দক্ষিণ চিলির ধীবররা মাছধরার জাহাজ আর স্যামন ফার্মের বিরুদ্ধে যুঝছেন৷ তারা হাল ছাড়তে রাজি নন৷ নয়া ফিশারি আইন জেলেদের বিরুদ্ধে গেলেও, সরকার তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলছেন৷ তবে আশার আলো আছে৷ শেষ ভরসা ‘রামধনু যোদ্ধা'!
বিজ্ঞাপন
স্যার্খিও মাইয়োর্গা চিলোয়ে-র উপকূলে বাস করেন, ও মাছ ধরেন৷ এখান থেকে চতুর্দিকে স্যামন মাছের ভেড়ি দেখা যায়৷ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক, সব ধরনের সংস্থাই তাতে সংশ্লিষ্ট, তাদের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে ক্রমাগত৷ স্যার্খিও বলেন, ‘‘আমাদের মাছ ধরার এলাকা ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে৷ আগে আমরা এখানে মাছ ধরতাম, গালো মাছ কিংবা সি-বাস৷ এখন আর আমরা এখানে মাছ ধরতে পারি না, কারণ এই সুবিশাল, ভাসন্ত প্ল্যাটফর্মগুলো এখানে রয়েছে৷ ওখানে একটা, ওখানে আরো একটা৷ অনেকগুলো৷''
স্যার্খিও আরো জানালেন, ‘‘কয়েকজন ডুবুরি জলে নেমে দেখেছে৷ ৪৫ থেকে ৫০ মিটার গভীরে তারা দেখেছে যে, সব কিছু মরে গেছে, সব মরা৷ সাগরের কোনো জীব আর বেঁচে নেই৷''
তারপর স্যার্খিও-র নৌকো ওদের বয়াগুলোর কাছে পৌঁছাল৷ ওরা এখানে কাঁকড়া ধরবে, স্পাইনি ক্র্যাবস, তবে শুধু পুরুষ কাঁকড়া; মেয়ে কাঁকড়াগুলোকে ছেড়ে দেওয়া হবে, যাতে তারা বংশবৃদ্ধি করতে পারে৷ অবশ্য আজ বিশেষ কাঁকড়া উঠছে না৷ দিনের শেষে দেখা গেল, ওরা চল্লিশ হাজার কাঁকড়া ধরেছে, যার দাম উঠবে প্রায় ৫০ ইউরো৷
মাছের জগতের আশ্চর্য
পৃথিবীতে মাছের প্রজাতি প্রায় তিন হাজার৷ তাদের মধ্যে কিছু কিছু মাছ সত্যিই চমকে দেবার মতো, যেমন ইলেকট্রিক ইল বা বৈদ্যুতিক পাঁকাল মাছ৷
ছবি: imago/Olaf Wagner
ইলেকট্রিক ইল
ইলেকট্রিক ইল কিন্তু পাঁকাল মাছ নয়, বাংলায় সে পড়বে ছুরি মাছদের পর্যায়ে৷ ৬০০ ভোল্ট অবধি ইলেকট্রিক শক মারতে পারে! সেভাবেই শিকার ধরে - বা মারে - এই বৈদ্যুতিক পাঁকাল৷ গবেষণা করে দেখা গেছে যে, বাদুড়রা যেমন শব্দতরঙ্গ ব্যবহার করে পোকামাকড়ের অবস্থান জানতে পারে, তেমন ইলেকট্রিক ইল’ও কারেন্ট মারার সময় সেই পন্থায় শিকারের অবস্থিতিও জানতে পারে৷
ছবি: imago/Olaf Wagner
ডোরাকাটা তীরন্দাজ মাছ
এই মাছগুলো জলের নীচে থেকেই পুকুরের ধারের ঘাস-গুল্ম থেকে পোকামাকড় শিকার করতে পারে৷ কিভাবে? মুখ থেকে জলের পিচকিরি ছুঁড়ে পোকাগুলোকে পানিতে ফেলে দেয় এই তীরন্দাজ মাছ৷ বড় মাছগুলো তিন মিটার দূরত্বে বসা শিকারকে ঘায়েল করতে পারে!
