ফিলিপাইন্সে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অংশ হিসেবে শুধু আগস্ট মাসেই নিহত হয়েছেন ৪৪৪ সন্দেহভাজন৷ দেশটির মাদক নিয়ন্ত্রণ সংস্থা জানিয়েছে এ তথ্য৷
বিজ্ঞাপন
২০১৬ সালে শুরু হওয়া এই অভিযানে এখন পর্যন্ত মোট ৪,৮৫৪ জন নিহত হয়েছেন বলেও জানিয়েছে ফিলিপাইন্স ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি পিডিইএ৷ দেশটির সরকার অবশ্য দাবি করে আসছে যারা পুলিশকে বাধা দিয়েছে, কেবল তাঁদের ওপরই গুলি ছোঁড়া হচ্ছে৷
দুই বছরে গ্রেফতার করা হয়েছে দেড় লাখেরও বেশি মানুষকে৷ এই সময়ে অন্তত ১২টি মাদক তৈরির কারখানা ধ্বংস করা হয়েছে, ২২৩টি মাদকের আস্তানা গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলেও দাবি করেছে দেশটির আইনশৃংখলা বাহিনী৷
অভিযানে জব্দ হওয়া মাদকের বাজারমূল্য প্রায় ২৪ বিলিয়ন ফিলিপিনো পেসো বা প্রায় সাড়ে চারশ মিলিয়ন মার্কিন ডলার৷
কারাগারের জীবন এমন ভয়ংকর!
ফিলিপাইন্সের কেসন শহরের কারাগার, যেটির অবস্থান রাজধানী ম্যানিলার খুব কাছে৷ সেখানকার বন্দিদের জীবনযাপনের ভয়াবহ চিত্র দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Celis
খোলা জায়গায় থাকা
গারদে যাদের জায়গা হয় না, তাদের খোলা জায়গায় রাত কাটাতে হয়, যেখানে কোনো ছাদ নেই৷ এখন ফিলিপাইন্সে বর্ষাকাল৷ প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে, আর এ সময় এমন খোলা জায়গায় রাত কাটানো কতটা কষ্টকর তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Celis
গারদে কয়েক ধাপ
একটি গারদে অনেকগুলো হ্যামক ঝোলানো আছে৷ একটি হ্যামকেও যদি জায়গা পাওয়া যায়, তাহলে তার ভাগ্য ভালো৷ ৬০ বছর আগে কারাগারটি নির্মিত হয়েছে, যেখানে থাকতে পারে ৮০০ বন্দি৷ অথচ বর্তমানে সেখানে আছে ৩,৮০০ বন্দি৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Celis
শান্তিতে শ্বাস নেয়ার জায়গার অভাব
কারাগারের প্রতিটি ইঞ্চি পরিপূর্ণ-এক ফোটাও জায়গা যে নেই ছবি দেখলেই তা বোঝা যায়৷ বন্দিদের বেশিরভাগই পাতলা কাপড়ের উপর বা কেবল খালি মেঝেতে ঘুমিয়ে থাকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Celis
স্বাস্থ্যের দিকে নজর
ব্যায়ামাগারে এক বন্দি শরীর চর্চা করছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Celis
কঠিন নিয়ম
পেছনের সাইনবোর্ডে বন্দিদের কিছু নির্দেশনা দেয়া আছে কারাগারের নিয়ম সম্পর্কে৷ এখানে কয়েকজন বন্দিকে দেখা যাচ্ছে হাতকড়া পড়া অবস্থায়, যারা বিচারের অপেক্ষায় আছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Celis
পরিচ্ছন্নতা কাজ
অন্যরা যখন এমনি বসে সময় নষ্ট করছে, তখন একজন বন্দি কারাগারের টয়লেট পরিষ্কার করছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Celis
কাপড় ধোয়া এবং গোসল
কখনো কখনো বন্দিরা নিজেদের পরিষ্কার করার এবং কাপড় ধোয়ার সুযোগ পায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Celis
রাতের বন্দিশালা
সন্ধ্যায় কারাগারের বাইরে তালা ঝুলিয়ে দিচ্ছে এক নিরাপত্তারক্ষী, যেখানে কয়েদিরা আর একটি দুঃসহ রাত পার করার চেষ্টা চালাচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Celis
ভয়াবহ পরিস্থিতি
কারাগারের এই অমানবিক পরিস্থিতির জন্য নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডুতের্তেকে দায়ী করছেন অনেকে৷ মাদকের বিরুদ্ধে তার প্রচারণা এতটাই কড়া যে, কাউকে কোনো ছাড় দেয়া হয় না৷ তিনি মাদকাসক্তদের মেরে ফেলার জন্য মানুষকে আহ্বান জানিয়েছিলেন, যা ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল৷ এ পর্যন্ত ৬ লাখ মাদক পাচারকারী ও মাদকাসক্তের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে৷
ছবি: Imago/Kyodo News
9 ছবি1 | 9
মানবাধিকার কর্মীরা শুরু থেকেই এই ঘটনাকে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ বলে দাবি করে আসছেন৷ তাঁদের দাবি, সরকারি হিসেবে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কমিয়ে দেখানো হচ্ছে৷ আসল সংখ্যা ১২ হাজার ছাড়িয়ে যাবে বলেও মনে করেন তাঁরা৷
কিন্তু মানবাধিকার কর্মীরা যা-ই বলুন না কেন, জরিপে প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তের মাদকবিরোধী যুদ্ধে জনগণের সমর্থন বাড়ছে বলে জানিয়েছে সোশ্যাল ওয়েদার স্টেশন নামে একটি বেসরকারি সংগঠন৷
জুন মাসে করা এ জরিপে দেখা গেছে, শতকরা ৭৮ ভাগ নাগরিক মনে করেন, মাদক দমনে সঠিক পথেই এগোচ্ছেন দুতার্তে৷ কেবল ১৩ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন তাঁদের অসন্তুষ্টি৷ এর আগে মার্চ মাসে করা জরিপে দুতার্তের নীতিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছিলেন ফিলিপাইন্সের ৭৫ শতাংশ মানুষ৷
জরিপে ২৬ শতাংশ ফিলিপিনো মনে করেন, পুলিশের বিরুদ্ধে ‘লড়াই’ করায় সন্দেহভাজনরা নিহত হয়েছেন বলে তাঁরা বিশ্বাস করেন না৷ অন্যদিকে, ২৭ শতাংশ নাগরিক পুলিশের দেয়া ভাষ্যে আস্থা রাখেন৷
একই জরিপে দেখা গেছে, ৯৬ শতাংশ নাগরিক মনে করেন, পুলিশের উচিত যেভাবেই হোক, সন্দেহভাজন মাদক ব্যবসায়ীদের জীবিত গ্রেফতার করা৷ কিন্তু চার শতাংশ মানুষ পুলিশ কী করলো, তার ধার ধারেন না৷ তাঁদের মতে, যেভাবেই হোক, মাদক দমনই হওয়া উচিত মূল লক্ষ্য৷