বাংলাদেশে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে৷ করোনায় বেড়েছে দারিদ্র্য৷ আবার বাড়ছে মাথাপিছু আয়৷ এই পরস্পর বিপরীত অবস্থার ব্যাখ্যা কী?
বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ ডিজেল-কেরোসিনের দাম বাড়ানোর প্রতিক্রিয়ায় বাসের ভাড়া ইচ্ছে মত বাড়ানোয় দেশজুড়ে তোলাপাড় চলছে৷ যদিও বিআরটিএ বাড়তি ভাড়ায় নিয়ন্ত্রণ আনার চেষ্টা করছে৷ তবে তা কতটুকু সফল হবে তা নিয়ে আছে সংশয়৷ কারণ অতীতে বাস মালিকদের নিয়ন্ত্রণ করা গেছে তার কোনো নজির নেই৷ আর তেলে চলা বাসের ভাড়া বাড়ানোর কথা বলা হলেও গ্যাসে চলা বাসের ভাড়াও বাড়িয়ে দিয়েছেন মালিকরা৷
অর্থনীতিবিদ এবং বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন এর একটি চেইন রিঅ্যাকশন আছে৷ তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের যাতায়াত ভাড়া বেড়ে গেল৷ বেড়ে গেল পণ্য পরিবহন খরচ৷ ফলে পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে৷ বিশেষ করে ভোগ্যপণ্যের দাম খুব দ্রুতই বাড়ছে৷ কৃষিদাম পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে৷ ফলে কৃষিপণ্যের দামও বাড়বে৷ এখানে দুই ধরনের প্রভাব পড়ছে৷ উৎপাদন এবং পরিবহন-দুই ধরনের খরচই বাড়ছে৷ অন্য শিল্প উৎপাদনের খরচও বাড়ছে৷ আর যেসব পণ্যের ওপর সরাসরি তেলের দাম বাড়ার প্রভাব নাই তার দামও বাড়বে৷ কারণ যিনি ভোক্তা তাদেরই একটি অংশ বিক্রেতা ও উৎপাদনকারী৷ ফলে দাম বাড়ছে সবকিছুরই৷
দ্রব্যমূল্যের তুলনা: ২০০৯ বনাম ২০২১
কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি বিপণন অধিদপ্তর প্রতিদিন ওয়েবসাইটে বিভিন্ন জেলার বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম প্রকাশ করে৷ ছবিঘরে ঢাকার একটি বাজারে ২০০৯ ও ২০২১ সালের ১০ নভেম্বর নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের দাম উল্লেখ করা হয়েছে৷
চাল
কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি বিপণন অধিদপ্তর প্রতিদিন ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম প্রকাশ করে৷ এতে দেখা যাচ্ছে ২০০৯ সালের ১০ নভেম্বর ঢাকার এক বাজারে এক কেজি সরু বোরো চালের দাম ছিল ৩৪-৩৬ টাকা৷ ২০২১ সালের ১০ নভেম্বর একই বাজারে ঐ চালের দাম ছিল ৫৭-৭০ টাকা৷ মোটা বোরো চালের দাম ২০০৯ সালে ছিল ২১-২৩ টাকা৷ ২০২১ সালে ছিল ৪৪-৪৭ টাকা৷
ছবি: DW
ডাল
২০০৯ সালে এক কেজি দেশি মসুর ডালের দাম ছিল ১০৮-১১০ টাকা৷ ২০২১ সালে ১০০-১১০ টাকা৷ আমদানিকৃত মসুর ডালের দাম ২০০৯ সালে ছিল ১১২-১১৫ টাকা৷২০২১ সালে সেটা কমে হয় ৮৫-৯০ টাকা৷ মুগ ডালের দাম ২০০৯ সালে ছিল ৮৫-১০০ টাকা৷ ২০২১ সালে সেটা বেড়ে হয় ১২০-১২৫ টাকা৷
ছবি: bdnews24.com/T. Ahammed
পেঁয়াজ
