বঙ্গবন্ধুর খুনি ক্যাপ্টেন মাজেদের ফাঁসি আবার বুঝিয়ে দিলো দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষ কতটা অন্ধ, কতটা অবিবেচক হতে পারে৷
বিজ্ঞাপন
নইলে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া, নিজ হাতে শিশু হত্যা করা কাউকে কিছু মানুষ শহিদের মর্যাদা দিতে চাইতে পারে? তার নসিবে বেহেশত জুটুক- এমন দোয়া খবরের নীচের মন্তব্যের ঘরে থাকতে পারে?
মাজেদের প্রাপ্য শাস্তি আবার বুঝিয়ে দিলো, বিশেষ পরিস্থিতিতে অনেকে সবকিছুকে কেমন যেন নিজের পছন্দমতো বা সুবিধামতো দেখতে পছন্দ করেন৷ তখন যেন মাত্র একটা চোখ ভালো থাকে তাদের আর তা দিয়ে সব সত্যের অর্ধেকটা দেখেন, বাকিটা অদেখা থেকে যায়৷
বেগম খালেদা জিয়ার শর্তসাপেক্ষ মুক্তির দিনে তাকে দেখতে কয়েক হাজার মানুষ ছুটে গিয়েছিলেন৷ করোনা পরিস্থিতিতে এত লোক সমাগমের যথেষ্ট সমালোচনা হয়েছে৷ একটি টেলিভিশন চ্যানেলের একজন সাংবাদিক সংক্রমিত হয়েছেন, জানা গেছে, তিনি ওই নিউজ কাভার করেছিলেন এবং তারপরই করোনার উপসর্গ দেখা দেয় তার শরীরে৷
গতকাল পর্যন্ত কেরানীগঞ্জে কমপক্ষে ২২ জন করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন৷ এই তথ্য খুনি মাজেদের ফাঁসির আগের৷ ফাঁসির সময় ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে অনেক মানুষ কারাগারের কাছে ভিড় করেছিলেন৷ অথচ এ বিষয়টিকে কোনো খবরে গুরুত্ব পেতে দেখা যায়নি৷
কিন্তু বিষয়টি তো খুব গুরুত্বপূর্ণ৷করোনার সংক্রমণ ছড়ানোর মতো কোনো সমাবেশই তো এখন কোথাও হওয়া উচিত নয়!
তা সত্ত্বেও বিষয়টি আলাদা করে খবরে এলো না কেন? বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জড়িতের ফাঁসির খবরকে যথাযথ গুরুত্ব দিতে গিয়ে এমন বিষয়কে গুরুত্ব না দেয়া তো প্রকারান্তরে বড় বিপদকে স্বাগত জানানোর শামিল৷ রাজনৈতিক জমায়েত হতে দিয়ে মসজিদ-মন্দিরসহ অন্যান্য স্থানের জমায়াতের বিষয়ে কঠোর হলে কি করোনা ভাইরাসকে ঠেকানো যাবে? বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডে জড়িত ক্যাপ্টেন মাজেদের ফাঁসির সর্বোচ্চ গুরুত্ব স্বীকার করেও এই প্রশ্নের উত্তর এখনই জানা দরকার!
দেখুন ২০১৭ সালে আগস্টের ছবিঘর...
বঙ্গবন্ধুর খুনিরা কে কোথায়?
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর কার্যকর হয় ছয় খুনির মৃত্যুদণ্ড৷ পলাতক ছয় খুনির একজন মারা গেছেন৷ বাকি পাঁচজন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বিভিন্ন দেশে৷ বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের নিয়ে এই ছবিঘর৷
ছবি: Bdnews24.com
৫ খুনির দণ্ড কার্যকর
২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত পাঁচ খুনিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়৷ এরা হলেন কর্নেল (অব.) সৈয়দ ফারুক রহমান, কর্নেল (অব.) সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, লে. কর্নেল (অব.) মহিউদ্দিন আহমদ (ল্যান্সার), মেজর (অব.) এ কে বজলুল হুদা এবং মেজর (অব.) এ কে এম মহিউদ্দিন (আর্টিলারি)৷ এছাড়া পলাতক অবস্থায় খুনিদের একজন আবদুল আজিজ পাশা ২০০১ সালের ২ জুন জিম্বাবোয়েতে মারা গেছেন৷
ছবি: Bdnews24.com
এখনও অধরা ৫ খুনি
বিভিন্ন দেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন লে. কর্নেল (বরখাস্ত) খন্দকার আবদুর রশিদ, মেজর (বরখাস্ত) শরিফুল হক ডালিম, লে. কর্নেল (অব.) এ এম রাশেদ চৌধুরী, মেজর (অব.) এসএইচএমবি নূর চৌধুরী ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন খান৷ গ্রেপ্তার বা প্রত্যার্পণ ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র, ক্যানাডা, পাকিস্তান, লিবিয়াসহ আফ্রিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বারবার অবস্থান বদলে করেছে খুনিরা৷
ছবি: Bdnews24.com
রাজনৈতিক আশ্রয়
রাশেদ চৌধুরী এখন অবস্থান করছেন যুক্তরাষ্ট্রে৷ নানাভাবে চেষ্টা সত্ত্বেও দেশটিতে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়া এই খুনিকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি হয়নি৷ বারবার কূটনৈতিক কথা চালাচালি হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আশ্বাসও মিলেছে৷ কিন্তু আলোচনায় কখনই গতি আসেনি৷
ছবি: Bdnews24.com
মৃত্যুদণ্ডই বাধা
নূর চৌধুরী অবস্থান করছেন ক্যানাডায়৷ তিনিও দেশটিতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন, কিন্তু তা খারিজ করে দিয়েছে আদালত৷ এ ব্যাপারে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে কথা বলেছেন স্বয়ং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ কিন্তু মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া কোনো আসামিকে হস্তান্তর করা ক্যানাডার আইন অনুযায়ী বৈধ নয়৷ সে কারণে আইনি জটিলতাতেই এখনও আটকে আছে নূর হোসেনের ভাগ্য৷
ছবি: Bdnews24.com
ঘাতকেরা কে কোথায়?
বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের আরেকজন মোসলেম উদ্দিনও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন বলে তথ্য রয়েছে৷ এর আগে তার ভারত ও জার্মানিতে অবস্থানের তথ্যও ছিল গোয়েন্দাদের কাছে৷ মোসলেমও যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন৷ তবে তা খারিজ হয়ে যাওয়ার পর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে থাকার আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন৷ তবে তার সঠিক অবস্থান নিশ্চিত হতে পারেনি বাংলাদেশ সরকার৷
ছবি: Bdnews24.com
নিশ্চিত নয় অবস্থান
বাকি তিন খুনি শরিফুল হক ডালিম, আবদুর রশিদের অবস্থানের ব্যাপারে সরকারের কাছে কোনো নিশ্চিত তথ্য নেই৷ তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে লিবিয়া, সেনেগালসহ বিভিন্ন দেশে যাতায়াত করলেও তিনি স্থায়ীভাবেই পাকিস্তানে বসবাস করেন৷ তবে বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে পাকিস্তানের কাছে জানতে চাওয়া হলেও, মেলেনি সে উত্তর৷