1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মাছ ভজন

১৩ আগস্ট ২০১৮

ধোঁয়া ওঠা গরম ভাত৷ একটা ডাগর সবুজ কাঁচা মরিচ৷ মিহি করে কাটা পেঁয়াজের কুচি৷ সঙ্গে আধডুবো তেলে বড় রুই মাছের পেটি ভাজা৷ মাছ থেকে নিতান্ত অনিচ্ছায় গড়িয়ে পড়া তেল৷ ঐ তেলটুকুই ভাতটা মাখাবে৷

Bangladesch Hilsa Fisch
ছবি: Getty Images/AFP/D. Dutta

তখন আমাদের নিবাস বরগুনায়৷ আমতলীতে৷ প্রকৌশলী পিতার চাকরির সূত্রে৷ আকারে ও প্রকারে আমি তখন এতটাই ক্ষুদ্র যে, খণ্ড খণ্ড কতক স্মৃতি ছাড়া আর সব কিছুই বিস্মৃত হয়েছি৷ তবে মানসপটে যেসব দৃশ্যের আনাগোনা, তার একটি মাছ ধরার৷ আহা! যেন এক উৎসব৷

যে সরকারি বাড়িটাকে নিজের বাড়ি ভাবতাম, তার সামনেই একটা পুকুর৷ ছিল বাঁধানো ঘাট৷ পুকুরের দৈর্ঘ্য প্রস্থের মাপ জিজ্ঞেস করলে বিব্রত হব৷ তবে মনের গহীন থেকে ভেসে ওঠা বাইনারি কোড বলছে, মাঝে মাঝেই সেখান থেকে মাছ ধরা হত৷ জাল দিয়ে অনেকে মিলে মাছ ধরতেন৷ হৈ চৈ পড়ে যেত৷

অনেকটা রূপকথার মতো মনে হতে পারে এখন, ঐ স্বল্প-গভীর জলের মাছগুলো আমার চেয়েও দীর্ঘ ছিল! তাই যে পাশে মাছগুলো ধরা হতো, আমি থাকতাম তার থেকে দূরে৷ আর আজকাল বাজারে যেসব ‘বড়' মাছ পাওয়া যায়, সেগুলো তখন ধরা পড়লে ছেড়ে দেয়া হতো, যথেষ্ট বড় নয় বলে!

কী আর করা৷ জীবন যেখানে যেমন!

এখানেই শেষ নয়৷ আরো মজার ঘটনা আছে৷ বাড়ির কাছেই একটা ক্ষেতমতো জায়গায় চিংড়ি মাছ চলে আসত৷ নদীর বড় বড় চিংড়ি৷ কীভাবে আসত কে জানে! যতটুকু বুঝতে পারি, নদীর পানির সঙ্গে চলে আসত৷ এসে আটকে যেত৷ পানি নেমে গেলেও চিংড়িকূলের বিদগ্ধ প্রতিনিধিদের ঘরে ফেরা হতো না৷

যত মাছের গল্প করছি, এই সকল মৎস্যকূল আমার উদরে জায়গা পেত না৷ অন্যমস্তিষ্ক রসনাতৃপ্ত করে অন্যের কণ্ঠ দিয়ে চালান হতো৷

কারণ আমি তখন মাছ খেতাম না! অবাক হবার কিছু নেই৷ সত্যি খেতাম না৷ আরো অবাক হবার কিছু নেই, কারণ আমার বাড়ির কেউ মাছ খেতেন না!

এলাকার বড়কর্তা হিসেবে সমস্ত ভোগে পিতৃমহোদয়ের অগ্রাধিকার থাকলেও তা দুর্ভোগের কারণ হতো মাতৃমহোদয়ের৷ তিনি ও তাঁর কর্মসহযোগীরা মিলে সেই মৎস্যসম্প্রদায়কে কেঁটেকুটে অন্যকে উপঢৌকন পাঠাতেন৷ কিংবা বাড়িতে রান্না হলেও তা হতো অপরের প্রয়োজনে৷

ছোটবেলায় পড়েছিলাম, দ্য কাউ লিভস অন গ্রাস৷ আর আমরা? উই লিভড অন কাউ অর চিকেন৷

এখন? বাড়ির লোকেরা সেইসব স্মৃতি হাতড়ে যেন মরমে মরে যান৷ কী ভীষণ আফসোস!

