বিষয়টি নিয়ে ইন্দোনেশিয়ায় বিতর্ক শুরু হয়েছে৷ ইদানীং সে দেশে হিজাব পরা নারীর সংখ্যা বেড়েছে৷ কিন্তু তাদের শরীরে থাকছে আঁটসাঁট পোশাক – মুসলিম পণ্ডিতরা যেটা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন৷
বিজ্ঞাপন
ইন্দোনেশিয়ায় এ ধরনের পোশাক ‘জিলবুবস' নামে পরিচিতি পেয়েছে৷ শব্দটা আলাদা দুটো শব্দের মিশ্রণ৷ ‘জিল' এসেছে ‘জিলবাব' থেকে৷ ইন্দোনেশিয়ায় হিজাবের আরেক নাম এটি৷ আর স্তন শব্দের প্রচলিত স্ল্যাং বা অপশব্দ হচ্ছে ‘বুবস'৷ আঁটসাঁট পোশাক হচ্ছে সেটা, যা পরলে স্তন আর পেছনের দিকটা প্রকাশিত হয়ে যায়৷
বক্ষবন্ধনীর ব্যাপারে সচেতনতা
নারী আর বক্ষবন্ধনী – একটার সাথে আরেকটা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে৷ ছোট্ট এই পরিধেয় বস্ত্রটি নারীর জন্য কেন এত গুরুত্বপূর্ণ, এর ব্যবহার, উপকারিতা ও প্রয়োজনীয়তার মতো কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাবেন এই ছবিঘরে৷
ছবি: Fotolia/FOTO-JHB
নারীর স্বপ্ন
সুন্দর, উঁচু আর ভরাট বক্ষের অধিকারী হওয়ার স্বপ্ন অনেক নারীর৷ তা না হলে যেন ঠিক নারীত্ব ফুটে ওঠেনা৷ বক্ষকে যত্ন করে শতভাগ নারীত্ব ফুটিয়ে তুলতে চাই স্বাস্থ্যসম্মত এবং আরামদায়ক অন্তর্বাস৷ আর তা শুরু করতে হয় কিশোরী বয়স থেকেই৷ সেসময় কিশোরীর প্রয়োজন মা, বড় বোন বা অন্য কোনো নারীর পরামর্শ বা সাহায্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ব্রা’র স্রষ্টা মেরি ফেল্পস জেকব
সারা বিশ্বের কোটি কোটি নারী তাদের শরীরকে আরো আকর্ষণীয় দেখাতে যে অন্তর্বাস বা বক্ষবন্ধনী ব্যবহার করেন তার পেটেন্ট নথিভুক্ত করা হয় ১০০ বছর আগে ১৯১৪ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি৷ ব্রা’র স্রষ্টা হলেন মেরি ফেল্পস জেকব৷ তবে সময়ের সাথে সাথে ব্রা এর চেহারা, সাইজ, রং, ডিজাইন অনেক কিছুই বদলেছে৷
ছবি: imago/United Archives
পুশ-আপ ব্রা
যারা নিজের স্তনযুগল নিয়ে সন্তুষ্ট নয় তারা অনেকেই, বিশেষ করে, অল্পবয়সি মেয়েরা নিজেদের পূর্ণ নারী রূপে দেখাতে বা প্রমাণ করতে ভেতরে ফোম দেওয়া ব্রা বা পুশ-আপ ব্রা ব্যবহার করতে ভালোবাসে৷ সারাদিন যে পরিধেয়টি গায়ের সাথে সেঁটে থাকে তা কতটা স্বাস্থ্যসম্মত তা জেনে নেওয়া দরকার৷
সদ্য মায়েদের বিশেষ ব্রা
সদ্য মা হওয়া নারীদের জন্য রয়েছে বিশেষ ধরনের বক্ষবন্ধনী৷ শিশুকে বুকের দুধ পান করানোর সময় যেন মা বা নবজাতকদের কোনো সমস্যা বা কষ্ট না হয় এবং শিশু নিশ্চিন্তে দুধ পান করতে পারে সেজন্য নতুন মা’দের উচিত বিশেষ ধরনের তৈরি ব্রা ব্যবহার করা৷
ছবি: Fotolia/evgenyatamanenko
বক্ষবন্ধনী নির্বাচন
বক্ষকে বেঁধে রাখতে বাজারে অনেক রকমের বক্ষবন্ধনী পাওয়া যায়৷ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো শুধু মিষ্টি রং, সুন্দর ডিজাইন আর কম দাম দেখে নয়, স্বাস্থ্যের জন্য সেটা কতটা উপযোগী অর্থাৎ কাপড়ের মানও দেখা প্রয়োজন৷ তাছাড়া কিছু ব্রা’তে স্তনের আকার আরো সুন্দর করতে ব্রা’র কিনারে গোল করে স্টিল বা পাত লাগানো হয়৷ এগুলো শরীরের জন্য কোনো ক্ষতি বা অ্যালার্জির কারণ হতে পারে কিনা, সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
স্বাস্থ্যগত ব্যাপার
