ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ডোপ টেস্টের মাধ্যমে মাদকাসক্ত ২৬ জন পুলিশ সদস্যকে চিহ্নিত করেছে৷ তাদের এখন চাকরি থেকে বিদায় করার জন্য বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়েছে৷ এই ডোপ টেস্ট অব্যাহত থাকবে বলে জানা গেছে৷
বিজ্ঞাপন
যে ২৬ জন পুলিশ সদস্যের ডোপ টেস্টের ফলাফল পজিটিভ এসেছে তাদের মধ্যে একজন সার্জেন্ট, চারজন সাব-ইন্সপেক্টর, তিনজন সহকারী সাব-ইন্সপেক্টর, একজন নায়েক এবং ১৭ জন কনেস্টবল৷ চাকরি থেকে বরখাস্ত করার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়েছে৷ ডিএমপির ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) ওয়ালিদ হোসেন জানান, ‘‘বিভাগীয় মামলার তদন্ত শেষে তাদের বরখাস্ত বা অন্যকোনো শান্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে৷ তবে আমাদের লক্ষ্য হলো তাদের চাকরি থেকে বিদায় করা৷ কোনো মাদকাসক্তকে পুলিশে রাখা হবে না৷’’
যে প্রক্রিয়ায় তারা চিহ্নিত হলেন
পুলিশ সদস্যদের কেউ কেউ মাদক ব্যবসায় জড়িত এবং মাদকাসক্ত এই অভিযোগ আসছিলো অনেক দিন ধরেই৷ তারই অংশ হিসেবে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ বিষয়ে কঠোর অবস্থানের কথা বলা হয়৷ কয়েক মাস আগে ডিএমপির পুলিশ সদস্যদের কেউ মাদকাসক্ত হলে বা ব্যবসার সাথে জড়িত থাকলে তা ছেড়ে দিতে বলা হয়৷ এমনকি কেউ চাইলে তার চিকিৎসা করানোর কথাও বলা হয়৷ কিন্তু তাতে কোনো সাড়া মেলেনি৷ এরপর ডিএমপির ‘কল্যাণ মিটিং-এৎ’ বারবার পুলিশ সদস্যদের এই বিষয়ে সতর্ক করা হয়৷ তাতেও সাড়া না মেলায় পরবর্তী পদক্ষেপে যায় ডিএমপি৷ সন্দেহজনক মাদকাসক্তদের চিহ্নিত করে ডোপ টেস্টের আওতায় আনার নির্দেশ দেয়া হয় ৫৭ টি বিভাগের ডেপুটি কমিশনারদের (ডিসি)৷ এর প্রেক্ষিতে গত দুই মাসে কমপক্ষে ১০০ জন সন্দেহজনক পুলিশ সদস্যের ডোপ টেস্ট করা হয়৷ তার মধ্যে ২৬ জনের পজিটিভ আসে৷ ওয়ালিদ হোসেন জানান, ‘‘রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতালে এই ডোপ টেস্ট করানো হয়৷ এটা একটি অব্যাহত প্রক্রিয়া৷ এটা চলবে৷’’
‘কোনো মাদকাসক্তকে পুলিশে রাখা হবে না’
কোন পর্যায় পর্যন্ত ডোপ টেস্ট
পুলিশের সব সদস্যকে ডোপ টেস্ট করানো যায় কিনা জানতে চাইলে ওয়ালিদ হোসেন বলেন, ‘‘পুলিশের কোনো পর্যায়ের কর্মকর্তাই এই মাদক নজরদারির বাইরে নেই৷ তবে ডিএমপিতে ৩৪ হাজার ফোর্স৷ তাদের সবাইকে ডোপ টেস্ট করানো বিশাল আয়োজনের ব্যাপার৷ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অবশ্যই তাদের ফোর্সের খবর জানেন৷ তাই এখন সন্দেহের ভিত্তিতে ডোপ টেস্ট হচ্ছে৷ তবে ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে সবার ডোপ টেস্টের ব্যবস্থা হবে৷'' মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে যে ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়, পুলিশের মধ্যে যারা মাদকে জড়িত তাদের বিরুদ্ধেও একই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি৷
ডোপ টেস্ট সারাদেশে
শুধু ডিএমপিতেই নাকি সারাদেশের পুলিশ সদস্যদেরই ডোপ টেস্টের আওতায় আনা হবে তা জানাতে পারেননি ডিএমপির ডিসি ওয়ালিদ হোসেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ডিএমপির বিষয়টিই শুধু আমি জানি৷’’ পুলিশ সদর দপ্তরে এ নিয়ে জানতে চেয়েও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি৷ তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে সারাদেশেই পুলিশ সদস্যদের মাদক নজরদারিতে রেখে ডোপ টেস্টের আওতায় আনার নির্দেশনা আছে৷ চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন জানান, ‘‘আমরাও আমাদের পুলিশ সদস্যদের মাদক নজরদারির মধ্যে রেখেছি৷ সন্দেহজনকদের ডোপ টেস্টের আওতায় আনা হবে৷’’
‘কারো কারো বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসারও অভিযোগ আছে’
