ভুট্টার ছাতুর বড়া আর টমেটো-ক্যাপসিকাম সবজি দিয়ে টুনা মাছ খেতে কেমন লাগে, তা জানতে পারবেন পর্তুগালের মাদিরা দ্বীপপুঞ্জে হুগো ফিলিপে ফারিয়া-র ‘টাস্কা'-য় গেলে৷
ছবি: DW
বিজ্ঞাপন
টুনা মাছের সুস্বাদু রেসিপি
04:19
This browser does not support the video element.
মাদিরা প্রদেশে দেখার মতো কী কী জিনিস আছে, এ প্রশ্ন উঠলে, রাজধানী ফুনচালের সবজি বাজারের কথা বলতে হয়, যেখানে ফলমূল, শাক-সবজি, মাছ-মাংস, সব কিছুই পাওয়া যায়৷ বাজারের একতলায় একটা লম্বা শ্বেতপাথরের টেবিলে জেলেদের গতরাত্রে ধরা মাছ সাজানো রয়েছে৷
হুগো ফিলিপে ফারিয়া মাছ কিনতে এসেছেন৷ তিনি একটি ‘‘টাস্কা'', অর্থাৎ ছোট রেস্টুরেন্টের মালিক৷ রেস্টুরেন্টটা কাছেই৷ বাজারে এসেছেন টুনা মাছ কিনতে৷ লম্বা লম্বা করে কাটা এই ‘ফিলে'-গুলোই তাঁর দরকার৷ হুগো জানালেন, ‘‘ভুট্টার ছাতু দিয়ে তৈরি বড়া ভাজার সঙ্গে আমরা এই টুনা মাছ পরিবেশন করব৷ ওটা হলো এই এলাকার একটা প্রিয় খাবার৷'' সেজন্য টুনা মাছ ছাড়া পেঁয়াজ আর অন্যান্য শাক-সবজির দরকার, যা এই বাজারেই পাওয়া যায় – যেমন টমেটো আর ক্যাপসিকাম৷ তা দিয়ে হুগো কি করেন? ‘‘পেঁয়াজের সঙ্গে লাল আর সবুজ ক্যাপসিকামগুলো ফালি ফালি করে কেটে ভেজে নিই৷''
বাজার থেকে পায়ে হেঁটেই হুগো ফিলিপে ফারিয়ার রেস্টুরেন্টে যাওয়া যায়৷ রেস্টুরেন্টটি ফুনচালের একটি অতি পুরনো এলাকায়৷ এখানকার বাড়িঘর অবহেলায় অযত্নে প্রায় ভেঙে পড়তে বসেছিল – তখন কার মাথায় আইডিয়া আসে, জানলা-দরজা আর দোকানের ঝাঁপ স্থানীয় চিত্রশিল্পীদের দিয়ে অলঙ্কৃত করার৷ হুগো ফিলিপে ফারিয়ার রেস্টুরেন্টের চেহারাও বদলে গেছে৷ তাঁর ‘টাস্কা'-র নামটাও আবার মজার: বাংলা করলে দাঁড়ায়, ‘‘শ্রীমতী জোহান্না ন্যাজা'' – মানে মাছের ন্যাজা বা লেজ৷
জার্মান রেস্টুরেন্টে যাওয়ার আগে যা জানা প্রয়োজন
একেক দেশের সংস্কৃতি একেক রকম৷ তাই জার্মানির মধ্যমানের কোনো রেস্টুরেন্টে গিয়ে নিজ দেশের রেস্তোরাঁর মতো আচরণ হয়ত আশা করা উচিত নয়৷ এক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা যেতে পারে৷ ছবিঘরে থাকছে সে তথ্যগুলো৷
ছবি: karuka/Fotolia
নিজেই আসন খুঁজে নিন
জার্মান রেস্তোরাঁয় কেউ আপনাকে হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানাবে – এমনটা ভেবে রাখলে আপনাকে হয়ত কষ্টই পেতে হবে৷ তাই সেটা আশা না করে নিজেই নিজের টেবিলটি বেছে নিন৷ ছোট ক্যাফেতে জায়গা না থাকে চিন্তা নেই৷ আপনি চাইলেই একটি টেবিলে বসে থাকা কারও সঙ্গে তাঁর অনুমতি নিয়ে বসতে পারেন৷
ছবি: Fotolia/Maksym Gorpenyuk
একসঙ্গে মেনু দেখা
রেস্টুরেন্টের একটা টেবিলে সাধারণত একটাই মেনু বই থাকে৷ তাই বন্ধুবান্ধব সহ গেলে সবাইকে একসঙ্গে একটা মেনুই দেখতে হবে৷
ছবি: Fotolia/Tatyana Gladskih
হাত উঁচিয়ে কাউকে ডেকে নিন
চেয়ারে বসার সঙ্গে সঙ্গেই কেউ আপনার কাছে এসে অর্ডার নেবেন, সেটা ভাবা ঠিক নয়৷ চেয়ারে বসার পর আপনারই কাজ হবে কাউকে দেখতে পেলে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করা৷ অনেকসময় দেখা যায়, কেউ একজন অর্ডার নিচ্ছেন, আর সে সময় টেবিল পরিষ্কার করছেন আরেকজন৷ সুতরাং অবাক হবেন না৷
ছবি: Fotolia/Sergej Khackimullin
তৃষ্ণার্ত হয়ে রেস্টুরেন্টে যাবেন না
