আফগানিস্তানে মোতায়েনের পর এই প্রথম যুদ্ধে ব্যবহার করা হলো ‘ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স এয়ার ব্লাস্ট (এমওএবি)’৷ অ্যামেরিকার ভাণ্ডারে থাকা নন-নিউক্লিয়ার বোমাগুলোর মধ্যে এটাই সবচেয়ে বড় বোমা৷ কিন্তু, এটি কেন ‘মাদার অফ অল বম্বস’?
বিজ্ঞাপন
অধিকাংশ বোমার মধ্যে তেল এবং অক্সিডাইজার থাকে বিস্ফোরণের জন্য৷ কিন্তু ‘মাদার অফ অল বম্বস', যা এমওএবি নামেও পরিচিত, আলাদা৷ এটি থার্মোবেরিক অস্ত্র যা আসলে বিস্ফোরণের জন্য গন্তব্যের বাতাসে থাকা অক্সিজেন ব্যবহার করতে পারে৷ আর অক্সিডাইজার বহন করতে না হওয়ায় বোমাটি আরো বেশি বিস্ফোরক জ্বালানী উপাদান বহন করতে পারে৷
সাধারণ বোমাগুলো অল্প একটু এলাকার মধ্যে বিস্ফোরণ ঘটায়৷ কিন্তু এমওএবি'র মতো থার্মোবেরিক বোমাগুলোতে থাকা বিস্ফোরক উপাদান এরোসলের মতো বিস্ফোরণস্থলের বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে যায়, ফলে বিশাল এলাকাজুড়ে আগুন লেগে যায়৷ দ্য ফাউন্ডেশন অফ ডেমোক্রেসিস-এর বিল রোজিও এই বিষয়ে বলেন, ‘‘এটা আসলে কার্যত বায়ুমণ্ডল থেকে অক্সিজেন শুষে নেয় এবং বাতাসে আগুন জ্বালিয়ে দেয়৷ আর এভাবে এমন সব জায়গায় পৌঁছাতে সক্ষম হয় যা সাধারণ বোমার আওতার বাইরে৷''
‘ইসলামিক স্টেট’ আসলে কী?
আল-কায়েদার অখ্যাত এক উপদল থেকে প্রভাবশালী ‘মিলিট্যান্ট মুভমেন্টে’ পরিণত হয়েছে তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএস৷ জিহাদি এই গোষ্ঠীটির দখলে থাকা অঞ্চল থেকে আক্রমণের কৌশল – আইএস-এর এমন নানা দিক তুলে দেয়া হলো এই ছবিঘরে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Souleiman
আইএস কোথা থেকে এসেছে?
ইসলামিক স্টেট (আইএস) সুন্নী ইসলামিস্ট আদর্শে বিশ্বাসী আল-কায়েদার একটি উপদল, যেটি আইএসআইএল, আইসিস এবং দায়েশ নামেও পরিচিত৷ ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন আক্রমণের পর এটির বহিঃপ্রকাশ ঘটে৷ এই গোষ্ঠীর নেতৃত্বে রয়েছেন আবু বকর আল-বাগদাদি৷ জঙ্গি গোষ্ঠীটির লক্ষ্য হচ্ছে ইরাক, সিরিয়া এবং অন্যান্যা অঞ্চল নিয়ে একটি ইসলামিক স্টেট বা খেলাফত প্রতিষ্ঠা করা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
আইএস কোথায় কাজ করে?
বিশ্বের ১৮টি দেশে আইএস সক্রিয় রয়েছে বলে ধারণা করা হয়৷ ইরাক এবং সিরিয়ার কিছু অংশ এই গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং এটি সিরিয়ার রাকা শহরকে রাজধানী হিসেবে বিবেচনা করে৷ তবে ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে এখন অবধি নিজেদের দখলে থেকে এক চতুর্থাংশ এলাকা তাদের হাতছাড়া হয়ে গেছে৷
কারা তাদের বিরুদ্ধে লড়ছে?
আইএস-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বেশ কয়েকটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে৷ বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশের সমন্বয়ে তৈরি মার্কিন নেতৃত্বাধীন একটি ‘কোয়ালিশন’ আইএস অধ্যুষিত এলাকায় বিমান হামলা চালাচ্ছে৷ এই কোয়ালিশনে কয়েকটি আরব দেশও রয়েছে৷ অন্যদিকে সিরিয়া সরকারের পক্ষে সেদেশে বিমান হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া৷ তবে ভূমিতে তাদের বিরুদ্ধে লড়ছে কুর্দিশ পেশমার্গার মতো আঞ্চলিক শক্তিগুলো৷
ছবি: picture-alliance/abaca/H. Huseyin
আইএস-এর অর্থের উৎস কী?
