ঢাকায় খেলার মাঠগুলো দখল হয়ে যাচ্ছে৷ কোনটি দখল করছে ব্যক্তি আবার কোনটি ক্লাবের নামে দখল করে প্রভাবশালীরা সাধারণ মানুষকে ঢুকতে দিচ্ছেনা৷ সেখানে স্থাপনা নির্মাণ করে চালু করা হচ্ছে নানা ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান৷
বিজ্ঞাপন
যার সর্বশেষ শিকার ঢাকার ধানমণ্ডি মাঠ৷ ধানমণ্ডি মাঠ রক্ষার জন্য শুক্রবার বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপাসহ ২৫টি পরিবেশ, সামাজিক এবং শিশু সংগঠন মাঠের সামনের সড়কে আয়োজন করে সমাবেশ ও মানববন্ধন৷ আর সেই মানববন্ধনে অংশ নিয়ে মাঠের জন্য কেঁদে ফেলে ধামন্ডিরই একটি স্কুলের শিক্ষার্থী তন্ময় (১২)৷ তার কথা ‘‘স্কুলে খেলার মাঠ নাই৷ আবার এই মাঠে খেলতে এলেও দারোয়ান ঢুকতে দেয়না৷ তারপরও ঢুকতে চাইলে ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দেয়৷ তাহলে আমরা কোথায় যাব, কোথায় খেলাধুলা করব? কতক্ষণ আর ঘরে বসে কম্পিউটারে গেমস খেলা যায়!'' তার একটিই কথা, ‘‘ভবন চাইনা, চাই খেলার মাঠ৷'' আর নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তাবরেজ বলেন, ‘‘স্কুল জীবনে ধানমণ্ডি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে মাঠ পাইনি৷ খেলার মাঠ বলতে এই ধানমণ্ডি মাঠকেই চিনি৷ কিন্তু ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে সেই মাঠ৷''
ধানমণ্ডি মাঠটি গত কয়েক বছর ধরে শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব নামে একটি ক্লাবকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তাদের খেলোয়াড়দের অনুশীলনের জন্য৷ কিন্তু তারা মাঠটিতে এখন জনসাধারণের প্রবেশ বন্ধ করে দিয়ে স্থাপনা নির্মাণ করছে৷ বাপা-র সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী জানান, ‘‘আদালতের নির্দেশনা মানছেনা ক্লাব কর্তৃপক্ষ৷ মাঠটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিতে আদালতের নির্দেশনা আছে৷''
বিভিন্ন দেশের শিশুদের লেখা শেখার কৌশল
বিভিন্ন দেশে শিশুদের শেখার ধরণ ভিন্ন ভিন্ন৷ জার্মানিতে এই হেমন্তেই শিশুদের লেখা শেখার একটি নতুন নিয়ম চালু হয়েছে৷ কোন দেশের শিশুদের কীভাবে লেখায় হাতে-খড়ি হয়, চলুন সে বিষয়ে জানা যাক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চীন: যত তাড়াতাড়ি লেখা শেখা যায়, তত ভালো
চীনে তিন বছর বয়স হলে বাচ্চাদের কিন্ডারগার্টেনে পাঠানো হয় অক্ষরজ্ঞান শেখার জন্য৷ তবে শিশুরা ঠিকমতো লেখা শিখতে শুরু করে ছয় বছর বয়সে৷ পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বাচ্চাদের দশ হাজার অক্ষর শিখে ফেলতে হয়, যা বেশ কঠিন৷ পরে যা শিখতে হয় তার তেমন কোনো নির্ধারিত নিয়ম নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জাপান: স্কুল ফাইনাল শেষ হওয়া পর্যন্ত
ক্লাস ওয়ান শেষ হওয়া মানেই কিন্তু লেখা শেখা শেষ নয় জাপানে৷ সেখানে ক্লাস নাইন পর্যন্ত সিলেবাসেই থাকে নির্ধারিত কিছু অক্ষর শেখার নিয়মকানুন৷ জাপানে লিখতে পারার জন্য একজনকে মোটামুটি ২১০০ অক্ষর জানতে হবে৷ জাপানে লেখা জানার জন্য নিয়মিত অনুশীলন করতে হয়, তা না হলে কোনো না কোনো অক্ষর খুব সহজেই ভুলে যেতে পারে যে কেউ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মিশর: একটি ‘নতুন’ ভাষা
মিশরের বাচ্চাদের লেখা শেখার সাথে সাথে একটি নতুন ভাষাও শিখতে হয়৷ কারণ সেখানে বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক ভাষা রয়েছে৷ যার ফলে, সেখান থেকে শুদ্ধ আরবি ভাষাকে আলাদা করা বেশ অসুবিধা৷ এছাড়া, সেখানকার কোনো স্কুলে ক্লাসে প্রতি ৮০ জন করে ছাত্র থাকে৷ ফলত লেখাপড়ার মান নীচু হয়৷ এর জন্য অনেক ছাত্র কখনোই ঠিকমতো লিখতে বা পড়তে পারে না৷
