একই সঙ্গে শরীরচর্চা এবং পরিবেশ সংরক্ষণ কি সম্ভব? প্যারিসের একদল ক্রীড়াবিদ এক ঢিলে দুই পাখি মারার পথ বেছে নিয়েছেন৷ জ্বালানির অপচয় কমাতে তাদের অভিযান এমনকি পৌর কর্তৃপক্ষেরও সমর্থন আদায় করছে৷
ছবি: Benoit Tessier/REUTERS
বিজ্ঞাপন
পরিবেশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে প্যারিসের ‘অন দ্য স্পট' নামের সংঘের সাহস ও উদ্যমের শেষ নেই৷ পার্কুর ক্রীড়াবিদ হিসেবে সদস্যরা সহজেই রাতে দেওয়াল বেয়ে উঠে দোকানের শো-কেস ও বিজ্ঞাপনের হোর্ডিংয়ের বাতি নিভিয়ে দেন৷ পার্কুর ক্রীড়াবিদ হিসেবে এমেরিক কোত্যাঁ এই উদ্যোগ সম্পর্কে বলেন, ‘‘জ্বালানির অপচয় এড়াতেই আমরা এই কাজ করি৷ মনে রাখতে হবে, বিশ্বের জনসংখ্যা প্রায় ৭০০ কোটি৷ সবাই যদি ছোট ছোট পদক্ষেপ নেয়, তাহলে আমরা সবাই মিলে অনেক পরিবর্তন আনতে পারি৷ সেটাই আমাদের বার্তা৷ কাজটা করতেও ভালো লাগে৷ আমরা চ্যালেঞ্জ ভালোবাসি এবং সন্ধ্যাটা সুন্দর কাটে৷ সেটাই সবচেয়ে বেশি জরুরি৷''
২০২০ সাল থেকে এই গোষ্ঠী রাত একটা নাগাদ প্যারিসের কেন্দ্রস্থলে মিলিত হয়৷ তারপর আলোকিত শো-কেসের সন্ধানে শিকার অভিযান শুরু হয়৷ তবে সেই প্রক্রিয়ায় কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়৷ ‘অন দ্য স্পট' উদ্যোগের প্রতিষ্ঠাতা কেভিন হা বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে আমাদের অভিযান চলে৷ জানালার যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, আমরা সে দিকে নজর রাখি৷ ল্যাম্পপোস্টের মতো নাগরিক পরিষেবা কাঠামোয় আমরা হাত দেই না৷ ওষুধের দোকান বা পুলিশ স্টেশন থেকেও দূরে থাকি৷ তাছাড়া নিজেদের চোট লাগতে পারে, এমন কোনো কাজ আমরা করি না৷''
সহজেই কয়েকটি আলোর সুইচের নাগাল পাওয়া যায়৷ তবে চার মিটার উঁচু পর্যন্ত সুইচ পর্যন্ত পৌঁছতে এই গোষ্ঠীর কোনো সমস্যা হয় না৷ ক্রীড়াবিদ হিসেবে নিজেদের দক্ষতাই তাদের সম্বল৷ বিপদ এড়াতে বৃষ্টি বা বরফের সময় তাঁরা সেই কাজ করেন না৷ এমেরিক কোত্যাঁ বলেন, ‘‘পুলিশের সামনে পড়লে আমরা একটু আলোচনা করে বুঝিয়ে বলি, কেন এই কাজ করছি৷ কোনো কিছু নষ্ট করি না বলে সাধারণত আমাদের কোনো সমস্যা হয় না৷ এটা সদিচ্ছার প্রশ্ন এবং ভালো ও অর্থবহ কাজ৷''
প্যারিসের পরিবেশ সচেতন ক্রীড়াবিদেরা
04:23
This browser does not support the video element.