জঙ্গি গোষ্ঠীটির অর্থ আয়ের অন্যতম উৎস হচ্ছে তেল এবং গ্যাস৷ এটি এখনো সিরিয়ার তেল উৎপাদনের এক তৃতীয়াংশ দখলে রেখেছে৷ আর মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিমান হামলার অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে জঙ্গি গোষ্ঠীর এই মূল্যবান সম্পদ৷ এছাড়া কর, মুক্তিপন এবং লুট করা পুরাকীর্তি বিক্রি করেও অর্থ আয় করে এই জঙ্গি গোষ্ঠীটি৷
ছবি: Getty Images/J. Moore
আইএস কোথায় কোথায় জঙ্গি হামলা চালিয়েছে?
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অসংখ্য জঙ্গি হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস৷ চলত বছর সবচেয়ে ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলাটি চালানো হয়েছে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে, যেখানে দু’শোর বেশি মানুষ নিহত ও অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছে৷ আইএস-এর নেতারা জঙ্গি গোষ্ঠীটির আদর্শে বিশ্বাসীদের এককভাবে বিভিন্নস্থানে আঘাত হানতে উৎসাহ প্রদান করে৷
অন্যান্য আর কী কৌশল ব্যবহার করে আইএস?
নিজেদের ক্ষমতার পরিধি বাড়াতে অনেক কৌশল ব্যবহার করে আইএস৷ জঙ্গি গোষ্ঠীটি ‘কালচারাল ক্লিনজিংয়ের’ নামে সিরিয়া এবং ইরাকের অনেক ঐতিহাসিক শিল্পকর্ম লুট ও ধ্বংস করেছে৷ এছাড়া সংখ্যালঘু ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর কয়েকহাজার মেয়েকে ক্রীতদাসী বানিয়েছে৷ গোষ্ঠীটি নিজেদের ‘প্রোপোগান্ডা’ এবং নিয়োগের কাজে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে থাকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
শরণার্থী হয়েছেন কতজন?
সিরিয়ায় চলমান গৃহযুদ্ধের কারণে সেদেশের প্রায় ৬০ লাখ মানুষ প্রতিবেশী লেবানন, জর্ডান এবং তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছেন৷ অনেক সিরীয় ইউরোপেও পাড়ি জমিয়েছেন৷ এছাড়া প্রায় ৩০ লাখ ইরাকে ইরাকের মধ্যেই অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন বলে খবর৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Souleiman
7 ছবি1 | 7
এই বোমা পরিবহন এবং নিক্ষেপের ধরনও ভিন্ন৷ এটিকে কার্গো বিমানে করে গন্তব্যের কাছাকাছি নিয়ে আকাশে ছেড়ে দেয়া হয়৷ এরপর স্যাটেলাইট গাইডেন্স সিস্টেম এবং পাখার মাধ্যমে কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌঁছানো হয়৷ বিশ্বের অন্যতম বড় ‘স্মার্ট' বোমাও এটি৷
এমওএবি সাধারণত ভূপৃষ্ঠ থেকে ছয় ফুট উঁচুতে বিস্ফোরণ ঘটায়৷ এটি নয় মিটার লম্বা এবং এক মিটার প্রশস্ত৷ এটির ওজন ৯,৫০০ কিলোগ্রাম, যা হিরোশিমায় ফেলা পারমাণবিক বোমার চেয়ে দ্বিগুণ৷ এর আবরণ বেশ পাতলা, যা বিস্ফোরণে সর্বোচ্চ ক্ষতি নিশ্চিত করতে করা হয়েছে৷ বোমাটি বিস্ফোরণ স্থলের দেড়শ' বর্গমিটার এলাকার গাছপালা নিমিষে পরিষ্কার করে ফেলতে সক্ষম৷
মিলিটারি সরঞ্জাম বিষয়ক ওয়েবসাইট ডিগল ডটকমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, একটি এমওএবি তৈরিতে খরচ হয় ১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ আর এখন অবধি এ রকম বিশটি বোমা তৈরি করা হয়েছে, যাতে সকুল্যে খরচ হয়েছে ৩২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ কেউ অবশ্য একটি বোমা তৈরিতেই ৩২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হয়েছে বলছেন, যা সঠিক নয়৷
রাশিয়ার কাছেও একইরকম বোমা রয়েছে, যেটির নাম সেদেশ দিয়েছে ‘‘ফাদার অফ অল বম্বস''৷ এটি আকারে এমওএবি'র চেয়ে ছোট হলেও চারগুণ বেশি শক্তিশালী৷ তবে কোনো যুদ্ধক্ষেত্রে সেই বোমার বিস্ফোরণ এখনো ঘটায়নি রাশিয়া৷