মাথাব্যথা যার হয়, সে এই কষ্ট বোঝে৷ মাইগ্রেন হলে তো কথাই নেই৷ এমন ধারাবাহিক ব্যথা কমাতে মানুষ কী না করে! তবে ওষুধ অনেক ক্ষেত্রে উলটে ক্ষতি করতে পারে৷ জার্মানিতেও মাথাব্যথা কমাতে নানারকম পদ্ধতি রয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানিতে প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ নানা রকম মাথাব্যথার যন্ত্রণায় ভোগেন৷ যেন মনে হয় মাথায় কেউ হাতুড়ি মারছে৷ কেউ পরীক্ষার সময়ই ঘনঘন মাথাব্যথা নিয়ে হতাশ৷ কেউ বলেন, সারাদিন ঠিকমতো পানি না খেলে সন্ধ্যায় মাথাব্যথা হয়৷ কেউ বা ট্যাবলেট খেয়ে দরজা-জানালা বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পড়েন৷
স্ট্রেস বা মানসিক চাপের কারণে মস্তিষ্কে এক ধরনের শর্ট সার্কিট দেখা দেয়৷ তখন নিউরোট্রান্সমিটার বেরিয়ে এসে সেরিব্রাল মেমব্রেনের ধমনীতে সংক্রমণ ঘটায়৷ ধমনী ফুলে উঠে মাথা দপদপ করে৷ কখনো মনে হয়, যেন হাতুড়ি মারা হচ্ছে৷ মাথাব্যথার নানা ধরন রয়েছে৷ তবে মাইগ্রেন তার সবচেয়ে মারাত্মক রূপ৷
বারবারা লিন্ডেনটাল-সাক্স বহু বছর ধরে মাইগ্রেনে ভুগেছেন৷ ফলে তাঁর জীবনটাই বদলে গেছে৷ তিনি বলেন, ‘‘সবসময়ে মনে হতো, কঠিন রোগে ভূগছি, সাহায্যের প্রয়োজন৷ মরিয়া হয়ে উঠেছিলাম৷'
' কয়েক বছর আগে তিনি জার্মানির ফ্রাইবুর্গ শহরের বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের ব্যথা নিরাময় কেন্দ্রে আসেন৷ উৎস সন্ধানের মাধ্যমেই মাথাব্যথার চিকিৎসার সূচনা হয়৷ সেখানকার চিকিৎসক পেটার বেয়েরেন্স বলেন, ‘‘স্ট্রেস এর স্পষ্ট কারণ, অর্থাৎ মনের মধ্যে বাড়তি চাপের অনুভূতি৷ নারীদের ক্ষেত্রে হরমোন পরিবর্তন ঘটলে এমনটা হয়৷ তাছাড়া ঘুম, জেগে থাকা ও খাবার সময়ের ছন্দ পরিবর্তনও এর কারণ হতে পারে৷''
অনেক রোগী ওষুধের শরণাপন্ন হন৷ কিন্তু ঘনঘন ওষুধ খেলে সেই ট্যাবলেটই মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠতে পারে৷ বারবারা লিন্ডেনটাল-সাক্স মাইগ্রেন কমাতে অনেক রকম চেষ্টা করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ওষুধ, হোমিওপ্যাথি, নেচারোপ্যাথি, যোগাসন, মনোযোগের প্রশিক্ষণ, নিয়মিত খেলাধুলা, বাটারবার, ম্যাগনেসিয়াম – সবকিছু মনেও নেই৷ একটা গোটা পাতাজুড়ে তালিকা রয়েছে৷''
তাহলে কী করা যায়? হালকা মাথাব্যথা হলে ট্যাবলেট বা মেন্থল তেল কাজে লাগতে পারে৷ কিন্তু মাইগ্রেন সামলাতে একেবারে অন্যভাবে এগোতে হয়৷ স্ট্রেস কমানো ও খেলাধুলা তার অঙ্গ৷ কয়েক বছর ধরে এমনকি বোটক্স প্রয়োগ করা হচ্ছে৷ পেটার বেয়েরেন্স বলেন, ‘‘কঠিন এই রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ৷ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, মাত্রাতিরিক্ত ওষুধ খেয়ে ফেললে সেটা পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে বা অন্তত কমিয়ে ফেলতে হবে৷''
রোগীদের মধ্যে আদানপ্রদানও কিছুটা সাহায্য করে৷ হাইনৎস পস্টলেব এক সাপোর্ট গ্রুপ গঠন করেছেন৷ কয়েক বছর ধরে তিনি নিজে ব্যথা থেকে মুক্তি পেয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘কী যে ছিল, কেউ জানে না৷ জানার দরকারও নেই, আমি তো আর মাইগ্রেনের অভাব বোধ করছি না৷ খুব ভালো আছি৷''
মাইগ্রেন বংশানুক্রমেও চলতে পারে৷ যেমন হাইনৎস পস্টলেব-এর সন্তান ও নাতিনাতনিরাও মাইগ্রেনে ভুগছে৷
কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপ, এখন উপায়?
