নিয়মিত মাথাব্যথা অনেক মানুষের জীবন দূর্বিসহ করে তুলতে পারে৷ তবে সেই ব্যথার প্রকৃত কারণ জানা এবং তার মোকাবিলা করাও জরুরি৷ ডাক্তাররা সেই লক্ষ্যে বেশ কিছু মূল্যবান পরামর্শ দিয়ে থাকেন৷
বার্লিনের ফ্রানৎসিস্কুস হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসক স্টেফান টয়ফেল দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে রোগীদের ব্যথা দূর করার লক্ষ্যে চিকিৎসা করে আসছেন৷ সে কারণে তিনি বিভিন্ন ধরনের মাথাব্যথার মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য করতে পারেন৷ তাঁর মতে, আচমকা তীব্র ক্লাস্টার মাথাব্যথার অ্যাটাক সবচেয়ে বেশি কষ্ট দেয়৷ টয়ফেল বলেন, ‘‘ক্লাস্টার মাথাব্যথার ক্ষেত্রে রোগীদের প্রচণ্ড ব্যথা হয় এবং একটি দিকেই হয়৷ অর্থাৎ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাথার একটি দিকে চোখের পেছনে ব্যথা শুরু হয়৷ চোখে পানি ভরে যায়, চোখ লাল হয়ে যায়৷''
ক্লাস্টার মাথাব্যথা বিরল ঘটনা৷ মূলত পুরুষদের ক্ষেত্রেই সেটা ঘটে৷ মাইগ্রেনের ক্ষেত্রে বিষয়টি একেবারে ভিন্ন৷ স্টেফান টয়ফেল বলেন, ‘‘সবসময় না হলেও মাইগ্রেনের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে মাথার অর্ধেক অংশে ব্যথা হচ্ছে৷ হয় বাম দিকে, অথবা ডান দিকে মাথা বেশিরভাগ সময় দপদপ করে৷ মাইগ্রেনের ক্ষেত্রে অন্য কিছু উপসর্গও দেখা যায়৷ আলোর কারণে চোখে, শব্দের কারণে কানে অথবা গন্ধের কারণে নাকে অস্বস্তি হয়৷''
মাথাব্যথা দূরে রাখার উপায়
03:54
This browser does not support the video element.
মাইগ্রেন গোটা জীবন নষ্ট করে দিতে পারে৷ তথাকথিত ‘টেনশন' মাথাব্যথাও প্রচণ্ড কষ্ট দেয়৷ টয়ফেল বলেন, ‘‘টেনশন হেডেক সার্বিকভাবে মাথায় প্রবল চাপ সৃষ্টি করে৷ রোগীরা প্রায়ই বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, তাঁদে মনে হয় যে উপর থেকে চাপ আসছে, তাদের মাথায় যেন অত্যন্ত টাইট হেলমেট বা টুপি পরানো হয়েছে৷ এ ক্ষেত্রেও বাড়তি উপসর্গ হিসেবে হালকা বমি ভাব আসে বা আলো দেখলে অস্বস্তি হয়৷ তবে মাইগ্রেনের তুলনায় তার মাত্রা কম৷''
মাথায় হাতুড়ির ঘা পড়ছে মনে হলে শরীর শিথিল করে আরাম পাওয়া যায়৷ হাঁটাচলা ও তাজা বাতাসও সাহায্য করে৷ এমনটা করলে টেনশন হেডেক অনেক কমে যায়৷ তবে অ্যাকিউট মাইগ্রেন দেখা দিলে হাঁটাচলায় কাজ হয় না৷ স্টেফান টয়ফেল বলেন, ‘‘মাইগ্রেনের চিকিৎসার দুটি দিক রয়েছে৷ একদিকে অ্যাটাকের চিকিৎসা করতে হয়, যাতে সেই ধাক্কা নিয়ন্ত্রণে আসে৷ এমন ব্যথা এড়িয়ে চলতে দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে ঘনঘন মাইগ্রেন অ্যাটাক কমানো ও তার তীব্রতা কমানোর চেষ্টা করা হয়৷ এমন ব্যথা কমাতে বাজারে অনেক ওষুধ পাওয়া যায়৷ অ্যাস্পিরিন ও ইবুপ্রোফেনের মতো সহজলভ্য ওষুধ রয়েছে৷''