মাছের প্রতি আমার আগ্রহ জন্মেছে আরেকটু পরে৷ তা-ও বড় মাছগুলোই খেতে মজা, এই গুঢ় তত্ত্বের ওপর ভর করে৷ এই তত্ত্বে বিশ্বাস ছিল বহুকাল৷ যখন বরগুনার পাঠ চুকিয়ে তল্পিতল্পা গুটিয়ে কুমিল্লায় পাড়ি দিলাম, তখন বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে কত হাঁকিয়ে হেঁকে গেছেন ‘কাচকি কাচকি' করে৷ আমাদের টলাতে পারেননি৷

যুবায়ের আহমেদ, ডয়চে ভেলেছবি: Zobaer Ahmed

এমনকি কালের বিবর্তনে টাকি-টেংরারা কখনো সখনো টেবিল অবধি আসতে পারলেও, আমি চোখ ফিরিয়ে নিয়েছি৷ মুখও৷ আর কৈ মাছও আমাকে টানতে পারলো কই? পেরেছে, আরো পড়ে৷

স্কুল পেরিয়ে কলেজ৷ সুবাদে রাজধানীকে চেনা৷ কত লোক, কত রং৷ কত ব্যস্ততা৷ মলা-ঢেলাদের সঙ্গে প্রথম ভাব জমিয়েছি এখানেই৷ এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের সময়টায় মাছ ভর্তায় মজেছি৷ বন্ধুদের সঙ্গে চলে গিয়েছি চিরল চিরল বাতাস বয় যেখানে, সেই বিরিশিরি৷

ওখানে আলুভর্তা স্পেশালিস্ট এক রাঁধুনি খাওয়ালেন বাঁশপাতা মাছ৷ আহা কী স্বাদ!

পেশাগত প্রয়োজনে ছুটে বেড়িয়েছি, দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত৷ শোল, পিউলি, বাটা, শিং, মাগুর, তপসে, পাবদা, খলসে, কাচকি, পাইশা, সরপুটিরা আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খেয়েছে৷ আমিও খেয়েছি তাদের৷

একবার রাজশাহীতে এক অনুজ খাওয়ালেন পদ্মার পাঁচমিশালী মাছ৷ নাম জানি না৷ নানান রকমের ছোট মাছের মিশ্রণ৷ খুব ভোরে ঘাটে পাওয়া যায় মাছগুলো৷ উঠে আসে অন্য মাছের সঙ্গে৷ ঝোল করে রান্না হলো৷ মুখে দিলেই গলে যায়৷ জিহ্বা থেকে পাকস্থলী পর্যন্ত স্বাদ টের পাওয়া যায়৷ 

সাতসমুদ্র তের নদী পেরিয়ে বন শহরেও খুঁজে পেয়েছি এক ঠিকানা৷ যেখানে গেলে মেলে দেশি মাছ৷ সেসব মাছেরা জল ছেড়ে বরফে ঢেকে এ পর্যন্ত আসতে মাস পেরিয়ে যায়৷ তাতে কি? দেশি মাছ তো৷

দেশে বিদেশে কত জায়গায় কত মাছ খেয়েছি৷ কিন্তু মিঠা পানিতে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা মাছের স্বাদ আর কোথায়? নেই৷ চাষের মাছে আঁশ কি মেটে?

যুবায়ের আহমেদের লেখা এই ব্লগ পোস্টটি কেমন লাগলো আপনাদের? লিখুন আমাদের, নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