এই মাছটি বালির মধ্যে শরীর ডুবিয়ে বসে থাকে শিকার ধরার আশায়৷ শিকার এলে লাফ দিয়ে উঠে শিকার ধরে৷ স্টারগেজার মাছের চোখ মাথার উপর বসানো, থ্যাবড়া মুখটাও ওপরদিকে বাঁকানো৷ মনে রাখতে হবে, মাছটি কিন্তু বিষাক্ত৷
ছবি: picture-alliance / OKAPIA KG
স্টোনফিশ বা পাথর মাছ
এ’মাছটিও বিষাক্ত এবং ক্যামোফ্লেজ, মানে ছদ্মবেশ ধারণে ওস্তাদ৷ দেখলে মনে হবে যেন শ্যাওলায় ঢাকা এক টুকরো পাথর৷ কিন্তু পায়ের নীচে পড়লেই বিষাক্ত কাঁটাগুলো ফুটে যাবে! বিশ্বের সবচেয়ে বিষাক্ত মাছগুলোর মধ্যে পড়ে এই পাথর মাছ৷ সে বিষে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে৷
ছবি: gemeinfrei
পটকা মাছ
পটকা মাছেদের পেটটা রাবারের মতো বাড়ে বা কমে৷ পটকা মাছেরা পেটে পানি ঢুকিয়ে বলের মতো গোলাকৃতি হয়ে যেতে পারে৷ এদের শরীরেও টেট্রোডোটক্সিন নামের একটি মারাত্মক বিষ আছে৷ জাপানে এই মাছ সুখাদ্য বলে পরিগণিত৷ তবে অতি সাবধানে কাটতে হয়, বিষের অংশটা বাদ দিয়ে৷ কেননা সে’ বিষে মানুষ মরতে পারে৷
ছবি: picture alliance/Arco Images
অ্যাঙ্গলার ফিশ বা মাছ ধরা মাছ
এই মাছের মাথায় ইলিসিয়াম নামধারী একটি আঙুলের মতো দেখতে আঁচিল আছে৷ সেই আঁচিলের ওপর দিকটা বাতির মতো জ্বল জ্বল করে, যা’তে হবু শিকাররা আকৃষ্ট হয়৷ তারপরেই সেই শিকার অ্যাঙ্গলার মাছের সুবিশাল মুখগহ্বরে ঢুকে যায়৷ এই মাছের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল, বিশ্বের সর্বত্র এদের পাওয়া যায়, এমনকি গভীর সমুদ্রেও৷
ছবি: Flickr/Stephen Childs
ভাইপার ফিশ বা সর্প মাছ
আজগুবি মাছ দেখতে হলে যেতে হয় সাগরের অতলে৷ সেখানে জলের চাপ বেশি, আলো প্রায় নেই বললে চলে, খাবারও কম৷ এই পরিবেশে শিকার ফসকালে চলবে না৷ তাই ভাইপার ফিশদের দাঁত, মুখ, সবই ভয়ংকর, ভয়াবহ...
ছবি: picture-alliance/dpa
প্লেইস বা রূপচাঁদা মাছ
চাঁদা মাছরা চ্যাপটা৷ তাদের ক্যামোফ্লেজ বা নিজেকে লুকনোর ক্ষমতা অসাধারণ, বিশেষ করে কাদার মধ্যে৷ মজার কথা: বড় হওয়ার সময় তাদের একটা চোখ মাথার এপাশ থেকে ওপাশে চলে গিয়ে অন্য চোখটির সঙ্গে যুক্ত হয়!