এক কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ২০০৯ সালের ১০ নভেম্বর ছিল ৪০-৪৪ টাকা৷ ২০২১ সালে সেটা বেড়ে হয় ৫৫-৬০ টাকা৷ আর আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম ২০০৯ সালে ছিল ২৮-৩৪ টাকা৷ ২০২১ সালে ৪৫-৫০ টাকা৷
ছবি: Harun Ur Rashid Swapan
রসুন
২০০৯ সালে এক কেজি দেশি রসুনের দাম ছিল ৯০-১০৫ টাকা৷ ২০২১ সালে সেটা কম ছিল, ৫০-৭০ টাকা৷ আমদানিকৃত রসুনের এক কেজির দাম ২০০৯ সালে ছিল ৮০-৮৫ টাকা৷ ২০২১ সালে সেটা বেড়ে হয় ১১০-১২০ টাকা৷
ছবি: bdnews24.com/A. Mannan
কাঁচা মরিচ
২০০৯ সালের ১০ নভেম্বর ঢাকার এক বাজারে এক কেজি কাঁচা মরিচের দাম ছিল ৩০-৪০ টাকা৷ ঐ একই বাজারে ২০২১ সালের ১০ নভেম্বর কাঁচা মরিচের দাম ছিল ১২০-১৩০ টাকা৷
ছবি: DW/H.U.R. Swapan
সয়াবিন তেল
২০০৯ সালে এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৭০-৭৩ টাকা৷ ২০২১ সালে সেটা বিক্রি হয়েছে ১৩৮-১৪২ টাকায়৷
ছবি: Gustavo Cuevas/dpa/picture-alliance
চিনি
২০০৯ সালে আমদানিকৃত এক কেজি চিনির দাম ছিল ৫২-৫৪ টাকা৷ ২০২১ সালে ৭৫-৭৭ টাকা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J.Kalaene
ডিম
২০০৯ সালে দেশি মুরগির ডিম ছিল ৩২-৩৪ টাকা হালি৷ ২০২১ সালে সেটা বিক্রি হয়েছে ৫৫-৬০ টাকায়৷ ফার্মের মুরগির ডিমের (লাল) দাম ২০০৯ সালে ছিল ২৫-২৬ টাকা৷ ২০২১ সালে ৩৬-৪০ টাকা৷
ছবি: Reuters/W. Kurniawan
গরুর মাংস
গরুর মাংসের কেজিপ্রতি দাম ২০০৯ সালে ছিল ২২০-২৩০ টাকা৷ ২০২১ সালে সেটা বিক্রি হয়েছে ৫৮০-৬০০ টাকায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/N. Bachmann
খামারের মুরগী
২০০৯ সালে কেজিপ্রতি দাম ছিল ১০০-১১০ টাকা৷ ২০২১ সালে ১৫০-১৬০ টাকা৷
ছবি: Getty Images/AFP/H. Dinh Nam
দেশি রুই
২০০৯ সালে ছিল ১৪০-১৬০ টাকা৷ ২০২১ সালে ২০০-৩০০ টাকা৷ বিস্তারিত জানতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: Mortuza Rashed
পানির দাম
গত ১২ বছরে ১৪ বার পানির দাম বাড়িয়েছে ঢাকা ওয়াসা৷ ২০০৯ সালে আবাসিক গ্রাহকদের জন্য প্রতি ইউনিট (১ হাজার লিটার) পানির দাম ছিল ৫ টাকা ৭৫ পয়সা৷ গত জুলাই থেকে ১৫ টাকা ১৮ পয়সা দরে দাম দিতে হচ্ছে৷ অর্থাৎ গত ১২ বছরে ইউনিটপ্রতি পানির দাম প্রায় ১০ টাকা বেড়েছে৷ সম্প্রতি চট্টগ্রাম ওয়াসাও আগামী মাস থেকে পানির দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে৷
ছবি: AP
বিদ্যুৎ
এ বছরের ২১ জুন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ক্যাব) ও ভোক্তাকণ্ঠ আয়োজিত এক ওয়েবিনারের মূল নিবন্ধে বলা হয়, গত ১১ বছরে বিদ্যুতের দাম ১০ বার বেড়েছে৷ পাইকারি বিদ্যুতের দাম ১১৮ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে৷ আর খুচরা পর্যায়ে দাম বেড়েছে প্রায় ৯০ শতাংশ৷
ছবি: DW
জ্বালানির দাম বৃদ্ধি
