1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মাঠ ছেড়ে তরুণ প্রজন্ম ইউটিউবে যাচ্ছে

১৮ মার্চ ২০১৯

খেলার মাঠ হারিয়ে যাচ্ছে৷ তাই তরুণদের বিনোদনের একমাত্র পথ হয়ে উঠছে ইন্টারনেট৷ বিনোদনের এই দিক পরিবর্তনে কী প্রভাব পড়ছে? বিনোদনের আর কি কোনো পথ নেই?

FIFA Videospiel
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Seidel

এ সব নিয়েই এবার ডয়চে ভেলের মুখোমুখি হয়েছেন ‘১০ মিনিট স্কুল'-এর প্রতিষ্ঠাতা আইমান সাদিক৷

ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশে তরুণদের জন্য পর্যাপ্ত বিনোদনের ব্যবস্থা কি আদৌ আছে?

আইমান সাদিক: আমি যদি আমার ছোটবেলার কথা চিন্তা করি, তাহলে বলবো যে এটা দিন দিন কমে যাচ্ছে৷ কারণ খেলাধুলার মাঠ কমে যাচ্ছে, কমে যাচ্ছে খেলাধুলার সুযোগও৷ স্কুল-কলেজেও এখন খেলার মাঠ থাকে না, ফলে সেখানেও খেলার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে না৷ পাশাপাশি ‘অল্টারনেটিভ মিডিয়া' তৈরি হচ্ছে৷ এই ‘অল্টারনেটিভ মিডিয়া' হলো ইন্টারনেট, অর্থাৎ ইউটিউব, ফেসবুক ইত্যাদি৷ আমি বলবো, আমরা যে মাধ্যমে ছিলাম সেটা কমে যাচ্ছে, তবে নতুন মাধ্যম আসছে৷

বিনোদন এখন কোন দিকে যাচ্ছে?

বিনোদনের মাধ্যম কমে যাচ্ছে, যেটা আগেই বলছিলাম...৷ মাঠের খেলাধুলা ছেড়ে তরুণ প্রজন্ম এখন ইউটিউবের দিকে চলে যাচ্ছে, ইন্টারনেটের দিকে চলে যাচ্ছে৷ আগে খেলাধুলা আপনাকে শারীরিকভাবে ‘ফিট' রাখত৷ সে কারণে মানসিকভাবে আপনি স্বতঃস্ফূর্ত থাকতেন৷ আর এখনকার বিনোদনের মাধ্যমটা ‘কনজামশন'৷ দৌড়াদৌড়ি করা লাগে না, হাঁটাহাঁটি করা লাগে না৷ শারীরিক কোনো পরিশ্রম নেই৷ এর ফলে মানসিক স্বাস্থ্য স্থবির হয়ে যাচ্ছে৷ তাছাড়া এখনকার এই বিনোদন উলটে মানসিকভাবে চাপে ফেলছে৷ এটাকে একটা ঝামেলা বলেই আমার মনে হয়৷

‘এখনকার বিনোদন উলটো মানসিক চাপে ফেলছে’: আয়মান

This browser does not support the audio element.

আগে তো বিনোদন বলতে ছিল খেলার মাঠ, লাইব্রেরি৷ এখন কি তবে শুধুই ইন্টারনেট?

হ্যাঁ, আজকাল ইন্টারনেটেই মানুষ সবকিছু করে৷ আগে মাঠে গিয়ে ফুটবল খেলত, এখন ইন্টারনেটে ফুটবলের গেম খেলছে৷ এটাই পার্থক্য৷

মাঠ তো কমে যাচ্ছে আর প্রযুক্তিই এখন বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম৷ এটা ভালো না খারাপ?

আমার দৃষ্টিতে, বিনোদন বা খেলাধুলা যদি পুরোপুরি ইন্টারনেটে ‘শিফট' হয়ে যায়, তাহলে খারাপ হবে৷ যদিও মাধ্যম ‘চেঞ্জ' হওয়াটা খারাপ না৷ তবে একেবারে শারীরিক কোনো খেলাধুলা যদি না থাকে তাহলে সেটা খারাপ বৈকি!

প্রযুক্তির মাধ্যমে বিনোদন শরীরের ওপর কেমন প্রভাব ফেলে?

এটা আসলে ‘ডিপেন্ড' করে৷ আপনি কি জিনিস দেখছেন, কোন জিনিস দেখছেন, কতক্ষণের জন্য দেখছেন, কোন ‘ডিভাইস' দিয়ে দেখছেন – সেটা গুরুত্বপূর্ণ৷ পুরনো ডিভাইস হলে সেটার ‘স্ক্রিন' বা ‘কালার' চোখের জন্য ক্ষতিকর৷ এখন অবশ্য এগুলো ‘অপটিমাইজ' করা হচ্ছেয তাই এগুলো ‘ডিপেন্ড' করে৷ আসলে আপনি কতখানি ‘সাউন্ড' দিয়ে দেখছেন বা কতটা জোরে দেখছেন? কী কনটেন্ট দেখছেন? অনেক কিছুর উপর এটা নির্ভর করে৷

মাঠ থাকলেও সেখানে যাচ্ছে না তরুণরা? এটা কেন?

