শুধু বাঙালিই নাকি মাছ বেশি খায়৷ তাই বলা হয়ে থাকে, ‘মাছেভাতে বাঙালি’৷ কিন্তু ভাত ততটা না খেলেও ইউরোপীয়দের মাছ খাওয়া কিন্তু বেড়েই চলেছে৷ মাছ ধরা কমাতে তাই উঠেপড়ে লেগেছে ইউরোপ৷
বিজ্ঞাপন
মাত্রাতিরিক্ত মাছ ধরা হচ্ছে বিশ্বজুড়ে৷ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) অঞ্চলের দেশগুলোই বেশি দায়ী৷ ব্যাপক হারে মাছ ধরায় রাশ টানতে তাই নেয়া হচ্ছে বিশেষ উদ্যোগ৷ কিন্তু আইন করে, জেলেদের নিয়মে বাঁধার চেষ্টা করেও লাভ হচ্ছে না৷ মাছ খাওয়া বেড়েই চলেছে ইউরোপে৷
গত ৬ এপ্রিল জার্মানি পালন করলো ‘ফিস ডিপেন্ডেন্স ডে', অর্থাৎ ‘মাছনির্ভরতা দিবস'৷ ইইউ অঞ্চলের সবগুলো দেশেই দিবসটি পালিত হয়৷ যেমন ইটালিতে পালিত হয়েছে ১৪ এপ্রিল, পর্তুগালে হবে আগামী পহেলা মে৷ দিবসটির মূল উদ্দেশ্য হলো, মাছ ধরা এবং আমদানির বিষয়ে সবাইকে একটা নির্দিষ্ট নিয়মে বাঁধা৷
মাছ খান, সুস্থ থাকুন
মাছে তেমন কোনো চর্বি নেই, রয়েছে প্রচুর প্রোটিন, যা শারীরিক ও মানসিকভাবে মানুষকে ফিট রাখতে সহায়তা করে৷ বলেন খাদ্য বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: DW/Sarah Wiertz
মাংসের বদলে মাছ
আজকাল প্রায়ই লক্ষ্য করা যায় অনেক জার্মানই মাংসের পরিবর্তে নানা ধরণের মাছ খেতে পছন্দ করেন৷ বিশেষকরে যাঁরা স্বাস্থ্য সচেতন তাঁরা তো অবশ্যই৷ মাছে তেমন কোনো চর্বি নেই, রয়েছে প্রচুর প্রোটিন, যা শারীরিক ও মানসিকভাবে মানুষকে ফিট রাখতে সহায়তা করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Schamberger
খাবারের মুকুট
জার্মানিতে মাছকে বলা হয় ‘খাবারের মুকুট’৷ মাছ মস্তিষ্কের রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে৷ জার্মান খাদ্য গবেষণা কেন্দ্রের পরামর্শ, প্রতিটি মানুষেরই সপ্তাহে অন্তত দু’দিন মাছ খাওয়া প্রয়োজন৷ মাছ হৃদরোগ ও ক্যানসার থেকেও দূরে থাকতে সাহায্য করে৷ মাছ বুদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করে৷
ছবি: AP
নানা জাতের মাছ
জার্মানিতে নানা রকম মাছ পাওয়া যায়৷ ছোট বড়, নদীর মাছ, সামুদ্রিক মাছ, লোনা পানির মাছ, হ্রদের মাছ, তাজা মাছ, হিমায়িত, ধূমায়িত এবং টিনজাত মাছ৷
ছবি: picture alliance/Bildagentur Huber
মাছ ভাজি
জার্মানরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাছ ভাজি খায়, আমাদের বাঙালিদের মতো রান্না করে খুবই কম খেয়ে থাকেন তাঁরা৷ ডয়চে ভেলের ক্যান্টিনে সপ্তাহে প্রায় দু’দিন মাছ দেওয়া হয়৷ ক্যান্টিনে এরকম একটি ট্রাউট মাছের ভাজির দাম ৭ ইউরো, বাইরে যার দাম প্রায় দ্বিগুণ৷
ছবি: Fotolia/Comugnero Silvana
কাটা মাছ
বাজারে পাঠানোর আগে এভাবেই মাছ ‘প্রসেস’ করা হয়৷ মাছ কেটে পরিষ্কার করে, কাঁটা বেছে ‘স্লাইস’ করে তবেই সেটা বাজারে যায়৷ তবে কিছুটা ছোট আকারের মাছ কার্প, ট্রাউট, হেরিং, সি ব্রাস ইত্যাদি মাছ আস্তই পাওয়া যায় বাজারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সখের জেলে
জার্মানিতে অনেকেই সখ করে মাছ ধরেন, তবে তাঁদের অবশ্যই মাছ ধরার লাইসেন্স থাকতে হবে৷ তাছাড়া যে কোনো জায়াগায় মাছ ধরা যায় না, শুধু যেসব জায়গায় অনুমতি রয়েছে সেখানেই মাছ ধরা সম্ভব৷
ছবি: DW
তাজা মাছের বাজার