ছবি: Fotolia/Ivan Montero
মরক্কো: শুধু আরবি ভাষা নয়
বেশি দিন আগের কথা নয়, যখন মরক্কোর স্কুলে বাচ্চারা শুধু আরবি ভাষা শিখতো৷ তবে ২০০৪ সাল থেকে এর পরিবর্তন হয়েছে৷ তখন থেকেই ক্লাস ওয়ানের বাচ্চাদেরও হিব্রু ভাষার পাশাপাশি তামাসিখট ভাষাও শিখতে হয়৷ গ্রামাঞ্চলে অক্ষরজ্ঞান নেই এবং শুধু হিব্রু ভাষায় কথা বলে, এ রকম মানুষের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে৷ ২০১১ সাল থেকে তামাসিখট ভাষাকে সেখানকার স্বীকৃত ভাষা হিসেবে সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়৷
ছবি: picture alliance/Ronald Wittek
পোল্যান্ড: শূন্য থেকে শুরু
পোল্যান্ডে স্কুল শুরু হয় ক্লাস ওয়ান থেকে নয়, শূন্য থেকে৷ স্কুলে যাবার আগেই প্রতিটি শিশুর শূন্য ক্লাসে বা কিন্ডারগার্টেনে যাওয়া বাধ্যতামূলক এবং তখন খেলার ছলে বাচ্চাদের অক্ষরজ্ঞান দেওয়া হয়৷ অবশ্য ঠিকমতো লেখা শেখা শুরু হয় ক্লাস ওয়ান থেকেই৷ তবে কোনো কোনো অক্ষর খুব ভালো করে শিখতে বা মনে রাখতে হয়, কারণ সেগুলোর উচ্চারণ প্রায় একই রকম৷ এক্ষেত্রে বাংলার ‘ন’ এবং ‘ণ’ অক্ষরের সাথে তুলনা করা যেতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/PAP
সার্বিয়া: ভাষা এক, লেখা দু’রকম
সার্বীয় ভাষা সিরিলিক এবং ল্যাটিন অক্ষরে লেখা হয়, তাই বাচ্চাদের ছোটবেলা থেকেই একসাথে দু’রকম লেখা শিখতে হয়৷ ক্লাস ওয়ানে শিখতে হয় সিরিলিক অক্ষর, তারপর ল্যাটিন৷ কয়েক বছর পর ছাত্ররা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারে তারা কোন ভাষাকে প্রাধান্য দিতে চায়৷
ছবি: DW/D. Gruhonjic
জার্মানি: শুনে শেখা
২০ বছর আগে থেকেই এই সিস্টেম বা মাধ্যমে বহু স্কুলে লেখা শেখানো হয়ে থাকে৷ শেখার সুবিধার জন্য বোর্ডে একটি জানালার ছবির পাশে শুধু ‘জ’ বা ঘড়ির পাশে ‘ঘ’ লেখা হয়৷ বাকিটা শিখতে হয় শুনে শুনে৷ সমালোচকদের অভিযোগ, এভাবে অনেক বাচ্চার পক্ষেই ঠিকমতো লেখা শেখা সম্ভব নয়৷ তবে এই নিয়মে পড়া শেখার ব্যাপারে কিন্তু তাড়াতাড়ি সাফল্য এসেছে৷
ছবি: Grundschule Harmonie
7 ছবি1 | 7
শিক্ষাবিদ এবং বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের প্রধান অধ্যাপক আব্দু্ল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রয়াত ছোট ভাই শেখ জামালের নামে ‘শেখ জামাল ক্লাব'-এর কথা বলে একটি গোষ্ঠী মাঠ দখলের পাঁয়তারা করছে৷ তার এরইমধ্যে মাঠে স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরু করেছে৷ তাই আমরা এই মাঠ রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীকে উদ্যোগ নেয়ার অনুরোধ করছি৷''
তবে ক্লাবের সভাপতি মেজর (অব.) মঞ্জুর কাদের অবশ্য ডয়চে ভেলে-র কাছে দাবি করেন, ‘‘তারা কোন স্থাপনা নির্মাণ করছেন না৷ মাঠটিকে সরকার একটি ক্রীড়া কমপ্লেক্সে রূপান্তর করছে৷ তারই অংশ হিসেবে মাঠের একাংশে ২টি টেনিস কোর্ট, ২টি ব্যাডমিন্টন কোর্ট এবং একটি বাস্কেটবল কোর্ট নির্মাণ করা হচ্ছে৷ আর মাঠের অপর অংশ খেলাধুলার জন্য মাঠ হিসেবেই ব্যবহার করা হচ্ছে৷'' তিনি দাবি করেন, ‘‘এই মাঠে জনসাধারণকে প্রবেশে কোনো বাধা দেয়া হচ্ছে না৷ আর সবাই এটা ব্যবহার করতে পারবেন৷'' তবে মাঠের মালিক ঢাকা সিটি কর্পোরেশন জানিয়েছে, এখানে কোন ধরনের কোন নির্মাণ কাজের খবর তাদের জানা নেই৷
এদিকে বাপা-র যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল ইকবাল হাবিব ডয়চে ভেলেকে জানান, শুধু ধানমণ্ডি মাঠ নয়, ঢাকার ছোট-বড় প্রায় শতাধিক খেলার মাঠ দখল হয়ে গেছে৷ আর ঢাকা সিটি কর্পোরেশন জানায়, তাদের হিসেবে তাদের ৫০টি মাঠ এখন অবৈধ দখলদারদের কব্জায় চলে গেছে৷ এর মধ্যে ১০টি মাঠ তার উদ্ধারে কাজ করছেন৷