মাজিদ যেভাবে ইউরোপ পৌঁছালেন
২ মে ২০১৫সিরিয়া থেকে জার্মানিতে আসা সেই তরুণ, মাজিদ আল-ইউসুফ, সম্প্রতি ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেন৷ জানান যে তিনি দামাস্কাসে তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে ষষ্ঠ সেমিস্টারে পড়ছিলেন৷ কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা গৃহযুদ্ধ তাঁর কাছে অসহ্য মনে হওয়ায়, তিনি ও তাঁর ছোট ভাই ইউরোপ পাড়ি দেয়ার পরিকল্পনা করেন৷ এমনকি এর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ জোগান দিতে তাঁরা দু'জন মিলে বাবাকে গাড়ি বিক্রি করতেও বাধ্য করেন৷ এছাড়া ছোটচাচার কাছ থেকেও কিছু টাকা ধার নেন৷ এভাবেই মোট আট হাজার ডলার জোগাড় হয়৷ এরপর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম থেকে ইতিমধ্যে যাঁরা ইউরোপে পৌঁছে গেছে, তাঁদের অভিজ্ঞতা জেনে নেন তাঁরা৷ বেছে নেন ইউরোপে পৌঁছানোর সবচেয়ে ভালো রুটটিও৷ তারপর শুরু হয় যাত্রা৷
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়া থেকে তথ্য নিয়েই তাঁরা আলজেরিয়ার একটি পাচারকারী গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন৷ এরপর প্রথমে তুরস্ক থেকে বিমানে আলজেরিয়া পৌঁছান মাজিদ ও তাঁর ভাই৷ সিরীয়দের জন্য আলজেরিয়া সীমান্ত উন্মুক্ত হওয়ায় সহজেই তাঁরা সে দেশে ঢুকে পড়েন৷ সেখান থেকে আরেকদল পাচারকারী তাঁদের লিবিয়া সীমান্তে নিয়ে যায়৷ সেসময় তাঁদের সঙ্গে ১২ জন সিরীয় নাগরিক ছিল বলে জানান মজিদ৷ বিমানবন্দর থেকে লিবিয়া সীমান্তে যেতে একেকজনের তিনশ' ডলার করে খরচ হয়৷
এরপরই শুরু...
লিবিয়ার পশ্চিমাঞ্চলের জুওয়ারা উপকূল থেকে ইটালির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছিলেন মাজিদরা৷ পাচারকারীরা তাঁদের প্রথমে একটি ডিঙ্গি নৌকায় করে সাগরে একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা বড় একটা নৌকায় তুলে দেয়৷ লিবিয়া থেকে ইটালি যাওয়ার ছয় ঘণ্টার এই যাত্রার জন্য পাচারকারীরা একেকজনের কাছ থেকে ৬০০ ডলার করে নেয়৷ তবে তাঁরা পাচারকারীদের ১১০০ ডলার করে দিয়েছিলেন বলে জানান মাজিদ৷ বিনিময়ে মাজিদ ও তাঁর ভাই যাত্রার সময় নৌকায় একটু ভালো জায়গা এবং খাবার ও পানির ব্যবস্থা চেয়েছিলেন৷ কিন্তু নৌকায় ওঠার পর মাজিদদের মতো তরুণদের নৌকার নীচের অংশে থাকা ‘ইঞ্জিন রুমে' যেতে বলা হয়৷ নৌকার ওপরের অংশে রাখা হয় নারী ও শিশুদের৷
মাজিদ জানান, ইঞ্জিনের অংশটিতে বেশ গরম ছিল৷ বাতাস চলাচল না থাকায় সেখানে থাকার মতো পরিবেশ ছিল না৷ কিন্তু তারপরও গাদাগাদি করে সেখানে তাঁদের থাকতে হয়৷ মাজিদদের নৌকায় এভাবে প্রায় তিনশ'র মতো মানুষকে তোলা হয়েছিল৷ বেশি মানুষ যেন নৌকায় উঠতে পারেন, সেজন্য মাজিদদের কাছে থাকা ‘লাগেজ' বা বাক্স-প্যাটরা পাচারকারীরা কেড়ে নিয়েছিল৷ ইঞ্জিন রুমে গাদাগাদি করে থাকার কারণে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ এমনকি কেউ কেউ অচেতনও হয়ে যান বলে জানান মজিদ৷ তিনি জানান, ছয় ঘণ্টার এই যাত্রার সময় পাওয়া কষ্ট তাঁর কাছে অসহনীয় মনে হয়েছিল৷
নৌকার কাণ্ডারিও একজন শরণার্থী!
নৌকা উপকূলে পৌঁছানোর আগেই ইটালির নৌ-বাহিনীর একটি জাহাজ মাজিদদের নৌকা ঘিরে ফেলে৷ এরপর তাঁদের একটি শরণার্থী শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়৷ সেখানে তাঁদের খাবার ও পানি দেয়া হয়৷ নৌকায় থাকা কয়েকজন শরণার্থী মনে করেন, নৌকাটি কোনো পাচারকারী চালাচ্ছিল না৷ তাঁদের মতোই একজন শরণার্থী, যাঁর ‘নেভিগেশন' সম্পর্কে সামান্য ধারণা আছে, সে-ই নৌকাটি চালাচ্ছিল৷ পাচারকারীরা শুধু ঐ শরণার্থী চালকের হাতে একটি ‘জিপিএস ডিভাইস' ও একটি ‘স্যাটেলাইট ফোন' দিয়েছিল, যাতে কোনো হলে ইটালির নৌ-বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়!