কীভাবে মাথাব্যথা সৃষ্টি হয়, সেটা জানতে পারলেও ব্যথা সামলাতে সুবিধা হয়৷ সেই কারণ কোনো রোগের অশনি সংকেতও হতে পারে৷ স্টেফান টয়ফেল মনে করিয়ে দেন, ‘‘যে সব চিহ্ন বা উপসর্গ কঠিন রোগের ইঙ্গিত দেয়, সেগুলিই বিপজ্জনক সংকেত৷ যেমন সেরিব্রাল হেমারেজ বা মেনিনজাইটিস৷ একমাত্র ডাক্তাররাই সেটা ধরতে পারেন৷ যেমন আচমকা উপসর্গ দেখা দিলে সেটা সেরিব্রাল হেমরেজ হতে পারে৷ মেনিনজাইটিসের ক্ষেত্রে প্রায়ই ভীষণ জ্বরও ধরা পড়ে৷''
এমন রোগের আশঙ্কা অমূলক হলে রোগীদের নিজেদেরই ব্যথা কমানোর উপায় খুঁজতে হয়৷ কিছু মানুষের ক্ষেত্রে শীতল পরশ, অন্যদের গরম সেঁক সাহায্য করে৷ যেমন ঘাড় শক্ত হয়ে ব্যথা হলে হেয়ার ড্রাইয়ার সেই কষ্ট কিছুটা হলেও দূর করতে পারে৷ নিজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে টয়ফেল বলেন, ‘‘আমি সব সময়ে রোগীদের নিজেদেরই ব্যথা উপশমের উপায় খুঁজতে উৎসাহ দেই৷ মানতেই হবে, যে রোগীরা কিন্তু বেশ সৃজনশীল৷''
মাথাব্যথার রোগীদের অস্বাস্থ্যকর খাদ্য এড়িয়ে চলা উচিত৷ তার বদলে স্পষ্ট দৈনিক রুটিন এবং নিয়মিত ও সুষম খাবারও সাহায্য করতে পারে৷ সে ক্ষেত্রে মাথা দৈনন্দিন প্রক্রিয়া থেকে কিছুটা বিরতি পায়৷
মাইগ্রেন বা জটিল মাথাব্যথাকে দূরে রাখার ৯ উপায়
মাথা ব্যথার ৩৬৭টি ধরনের মধ্যে মাইগ্রেনই সবচেয়ে মারাত্মক৷ আর মাইগ্রেনের যন্ত্রণা একমাত্র তারাই বোঝেন, যারা এতে ভুগছেন বা ভুগেছেন৷ মাথাব্যথা ও মাইগ্রেনের কষ্ট লাঘব করার কিছু উপায় জানিয়েছেন একজন বিশেষজ্ঞ৷
ছবি: Colourbox
মাইগ্রেনের কারণ
মাইগ্রেনের মূ্ল কারণ স্ট্রেস বা মানসিক চাপ৷ এবং স্নায়ুকোষের প্রদাহের কারণেও মাইগ্রেন হয়ে থাকে৷ মাইগ্রেনের কারণ হতে পারে উচ্চ রক্তচাপ, ঘাড়ের ব্যথা, ঘুমের সমস্যা, কম্পিউটারে কাজ করার সময় ঠিকভাবে না বসা৷ তাছাড়া অনেকের ক্ষেত্রে বংশানুক্রমেও চলতে পারে মাইগ্রেনের জটিল ব্যথা৷ জানিয়েছেন ব্যথা বিশেষজ্ঞ ডা হার্টমুট গ্যোবেল৷
ছবি: Colourbox
মাইগ্রেনের লক্ষণ
মাথার একপাশে ব্যথা এবং সেই সাথে বমি বমি ভাব৷ কখনো বা মনে হতে পারে মাথায় কেউ হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছে৷ অনেক সময় কেউ কেউ তখন চোখে ঝাপসা দেখেন৷ তাছাড়া মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হলে যে কোনো ছোটখাটো শব্দ বা অল্প আলোও অনেক বেশি বা অসহ্য মনে হতে পারে৷
ছবি: picture alliance/dpa Themendienst/J. Kalaene
ঔষধ ছাড়া মাইগ্রেন দূরে রাখা
