সোমবার ঢাকায় এসেছেন জার্মানি আর ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদ্বয়৷ বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পর্যবেক্ষণ করতেই ফ্রাংক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার ও লোরঁ ফাবিউস-এর এই যৌথ সফর৷ দেশের পরিবেশবিদরা অবশ্য এ সফরের সমালোচনা করেছেন৷
বিজ্ঞাপন
[No title]
আগামী ডিসেম্বর মাসে প্যারিসে অনুষ্ঠেয় জলবায়ু সম্মেলনের আগে এই সফরের গুরুত্ব অনেক৷ সে জন্যই হয়ত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ইউরোপীয় দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই যৌথ সফরকে ‘ঐতিহাসিক' ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন৷ প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে ইউরোপের দু-দু'জন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এটাই প্রথম সফর৷
ফ্রাংক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার ও ফাবিউস ঢাকায় এসে প্রথমেই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দেখতে সাভারে বংশী নদীতে নৌকা-ভ্রমণ করেন৷ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে কথা বলেন সেখানকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে৷ পরে তাঁরা বৈঠক করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে৷ এবং একেবারে শেষে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে৷ এছাড়া বাংলাদেশের দক্ষিণের কয়েকটি এলাকায় জার্মানির অর্থ সহায়তায় পরিচালিত প্রকল্পও পরিদর্শন করেন তাঁরা৷
এরপর দুই মন্ত্রী উপস্থিত হন ‘ফ্রাঙ্কো-জার্মান' যৌথ দূতাবাস ভবনের ‘টপিং অফ' অনুষ্ঠানে৷ এই প্রথম ঢাকায় জার্মানি এবং ফ্রান্সের দূতাবাস তৈরি হচ্ছে একই ভবনে৷ উল্লেখ্য, এক সময়ের দুই বৈরী দেশ জার্মানি ও ফ্রান্স একজোট হয়েছিল ১৯৬৩ সালে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের এলিসি চুক্তির মধ্য দিয়ে, যা ‘ফ্রাঙ্কো-জার্মান' বন্ধুত্ব, সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বের ভবিষ্যত রূপরেখা ঠিক করে দেয়৷ চুক্তির ৪০ বছর পর ২০০৪ সালে জার্মানি ও ফ্রান্স ঢাকায় একটি যৌথ দূতাবাস প্রতিষ্ঠার সিদ্বান্ত নেয়৷ ২০১৩ সালে এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল৷
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা
বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে তাঁরা এই একদিনের সফরে শুধুমাত্র একটা ধারণা নিতে চেষ্টা করেছেন৷ গত জুনে জার্মানিতে অনুষ্ঠিত জি ৭-এর বৈঠকে উন্নত দেশগুলো ‘বিশ্ব অর্থনীতিকে কার্বনমুক্ত করার' ব্যাপারে একমত হয়৷ তাদের মধ্যে জার্মানি এবং ফ্রান্স অন্যতম৷ বলা বাহুল্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ২০৩০ সালের মধ্যে নিজেদের গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ ১৯৯০ সালের তুলনায় ৪০ শতাংশ কমাতে রাজি হয়েছে৷
প্রাকৃতিক দুর্যোগ যাদের নিত্যসঙ্গী
বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ নতুন নয়৷ ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডোর মতো দুর্যোগ মোকাবিলা করেই এগিয়ে চলছে মানুষ৷ তবে দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক৷ বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে ছবিঘর৷
ছবি: Jewel Samad/AFP/Getty Images
সবচেয়ে ভয়ংকর টর্নেডো
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় টর্নেডোর ঘটনা ঘটে ১৯৮৯ সালে৷ সেবছরের ২৬ এপ্রিল মানিকগঞ্চ জেলার দৌলতপুর এবং সাটুরিয়া এলাকার উপর দিয়ে বয়ে যায় প্রলয়ংকরী টর্নেডো৷ এতে প্রাণ হারায় ১,৩০০ মানুষ৷
ছবি: David L. Nelson/AFP/Getty Images
পুরোপুরি ধ্বংস