বিশ্লেষকরা যা বলেন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান মনে করেন, ডিএমপির এই ডোপ টেস্ট একটা প্রাথমিক পদক্ষেপ৷ এটাকে আরো বিস্তৃত করতে হবে৷ আরো কিছু প্রকল্প হাতে নিতে হবে৷ তিনি বলেন, ‘‘পুলিশে শুধু মাদকাসক্ত নয়, কারো কারো বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসারও অভিযোগ আছে৷ আরো অনেক অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ আছে৷ এগুলো নিয়ে আলাদা আলাদা প্রজেক্ট করা যেতে পারে৷ আর তা সফল হলে পুলিশের ভাবমূর্তি কিছুটা হলেও উজ্জ্বল হবে৷’’
ডোপ টেস্টের বিষয়টি একটি ভালো উদ্যোগ বলে তিনি মনে করেন৷ সব স্তরের পুলিশ সদস্যদেরই এর আওতায় আনার পরামর্শ তার৷
বিশ্বাসে চিড় ধরায় এমন কয়েকটি খবর
কিছু মানুষের কিছু অপরাধ বা অপরাধের অভিযোগ প্রবলভাবে বিস্মিতই শুধু করে না, পারস্পরিক বিশ্বাসেও ফাটল ধরায়৷ গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন কিছু সাম্প্রতিক খবর নিয়েই এই ছবিঘর৷ ছবিগুলো সব প্রতীকী৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Sharma
প্রতিবন্ধী ছেলের বৌ-কে যৌন নিপীড়ন
ঢাকার পল্লবীতে নিজের প্রতিবন্ধী ছেলের বৌ-কে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে ২০ সেপ্টেম্বর এক ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ৷ পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়াজেদ আলী ঢাকাটাইমসকে বলেছেন, প্রায় চার মাস ধরে প্রতিবন্ধী ছেলের স্ত্রীর সঙ্গে জোর করে যৌন সম্পর্ক করে আসছিলেন সেই ব্যক্তি৷ অভিযুক্ত ব্যক্তি একটি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Sharma
নিপীড়নের অভিযোগ
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)-র কেন্দ্রীয় নেত্রী জলি তালুকদার সম্প্রতি তার দলের ঢাকা কমিটির সদস্য জাহিদ হোসেন খানের বিরুদ্ধে নিপীড়নের অভিযোগ এনেছেন৷ ২৮ ফেব্রুয়ারির ঐ ঘটনার পর দলের উচ্চ পর্যায়ে অভিযোগ জানিয়ে সাড়া না পাওয়ায় ১৯ সেপ্টেম্বর রাত থেকে ঢাকায় সিপিবির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনশন শুরু করেছিলেন জলি৷ বিচারের আশ্বাস পেয়ে প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙেন তিনি৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
দুই ছাত্রকে ধর্ষণের অভিযোগ
কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলায় গত জানুয়ারি মাসে দশম শ্রেণির দুই ছাত্রকে অচেতন করে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে৷ এ ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ শহিদুল ইসলামকে আটক করে পুলিশ৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
শিশু ধর্ষণের অভিযোগে ইমাম আটক
আট বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে গত মার্চে ঢাকার এক মসজিদের ইমামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ মামলার এজাহারের বরাত দিয়ে পল্লবী থানার ওসি নজরুল ইসলাম বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, কুর্মিটোলার এক মসজিদে আরবি পড়তে গেলে তাকে মসজিদের পাশে নিরিবিলি জায়গায় নিয়ে ধর্ষণ করা হয়৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid
শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টার মামলায় পুরোহিত আটক
গতবছর এপ্রিলে যশোরে একটি মন্দিরের পুরোহিত প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে৷ মন্দিরে পুজো দেখতে যাওয়া মেয়েটিকে চকলেট দেয়ার নাম করে পর্দা টানানো একটি ঘরে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছিল৷ পরে পুরোহিতকে গ্রেপ্তার করা হয়৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
প্রতিবন্ধীকে ধর্ষণের অভিযোগ