৩০ বছর বয়সি কেভিন হা এই গোষ্ঠীর আয়োজক৷ ২০০৭ সাল থেকে এই ইঞ্জিনিয়ার পার্কুর ক্রীড়া চর্চা করছেন৷ অনুশীলনের লক্ষ্যে দিনের বেলায় তিনি প্যারিসের এক বহুতল ভবনের উঠানে সমমনস্ক মানুষের সঙ্গে মিলিত হন৷ দিনে কমপক্ষে আড়াই ঘণ্টা কসরৎ করেন তিনি৷ কেভিন হা বলেন, ‘‘সেটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় প্রেরণা এবং এই ক্রীড়া আমাদের সংঘের ডিএনএ-ও বটে৷ ইকোলজির প্রতি আমাদের সবারই টান রয়েছে, এবং এই সমস্যা সবাইকেই প্রভাবিত করে৷ তবে ভুললে চলবে না যে আমরা কিন্তু কোনো রাজনৈতিক গোষ্ঠী নই৷ চরমপন্থি পরিবেশবাদীদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই৷ আমাদের কাছে ক্রীড়াই মূলমন্ত্র৷''
আজ রাতেও কেভিন হা-র নেতৃত্বে গোষ্ঠীর সদস্যরা মিলিত হচ্ছেন৷ হাতে বেশ কিছু কাজ রয়েছে৷ বেশিরভাগ পর্যটক ও স্থানীয় বাসিন্দা এই গোষ্ঠীর কাজকে সমর্থন করেন৷
প্যারিস প্রেম-ভালোবাসা ও আলোকসজ্জার শহর হিসেবে পরিচিত৷ ২০১৮ সালের এক বিধি অনুযায়ী রাত একটা থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত শো-কেসের আলোকসজ্জা ও হোর্ডিং-এর আলো বন্ধ রাখার কথা৷ সে কারণে প্যারিসের পৌর কর্তৃপক্ষও এই ক্রীড়াবিদদের কাজকে স্বাগত জানায়৷ পৌরসভার কাউন্সিলার আন্ সুইরি বলেন, ‘‘এটা ঠিক পুরোপুরি আইনি পথ না হলেও তারা তো কোনো কিছু নষ্ট করছে না৷ সচেতনতা বাড়ানোর ভালো উদ্যোগ৷ তাছাড়া আমরা নিজেরা পোস্টার ও বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আলো জ্বালিয়ে রাখার সমস্যা সম্পর্কে বেশি কার্যকর হতে পারতাম না, যেমনটা এই অভিযান সম্ভব করছে৷''
জলবায়ু সংরক্ষণের জন্য ক্লাইম্বিং শখ হিসেবে আদর্শ৷ কেভিন হা ও তাঁর গোষ্ঠীর সদস্যরা ক্রীড়ার প্রতি ভালোবাসার সঙ্গে এক মেহৎ উদ্দেশ্যের মেলবন্ধন ঘটাচ্ছেন৷
ক্রিস্টিনে লেবার্ট/এসবি
ইউরোপের আইকনিক শহর প্যারিসে কী দেখবেন?
ইউরোপ মানেই ইতিহাসের হাতছানি৷ ইউরোপের কোন শহরে যেতে চান আপনি? প্যারিস? শিল্পসমৃদ্ধ এই শহরে গেলে কী কী দেখতেই হবে, চলুন দেখে নেওয়া যাক ছবিঘরে..
ছবি: Marcel Ibold/Chromorange/picture alliance
আইফেল টাওয়ার
১,০৬৩ ফুট লম্বা (৩২৪ মিটার) এই আইফেল টাওয়ার তৈরি হয়েছিল ১৮৮৯ সালে৷ টাওয়ারের স্থপতি গুস্তাভ আইফেল ফরাসি বিপ্লবের শতবর্ষ পূর্তিতে এটি নির্মাণ করেন৷ প্রতি বছর প্রায় ৭০ লাখ পর্যটক আসেন শুধু আইফেল টাওযার দেখতে৷ তিনটি তলবিশিষ্ট আইফেল টাওয়ারে (৫৮ মিটার, ১১৫ মিটার, ২৭৫ মিটার) লিফটে ওঠানামা করা যায়৷ তবে অন্য অ্যাডভেঞ্চার করতে এক হাজার ১,৬৬৫ ধাপ সিঁড়িও বাইতে পারেন ৷
ছবি: Givaga/Zoonar/picture alliance
দ্য ল্যুভঁ দেখতেই হবে
দ্য ল্যুভঁ মিউজিয়ামে সবচেয়ে বেশি পর্যটক আসেন সারা পৃথিবী থেকে৷ প্যারিসের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই ঐতিহাসিক বিল্ডিং৷ প্রায় দুই লাখ ১০ হাজার বর্গমিটার এলাকাজুড়ে প্রদর্শনীর আয়োজন৷ সারা দিন ধরে থাকলেও এই সংগ্রহশালার সবটা দেখে ওঠা মুশকিল৷ তিন ঘণ্টার একটা 'হাইলাইট' বুকিং করা সম্ভব৷ এর ফলে মোনালিসা, ভেনাস দে মিলো এবং উইংড ভিক্টরি দেখে নেওয়া যাবে৷