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, স্তনযুগল বেশি বড় থাকায় অনেকে এক-দুই সাইজ ছোট বা খুব আঁটসাঁট ‘ব্রা’ পরেন, যা আসলে ঠিক নয়৷ কারণ এটা দেখতে যেমন ভালো লাগে না, তেমনি স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর৷ তাছাড়া বেশি আঁটসাঁট ‘ব্রা’ পরলে শ্বাসকষ্টও হয় অনেকের৷ তাই বেশি বড় বা বেশি ছোট কোনটাই ঠিক নয়৷ এতে হিতে বিপরীত হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
ধর্ষণ ঠেকাতে বিশেষ ব্রা
ধর্ষণের ঘটনা সারা বিশ্বে দিনদিন বেড়েই চলেছে৷ প্রতি ২২ মিনিটে ভারতের কোথাও না কোথাও একজন মেয়ে যৌননিগ্রহের শিকার হচ্ছে৷ আর সে কারণেই ধর্ষণ ঠেকাতে এক ধরনের অভিনব ইলেক্ট্রিক ‘ব্রা’ তৈরি করেছেন ভারতের তিন ইঞ্জিনিয়ার৷
ছবি: Murali Krishnan
নারীর জন্য নারী
এই ইলেকট্রিক ব্রা পরে থাকা অবস্থায় কোনো মেয়ে ধর্ষণের শিকার হলে সে বার্তা চলে যাবে পুলিশ এবং পরিবারের সদস্যদের কাছে৷ কারণ এই বিশেষ ব্রা’তে থাকবে একটি ডিভাইস, যা জিপিএস এবং জিএসএম ব্যবস্থার সাথে সংযুক্ত৷ এই অভিনব বক্ষবন্ধনী উদ্ভাবন করেছেন মনীষা মোহন (ছবিতে)৷ সাথে আছেন নীলান্দি বসু ও রিম্পি ত্রিপাঠি৷
ছবি: Murali Krishnan
বক্ষবন্ধনীর প্রদর্শনী
কত কিছু নিয়েই না প্রদর্শনী হয়ে থাকে৷ জার্মানির রাটিঙ্গেন শহরে বক্ষবন্ধনীর একটি প্রদর্শনীর ছবি এটি৷ শুধু প্রদর্শনী নয়, জার্মানিতে পুরনো জিনিসের বাজার বা ফ্লো মার্কট-এ পুরনো বিভিন্ন জিনিসের পাশাপাশি পুরনো বক্ষবন্ধনীও বিক্রি করা হয়৷ তবে তা কতটা স্বাস্থ্যসম্মত সেটা প্রশ্ন সাপেক্ষ৷
ছবি: DW
যৌনতার প্রতীক
বক্ষবন্ধনীকে যৌনতার প্রতীকও মনে করা হয়৷ বিজ্ঞাপনে নারীকে অনেক সময় বিকিনিতে দেখানো হয়৷ এই নিয়ে সমালোচনাও হয়৷ তবুও এই চর্চা চলছেই৷
ছবি: Fotolia/FOTO-JHB
10 ছবি1 | 10
আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠান ‘ইন্দোনেশিয়ান কাউন্সিল অফ মুসলিম স্কলারস' সম্প্রতি জিলবুবস পরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে৷ সংস্থার ডেপুটি চেয়ারম্যান মা'রুফ আমিন বলেন, ‘‘নারীরা যে জিলবাব পরছে সেটাকে আমরা স্বাগত জানায়৷ কিন্তু অনেকে দেখা যাচ্ছে তার সঙ্গে এমন পোশাক পরছে যেটা শরীরের বিশেষ অংশ বের করে দিচ্ছে৷ আমরা (কাউন্সিল) এটা একেবারে নিষিদ্ধ ঘোষণা করছি৷''
এই সংস্থার কোনো নিয়ম জনগণ মানতে বাধ্য নয়৷ তাই ইন্দোনেশীয়রা এতদিন কাউন্সিলের ঘোষণাগুলো উপেক্ষাই করে এসেছে৷
তবে কাউন্সিলের এবারের সিদ্ধান্তে ইন্দোনেশিয়ার নারীদের মধ্যে এক মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে৷ কেউ এটাকে সমর্থন করছেন, কেউ তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছে৷ আবার একটা অংশ আছে যাঁরা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মজার সমালোচনা করেছেন৷
মুসলিম লেখক আসমা নাদিয়া মনে করেন, জিলবুবস নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে সেটা মুসলিম রীতি যাঁরা পালন করছেন সেসব নারীদের জন্য একটা সতর্কবাণী৷ ‘‘মুসলিম নারী যাঁরা শরীর ঢাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁদের পোশাক পরায় আরেকটু সাবধান হওয়া উচিত৷''
তিনি মনে করেন, শালীনতাবোধটাই যদি মূল বিবেচ্য বিষয় হয় তাহলে ফ্যাশন আর শালীনতাবোধ একসঙ্গে চলতে পারে৷