২২ হেলিকপ্টার নিয়ে ৫০০ পুলিশ সদস্য এক জঙ্গলে অভিযান চালিয়ে আটক করেছেন এক মাদক সম্রাটকে৷ শুধু তাই নয়, তাকে গ্রেপ্তারের খবরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন খোদ দেশটির প্রেসিডেন্টও৷
বিজ্ঞাপন
বলছি দাইরো আন্তোনিও উসুগার কথা৷ কলম্বিয়ার ‘মোস্ট ওয়ান্টেড' মাদক সম্রাট তিনি৷ দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী শনিবার তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে৷ তিনি কলম্বিয়ার সবচেয়ে বড় মাদকপাচারকারী৷
মাদক উৎপাদনে শীর্ষ কয়েকটি দেশ
জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনওডিসি (ইউনাইটেড নেশনস অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম) সম্প্রতি বিশ্বের শীর্ষ মাদক উৎপাদনকারী দেশের একটি তালিকা তৈরি করেছে৷
ছবি: Abdelhak Senna/AFP/Getty Images
মিয়ানমার
আফিম উৎপাদনকারী দেশের তালিকার শীর্ষস্থান দখল করেছে মিয়ানমার। নানা কারণে আফগানিস্তানে আফিমের আবাদ কমে যাওয়ায় মিয়ানমার এই অবস্থানে পৌঁছেছে। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে। ইউএনওডিসির প্রতিবেদন মতে, মিয়ানমারের আফিম চাষীরা এখন অন্য যেকোনো পণ্য চাষের তুলনায় গড়ে প্রায় ৭৫ শতাংশ বেশি উপার্জন করছেন। দেশটিতে এখন প্রতি কেজি আফিম ৩৫৫ ডলারে বিক্রি হচ্ছে ।
ছবি: picture-alliance/AP Photo
আফগানিস্তান
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আফিম চাষ হত আফগানিস্তানে৷ ২০২২ সালে তালেবান শাসক মাদকদ্রব্য ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর দেশটিতে আফিম চাষ ৯৫ শতাংশ কমে যায়।জাতিসংঘের হিসেবে, প্রতি বছর প্রায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার টন কাঁচা আফিম উৎপাদন হত সেখানে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
কলম্বিয়া
কোকেন উৎপাদনে বিশ্বে সেরা কলম্বিয়া৷ জাতিসংঘের হিসেবে কলম্বিয়ায় প্রতি বছর তিন থেকে চার’শ টন কোকেন উৎপাদিত হয়৷ এছাড়া পেরু ও বলিভিয়াতেও কোকেনের চাষ হয়৷ ল্যাটিন অ্যামেরিকা, উত্তর অ্যামেরিকা আর ইউরোপ কোকেনের সবচেয়ে বড় বাজার৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মরক্কো
উত্তর আফ্রিকার মরক্কোতে প্রতি বছর গড়ে প্রায় দেড় হাজার টন মারিজুয়ানা ও হাশিশ উৎপাদিত হয়৷ যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোতে সীমিত আকারে মারিজুয়ানা বা গাঁজার ব্যবহার বৈধ করায় এর চাষ আরও বেড়েছে৷
ছবি: Abdelhak Senna/AFP/Getty Images
গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল
মাদক উৎপাদনে এশিয়ার তিন দেশ মিয়ানমার, লাওস আর থাইল্যান্ড ‘গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল’ নামে পরিচিত৷ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই তিন দেশে প্রতিবছর গড়ে প্রায় এক হাজার টন আফিম উৎপাদিত হয়৷
ছবি: AP
যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকো
