মাঠে লাঠি, কথায় লাঠি কোন দিকে যাচ্ছে রাজনীতি
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২লাঠির জবাব লাঠিতে দেয়ার কথা হচ্ছে৷ এই পাল্টাপাল্টি চরম অবস্থান রাজনীতিকে কোন দিকে নিয়ে যাবে তা নিয়ে আতঙ্কিত খোদ দুই দলের নেতারাই৷ আওয়ামী লীগ নেতা এস এম কামাল হোসেন বলেছেন, ‘‘বিএনপিকে মাঠে নামতে দেয়া হবে না৷ তারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে৷'' আর বিএনপি নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, ‘‘নির্যাতন আর হামলা প্রতিরোধ করে বিএনপি এগিয়ে যাবে৷ সরকার কথা এবং কাজে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাচ্ছে৷''
সর্বশেষ মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্রদলের নেতা কর্মীদের ব্যাপক লাঠিপেটা করে ছাত্রলীগ৷ ভিসির সাথে দেখা করতে যাওয়ার সময় ছাত্রদলের উপর চড়াও হয় তারা৷ এর একদিন আগে হাজরীবাগে লাঠির মাথায় জাতীয় পতাকা বেধে শোডাউন করে বিএনপি৷
গত এক মাসের ঘটনা বিবেচনায় এক পাক্ষিকভাবে বিএনপির কর্মসূচিতে হামলা হচ্ছে, মামলাও হচ্ছে তাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে৷ বিএনপির অন্তত চার জন কর্মী নিহত হয়েছেন৷ বিএনপি নেতারা বলছেন, এই হামলা মামলায় ভয় না পেয়ে তাদের নেতা-কর্মীরা চাঙ্গা হচ্ছেন৷ তারা বলছেন, রাজপথ দখলের লড়াই শুরু হয়ে গেছে৷ সরকারের পতন এখন সময়ের ব্যাপার৷ আর আওয়ামী লীগ বলছে, তারা মাঠে নামলে বিএনপিকে থাকবে না৷
বিএনপি নেতারা এরইমধ্যে তাদের নেতা-কর্মীদের লাঠি ও লাইসেন্স করা অস্ত্র নিয়ে কর্মসূচিতে যোগ দিতে বলেছেন৷ তারা বলছেন, বন্দুকের নল আওয়ামী লীগের দিকেও ঘুরে যেতে পারে৷ আর আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপিকে রাজপথে জবাব দেয়ার কথা বলছেন৷ তারা বলছেন, রাজপথে নামলে বিএনপিকে খুঁজে পাওয়া যাবে না, লীগ খেলতেই বিএনপির পা ভেঙে যাবে৷ ফলে রাজপথের উত্তাপ এখন কথায়ও৷ আর এই কথার উত্তাপই আবার মাঠ উত্তপ্ত করছে৷
বিএনপি প্রতিরোধ করে এগিয়ে যাবে
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘‘সরকার তার কথা, হামলা আর মামলার মধ্য দিয়ে যা করছে তাতে একটি নৈরাজ্যকর অবস্থা বিরাজ করছে৷ তাদের কথায় এবং কাজে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অব্যাহত আছে৷ এটা চলতে থাকলে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাবে৷ এর দায় সরকারকেই নিতে হবে৷ বিএনপি এতে ভয় পায় না৷ জনগণকে সাথে নিয়ে আন্দোলন আরো তীব্র করে এই সরকারকে বিদায় করব৷''
লাঠির মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে নেতা-কর্মীদের কর্মসূচিতে আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘পল্লবীতে আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে লাঠি দিয়ে তারা হামলা করছে৷ মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে তারা হামলা করেছে৷ বিভিন্ন জেলায় আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে লাঠি নিয়ে হামলা করছে, রক্তাক্ত করছে, হত্যা করছে৷ গতকালকে( মঙ্গলবার) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ওপর লাঠি নিয়ে ব্যাপক হামলা চালানো হয়েছে৷ তাই আমরা বাধ্য হয়েই আত্মরক্ষার্থে লাঠি সাথে রাখছি৷ এটা আওয়ামী লীগ এবং সরকার আমাদের হাতে তুলে দিয়েছে৷''
তার কথা, ‘‘আমাদের এই আন্দোলনে দেশের মানুষের সমর্থন আছে বলেই আমরা শহরে, নগরে, বন্দরে এইসব হামলা প্রতিরোধ করে কর্মসূচি পালন করতে পারছি, হামলা প্রতিরোধ করব আমরা৷ এভাবে জনগণের আন্দোলনকে দমন করা যায় না৷ এই দমন নীতি সরকারের জন্য বুমেরাং হবে৷''
বিএনপিকে মাঠে নামতে দেয়া হবে না