ছবি: picture-alliance/dpa/H.Bäsemann
সিহর্স ঘোড়া নয়
যদিও এই ছোট্ট মাছগুলোকে ঘোড়ার মতো দেখতে এবং এদের প্রকৃতিও অত্যন্ত নিরীহ৷ দ্বিতীয়ত, ‘সাগরের ঘোড়া’ নামধারী এই মাছগুলি চিৎ হয়ে নয়, খাড়া হয়ে সাঁতার কাটে - ফলে এরা খুব ভালো সাঁতারু হয় না৷ তৃতীয়ত, পুরুষ সিহর্সরা নিষিক্ত ডিমগুলোকে পেটের ভাঁজে বয়ে নিয়ে বেড়ায় এবং পরে বাচ্চাদের জন্মও দেয়৷
ছবি: picture-alliance/ dpa
মাডস্কিপার বা লাফানো কাদা মাছ
মাডস্কিপাররা মাছ হলেও, তাদের জল বেশি পছন্দ, না ডাঙা বেশি পছন্দ, তা তারা কখনো ঠিক করে উঠতে পারেনি৷ নিঃসন্দেহে মাছ হলেও, তারা পাখনা ব্যবহার করে কাদার ওপর দিয়ে হাঁটতে পারে৷ এছাড়া তারা অন্যান্য উভয়চরের মতো ত্বক দিয়ে নিঃশ্বাস নিতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/MAXPPP
হাতুড়ি-মাথা হাঙর
বিজ্ঞানীদের মতে হ্যামারহেড শার্কের মাথাটা হাতুড়ির মতো দেখতে হওয়ার কারণ হল, এর ফলে তার চোখ দু’টো আরো দূরে দূরে হয়৷ ফলে হাতুড়ি-মাথা হাঙর আরো বেশি দেখতে পায়... যেমন শিকার...
ছবি: imago/imagebroker
11 ছবি1 | 11
ফিশারি আইন ও জেলেদের আশা-নিরাশা
চিলোয়ের বাসিন্দাদের ৮০ শতাংশ জেলে৷ তাদের অধিকাংশ আবার ফিশারি আইনের বিরুদ্ধে৷ এর আগের রক্ষণশীল সরকারের অর্থনীতি মন্ত্রী লঙ্গেরার নামে এই আইন৷ চিলির ধীবররা সমুদ্রাঞ্চলকে বেসরকারি মালিকানার হাতে ছেড়ে দেওয়ার বিপক্ষে, কেননা স্যামন চাষের ভেড়ি আর জাহাজে করে মাছধরার ফলে সাধারণ জেলেদের রুটি মারা যাচ্ছে৷ মুনাফা করছে সামান্য কয়েকটি প্রভাবশালী বাণিজ্যসংস্থা৷ তাদের শিকারের একাংশ স্থানীয় বাজারে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতে পারেন জেলেরা৷ কিন্তু আসল লাভ করে বাণিজ্যসংস্থাগুলি, ইউরোপ ও এশিয়ার বাজারে মাছ রপ্তানি করে৷ কোটি কোটি টাকার ব্যবসা৷
পরের দিন কাস্ত্রো শহরে আঞ্চলিক রাজনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক৷ সরকারি কর্মকর্তা জানালেন, ‘‘সরকার ধীবরদের সঙ্গে মিলে উন্নতি করার চেষ্টা করছেন, যাতে আমরা বিভিন্ন ধরনের মাছধরার ক্ষেত্রে প্রগতি সাধন করি৷ কিছু কিছু ব্যাপারে আমরা একমত হতে পেরেছি৷''
ইলিশ রক্ষায় বিশ্বের কাছে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ
ইলিশকে বাংলাদেশে ‘মাছের রাজা’ হিসেবেই মানেন সবাই৷ দেশের বাইরেও পদ্মার ইলিশের অনেক কদর৷ সেই ইলিশ হারাতে বসেছিল বাংলাদেশ৷ তবে সুদিন আবার ফিরছে৷ উৎপাদন বাড়ছে৷ ইলিশ উৎপাদনে সারা বিশ্বের জন্যই দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ৷
ঈদ, পুজো, পহেলা বৈশাখ- উৎসব ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক যে ধরণেরই হোক না কেন, ইলিশ ছাড়া কিন্তু বাঙালির ভোজন জমে না৷
