1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে মাদকবিরোধী যুদ্ধ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২১ মে ২০১৮

বাংলাদেশে মাদকবিরোধী অভিযানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্ধুকযুদ্ধে গত ৬ দিনে ১৮ জন নিহত হয়েছে বলে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জানিয়েছে৷ রবিবার রাতেই নিহত হয়েছে ৯ জন!

ছবি: bdnews24.com

আসক র‌্যাব ও পুলিশের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যক্তি নিহত হওয়ায় তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে৷ সোমবার এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, ‘‘মাদকবিরাধী অভিযানে গত ১৫ মে পর্যন্ত মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত ও মাদক সেবন করছে এমন ২৩০০ জন ব্যক্তি গ্রেফতার হয়েছে বলে জানা গেছে৷ গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, গত ৬ দিনে র‌্যাব-পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে ১৮ জন, যাদের অধিকাংশ মাদক ব্যবসায়ী বা মাদক গ্রহণ করে৷ এ বছরের জানুয়ারি থেকে ২১ মে পর্যন্ত ১০২ জন বন্দুকযুদ্ধ, ক্রসফায়ার বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক৷ আমরা মাদকের মতো ভয়াবহ ব্যাধি প্রতিরোধে সরকারের কঠোর অবস্থানকে স্বাগত জানাই, কিন্তু তা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ যাতে কোনোভাবে বিদ্যমান আইন ও মানবাধিকারের নীতিমালার ব্যত্যয় না ঘটায়, সে ব্যাপারেও অত্যন্ত সতর্ক দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন৷ আমরা চাই, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও সে অনুযায়ী নির্দেশনা প্রদান করা হোক৷’’

সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, রবিবার দিবাগত রাগে সারা দেশে মাদকবিরোধী অভিযানে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নয় জন নিহত হয়েছেন৷ র‌্যাব পুলিশের এই অভিযানে নিহতরা মাদক ব্যবসায়ী বলে দাবি করা হয়েছে৷

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল রবিবার বলেছেন, ‘‘মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশ-র‌্যাব যে অভিযান পরিচালনা করছে, এটা অব্যাহত থাকবে৷ প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা ঘোষণা করেছেন৷ প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে৷’’

এই প্রক্রিয়ার যারা শিকার হচ্ছেন, তারা চুনোপুটি: নূর খান

This browser does not support the audio element.

মাদক নির্মূল অভিযানে সমর্থন থাকলেও অভিযানের সময় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ার ব্যাপারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন মানবাধিকার কর্মীরা৷ আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়৷ এই প্রক্রিয়ার যারা শিকার হচ্ছেন, তারা চুনোপুটি৷ এর মাধ্যমে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রাঘব-বোয়ালদের আড়াল করা হচেছ৷ অপরাধীদের বিচারে সোপর্দ করতে হবে৷ বিচারের মাধ্যমেই তাদের শাস্তি দিতে হবে৷ নির্বাচনের আগে এই ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি কোনোভাবেই কাম্য নয়৷’’

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এর মধ্য দিয়ে দেশের বিচারবিভাগের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা বাড়বে৷ একটি মহল বিচার বিভাগকে দুর্বল করতেই বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের দিকে যাচ্ছে৷ আর এর মাধ্যমে পুলিশ প্রশাসন আরো ক্ষমতাবান হয়ে অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়বে৷’’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘সুষ্ঠু ও ন্যায় বিচার অনেকটাই তদন্তের সফলতার ওপর নির্ভর করে৷ আর তদন্তের দায়িত্ব পালন করে পুলিশ ও তদন্তকারী সংস্থা৷ তাদের তদন্তে ব্যর্থতার কারণেই অপরাধী ছাড়া পাচ্ছে৷ বিচার প্রক্রিয়া ছাড়া কাউকে শাস্তি দেয়া যায় না৷ সেটা হলে অনেক নিরীহ মানুষ এর শিকার হয়৷ অতীতে হয়েছে৷’’

দেশের বিচারবিভাগের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা বাড়বে: ড. মিজানুর রহমান

This browser does not support the audio element.

এদিকে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে সোমবার সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেন, ‘‘বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে৷ দেশে ক্রমাগতই বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেই চলেছে, এটা উদ্বেগের বিষয়৷ মাদক ব্যবসায়ীসহ যেকোনও সন্ত্রাসীকে এভাবে ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করা মানবাধিকার লঙ্ঘন৷ যে-কোনও অন্যায়-অপরাধকে বিচারের আওতায় এনে তার শাস্তি দেওয়া উচিত৷ অথচ সেটা হচ্ছে না৷’’

তিনি বলেন, ‘‘জনগণ এভাবে হত্যাকাণ্ড দেখতে চায় না৷ তাই যদি হবে, তাহলে দেশে আইন-আদালত কেন? জনগণের টাকায় কেনা অস্ত্রকে এভাবে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা বেআইনি৷ অপরাধীদের আটক করে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে বিচার করা হোক৷’’

আসক বলেছে. ‘‘প্রতিটি ব্যক্তির বেঁচে থাকার এবং ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে৷ এটি তাঁর সাংবিধানিক অধিকার এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দলিলসমূহেও এ অধিকার স্বীকৃত৷ ব্যক্তি যে অপরাধই করে থাকুক না কেন, তাকে বিচারিক আদালতে যথোপযুক্ত আইনি প্রক্রিয়া অণুসরণ করে শাস্তি প্রদান করা হোক৷ অন্যথায় সমাজে আইনের শাসনের বরখেলাপ হবে ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে৷’’

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘‘দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনসমূহ দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে৷ জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিটিও ২০১৭ সালে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা শেষে বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করেছে৷ সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে ইউপিআরের আওতায় সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতির পর্যালোচনায় বিভিন্ন দেশ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনাসমূহের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে৷ আমরা সরকারকে মানবাধিকারের মূলনীতি ও এসব সুপারিশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি৷’’

প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