আফ্রিকার শিঙি মাছের চাষ হচ্ছে জার্মানিতে৷ মাছের চৌবাচ্চার পানি গরম রাখা হচ্ছে বায়োগ্যাস দিয়ে৷ চৌবাচ্চার পানি দিয়ে হয় ভুট্টার ক্ষেতে জলসেচ৷ ভুট্টার গাছপাতা যায় বায়োগ্যাস প্ল্যান্টে জ্বালানি হয়ে৷ রিসাইক্লিং-এর চূড়ান্ত!
বিজ্ঞাপন
চারা মাছগুলো বড় করতে বিশেষ কিছু লাগে না: পানি, এক কিলোগ্রাম দানাপানি আর চৌবাচ্চায় ১৫০ দিন৷ এগুলো হলো আফ্রিক্যান ক্যাটফিশ বা শিঙি মাছ৷
চৌবাচ্চার পানি সারাক্ষণ ২৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড গরম রাখতে হয় – কেননা মাছটির আদত বাস আফ্রিকায়৷ পানি গরম রাখার জন্য গ্যাস আসে ভেড়ির নিজস্ব বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট থেকে, কাজেই কোনো বাড়তি খরচ পড়ে না৷ চাষি এবং ভেড়ি-মালিক ব্যারন্ড পমারেনে বললেন:
‘‘আমরা সব কিছু ধরে রাখি এবং সব কিছু আবার পুরোপুরি ব্যবহার করা হয়৷ ভেড়ির পানি ধরে রেখে তা চাষের জমিতে দেওয়া হয়৷ সেটা রিসাইক্লিং-এর কাজ করে৷ সেই জমিতে ভুট্টার চাষ করা হয়৷ সেই ভুট্টার গাছপাতা আবার যায় বায়োগ্যাস প্ল্যান্টে, যেখানে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়, যে বিদ্যুৎ দিয়ে মাছের চৌবাচ্চা গরম রাখা হয়৷''
শুধু এই ‘ফিশ ফার্ম' বা মাছের ভেড়ির জন্যেই এই বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট বসানো হয়েছে৷ সরকারি ভরতুকির ফলে এই বিনিয়োগ লাভজনক হয়েছে৷ মাছ নিয়ে ব্যবসাটা জার্মান চাষিদের পক্ষে নতুন; সরকারি জ্বালানি নীতিতে পরিবর্তনের ফলে এই নতুন ব্যবসা সম্ভব হয়েছে: ইতিমধ্যেই ৬০টি এ ধরনের খামার আছে; আগামী পাঁচ বছরে তা নাকি বেড়ে দাঁড়াবে ছ'শোয়৷
মাছ খান, সুস্থ থাকুন
মাছে তেমন কোনো চর্বি নেই, রয়েছে প্রচুর প্রোটিন, যা শারীরিক ও মানসিকভাবে মানুষকে ফিট রাখতে সহায়তা করে৷ বলেন খাদ্য বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: DW/Sarah Wiertz
মাংসের বদলে মাছ
আজকাল প্রায়ই লক্ষ্য করা যায় অনেক জার্মানই মাংসের পরিবর্তে নানা ধরণের মাছ খেতে পছন্দ করেন৷ বিশেষকরে যাঁরা স্বাস্থ্য সচেতন তাঁরা তো অবশ্যই৷ মাছে তেমন কোনো চর্বি নেই, রয়েছে প্রচুর প্রোটিন, যা শারীরিক ও মানসিকভাবে মানুষকে ফিট রাখতে সহায়তা করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Schamberger
খাবারের মুকুট
জার্মানিতে মাছকে বলা হয় ‘খাবারের মুকুট’৷ মাছ মস্তিষ্কের রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে৷ জার্মান খাদ্য গবেষণা কেন্দ্রের পরামর্শ, প্রতিটি মানুষেরই সপ্তাহে অন্তত দু’দিন মাছ খাওয়া প্রয়োজন৷ মাছ হৃদরোগ ও ক্যানসার থেকেও দূরে থাকতে সাহায্য করে৷ মাছ বুদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করে৷
ছবি: AP
নানা জাতের মাছ
জার্মানিতে নানা রকম মাছ পাওয়া যায়৷ ছোট বড়, নদীর মাছ, সামুদ্রিক মাছ, লোনা পানির মাছ, হ্রদের মাছ, তাজা মাছ, হিমায়িত, ধূমায়িত এবং টিনজাত মাছ৷
ছবি: picture alliance/Bildagentur Huber
মাছ ভাজি