শিল্পসাহিত্য রসিকেরা মিউজি ড'সে-তে যেতে পারেন৷ একসময়ে এটা ছিল ট্রেন স্টেশন৷ক্যাফেতেও যেতে ভুলবেন না৷ ১৭ থেকে ১৯ শতকের সময়ের বিশাল বিল্ডিং যেখানে শীতের সময় ফলের গাছগুলিকে সুরক্ষা দেওয়া হত, সেগুলি দেখতে ভুলবেন না যেন৷ শ্যাওলা থেকে তৈরি রং দিয়ে আঁকা ট্যাপেস্ট্রি কিংবা 'ওয়াটার লিলি পেইন্টিং'-ও দেখতেই হবে৷ দেখতে হবে রাডি মিউজিয়ামও৷
ছবি: Bildagentur-online/AGF-Foto/picture alliance
এই দ্বীপে প্যারিসের জন্ম
পনউফের মাধ্যমে ইল দে লা সি মূল ভূখণ্ডে সংযুক্ত হয়েছে৷ এখানে রয়েছে কঁসিয়াজেরি৷ এই প্রাসাদকে ফরাসি বিপ্লবের সময় সংশোধনাগারে পরিণত করা হয়েছিল৷ নত্রদাম গির্জাও রয়েছে৷ তবে এখন রক্ষণাবেক্ষণের কারণে বন্ধ৷ সেইন্ট চ্যাপেল গির্জাও রয়েছে পাশে৷
ছবি: Roman Sigaev/Zoonar/picture alliance
সবুজের সমারোহে হেঁটে দেখা
প্যারিসীয়রা শহরের বুকে সবুজের মাঝে ঘুরতে ভালবাসেন৷ লুক্সেমবার্গ উদ্যান, লেটরিয়েরি উদ্যানের মতো একাধিক জায়গা রয়েছে৷ প্যারিস শহরের উত্তর-পূর্বে বিট শুম উদ্যানে ঘুরতেও দারুণ লাগবে৷
খাবারের জন্য বিশেষ সুনাম রয়েছে ফরাসিদের৷ বেকিং করা খাবার, ক্রসঁ, শামুক-ঝিনুক-সহ নানা সি-ফুড চেখে দেখতে পারেন৷ মিষ্টিজাতীয় খাবার পছন্দ হলে গ্লাস আইসক্রিম, ক্রেমে ব্রুলি রয়েছে৷ পনির আর রুটির হরেক সম্ভার রয়েছে এবং অবশ্যই ওয়াইন অর্থাৎ পানীয়ের স্বাদ নিতে ভুলবেন না৷
ছবি: Kelly Linsale bePress Photo Agency/bppa/abaca/picture alliance
প্যারিস মানেই সংগীতের মূর্চ্ছনা
দ্য পালে গার্নিয়ে-তে সংগীত আয়োজন শুনতে পারেন৷ টিকিট কেনার ক্ষমতা না থাকলে অপেরা হাউস রয়েছে৷ অসাধারণ কারুকার্য এই হাউসের৷ ইতিহাসকে ছুঁয়ে দেখতে চাইলে গাইড-সহ ট্যুর বুকিং করাই ভাল৷
ছবি: James Byard/Zoonar/picture alliance
প্যারিসের সেরা ভিউ
আইফেল টাওয়ার থেকে প্যারিসের সেরা দৃশ্যগুলি দেখা যায়৷ মপারনাস ট্যুরের ৫৬ তলা থেকে অসামান্য দেখায় এ শহরকে৷ আর্ক দে ত্রিয়ম্ফ থেকে ১২টি অ্যাভিনিউ দেখতে দারুণ লাগে৷ শঁজেলিজেও রয়েছে এই গাছে ঘেরা রাস্তাগুলির মধ্যে ৷
ছবি: Givaga/Zoonar/picture alliance
মমার্ত এবং সাকরে ক্যও
প্যারিসে গেলে মমার্ত অবশ্যই যেতে হবে৷ সাকরে ক্যও বাসিলিকা কিংবা ফিউনিক্যুলা মমার্ত থেকে ঘুরে আসতে পারেন৷ প্লাসে দু তেরতে গিয়ে নিজের পোর্ট্রেট কিংবা ক্যারিকেচার আঁকিয়ে নিতে পারেন শিল্পীদের থেকে৷ শৈল্পিক ক্যাফে আর বুটিক তো আছেই৷
ছবি: Daniel Kalker/picture alliance
ভিড় থেকে আড়ালে
সেওয়ের মিউজিয়াম কিংবা ক্যাটাকম্বসে মাটির নীচে ঘুরে বেড়াতে পারেন৷অব্যবহৃত রেললাইনে তৈরি উদ্যান, কিংবা পের লাশেসের সমাধিস্থলে হেঁটে বেড়াতে পারেন৷সন্ধ্যা নামলে আইফেল টাওয়ারের লাইট শো দেখতে পারেন৷ সবমিলে প্যারিস ভ্রমণ হয়ে উঠবে জমজমাট৷