৩ নভেম্বর বুধবার রাতে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হয়৷ ডিজেলের মোট চাহিদার ৬৩ শতাংশ ব্যবহৃত হয় পরিবহন খাতে৷ আর সেচকাজে ব্যবহৃত হয় ১৬ শতাংশ৷ ৪ নভেম্বর ফার্নেস অয়েলের দাম লিটারপ্রতি তিন টাকা বাড়িয়ে ৬২ টাকা করা হয়৷ আরও বেড়েছে বেসরকারি খাতের তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম৷ ১২ কেজির সিলিন্ডারে বেড়েছে ৫৪ টাকা৷
ছবি: Getty Images/P. Walter
মুনাফা সত্ত্বেও বৃদ্ধি
জ্বালানি বিভাগের একটি সূত্র প্রথম আলোকে জানায়, সবশেষ ২০১৩ সালে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল৷ মাঝে ২০১৬ সালে দাম কিছুটা কমানোও হয়েছিল৷ তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্ববাজারে দাম যখন কম ছিল তখন তেলের দাম ততটা না কমানোয় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন সাত বছরে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছিল৷ আর এবার টানা পাঁচ মাস ক্ষতি হওয়ার পর দাম বাড়ানো হলো৷
ছবি: Alastair Grant/AP/picture alliance
ঢাকায় বাসা ভাড়া দ্বিগুন হয়েছে
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) বলছে ঢাকায় ২০১০ সালে দুই কক্ষের পাকা বাসার গড় ভাড়া ছিল ১১ হাজার ৩০০ টাকা৷ ২০১৯ সালে তা বেড়ে হয় ২৪ হাজার ৫৯০ টাকা৷ আধাপাকা (টিন শেড) বাড়ির দুই কক্ষের ভাড়া ২০১০ সালে ছিল ৬ হাজার ৮০০ টাকা৷ ২০১৯ সেটা বেড়ে হয় ১৩ হাজার ২০০ টাকা৷ ২০১০ সালে দুই কক্ষের মেসের গড় ভাড়া ছিল ১১ হাজার ৫০০ টাকা৷ ২০১৯ সালে তা বেড়ে হয় ২৩ হাজার ২০০ টাকা৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. uz Zaman
জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে
এ বছরের জুনে ক্যাব জানায় ২০২০ সালে ঢাকায় জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ৬.৮৮ শতাংশ এবং সেবা-সার্ভিসের দাম বেড়েছে ৬.৩১ শতাংশ৷ ২০১৯ সালে এটি ছিল যথাক্রমে ৬.৫০ শতাংশ ও ৬.০৮ শতাংশ৷ ২০১৮ সালে তা ছিল ৬ শতাংশ ও ৫.১৯ শতাংশ৷ ঢাকার ১৫টি খুচরা বাজার ও বিভিন্ন সেবা-সার্ভিসের মধ্য থেকে ১১৪টি খাদ্যপণ্য ও ২২টি নিত্যব্যবহার্য সামগ্রী এবং ১৪টি সেবা-সার্ভিসের সংগৃহীত মূল্য বিশ্লেষণ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে ক্যাব৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
মাথাপিছু আয় বেড়েছে
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেবে ২০০৯-২০১০ সালে মাথাপিছু আয় ছিল ৮৪৩ মার্কিন ডলার৷ আর সবশেষ হিসাব বলছে, মাথাপিছু আয় এখন ২,৫৫৪ ডলার৷ তবে এই আয়ের সুষম বণ্টন হচ্ছে বলে মনে করেন না অনেক অর্থনীতিবিদ৷ কারণ একদিকে যেমন একদল মানুষ দ্রুত ধনী হচ্ছেন, আবার গরিবের সংখ্যাও বাড়ছে৷ করোনার সময়ে প্রায় সোয়া তিন কোটি মানুষ নতুন করে দরিদ্র্য হয়েছেন বলে সম্প্রতি এক জরিপে জানা গেছে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
18 ছবি1 | 18
