা পূরণ না করলে এমন স্ট্রেস দেখা যায়৷ যে মাছ ক্রমাগত ভুল পুষ্টি পেয়ে চলেছে, সেটির মস্তিষ্কের বৈশিষ্ট্য জানা আমাদের জন্য জরুরি৷ ডাকউইড খেয়ে মাছ খুব ভালো থাকলেও মস্তিষ্ক বিশ্লেষণ করতে হবে৷’’
দ্বিতীয় একটি পরীক্ষার মাধ্যমে তিনি খাদ্য অনুযায়ী মাছের মাংসের মধ্যে পরিবর্তন বিশ্লেষণ করেছেন৷ কারণ মনে রাখতে হবে, মানুষের খাদ্য হিসেবেই এই মাছ চাষ করা হয়৷
মাছের কল্যাণ নিয়ে গবেষণা যথেষ্ট ব্যয়বহুল৷ শুধু খোরাকই মাছের ভালো থাকার চাবিকাঠি নয়৷ বদ্ধ পানিতে মাছের সংখ্যাও মাছের ভালমন্দ বোধের উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলে৷ মাছের ভেড়ির দিকে তাকালে আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে, খুব কম জায়গায় অত্যন্ত বেশি সংখ্যক প্রাণী ছেড়ে দেওয়া হয়েছে৷ তবে সেই ধারণা মোটেই পুরোপুরি সত্য নয়৷ লিন্ডা চিরেন মনে করিয়ে দেন, ‘‘অন্যদিকে অত্যন্ত কম ঘনবসতিও দেখা যায়৷ যেমন তেলাপিয়া মাছ যখন নির্দিষ্ট একটি জায়গায় আবদ্ধ থাকার সিদ্ধান্ত নেয়৷ প্রত্যেকটি মাছের যদি একই জায়গা পছন্দ হয় এবং তার উপর অধিকার ফলাতে চায়, তখন সেই ভিটে রক্ষা করতে মাছ অত্যন্ত আগ্রাসী হয়ে উঠতে পারে৷ তখন ঝাঁকের মধ্যে প্রবল অশান্তি সৃষ্টি হয়৷ মাছের উপর মানসিক চাপ বেড়ে যায়৷ মাছের জাত অনুযায়ী ঘনবসতির ধারণা নির্ভর করে৷’’
অর্থাৎ সব মাছের আচরণ এক নয়৷ প্রত্যেক জাতের নিজস্ব চাহিদা রয়েছে৷ মাছের কল্যাণের লক্ষ্যে এই প্রকল্প এখনো প্রাথমিক স্তরে রয়েছে৷ আরও অনেক কাজ বাকি৷
মার্টিনা মিট/এসবি
উগান্ডার লেক ভিক্টোরিয়ার মাছের মজুদ গত দুই দশকে ব্যাপক মাত্রায় কমে যাওয়ায় ভুগতে হচ্ছে জেলেদের৷ চাহিদা মেটাতে বিকল্প মাছ চাষের দিকে ঝুঁকছেন আফ্রিকার বড় এই হ্রদ অঞ্চলের মানুষেরা৷
ছবি: DW/Wambi Michaelলেক ভিক্টোরিয়ার উপকূল থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের আমবারকোর্ট মার্কটে ‘নিল পার্চ’ বিক্রি করছেন ব্যবসায়ী বেটি পিমেরি৷ একটি বড় আকারের নীল পার্চ সর্বোচ্চ ২০০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে৷ যদিও এই মাছ লেক ভিক্টোরিয়াতে বর্তমানে অপ্রতুল৷ অবৈধভাবে মাছ শিকার এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে চাহিদা বাড়ায় তৈরি হয়েছে মাছের এই সংকট৷
ছবি: DW/Wambi Michaelমাছের সংকট মোকাবিলায় চীনা পদ্ধতির দ্বারস্থ হয়েছেন ওই এলাকার মানুষ৷ বুগুনগু এলাকার ‘এসওন ফিশ ফার্ম’-এ ভোক্তার চাহিদা মেটাতে ভিন্ন উপায়ে মাছ চাষ চলছে৷ প্রথমে এ ধরনের পুকুরে মাছকে বড় করা হয়, এরপর নেয়া হয় বড় পুকুরে৷ সবশেষে সেগুলোর স্থান হয় লেকের মধ্যে লোহার খাঁচায়৷ সুবিধামত আকার না হওয়া পর্যন্ত খাঁচার মধ্যেই মাছগুলোকে পালন করা হয়৷
ছবি: DW/Wambi Michael২০০৪ সাল থেকে ২০০৬ সময়ে খাঁচায় মাছ চাষের উদ্যোগ চলে পরীক্ষামূলকভাবে৷ তখন থেকে হাজার হাজার খাঁচা রাখা হয় লেক ভিক্টোরিয়ার কেনিয়া ও উগান্ডা তীরে৷ এভাবে মাছ চাষের সময় রাসায়নিক দেওয়া খাবার ও মাছের মলে পরিবেশের ক্ষতির বিষয়ে সতর্ক করেছেন পরিবেশবাদীরা৷ অবশ্য বিজ্ঞানীরা এক্ষেত্রে আরো উৎকৃষ্ট নীতি গ্রহণ ও ব্যবস্থাপনা কাঠামো গড়তে চেষ্টা চালাচ্ছেন৷
ছবি: DW/Wambi Michaelশিকারি পাখির এমন উপস্থিতি এসওন ফিশ ফার্মে মাছের খাঁচা এলাকার পরিচিত দৃশ্য৷ খাঁচার মাছকে খাবার দেওয়ার সময় সেখান থেকে ছিটকে পড়া খাবার খেতে আসে অন্য মাছেরা৷ আর অন্য মাছগুলোক ধরে খায় এসব পাখি৷ একটি বড় খাঁচা ৫ হাজারের মতো মাছ ধারণ করতে পারে৷ আর বৃদ্ধি ভালো হওয়ায় পুরুষ মাছকে গুরুত্ব দেন চাষিরা৷
ছবি: DW/Wambi Michaelরাজধানী কাম্পালার উদ্দেশ্যে মাছ নিয়ে যেতে মেসেসে সমবায় সমিতির চাষিদের সতর্ক প্রস্তুতি নিতে হয়৷ কারণ রাজধানীর দূরত্ব সেখান থেকে ৮০ কিলোমিটার৷ মাছগুলোকে প্লাস্টিকে মোড়ানোর পর সেগুলোতে বরফ দেওয়া হয়ে থাকে৷
ছবি: DW/Wambi Michaelকাম্পালার উপকণ্ঠের গাবা ল্যান্ডিং সাইটে নিল পার্চ নিয়ে এসেছেন একজন খুচরা বিক্রেতা৷ নিল তেলাপিয়া খাঁচার ভেতরে বাঁচতে পারলেও রাক্ষুসে নিল পার্চ মাছ উৎপাদিত হয় বাইরে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং এশিয়ায় নিল পার্চের বড় বাজার রয়েছে৷
ছবি: DW/Wambi Michaelমাছ বিক্রেতারা কোনো কিছুকেই আবর্জনা হতে দেন না৷ উগান্ডার জিনজা এলাকার মেসেসে ল্যান্ডিংয়ে নিল পার্চের মাথা আর মেরুদণ্ড শুকাচ্ছেন সাফিনা নামুকোসে৷ অতীতে মাছের এই অংশগুলো ফেলে দেয়া হলেও বর্তমানে সেগুলোকে লবণ দিয়ে শুকিয়ে দক্ষিণ সুদান, রুয়ান্ডা, কঙ্গোসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়৷
ছবি: DW/Wambi Michael