ছবি: Imago/Z.H. Chowdhury
ইলিশে বসতি বাণিজ্য
সরকারি হিসেব অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে ইলিশের অবদান ১ শতাংশ৷ আর দেশের মোট মাছের ১১ শতাংশই ইলিশ৷ বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ লাখ জেলে আছেন৷ এছাড়াও প্রায় ২০ লাখ মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস ইলিশ৷ মাছ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফিশ-এর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের মোট ইলিশের ৬৫ শতাংশই উৎপাদিত হয় বাংলাদেশে৷
ছবি: Imago/UIG
ইলিশ থেকে ওষুধ
ইলিশ খুব তেলতেলে মাছ৷ সম্প্রতি সেই তেলেরও বিশেষ এক গুণের কথা জানা গেছে৷ জানা গেছে, ইলিশ মাছে যে ‘ওমেগা-৩’ ধরনের তেল আছে, তা দিয়ে ওষুধ তৈরি করা যায়৷ হৃদরোগসহ বেশ কিছু রোগ সারানোয় ভূমিকা রাখতে পারে এই ওষুধ৷ ইতিমধ্যে ইলিশের তেল থেকে ওষুধ তৈরি করা শুরু করেছে বেশ কিছু দেশ৷
ছবি: Imago/Z.H. Chowdhury
দুঃসময়ের পদধ্বনি...
ইলিশের দুর্দিন মানে ভোজনরসিকদের দুর্ভাবনা৷ ইলিশ কমতে শুরু করায় বাংলাদেশও পড়েছিল দুর্ভাবনায়৷ তার প্রভাব এমন কিছু দেশে পড়েছিল যেসব দেশের মানুষ পদ্মার ইলিশের জন্য মুখিয়ে থাকে৷ বাংলাদেশ, ভারত বা শুধু এশিয়ার হাতে গোনা কয়েকটি দেশ নয়, ইউরোপ-অ্যামেরিকাতেও ইলিশ আজকাল পাতে উঠছে৷ যুক্তরাষ্ট্র, নিউজিল্যান্ড ও ইউরোপের কিছু দেশে ইলিশের স্যুপের জনপ্রিয়তা দিনদিন বাড়ছে৷
ছবি: Imago/UIG
সংকটের কারণ...
ইলিশ কমতে শুরু করেছিল মূলত দুটি কারণে৷ এক, অতিরিক্ত মাত্রায় মা ও জাটকা ইলিশ ধরা; দুই, ব্যাপক পরিবেশ দূষণ৷ শুধু বাংলাদেশ নয়, অনেক দেশেই ইলিশ কমতে শুরু করেছিল৷ তবে খুশির কথা, ইলিশ রক্ষায় বাংলাদেশ বিশ্বের অন্য সব দেশকে ছাড়িয়ে গেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Chowdhury
ইলিশ রক্ষায় পদক্ষেপ
২০০২ সালের পর থেকে ইলিশ রক্ষায় বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ৷ ডিম পাড়া ও বিচরণের স্থান চিহ্নিত করা, বছরের আট মাস জাটকা ধরা এবং ডিম পাড়ার ১৫ দিন সব ধরনের ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করার সুফল এখন পেতে শুরু করেছে বাংলাদেশ৷ জেলেদের প্রতিও দেয়া হয়েছে বিশেষ মনযোগ৷ ইলিশ ধরেন এমন জেলেদের মধ্যে এ পর্যন্ত ২ লাখ ২৪ হাজার জনকে পরিচয়পত্র দেয়া হয়েছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
বাড়ছে ইলিশ, আসছে সুফল
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে ইলিশের দুর্দিন অনেকটাই কেটে গেছে৷ ইলিশ ধরা বেড়েছে, পাশাপাশি ইলিশও বাড়ছে৷ মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও বঙ্গোপসাগর থেকে ২০০৯-১০ মৌসুমে দুই লাখ টন ইলিশ ধরা হয়, ২০১৪ সালে তা বেড়ে হয়ে যায় ৩ লাখ ৮৫ হাজার টন, ২০১৫, অর্থাৎ চলতি বছর চার লাখ টন ইলিশ ধরা পড়বে বলে আশা করছে মৎস্য অধিদপ্তর৷