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) হিসেবে ২০২০ সালে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ৬.৮৮ শতাংশ৷ ২০১৯ সালে বেড়েছে ৬.৫০ শতাংশ আর ২০১৮ সালে বেড়েছে ৬ শতাংশ৷ ঢাকায় জীবনযাত্রার ব্যয় সবচেয়ে বেশি বেড়েছে এই সময়ে৷ তারা মনে করছে চলতি বছরে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ার হার অতীতের সব হিসেব ছাড়িয়ে যাবে৷
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসেবে গত এক বছরের ব্যবধানে চালের দাম বেড়েছে ১০ শতাংশ, আটা-ময়দা ২৯ শতাংশ, সয়াবিন-পাম অয়েলের দাম ৫৪ শতাংশ, মসুর ডাল ১৭ শতাংশ, মুরগির দাম ২৪ শতাংশ, চিনির দাম ২৬ শতাংশ বেড়েছে৷ এভাবে ভোগ্যপণ্যসহ প্রতিটি পণ্যের দামই কম বেশি বেড়েছে৷ আর বাংলাদেশ ব্যুরো অফ স্ট্যাটিসটিকস (বিবিএস) বলছে, গত বছরে মার্চে ২৭৭ টাকা দিয়ে যে পরিমাণ পণ্য ও সেবা কেনা যেত এই বছরের মার্চে তা কিনতে লেগেছে ২৯২ টাকা৷ অর্থাৎ ১৫ টাকা বেশি খরচ করতে হচ্ছে৷ শতকরা হিসেবে সেটা প্রায় সাড়ে পাঁচ শতাংশ বেশি৷
বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়ে এখন দুই হাজার ৫৫৪ ডলার হয়েছে৷ অন্য দিকে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এবং পিপিআরসি সর্বশেষ গবেষণা বলেছে, তিন কোটি ২৪ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন৷ গত মার্চে এই সংখ্যা ছিলো দুই কোটি ৪৫ লাখ৷ গত ছয় মাসে ৭৯ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়েছেন৷
এই বিপরীত চিত্র কেন? অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘‘মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির হিসাব একটি গড় হিসাব৷ এটা ঠিক যে মোট উৎপাদন বেড়েছে৷ মোট জাতীয় সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে৷ জাতীয় আয় বেড়েছে৷ কিন্তু সেটা কিছু মানুষের, সবার নয়৷ ফলে সবার জীবনে এর প্রভাব নেই৷’’
বাংলাদেশে এখন কোটিপতি ব্যাংক গ্রাহকের সংখ্যা এক লাখ৷ করোনার মধ্যেও গত এক বছরে কোটিপতি ব্যাংক গ্রাহক বেড়েছে ১৪ হাজার৷ ক্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসেন বলেন, ‘‘ওই কোটিপতিদের আয় বেড়েছে৷ ২০ লাখ সরকারি কর্মচারীর আয় বেড়েছে৷ কিন্তু সাধারণ মানুষের আয় বাড়েনি৷ বরং অনেকে চাকরি হারিয়েছেন৷ অনেকে কাজ ও ব্যবসা হারিয়েছেন৷’’
আর সাধারণ মানুষের আয় বাড়লেও তা খেয়ে ফেলেছে মূল্যস্ফীতি৷ এখন মূল্যস্ফীতির হার ছয় ভাগ বলে জানান সিপিডির গবেষণা পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম৷