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেছেন, ‘‘তারেক জিয়া কোনো রাজনৈতিক নেতা নয়৷ তিনি লন্ডনের ক্যাসিনোতে বসে দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির নির্দেশ দিচ্ছেন৷ এ কারণে ফখরুলরা বলছে লাঠি নিয়ে নামতে হবে৷ লাঠি আরো লম্বা করতে হবে, নিজস্ব অস্ত্র নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে৷ কিন্তু আওয়ামী লীগ তো বিএনপিকে রাস্তায় নামতে দেবে না৷ বিএনপিকে রাস্তায় নামতে হলে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে বলতে হবে, আমরা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে অন্যায় করেছি, আর করব না৷ আমরা বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদের দেশ বানিয়েছি, আর বানাব না৷ বাংলা ভাইদের প্রশ্রয় দিয়ে ভুল করেছি৷ বিএনপি যদি বলে আমরা শাহ এ এম এস কিবরিয়া , আহসান উল্লাহ মাস্টারকে নিরপত্তা দিতে পারিনি এজন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, তাহলে বিএনপি রাস্তায় নামতে পারবে৷'' তার কথা, ‘‘আমরা এখন আরো কঠিন অবস্থায় যাবো৷ বিএনপি যেভাবে হুমকি দিচেছ যে আমাদের ঘর থেকে বের হতে দেবে না, আমরা যদি চূড়ান্তভাবে রাস্তায় নামি তাহলে বিএনপি ঘর থেকে বের হতে পারবে না৷''
বিএনপির ওপর সব হামলার দায় স্বীকার না করলেও তিনি ‘কিছু' হামলার কথা স্বীকার করে সেগুলোকে দুঃখজনক বলে অভিহিত করেন৷ আর এই হুমকি পাল্টা হুমকিতে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘‘সেরকম পরিস্থিতি হলে আমরা প্রশাসনের সহযোগিতায় দেশের মানুষের নিরাপত্তা ও দেশের শান্তির জন্য সার্বক্ষণিকভাবে মাঠে থাকবো৷''
নির্বাচনের আগে আরো হিসাব আছে
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার মনে করেন এখন পরিস্থিতি যাই হোক না কেন তা শেষ পর্যন্ত আরো সহিংস হওয়ার আশঙ্কা নেই৷ তার কথা, ‘‘নির্বাচনের অনেক বাকি৷ ভোটের আগে রাজনৈতিক হিাসাব নিকাশ অনেক পাল্টে যাবে৷ আরো অনেক সমীকরণ আছে৷ একটি ভালো নির্বাচনের জন্য সব দিক থেকে সরকার এবং সব দলের ওপর চাপ আছে৷ আমি মনে করি না আওয়ামী লীগ বা বিএনপির কারুরই ২০০৬ সাল বা ২০১৪ সালের মত পরিস্থিতি তৈরি করার মত অবস্থা আছে৷''
তাতিনি বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের কথায় এখন মাঠ উত্তপ্ত হচ্ছে৷ আর সাংবাদিকদেরও দায়িত্বশীল হতে হবে৷ তারা নির্বাচনের দেড় বছর আগেই এমনভাবে খবর পরিবেশন করছে যেন দেশে একটি যুদ্ধাবস্থা তৈরি হচ্ছে৷''
তাহলে এত আগে, এখনই বিএনপির ওপর কেন হামলা হচ্ছে আর বিএনপিই বা কেন মাঠে নামছে? এর জবাবে তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি রাস্তায় শোডাউন করে এখন তাদের শক্তিমত্তা দেখাতে চাচ্ছে৷ সরকারের টেম্পারটাও বুঝতে চাচ্ছে৷ আর সরকার মনে করছে বিএনপি যদি এভাবে মাঠে নেমে তাদের জনপ্রিয়তা দেখাতে পারে তাহলে সরকারকে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত একটা চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যেতে হবে৷ সরকার সেটা চায় না৷ ফলে এখন এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে৷ তবে এটা আরো বাড়বে বলে এখন পর্যন্ত আমার মনে হচ্ছে না, এভাবেই চলবে৷''
বিএনপির নতুন কর্মসূচি
এদিকে বিএনপি বুধবার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে৷ সাম্প্রতিক আন্দোলনে নিহত নেতাকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ৬ অক্টোবর ঢাকা মহানগর ও ১০ অক্টোবর জেলা পর্যায়ে শোক র্যালির আয়োজন করা করবে তারা৷ ৮ অক্টোবর সারাদেশে বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে৷ সরকারের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে দলটি৷