ছবি: Imago/UIG
বাংলাদেশ সবার কাছে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত
ওয়ার্ল্ড ফিশ-এর পর্যবেক্ষণ বলছে, সারা বিশ্বে মূলত যে ১১টি দেশে ইলিশ হয় সেগুলোর মধ্যে ১০টিতেই ইলিশ কমছে, শুধু বাংলাদেশেই লক্ষণীয় মাত্রায় উৎপাদন বাড়ছে৷ বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির হার বছরে শতকরা ৮ থেকে ১০ শতাংশের মতো৷ ফলে ইলিশ রক্ষায় অনেক দেশের কাছেই বাংলাদেশ এখন ‘রোল মডেল’৷
ছবি: Christophe Archambault/AFP/Getty Images
9 ছবি1 | 9
দৃশ্যত আজকের বৈঠকেও একটি ক্ষুদ্র পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়েছে৷ আগামীতে প্রতি দু'মাস অন্তর এ ধরনের আলাপ-আলোচনা বসবে, যাতে দক্ষিণ চিলির ধীবরদের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়৷
রামধনু যোদ্ধা
রাজনীতির কচকচির পর মাইয়োর্গা আবার তাঁর সারা জীবনের স্বপ্নের কথা ভাবতে চান: তাঁর নিজস্ব একটি বড়োসড়ো মাছধরার জাহাজ৷
নৌকোর নাম হবে ‘গেরেরো আরকোয়িরিস' বা ‘রামধনু যোদ্ধা'৷ স্যার্খিও-র পুরনো নৌকার নামও তাই ছিল৷ নামটার একটা বিশেষ অর্থ আছে৷ স্যার্খিও জানালেন, ‘‘কোথায় যেন পড়েছি, রেনবো-ওয়ারিয়র নামের একটি জাহাজ মুরুরোয়া অ্যাটল-এ ফরাসিদের আণবিক বোমা ফাটানো প্রায় বন্ধ করে দিতে চলেছিল৷ জাহাজটা নাকি ফরাসিদের সর্বত্র অনুসরণ করে বেড়িয়েছিল, তাদের শান্তিতে থাকতে দেয়নি, যা প্রাণ চায় করতে দেয়নি৷ কাজেই আমার জাহাজের নামও রামধনু যোদ্ধা৷''
কেননা স্যার্খিও ও চিলির অন্যান্য ধীবররাও এতো সহজে হাল ছাড়তে রাজি নন৷
সাগরের মায়াপুরী
ইউনেস্কোর বিশেষজ্ঞদের মতে সমুদ্রের পাঁচটি স্থানকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত৷ অবশ্য সাগরের অতলে এই স্থানগুলিতে দর্শক সমাগম হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই!
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Courtesy Chris Burville
সাগরের গভীরে, জলের তলায় এক আশ্চর্য জগৎ
সাগরের পানির নীচে পাঁচটি স্থানকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃতি দেবার সুপারিশ করেছেন ইউনেস্কোর বিশেষজ্ঞরা৷ এই সব স্থানের বাসিন্দাদের সৌন্দর্য অকল্পনীয়; সেই সঙ্গে রয়েছে অপরিসীম জীববৈচিত্র্য; এছাড়া পরিবেশ বিপন্ন হলে, তার চিহ্নও ধরা পড়ে এখানে৷
ছবি: Kevin Raskoff/NOAA/Wikipedia
‘‘হারানো শহর’’