বাংলাদেশে এই যে সব কিছুর দাম বাড়ছে তা কতটা যৌক্তিক? বাংলাদেশে প্রতিবছর দাম বাড়ার এই প্রতিযোগিতা শুরু হয় প্রধানত পেঁয়াজ, ভোজ্য তেল, জ্বালানি তেল অথবা গ্যাস-বিদ্যুতকে ঘিরে৷ প্রয়োজনীয় পেঁয়াজের প্রায় ৮০ ভাগই বাংলাদেশ নিজে উৎপাদন করে৷ বাকি পেঁয়াজ প্রধানত ভারত থেকে আমদানি করা হয়৷ আর এই আমদানি সংকট শুরু হলেই দাম বাড়তে থাকে৷ যার প্রভাব শুরু হয় সব ভোগ্য পণ্যে৷ ভোজ্য তেলেও বাংলাদেশ আমদানি নির্ভর৷ তবে এই তেল আমদানি পাঁচটি প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করে৷ আর জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর জন্য বলা হয় আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয়ের কথা৷
জাতীয় আয় বেড়েছে, কিন্তু সেটা কিছু মানুষের, সবার নয়: ড. নাজনীন আহমেদ
কিন্তু বিশ্লেষকেরা বলছেন, এখানে কাজ করছে সিন্ডিকেট ও সরকারের ভুল নীতি৷ আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলে এখানে বিপিসি কমায় না৷ কিন্তু বাড়লে বাড়ায়৷ গত এক বছরে এই করে বিপিসি পাঁচ হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে৷ অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা ক্ষমতাবান হওয়ায় তাদের সিন্ডিকেট ভাঙা যাচ্ছে না বলে জানান ক্যাবের সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসেন৷ তারা এখন সংসদ সদস্য,মন্ত্রী৷ ফলে তারাই সিদ্ধান্ত নেন৷ যা সাধারণ মানুষের পক্ষে না গিয়ে ব্যবসায়ীদের পক্ষে যায়৷ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ১৪টি বাজার মনিটরিং টিম, ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর, প্রতিযোগিতা কমিশন কিছুই কাজে আসছে না৷ বাস্তবে এখানে প্রতিযোগিতামূলক কোনো বাজার নেই৷ আছে সিন্ডিকেট৷ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে পরিবহন মালিকদেরও একটি বড় অংশ মন্ত্রী, সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য অথবা প্রভাবশালী সরকারি কর্মকর্তা৷ তারা নামে বেনামে পরিবহন ব্যবসা করছেন৷ ফলে তাদের সীমাহীন ঔদ্ধত্য৷
পরিবহণ মালিকরা ফায়দা লুটেছে: এস এম নাজের হোসেন
সুশানের জন্য নাগরিকের (সুজন) হিসেবে চলতি একাদশ সংসদে ৬১.৭ শতংশ সংসদ সদস্যই ব্যবসায়ী৷
প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমরা আইনের মধ্যে থেকে কাজ করি৷ যদি আমরা প্রমাণ পাই বাজার নিয়ন্ত্রণে কোনো সিন্ডিকেট কাজ করছে৷ বাজার ম্যানিপ্যুলেট করছে তাহলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি৷ তবে সেটা হতে হবে প্রমাণ সাপেক্ষে৷’’
উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর মনে করেন, সাধারণ মানুষকে এই অবস্থা থেকে বের করে আনতে হলে সত্যিকার অর্থে প্রতিযোগিতামূলক বাজার এবং সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি গড়ে তুলতে হবে৷ এখন যে বেষ্টনি আছে আছে তা সব মানুষের জন্য না৷ এটা দলীয় রাজনীতি প্রভাবিত বলেও অভিযোগ আছে৷ তিনি বলেন, ‘‘মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির বিশ্বব্যাংক প্রভাবিত হিসেব দিয়ে মানুষের প্রকৃত অবস্থা বুঝা যাবে না৷ প্রকৃত অর্থেই সবার আয় বাড়তে হবে৷ কর্মসংস্থানের উদ্যোগ দরকার৷’’