মেথাম্ফেটামিন বা ক্রিস্টাল মেথ হলো এক ধরণের মাদক, যেটা এক ধরণের সুখানুভূতি এনে দেয় বলে মনে করেন এর সেবনকারীরা৷ ইদানীং এই মাদক সেবনের হার বাড়ছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ৷ তবে কোন দেশে এটা সবচেয়ে বেশি তৈরি হয় তা জানা যায়নি৷ তবে ক্রিস্টাল মেথ ল্যাবেও তৈরি করা যায়৷ তাই সারা বিশ্বে পুলিশ এ ধরনের ল্যাবে অভিযান চালাচ্ছে৷ এ পর্যন্ত যত অভিযান হয়েছে, তার ৮০ ভাগই হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র আর মেক্সিকোর ল্যাবে৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
6 ছবি1 | 6
উসুগা অবশ্য ‘ওটোনিয়েল' হিসেবেই বেশি পরিচত৷ ধারণা করা হয়ে যে তিনি সহিংস ক্লান দ্যেল গলফো গোষ্ঠীর প্রধান, যেটি ঘন জঙ্গলের মধ্য দিয়ে কোকেন পাচারের বড় পথগুলো নিয়ন্ত্রণ করে৷
কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট ইভান ডুকে শনিবারের গ্রেপ্তারের ঘটনাকে পাবলো এসকোবারের পতনের সঙ্গে তুলনা করেছেন৷ ১৯৯৩ সালে পুলিশের গুলিতে নিহত হন কলম্বিয়ার কুখ্যাত এই মাদক সম্রাট৷
ডুকে বলেন, ‘‘আমাদের দেশে চলতি শতকে মাদকপাচারকারীদের উপর সবচেয়ে বড় আঘাত এটি৷''
‘‘ওটোনিয়েল শুধু বিশ্বের সবচেয়ে বড় ত্রাসসৃষ্টিকারী মাদক সম্রাটই নয়, একজন হত্যাকারীও যে পুলিশ, সেনা সদস্য এবং স্থানীয় অ্যাক্টিভিস্টদের খুন করেছে,'' যোগ করেন তিনি৷
কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, ‘‘তাকে গ্রেপ্তারে দেশটির সামরিক ইতিহাসে জঙ্গলে সবচেয়ে বড় অভিযান পরিচালনা করা হয়৷''
উসুগার মাদকপাচারকারী দলের অন্য সদস্যদের আত্মসমর্পণের আহ্বানও জানিয়েছেন ডুকে৷ অন্যথায়, তাদের উপর আইনের পুরোপুরি প্রয়োগ করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷
মাদক পাচার, হত্যা, চাঁদাবাজি, অপহরণসহ নানা অভিযোগ রয়েছে কলম্বিয়ার এই মাদক সম্রাটের বিরুদ্ধে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট কর্তৃপক্ষের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড' তালিকায় রয়েছেন তিনি৷
উসুগাকে গ্রেপ্তার বা বিচারের মুখোমুখি করার উপযুক্ত তথ্য কেউ দিলে তাকে ৫০ লাখ ডলার পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা ২০০৯ সালে দিয়েছিল মার্কিন কর্তৃপক্ষ৷
কোকা উৎপাদনে কলম্বিয়ার রেকর্ড
00:50
৫০ বছর বয়সি উসুগার জন্ম কলম্বিয়ার নেকোক্লিতে৷ প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক পরিবারের নয় সন্তানের মধ্যে সপ্তম তিনি৷ আঠারো বছর বয়সে একটি মার্কসবাদী গেরিলা গোষ্ঠীর সদস্য হয়েছিলেন তিনি৷ পরবর্তীতে অবশ্য সেটি ভেঙে যায়৷
নব্বইয়ের দশকে কৃষকদেরকে গেরিলাদের কাছ থেকে রক্ষায় ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে উসুগাকে৷ সেসময় মাদক পাচারেও জড়িয়ে পড়েন তিনি৷
তাকে গ্রেপ্তারে এর আগেও একাধিক অভিযান চালিয়েছে পুলিশ৷ তবে সাফল্য এসেছে শনিবার৷ ২২ হেলিকপ্টার নিয়ে ৫০০ পুলিশ সদস্যের অভিযানে গ্রেপ্তার হন তিনি৷