প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মানুষের ব্যস্ততা৷ একসাথে অনেক কাজ করা এবং সবসময়, অর্থাৎ ছুটির পর বা ছুটির দিনেও কর্মজগতের মধ্যে থাকা – এ সব কারণেই বাড়ছে মানসিক চাপ৷ বিস্তারিত দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: DW/S. Wünsch
মানসিক চাপের কারণ
কয়েক বছর আগেও ‘স্ট্রেস’ বা ‘মানসিক চাপ’ শব্দটি তেমন পরিচিত শব্দ ছিল না৷ একসাথে অনেক কাজ বা দ্রুতগতিতে কাজ করা, কাজের স্বীকৃতি না পাওয়া, কাজে নিরুৎসাহ, পদোন্নতি না হওয়া, কর্ম পরিবেশ, কাজ টিকিয়ে রাখার প্রতিযোগিতা, কর্মক্ষেত্রে মবিং ইত্যাদি কারণে স্ট্রেস বেড়ে যায়৷ তবে কার জন্য কতটুকু চাপ ক্ষতিকর, সেটা নির্ভর করে যে মানুষটি কাজ করছে তার সহ্যশক্তির ওপর৷
ছবি: Fotolia/granata68
বর্তমান প্রযুক্তি
আজকের যুগে হাতে মোবাইল নেই –এ যেন কল্পনারও অতীত৷ সবসময়ই আমাদের মধ্যে অন্যের সঙ্গে যুক্ত থাকার একটা তাগিদ কাজ করে৷ ফেসবুকে, ই-মেলে ঘন ঘন ‘আপডেট’ চাই, সব খবর তাড়াতাড়ি পাওয়া চাই! তাই বেড়ে চলে ‘স্ট্রেস’, যার হাত থেকে নাগরিকদের রক্ষা করতে এগিয়ে এসেছে জার্মান বিমা কোম্পনিগুলো৷ তবে কর্মপদ্ধতির পরিবর্তন ছাড়া এ কাজ একেবারেই সম্ভব নয়৷
ছবি: Fotolia/Cara-Foto
পুরুষদের চেয়ে নারীদের স্ট্রেস বেশি
জার্মানিতে শতকরা ৬০ জন মানুষই মানসিক চাপে ভোগেন৷ তবে এঁদের মধ্যে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের মানসিক চাপ বেশি৷ একটি জার্মান স্বাস্থ্যবিমা কোম্পানির সমীক্ষায় ফলাফলে দেখা গেছে যে, একদিকে পেশাগত দায়িত্ব, অন্যদিকে স্বামী, সন্তান এবং সংসারের সব কিছু মিলিয়েই এই চাপের সৃষ্টি৷
ছবি: Fotolia/Andrey_Arkusha
অসুস্থতার কারণে ছুটি
২০১২ সালের তুলনায় ২০১৩ সালে অসুস্থতার কারণে জার্মানরা গড়ে ১৪.৭ দিন বেশি ছুটি নেন৷ সর্দি-কাশির পাশাপাশি স্ট্রেস বা মানসিক চাপ হতে পারে অসুস্থতার কারণও৷ বিশেষজ্ঞদের মতে ২০১২ সালে কর্মীদের অনুপস্থিতির কারণে জার্মনির অর্থনীতিতে ক্ষতি হয় ৫৩ বিলিয়ন ইউরো৷ ‘‘এ কারণেই কর্মীদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখা উচিত’’, বলেন মনস্তত্ত্ববিদ টোমাস রিগোটি৷
মানসিক চাপ
মিউনিখের টেকনিকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সেন্টার ফর ডিজিজ ম্যানেজমেন্ট’ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ৮ থেকে ২০ বিলিয়ন ইউরো ক্ষতির সম্মুখীন হয়, তাও আবার শুধুমাত্র কর্মীদের মানসিক চাপের কারণে৷
ছবি: Fotolia/Dan Race
কাজে উৎসাহ কমে যায়
কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত চাপ মানুষের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে৷ আর তার ফলে দেখা দেয় নানারকম অসুখ-বিসুখ৷ ফলে কাজে উৎসাহ কমে যায়, শরীরের ‘ইমিউন সিস্টেম’ বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হয় দুর্বল৷ ফলত অল্পতেই বেড়ে যায় আক্রমণাত্মক মনোভাব৷
ছবি: Fotolia/Peter Atkins
নির্ধারিত সময়ের আগেই অবসর গ্রহণ
কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত মানসিক চাপ হৃদরোগ বা পেশির অসুখের ঝুঁকিও বাড়ায়৷ জার্মানিতে ২০১৩ সালের করা একটি জরিপে দেখা গেছে, ২০১২ সালে কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপের কারণেই ৭৫ হাজার কর্মী সময়ের আগেই চাকরি থেকে অবসরগ্রহণ করেন৷
ছবি: Nurunnahar Sattar
মানসিক চাপ কমানোর উপায়
‘‘ছুটির দিনে ল্যাপটপ পুরোপুরি বন্ধ রাখুন৷ কর্মক্ষেত্রের চিন্তা নীচে রেখে পাহাড়ে উঠুন, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিন, প্রাণ খুলে হাসুন৷ পরিবারের সাথে সময় কাটান৷ যে কোনো ধরণের ব্যায়াম করুন৷ প্রয়োজনে মোবাইলও বন্ধ রাখুন৷ মনে রাখুন ‘স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল৷’’ - এ পরামর্শ মানহাইম শহরে মানসিক রোগ চিকিৎসার বিশেষ কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত ডা. মিশায়েল ডুশের৷
ছবি: Fotolia/Maridav
আরো উপায়
কর্মক্ষেত্রের চাপ কমাতে মনটাকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে বিশ্রাম দিন৷ আপনার যদি অফিসের কাজ হয়, তাহলে অবসর সময়ে নিজের ভালো লাগে এমন কোনো শারীরিক কাজ করুন৷ সেটা বাগান করা, সাইকেল চালানো বা হাঁটা – যে কোনো কিছু হতে পারে৷ এছাড়া কর্মক্ষেত্রে যদি আপনাকে শারীরিক কাজ করতে হয়, তাহলে অবসর সময়ে খানিকক্ষণ ফেসবুক বা কম্পিউটার নিয়ে কাটাতে পারেন৷