জার্মানিতে এই ধরনের মাথাব্যথায় ভোগেন এ রকম রোগী শতকরা ৫৪ জন৷ তবে তাঁরা যে নিয়মিত ভোগেন, তা নয়৷ মাথা ব্যথায় বেশিরভাগ মানুষই ট্যাবলেট সেবন করে থাকেন৷ ব্যথা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ জানান, প্রয়োজনে ট্যাবলেট সেবন করা যেতে পারে তবে, তা যেন মাসে ১০ দিনের বেশি না হয়৷ ঔষধ ছাড়া মাইগ্রেনকে দূরে রাখা যায়৷ আর তারই কিছু টিপস দিয়েছেন তিনি৷
ছবি: Colourbox
চোখের বিশ্রাম
আজকের যুগে কম্পিউটার ছাড়া কাজ করার কথা যেন ভাবাই যায় না৷ যাঁদের দিনে কয়েক ঘণ্টা কম্পিউটার স্ক্রিনে চোখ রাখতে হয়, তাঁদের জন্য পরামর্শ, প্রতি ২০ মিনিট পর ২০ সেকেন্ডের জন্য চোখকে বিশ্রাম দিন, অর্থাৎ চোখ বন্ধ করুন৷ তাছাড়া জানালা বা অন্য দিকে তাকাতেও পারেন৷ এই পদ্ধতি অল্প সময়ের জন্য হলেও খুবই কার্যকর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Klose
রোজমেরি চা
এক চা চামচ শুকনো রোজমেরি পাতা ১৫০ মিলি লিটার পানিতে ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন এবং দিনে দু’বার তা পান করুন৷ তবে যেদিন কাজের বেশি চাপ থাকে, সেদিন এরকম এক ফ্লাস্ক চা সারাদিনে ভাগ করে পান করবেন৷ কারণ রেজমেরি পাতায় রয়েছে তিক্ত পদার্থ, ফ্ল্যাভোনয়েড এবং শক্তিদায়ক তেল, যা শরীরের কোষে রক্ত সঞ্চালনে সহায়তা করে এবং পেশী ও মস্তিষ্কে আরো বেশি অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে৷
মুগ ডালের অঙ্কুর
মুগডাল ২০ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখলে ডাল থেকে বের হয় অঙ্কুর৷ দিনে তিন বার এক মুঠো করে মুগ ডালের অঙ্কুর খেতে পারেন৷ এতে রয়েছে প্রচুর ম্যাগনেশিয়াম৷ শতকরা ৫০ ভাগ মাথাব্যথার রোগীর ক্ষেত্রেই প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, তাঁদের শরীরে ম্যাগনেশিয়ামের অভাব৷ তাছাড়া কাজুবাদাম, মিষ্টি কুমরার বিচি, কালো চকোলেটও মাইগ্রেন রোগীদের জন্য উপকারী৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আদার পেস্ট
এক চা চামচ আদা বাটায় দুই ফোঁটা পানি এবং এক ফোঁটা কাঠবাদামের তেল মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে নিন৷ এবার পেস্টটি ঘাড়ে ভালোভাবে মেখে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে দিন৷ ব্যথা কমে যাবে৷ ইরান বিশ্ববিদ্যালয়ের করা এক সমীক্ষায় জানা গেছে, আদায় থাকা গ্লুটাথায়ন অনেকটা অ্যাসপিরিনের মতোই ব্যথা কমায়৷
ছবি: Fotolia/kostrez
মুলতানি মাটি
বাথ টবের গরম পানিতে ১০ টেবিল চামচ মুলতানি মাটি ঢেলে দিন এবং এতে ৭ ফোটা ল্যাভেন্ডার তেল ভালোভাবে মিশিয়ে নিন৷ এবার টবে ২০ মিনিট আরাম করে শুয়ে থাকুন৷ একটু পরেই অনুভব করবেন যে ব্যথা আস্তে আস্তে দূর হচ্ছে৷