যশোরে তৃতীয় লিঙ্গের এক শারীরিক প্রতিবন্ধীকে ধর্ষণের অভিযোগে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ৷ কেশবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসীম উদ্দীন ঢাকা ট্রিবিউনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন৷ ঘটনাটি ঘটে ১৫ সেপ্টেম্বর৷
ছবি: Imago/Imagebroker
৭০ বছরের বৃদ্ধাকে ধর্ষণের অভিযোগ
গত জুন মাসে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলায় ৭০ বছর বয়সি এক বৃদ্ধাকে ধর্ষণ করা হয়৷ এরপর দায়ের হওয়া মামলায় ৩০ বছরের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ নেশা করে চিৎকার করতে থাকায় ঐ বৃদ্ধা ঐ ব্যক্তি ও তার বন্ধুদের শাসন করেছিলেন৷ সেই ঘটনার জেরে বৃদ্ধাকে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
ছেলের বিরুদ্ধে মা হত্যার অভিযোগ
বসতভিটা নিয়ে ভাইদের মধ্যে বিরোধের এক পর্যায়ে কক্সবাজারে গত ২৩ সেপ্টেম্বর এক ব্যক্তি তার মাকে পিটিয়ে মেরে ফেলে বলে অভিযোগ উঠেছে৷ পেকুয়া থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) সুমন সরকার মায়ের মরদেহ উদ্ধার ও তার এক ছেলেকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন৷
ছবি: Reuters
শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগ
চুয়াডাঙ্গার এক ব্যক্তি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে তার অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন৷ এপ্রিল মাসে এই ঘটনা ঘটে বলে ২২ সেপ্টেম্বের এক সংবাদ সম্মেলনে জানান ঐ মেয়ের বাবা৷ বাড়িতে প্রাইভেট পড়ানোর এক ফাঁকে তার মেয়েকে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি৷ এখন তার পরিবারের সবাইকে হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে বলেও জানান ঐ বাবা৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/E. McGregor
শিশু ধর্ষণের অভিযোগে কনস্টেবল আটক
খুলনায় চতুর্থ শ্রেণির এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে ১৪ সেপ্টেম্বর এক পুলিশ কনস্টেবলকে গ্রেফতার করা হয়৷ তেরখাদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) স্বপন কুমার এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন৷
ছবি: Kazi Borhan Uddini/AFP/Getty Images
ছাত্রী ধর্ষণ মামলায় আইনজীবী গ্রেপ্তার
পঞ্চগড়ে দশম শ্রেণির এক স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের মামলায় এক আইনজীবীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ ১১ সেপ্টেম্বর এই ঘটনা ঘটে৷ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই রাশেদুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, স্থানীয়রা ঐ আইনজীবীকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে৷
ছবি: picture-alliance/dpaW. Langenstrassen
‘বয়স্ক পাত্র চাই’
সাদিয়া জান্নাত ওরফে জান্নাতুল ফেরদৌস (৩৮) নামে একজন পত্রিকায় ‘কানাডাপ্রবাসীর জন্য বয়স্ক পাত্র চাই’ বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে৷ টাকার অংকটি প্রাথমিক হিসাব বলে জানিয়েছেন সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রেজাউল হায়দার৷ ১৭ সেপ্টেম্বর তাকে ঢাকার রামপুরা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি এভাবে প্রতারণা করছেন বলে অভিযোগ৷
ছবি: DW
প্রতারণার অস্ত্র বিয়ে
প্রতারণার মাধ্যমে একে একে নয়জনকে বিয়ে করা মোহাম্মদ সুলায়মানকে (২৯) ১৮ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ চট্টগ্রামের পুলিশ কর্মকর্তা আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, সামাজিক মাধ্যমে নিজেকে প্রশাসনের বড় কর্মকর্তা পরিচয় দিতেন সুলায়মান৷ বিয়ে করার পর স্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের চাকরি দেওয়ার নাম করে অনেক টাকা নিয়েছেন তিনি৷ এছাড়া স্ত্রীদের মাধ্যমে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে পরে তিনি লাপাত্তা হয়ে যেতেন বলেও অভিযোগ৷