অ্যাটলান্টিক মহাসাগরে ৮০০ মিটার জলের তলায় ভূপৃষ্টের ফাটল থেকে আগুন, গরম লাভা ও গ্যাস বেরিয়ে আসছে৷ ইউনেস্কোর বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বের অন্য কোথাও এ ধরনের একটি আশ্চর্য পরিবেশ খুঁজে পাওয়া যাবে না৷ হাইড্রোথার্মাল ভেন্ট নামে পরিচিত প্রাকৃতিক চিমনিগুলি থেকে সম্ভবত ১ লক্ষ ২০ হাজার বছরের বেশি সময় ধরে গ্যাস নির্গত হচ্ছে৷ সেগুলির মধ্যে সবচেয়ে বড় চিমনিটির নাম রাখা হয়েছে পোসাইডন৷ উচ্চতা ৬০ মিটারের বেশি৷
ছবি: Woods Hole Oceanographic Institute and Charles Fisher, Pennsylvania State University
কোস্টা রিকার থার্মাল ডোম
প্রশান্ত মহাসাগরের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে ৫০০ কিলোমিটারের বেশি দৈর্ঘের এই এলাকাটিকে ‘‘সাগরের মরুদ্যান’’ আখ্যা দিয়েছেন ইউনেস্কোর বিজ্ঞানীরা৷ এখানে যেমন টুনা মাছ কিংবা শুশুক, তেমনই হাঙর বা তিমি মাছ পাওয়া যায়৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে এলাকার সবচেয়ে বড় বাসিন্দা নীল তিমিকে৷ বিশেষভাবে বিপন্ন সামুদ্রিক কচ্ছপ লেদারব্যাক টার্টলরাও এখান দিয়ে যায়৷
ছবি: picture alliance/WILDLIFE
হোয়াইট শার্ক কাফে
সাদা হাঙরের কফিহাউস? হ্যাঁ, মেরিন বায়োলজিস্টরা সত্যিই এই নাম দিয়েছেন৷ জায়গাটা কিন্তু খোলা সমুদ্রে, উত্তর অ্যামেরিকা আর হাওয়াই দ্বীপের মাঝামাঝি৷ হোয়াইট শার্ক নামধারী হাঙরদের ভিড় লেগে থাকে এখানে, হয়তো জলের বিভিন্ন স্রোত তাদের ভালো লাগে বলে৷
ছবি: Pterantula (Terry Goss) via Wikimedia Commons
সারগাসো সি
স্বয়ং কলম্বাস নাকি ১৮৯২ সালে তাঁর প্রথম সমুদ্রযাত্রার সময় এই দৃশ্য দেখেছিলেন৷ বার্মুডার দ্বীপগুলোকে ঘিরে রয়েছে এই সারগাসো সাগর৷ সারগাসো নামটি এসেছে সার্গাসুম নামধারী ভাসন্ত সামুদ্রিক শ্যাওলা থেকে৷ সার্গাসুম-কে বিজ্ঞানীরা বলেন ‘ভাসন্ত সোনালি ক্রান্তীয় অরণ্য’৷ এই ‘অরণ্যে’ বহু জীব ও প্রাণীর বাস৷ ইউরোপীয় ও অ্যামেরিকান বানমাছেরা শুধু এখানেই ডিম পাড়ে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Courtesy Chris Burville
অ্যাটলান্টিসের পাড়
ভারত মহাসাগরের এই জলমজ্জিত দ্বীপটি নাকি লক্ষ লক্ষ বছর আগে সাগরে ডুবে গিয়েছিল – এই কি তাহলে কিংবদন্তীর অ্যাটলান্টিস মহাদেশ? সাগরের ৭০০ থেকে ৪,০০০ মিটার নীচে চড়াই-উৎরাই, সৈকৎ কিংবা উপহ্রদ, সবই পাওয়া যায় – সেই সঙ্গে বড় বড় অ্যানেমনি, সুবিশাল স্পঞ্জ ও প্রবাল৷
ছবি: The Natural Environment Research Council and IUCN/GEF Seamounts Project C/O Alex D Rogers
সারা পৃথিবীর, গোটা মানবজাতির সম্পদ
পাঁচটি স্থানই সাগরের জলভূমির আন্তর্জাতিক অংশে, কোনো বিশেষ দেশের তাঁবে নয়৷ তার খারাপ দিকটা হল এই যে, এই ধরনের এলাকা সুরক্ষিত বা সংরক্ষিত করা কঠিন৷ ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ আখ্যা দেওয়াটা তার একটা পন্থা হতে পারে৷