আমার বাসা তো ক্যান্টনমেন্টে৷ আমাদের ওখানে অনেক ধরনের সুযোগ-সুবিধা আছে৷ মাঠও আছে৷ আমাদের সময় আমরা মাঠে গিয়ে খেলাধুলা করেছি৷ কিন্তু এখনকার ছেলে-মেয়েরা মাঠে যাচ্ছে না৷ আসলে শুরুটা হয় স্কুল-কলেজে৷ দুপুরে স্কুলে খেলল, বিকেলে বাসায় এসে মাঠে খেলতে গেল৷ আজকাল যেহেতু স্কুলেই মাঠ নেই, ফলে কেউ কারো সঙ্গে পরিচিতই না৷ আর যদিও বা কেউ মাঠে যাওয়ার সুযোগ পায়, কিন্তু অভ্যাস না থাকার কারণে খেলাধুলা হচ্ছে না৷ তাছাড়া সারাক্ষণ মোবাইলের সঙ্গে থাকার কারণে মাঠে গেলেও দেখা যাচ্ছে সেখান গিয়েও সকলে মোবাইল ফোন টিপছে৷ মানুষ অভ্যাসের দাস৷ অভ্যাস পরিবর্তন হওয়ার কারণে খেলার সুযোগ থাকলেও তারা সেটা নিচ্ছে না৷

পড়ার মধ্যে এখন বিনোদন গ্রহণের আগ্রহ কেমন?

এবার আমার বইও বের হয়েছে৷ ফলে আমি জানি কত মানুষ বই পড়ছে৷ ভিডিও দেখার তুলনায় বা ইন্টারনেট ব্যবহারের তুলনায় বইয়ের পাঠক কিন্তু অনেক কম৷ তাই এটাকে পাশাপাশি রাখলে ভুলই হবে৷ দুঃখের বিষয় যত বাচ্চা ইন্টারনেট দেখে, তার চেয়ে বহু কম বাচ্চ বই পড়ে সময় কাটায়৷

এখন তো ই-বুকও আছে৷ তরুণরা কি অন্তত সেই বইগুলো পড়ছে?

যত মানুষ ভিডিও দেখেন, সেই তুলনায় ব্লগ বা ই-বুকের গ্রাহক অনেক কম৷ আমার তথ্য অন্তত তাই-ই বলে৷

এখনকার বিনোদন কী শিক্ষা দেয়? এতে কি মানসিক বিনোদন হচ্ছে তরুণদের?

এটাও আসলে ‘ডিপেন্ড' করে৷ আসলে ইন্টারনেট মানেই যে খারাপ সেটা আমি বলব না৷ এটার কিন্তু ভালো দিকও আছে৷ যেমন ধরুন, আমরা ১০ মিনিট স্কুলে লাইভ ক্লাস নেই৷ অনেকেই সেটা দেখতে পারেন৷ ইন্টারনেট থাকার কারণে আপনি কিন্তু হাতের নাগালেই ই-বুক পেয়ে যাচ্ছেন৷ আগে যেমন বই কিনতে যেতে হতো, এখন আর যেতে হয় না৷ আসলে এটার ব্যবহারটা বলবে যে, এটা ভালো না খারাপ৷ সবকিছুরই তো ভালো-খারাপ দু'টো দিক আছে৷ এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আপনি সেটা কীভাবে ব্যবহার করছেন? ইন্টারনেট ‘ওভারঅল' খারাপ না৷ কিন্তু এটার ব্যবহার আমাদের জন্য লাগামছাড়া হয়ে যাচ্ছে৷ আর সেখানেই সমস্যা৷

তরুণদের ইন্টারনেটনির্ভর বিনোদনকে আপনি কীভাবে দেখেন?

আমি এটাকে খারাপভাবে দেখি না৷ মাধ্যমে অনেক পরিবর্তন হয়েছে৷ ভবিষ্যতেও হয়ত আরো ‘চেঞ্জ' হবে৷ আর মাধ্যম পরিবর্তন হয়ে যেটা এসেছে, তার অনেকগুলো ভালো দিক যেমন আছে, তেমনই খারাপ দিকও আছে৷ যেমন দেখুন, আগেও টিভি ছিল৷ এখনও আছে৷ কিন্তু আগে একটা ‘কনটেন্ট' অনেকখানি ‘এডিট' হয়ে যেত, এখন যেটা ‘আনএডিটেড' অবস্থায় চলে যাচ্ছে, বিশেষ করে ইন্টারনেটে৷ অনেক চ্যানেলেই আমরা আজকাল দেখছি যে, যা ইচ্ছে তাই দেখাচ্ছে৷ আগে যেখানে খারাপ কনটেন্ট ঢুকে যাওয়াটা কঠিন ছিল, এখন সেখানে সেটা হরহামেশাই হচ্ছে৷ এতে যেটা হয়েছে, আগে পাঁচজন মানুষ যে খারাপ কনটেন্টটা দেখত, এখন সেটা ৫০ জন মানুষ দেখছে৷ ইন্টারনেটে অবশ্য আজও অনেক ভালো কিছু দেখার আছে৷ কিন্তু সমস্যা হলো, খারাপের মাত্রাটা এখন সহজলভ্য হয়ে গেছে৷