এভাবেই সুন্দর করে সাজানো থাকে মাছের বাজারে মাছগুলো৷ দেখে মনে হয়, মাছগুলো যেন মাছ-প্রেমীদের ডাকছে৷ মাছ মস্তিষ্ককে সজাগ রাখে, তাই ডাক্তাররা মাছ খেতে সবসময়ই পরামর্শ দিয়ে থাকেন, বিশেষকরে ছাত্র-ছাত্রী এবং বয়স্কদের৷ তবে সবার জন্যই মাছ খুব উপাদেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ধূমায়িত মাছ
ধূমায়িত বা ‘স্মোক্ড’ মাছ জার্মানদের কাছে বেশ প্রিয়, বিশেষ করে রুটির সাথে তাঁরা এ ধরনের বিশেষ প্রক্রিয়ায় রান্না করা মাছ খেতে পছন্দ করেন৷ ম্যাকরেল নামের এক মাছ যার মধ্যে খুব সামান্য হলেও আমাদের ইলিশের স্বাদ খুঁজে পাওয়া যায়৷ তবে সেই মাছ ‘স্মোক্ড’ অবস্থায়ই বেশি পাওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/chromorange
বরফ দেওয়া মাছ
এভাবেই মাছকে যত্ন করে বরফের ওপর সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা হয়৷ শুধুমাত্র মাছের জন্য রয়েছে আলাদা বাজার, সেখানে এ ধরনের মাছ পাওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মাছ খান, সুন্দর আর স্লিম থাকুন
মাছ খাওয়ার পরামর্শ আজকাল চারিদিকে শোনা যায়৷ ডাক্তার থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য সচেতন যে কেউ এই পরমার্শ দেন৷ তবে ছোটবেলা থেকেই এই অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা৷ শরীরে আয়োডিনের ঘাটতিও পূরণ করে থাকে বেশ কিছু মাছ৷
ছবি: DW/Sarah Wiertz
10 ছবি1 | 10
বাঁধার চেষ্টা চলছে ঠিকই, তবে শেষ পর্যন্ত পুরো বিষয়টি হয়ে যাচ্ছে ‘বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেড়ো '-র মতো৷ এ মুহূর্তে প্রত্যেক জার্মান বছরে অন্তত ১৫ কিলোগ্রাম (কেজি) মাছ খেয়ে থাকেন৷ বাঙালি হিসেবে ভাবলে পরিমাণটা কম মনে হতে পারে, তবে ইইউ নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে তা অনেক বেশি৷ জার্মানি বছরের শেষ আট মাস বিদেশ থেকে মাছ আমদানি করে৷ তার আগের চার মাস, অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত নিজেদের মাছ দিয়েই কাজ চালানোর কথা৷ কিন্তু জার্মানদের মেন্যুতেও মাছ প্রায় নিয়মিত ঢুকে পড়ছে বলে বিশ্বের অনেক দেশে মাছ ধরা বাড়ছে৷
ইউরোপের জেলেরা যে শুধু নিজের দেশের সমুদ্রেই মাছ ধরেন তা কিন্তু নয়৷ ইউরোপের মৎস সম্পদ বিষয়ক বেসরকারি সংস্থা ‘ওশান ২০১২'-এর নিনা ভল্ফ মনে করেন, আফ্রিকার কিছু দেশে মাছ ধরার মাত্রা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ার পেছনে ইউরোপীয় জেলেদেরও ভূমিকা রয়েছে৷ পরিবেশ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ডাব্লিউডাব্লিউএফ ১০১টি মাছের তালিকা প্রণয়ন করে সেগুলো আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করেছে৷ তালিকায় অবশ্য বাঙালিদের পছন্দের মাছ খুব একটা নেই৷
মাছের তালিকা প্রকাশ এবং মাছ ধরায় নিয়ন্ত্রণ আরোপের নিয়ম করে কাজের কাজ খুব বেশি হচ্ছে না৷ উন্নয়নশীল কিছু দেশে আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা মেটাতে গিয়ে মাছ ধরা বেড়েই চলেছে৷ আফ্রিকার দেশ নামিবিয়ার প্রায় ৯০ ভাগ মাছই রপ্তানি হয় ইউরোপে৷ মাত্রাতিরিক্ত মাছ ধরার কারণে গিনি, বেলিজে এবং কম্বোডিয়াকে কালো তালিকভুক্ত করা হয়েছে৷ এই তিনটি দেশ থেকে তাই ইইউ অঞ্চলের সব দেশে মাছ আমদানি আপাতত বন্ধ৷
মাছের ওপর নির্ভরশীলতা তো বেড়েই চলেছে, তারপরও ‘মাছ নির্ভরতা দিবস'-কে ঘিরে আইন প্রয়োগের চেষ্টা এবং সবাইকে সতর্ক করার উদ্যোগ কতটা সাফল্য পায় সেটাই এখন দেখার বিষয়৷