চট্টগ্রামে এক মাদক কারবারিকে আটকের পর ‘টাকার বিনিময়ে' ছেড়ে দেওয়ায় তিন পুলিশসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৮০ হাজার ইয়াবাসহ আটক করা হয়েছে একজনকে৷
বিজ্ঞাপন
গ্রেপ্তার তিন পুলিশ সদস্য হলেন, সাতকানিয়া থানার ঢেমশা তদন্ত কেন্দ্রের কনস্টেবল আরাফাত নাজিম উদ্দিন, শাহ মোহাম্মদ হাসান ও বিমল চাকমা৷ বাকি তিনজন আরাফাত, বেল্লাল ও নেজাম৷
রোববার তাদের গ্রেপ্তার করার পর সোমবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয় বলে সাতকানিয়া থানার ওসি আনোয়ার হোসেন ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন৷
তিনি বলেন, "গ্রেপ্তার তিন পুলিশ সদস্য গত শুক্রবার ৪০০ ইয়াবাসহ এক মাদক কারবারিকে আটক করে৷ কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে তারা টাকার বিনিময়ে আপস করে৷ তারা মাদক কারবারির কাছ থেকে এক লাখ টাকা নিয়ে জব্দ করা ইয়াবাগুলো নিজেদের কাছে রেখে মাদক কারবারিকে ছেড়ে দেয়৷ বিষয়টি তদন্ত করে সত্যতা পাওয়ায় তিন পুলিশ সদস্যের কাছ থেকে এক লাখ টাকা এবং ৪০০ ইয়াবা জব্দ করা হয়৷”
অন্যদিকে মঙ্গলবার বিকালে উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের ৮-ইস্ট নম্বর বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বি-৩৭ ব্লকে এ অভিযান চালিয়ে ৮০ হাজার ইয়াবাসহ একজন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে বলে জানান এপিবিএন ৮ ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক পুলিশ সুপার শিহাব কায়সার খান৷
আটক ৩০ বছর বয়সি মনসুর আলী উখিয়ার বালুখালী ৯ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সি-১৪ ব্লকের বাসিন্দা জাফর আলমের ছেলে৷
আটক ব্যক্তির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে উখিয়া থানায় মামলা করা হয়েছে৷
এনএস/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
মাদক নিয়ন্ত্রণে সরকারের যত অভিযান
মাদক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে৷ সেই সাথে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে জব্দ হওয়া মাদকের পরিমাণও বাড়ছে৷ পাশাপাশি মাদকবিরোধী অভিযানে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগও তুলছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো৷ ছবিঘরে বিস্তারিত..
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
মাদক চোরাচালান
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সর্বশেষ প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশে বিভিন্ন ধরনের মাদক চোরাচালানের পরিমাণ বাড়ছে৷ সরকারের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, আটককৃত মাদকের পরিমাণ ও এর সাথে জড়িতদের সংখ্যা তার আগের বছরগুলোর তুলনায় কয়েকগুণ বেড়েছে৷
ছবি: AFP
বেড়েছে ইয়াবা
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে তিন কোটি ৬৮ লাখ ৮১ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে। ২০১৯ সালে এর পরিমান ছিল তিন কোটি চার লাখ ৪৬ হাজার পিস। ২০১৯ সালের চেয়ে ২০২০ সালে করোনার বছরে বেশি ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে।
ছবি: Getty Images/Afp/Y. A. Thu
গাঁজা আটকও বাড়ছে
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রতিবেদন বলছে, ২০১৫ সালেদেশের বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা ৩৯ হাজার নয়শ ৬৮ কেজি গাঁজা আটক করে৷ ২০২০ সালে আটকের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ হাজার দুইশ ৭৯ কেজি৷
ছবি: Fadel Senna/AFP/Getty Images
হেরোইন বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সারা দেশে অভিযান চালিয়ে ২০১৫ সালে একশ সাত দশমিক ৫৪ কেজি হেরোইন উদ্ধার করে৷ ২০২০ সালে উদ্ধারের পরিমাণ ছিল দুইশ ১০ দশমিক ৪৪ কেজি৷
ছবি: Bulgarian Prosecutor's Office/picture-alliance/AP
সরকারের বিশেষ অভিযান
মাদক নিয়ন্ত্রণে সরকার ২০১৮ সালের মে মাসে দেশব্যাপী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে৷ বিশেষ করে দেশের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে ‘সাড়াশি অভিযান’ চালায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
হাজার হাজার আটক
মাদকবিরোধী এ অভিযান শুরুর প্রথম দুই মাসের মাথায় প্রায় ২৫ হাজার মামলা দায়ের হয়৷ এসব মামলায় ৩৫ হাজারেরও বেশি লোককে আটক করা হয় বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমগুলো৷
ছবি: bdnews24.com/A. Al Momin
শতাধিক আত্মসমর্পন
অভিযান চলার সময় মাদকব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পনের সুযোগ দেওয়া হয়৷ ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কক্সবাজারের টেকনাফে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ১০২জন মাদক ব্যবসায়ী আত্মসমর্পন করেন৷
ছবি: Getty Images/Afp
সমালোচনায় মাদকবিরোধী অভিযান
এদিকে অভিযানের প্রায় পুরোসময় জুড়েই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতের খবর পাওয়া যায়৷ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্য মতে, এ সময় ‘৪৬৬ জন বিচারবহির্ভূত’ হত্যার শিকার হয়৷ বিষয়টি নিয়ে দেশ-বিদেশে সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার৷
ছবি: bdnews24.com
কতটা সফল মাদকবিরোধী অভিযান?
কক্সবাজারে ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকার পরও তাদের বিচারের আওতায় না আনার অভিযোগ ও কথিত বন্দুকযুদ্ধে ক্ষমতাসীন দলেরই এক কাউন্সিলরের মৃত্যুর পর প্রশ্নের মুখে পড়ে অভিযান৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের অভিযানে সময়িকভাবে ঠেকানো গেলেও মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A.M. Ahad
বাড়ছে মাদকাসক্ত রোগীর সংখ্যা
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমগুলো জানায়, ২০১৯ সালে ১১৪জন রোগী সরকারি-বেসরকারি পুনর্বাসন কেন্দ্রে চিকিৎসা নিয়েছেন৷ ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ছিল ১০৪ জন আর ২০১৭ সালে ৬৯জন৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Buchanan
নতুন মাদকের আবির্ভাব
বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে উদ্ধার হওয়া মাদকের মধ্যে রয়েছে ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজা ও ফেনসিডিল৷ সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে এলএসডি নামের এক মাদকের সন্ধানও পায় গোয়েন্দা বিভাগ৷ পুলিশের দাবি, রাজধানীতে ১৫টি গ্রুপ রয়েছে, যারা এক বছর ধরে এলএসডি বিক্রি ও সেবনের সঙ্গে জড়িত৷