বিনোদনের বড় প্রভাবটা পড়ে কোথায়?

মানসিকভাবে৷ এটাই সবচেয়ে বড় প্রভাব৷ আর খেলাধুলা করলে তার প্রভাব পড়ে শরীরে৷

ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিনোদনে শারীরিক প্রভাব পড়ছে কতটা?

ইন্টারনেট বিনোদনের কারণে শারীরিক প্রভাব পড়ছে না৷ তবে সেসময় যে আপনি খেলছেন না, সেটার কারণে শারীরিক প্রভাব পড়ছে৷ ওই সময় যে আপনি হাঁটছেন না, দৌঁড়াচ্ছেন না, সেটার কারণে এটা হচ্ছে৷ ইন্টারনেট বিনোদনের যে ‘অপরচুনিটি' এক্ষেত্রে  কষ্ট হচ্ছে, সেটার কারণে এই প্রভাব পড়ছে৷

বিনোদনের দিক পরিবর্তন নিয়ে কোনো গবেষণা আছে কি? কিছু বলতে পারেন?

অবশ্যই আছে৷ আগে টিভি দেখতাম, এখন ইউটিউবে ভিডিও দেখি৷ আগে ইভেন্টে যেতাম, এখন লাইভ ভিডিও দেখি৷ আগে গান শুনতাম রেডিওতে, এখন ব্রডকাস্ট বা পডকাস্ট শুনি৷ এ নিয়ে অনেক গবেষণা আছে, তবে এই মুহূর্তে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা মুশকিল৷

বিনোদন নিয়ে তরুণদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী?

প্রতিটি জিনিসের ভালো দিক আছে, আবার খারাপ দিকও আছে৷ ইন্টারনেটে অনেক ভালো কিছু আছে৷ আগে এই জিনিসগুলো পাওয়া এতটা সহজ ছিল না৷ কিন্তু এখন হাত বাড়ালেই ভালো জিনিস পাওয়া যায়৷ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পাঠশালা এখন ইউটিউব হয়ে গেছে৷ বিশ্বের সবচেয়ে বড় জ্ঞান অর্জনের জায়গা এখন গুগল৷ আপনি যা জানতে চান, তা আপনার হাতের মুঠোয় চলে এসেছে৷ সবকিছুর প্রবেশাধিকার সহজ হয়ে গেছে৷ তবে সিদ্ধান্তটা আমাদের৷ আমরা ভালোটা নেব, না খারাপটা? তাই আমি শিক্ষার্থীদের বলবো, ইন্টারনেটে অনেক ভালো জিনিস আছে, তোমরা সেটা নাও, খারাপের দিকে যেও না৷

তরুণদের বিনোদনের জন্য সরকারের কাছে আপনি কী চাইবেন?

দেখুন আমি মাঠ চাইলেই তো আর সরকার তা দিতে পারবে না৷ কারণ আজ সর্বত্র বড় বড় ভবন উঠে গেছে৷ সেটা ভেঙে তো আর সরকার মাঠ করে দিতে পারবে না৷ আসলে দরকার ডিজিটাল শিক্ষাকে ‘প্রমোট' করা৷ আমরা ডিজিটাল দুনিয়ায় চলে এসেছি৷ অথচ এটা নিয়ে আমাদের কোনো ‘ওরিয়েন্টেশন' ছিল না, যেমন স্কুলে গেলে তার একটা ‘ওরিয়েন্টেশন' থাকে৷ ফলে স্কুল-কলেজে ‘ডিজিটাল অপরচুনিটি' নিয়ে চর্চা করতে হবে৷ এটা কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, সেটা ছাত্র-ছাত্রীদের জানাতে হবে৷ এগুলোর খারাপ দিক যেমন বলতে হবে, তেমন ভালো দিকটাও বলতে হবে তাদের৷ ইন্টারনেটকে এড়িয়ে যাওয়ার এখন আর কোনো সুযোগ নেই৷ ফলে ডিজিটাল শিক্ষাকে আরো ছড়িয়ে দিতে হবে৷ সেটাই একমাত্র পথ৷

সাক্ষাৎকারটি কেমন লাগলো জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