জার্মানরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাছ ভাজি খায়, আমাদের বাঙালিদের মতো রান্না করে খুবই কম খেয়ে থাকেন তাঁরা৷ ডয়চে ভেলের ক্যান্টিনে সপ্তাহে প্রায় দু’দিন মাছ দেওয়া হয়৷ ক্যান্টিনে এরকম একটি ট্রাউট মাছের ভাজির দাম ৭ ইউরো, বাইরে যার দাম প্রায় দ্বিগুণ৷
ছবি: Fotolia/Comugnero Silvana
কাটা মাছ
বাজারে পাঠানোর আগে এভাবেই মাছ ‘প্রসেস’ করা হয়৷ মাছ কেটে পরিষ্কার করে, কাঁটা বেছে ‘স্লাইস’ করে তবেই সেটা বাজারে যায়৷ তবে কিছুটা ছোট আকারের মাছ কার্প, ট্রাউট, হেরিং, সি ব্রাস ইত্যাদি মাছ আস্তই পাওয়া যায় বাজারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সখের জেলে
জার্মানিতে অনেকেই সখ করে মাছ ধরেন, তবে তাঁদের অবশ্যই মাছ ধরার লাইসেন্স থাকতে হবে৷ তাছাড়া যে কোনো জায়াগায় মাছ ধরা যায় না, শুধু যেসব জায়গায় অনুমতি রয়েছে সেখানেই মাছ ধরা সম্ভব৷
ছবি: DW
তাজা মাছের বাজার
এভাবেই সুন্দর করে সাজানো থাকে মাছের বাজারে মাছগুলো৷ দেখে মনে হয়, মাছগুলো যেন মাছ-প্রেমীদের ডাকছে৷ মাছ মস্তিষ্ককে সজাগ রাখে, তাই ডাক্তাররা মাছ খেতে সবসময়ই পরামর্শ দিয়ে থাকেন, বিশেষকরে ছাত্র-ছাত্রী এবং বয়স্কদের৷ তবে সবার জন্যই মাছ খুব উপাদেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ধূমায়িত মাছ
ধূমায়িত বা ‘স্মোক্ড’ মাছ জার্মানদের কাছে বেশ প্রিয়, বিশেষ করে রুটির সাথে তাঁরা এ ধরনের বিশেষ প্রক্রিয়ায় রান্না করা মাছ খেতে পছন্দ করেন৷ ম্যাকরেল নামের এক মাছ যার মধ্যে খুব সামান্য হলেও আমাদের ইলিশের স্বাদ খুঁজে পাওয়া যায়৷ তবে সেই মাছ ‘স্মোক্ড’ অবস্থায়ই বেশি পাওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/chromorange
বরফ দেওয়া মাছ
এভাবেই মাছকে যত্ন করে বরফের ওপর সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা হয়৷ শুধুমাত্র মাছের জন্য রয়েছে আলাদা বাজার, সেখানে এ ধরনের মাছ পাওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মাছ খান, সুন্দর আর স্লিম থাকুন
মাছ খাওয়ার পরামর্শ আজকাল চারিদিকে শোনা যায়৷ ডাক্তার থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য সচেতন যে কেউ এই পরমার্শ দেন৷ তবে ছোটবেলা থেকেই এই অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা৷ শরীরে আয়োডিনের ঘাটতিও পূরণ করে থাকে বেশ কিছু মাছ৷
ছবি: DW/Sarah Wiertz
10 ছবি1 | 10
‘ফিশগুট নর্ড' খামারের মার্কেটিং ম্যানেজার স্টেফান শোয়াববাউয়ার ইউরোপ জুড়ে অ্যাকোয়া কালচার, মানে জলজাত খাদ্য উৎপাদনের প্রবণতার কথা বলেন: ‘‘আপাতত এটা একটা অর্থকরী ব্যবসা, কেননা মাছের চাহিদা বেড়েই চলেছে – এবং সেই সঙ্গে যারা এ ধরনের নতুন ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করতে চান, তাদের সংখ্যা৷ সে হিসেবে মডেলটা খুবই ভালো এবং বাড়ানোও যেতে পারে, যদি মানুষজন মাছটা পছন্দ করে৷''
সেটাই হলো আসল সমস্যা: মাত্র কয়েক বছর হলো রেস্তোরাঁর কুক ইয়ুর্গেন নয়মান আফ্রিকার শিঙি মাছ রাঁধছেন, কিন্তু খদ্দেররা শেষমেষ সেই মাছ খেতে শুরু করেন, যখন নয়মান তাঁদের বোঝান যে, এই বিজাতীয় মাছটি খাওয়া হলো সামুদ্রিক মাছগুলিকে বাঁচানোর একটা পন্থা৷