২৬ এপ্রিলের টর্নেডোতে কার্যত ছয় বর্গকিলোমিটার এলাকা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়৷ সেসময় অবজারভার পত্রিকায় এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘‘ধ্বংসযজ্ঞ এতই নিঁখুত যে, সেখানে কিছু গাছের চিহ্ন ছাড়া দাঁড়ানো আর কোনো বস্তু নেই৷’’
ছবি: David L. Nelson/AFP/Getty Images
ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় টর্নেডো
আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ক্যানাডার পর অন্যতম টর্নেডোপ্রবণ দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ৷ সর্বশেষ গত ২২ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় টর্নেডোতে বেশ কয়েকজন প্রাণ হারায়৷
ছবি: picture alliance / AP Photo
পূর্বাভাষের প্রযুক্তি নেই
টর্নেডোর পূর্বাভাষের কোনো প্রযুক্তি নেই বাংলাদেশে৷ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এ কে এম মাকসুদ কামাল এই বিষয়ে বলেন, ‘‘আমাদের দেশে না থাকলেও এখন টর্নেডোর পূর্বাভাষ দেয়া সম্ভব৷ অ্যামেরিকা এবং ইউরোপ এক ধরনের রাডার ব্যবহার করে অন্তত ৪৫ মিনিট আগে টর্নেডোর পূর্বাভাষ দিতে পারে৷ আর এ ধরনের পূর্বাভাষ দিয়ে জীবন ও সম্পদ রক্ষার নজির আছে৷’’
ছবি: picture alliance / AP Photo
ঘূর্ণিঝড়ের নিয়মিত শিকার বাংলাদেশ
টর্নেডো ছাড়াও ঘূর্ণিঝড়েরও নিয়মিত শিকার হয় বাংলাদেশ৷ উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত বাংলাদেশে মৌসুমী ঘূর্ণিঝড়ের তালিকায় ১৫৮২ সালের কথা উল্লেখ রয়েছৈ৷ সেসময় বাকেরগঞ্জের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারায় দু’লাখ মানুষ৷
ছবি: Reuters
স্বাধীনতা পরবর্তী বড় দুর্যোগ
মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশে সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা ঘটে ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল৷ সেসময় চট্টগ্রামে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে প্রাণ হারায় কমপক্ষে ১৩৮,০০০ মানুষ৷ প্রায় এক কোটি মানুষ ঘরছাড়া হয়৷ ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৫০ কিলোমিটারের মতো৷
ছবি: AFP/Getty Images
আইলার আঘাত
সর্বশেষ ২০০৯ সালে সাইক্লোন আইলায় কয়েকশত মানুষ প্রাণ হারায়৷ সাইক্লোনের পরপরই ডায়েরিয়া ছড়িয়ে পড়লে প্রাণ হারায় কমপক্ষে চার ব্যক্তি৷ এভাবে নিয়মিতই প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করছে বাংলাদেশ৷
ছবি: DW
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে এখন বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবও পড়তে শুরু করেছে৷ বিশেষ করে উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে সমুদ্রের পানি বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলীয় বিশাল এলাকা তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে৷
ছবি: Jewel Samad/AFP/Getty Images
8 ছবি1 | 8
আগামী ডিসেম্বরে প্যারিস সম্মেলনে বাংলাদেশসহ আরও অনেক দেশ জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় কী করবে, তা স্পষ্ট হবে৷ আর সেই সম্মেলনকে সামনে রেখেই ইউরোপের দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে আসেন৷ জানা গেছে, ২০২০ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার জোগাবে উন্নত বিশ্ব৷
তাঁদের এই সফরকে বাংলাদেশও খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে৷ তবে বাংলাদেশের পরিবেশবিদ এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের মুখপাত্র ইকবাল হাবিব ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শুধু একটি সফর দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং এর জন্য এখানকার মানুষের সংগ্রাম বোঝা সম্ভব নয়৷ এর জন্য নিয়মিত তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন৷ আশা করি, এই সফরের মধ্য দিয়ে সেই উদ্যোগটি শুরু হবে৷''