রেস্তোরাঁয় গিয়ে বিনামূল্যে পানি পাওয়ার আশা না করাই ভালো৷ তাই পিপাসা নিয়ে রেস্টুরেন্ট ঢুকবেন না৷ জার্মানিতে পানির দামও কম নয়৷ সাধারণত বিয়ার আর পানির দাম প্রায় সমান হয়ে থাকে এখানে৷ ইচ্ছেমতো খালি বোতল পূরণ করারও সুযোগ নেই৷
ছবি: mdxphoto - Fotolia.com
খাওয়ার আগে ভেবে নিন
অনেক রেস্টুরেন্টে আপনাকে হয়ত অর্ডার করা খাবারের সঙ্গে বিনামূল্যে ব্রেড দিতে পারে৷ তবে দক্ষিণ জার্মানিতে গেলে সেখানকার অনেক পাব-এর টেবিলে আগে থেকেই ব্রেড রাখা দেখতে পাবেন৷ তবে সাবধান! সেগুলো বিনামূল্যের নাও হতে পারে৷ ওয়েটার ঠিকই ব্রেড-এর হিসেব রাখতে পারেন এবং বিল দেয়ার সময় আপনি যে কয়টা খেয়েছেন তার দাম ধরতে পারেন৷
ছবি: cmfotoworks/Fotolia
কাঁটা চামচের ভাষা
প্রায় ঘণ্টাখানেক আগে খাওয়া শেষ হয়েছে অথচ এখনও কেউ প্লেট নিয়ে যাননি! তাহলে বুঝে নিন যে, আপনি কাঁটা চামচের ভাষাটা জানেন না৷ ভাষাটা এরকম – আপনি যদি খাওয়ার পর চামচটি প্লেটের ওপর, তিনটা বা চারটা বাজার সময় ঘড়ির কাঁটাটি যেভাবে থাকে সেভাবে না রাখেন, তাহলে ওয়েটার বুঝতে পারবে না যে আপনার খাওয়া শেষ হয়েছে৷
ছবি: Fotolia/Africa Studio
‘আইস কিউব’ আশা করবেন না
রেস্টুরেন্টগুলিতে সাধারণত আইস কিউব ছাড়াই কোক, স্প্রাইট বা জুস জাতীয় পানীয় ‘সার্ভ’ করা হয়৷ কারণ নন-অ্যালকোহলিক পানীয়-র তাপমাত্রা ঘরের তাপমাত্রার চেয়ে কম হওয়াটা স্বাস্থ্যসম্মত নয়, এমনটাই মনে করা হয় জার্মানিতে৷
ছবি: Fotolia/photogoodwin
বাথরুমে যাওয়ার আগে পয়সা নিয়ে নিন
কারণ টয়লেটে ঢোকার আগেই আপনি দেখতে পারবেন যে, কেউ একজন টেবিলে একটি প্লেট রেখে বসে আছেন৷ তাঁর কাজ হচ্ছে বাথরুম পরিষ্কার রাখা৷ বিনিময়ে আপনার কাছ থেকে ‘কিছু’ আশা করেন তিনি৷ তাই টেবিল ছেড়ে বাথরুমে যাওয়ার আগে পকেটে ৫০ সেন্ট ঢুকিয়ে নিতে ভুলবেন না যেন!
ছবি: picture-alliance/dpa
খাবার কেমন লাগলো?
টেবিল পরিষ্কারের সময় ওয়েটার আপনাকে জিজ্ঞেস করবেন – ‘খাবার কেমন লাগলো?’ তখন প্রায় সবাই ‘ভালো’ই বলে থাকেন৷ তবে আপনি যদি ‘খুব খারাপ’ বলে উত্তর দেন, তাহলে ওয়েটার হয়ত বিনয়ের ভঙ্গিতে আপনার সঙ্গে একমত হওয়ার কথা জানাবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বখশিশ
বিল দেয়ার ক্ষেত্রে সাধারণত ‘পূর্ণ’ করে দেয়ার একটা চল আছে জার্মানিতে৷ ধরুন, আপনার কফির দাম যদি ১.৮০ ইউরো হয়, তাহলে বখশিশ সহ দুই ইউরো দেয়া হয়৷ আর খাবারের দাম যদি ৩৬.৪০ ইউরো হয় তাহলে আপনি ৩৮ ইউরো দিতে পারেন৷ ক্ষেত্র বিশেষে সেটা ৩৯ কিংবা ৪০ ইউরোও হতে পারে৷
ছবি: karuka/Fotolia
10 ছবি1 | 10
হুগো জানালেন, ‘‘টাস্কা কথাটার মানে হলো ট্যাভার্ন বা পানশালা৷ কথাটা এসেছে গ্রামাঞ্চল থেকে৷ লোকজন আগে টাস্কায় বসে সুরাপান করত৷ আমরা শুধু রেস্টুরেন্ট না খুলে, অন্য কিছু একটা করতে চেয়েছিলাম৷ রেস্টুরেন্ট অনেক আছে, টাস্কা খুব বেশি নেই৷ আমরা এই জায়গা আর এই ডেকরেশন দিয়ে অন্যদের থেকে আমাদের পার্থক্য বোঝাতে চাই৷''
গোড়ায় এখানে শুধু পানীয় পরিবেশন করার কথা ছিল – এই যেমন ‘পোঞ্চা', মাদিরার ন্যাশনাল ড্রিঙ্ক, তৈরি হয় লেবুর রস, কমলার রস, সাদা ‘রম' আর মধু দিয়ে৷ কিন্তু খদ্দেররা পানীয়ের সঙ্গে কিছু খেতে চাইতেন, কাজেই রান্নার ব্যবস্থা করতে হলো৷ আবহাওয়া ভালো থাকলে, রেস্টুরেন্টের সামনে খোলাতে বসা যায়৷ অনেকে এখানে এক কাপ কফি নিয়ে তাস খেলেন৷ অন্যরা মাদিরা দ্বীপের স্পেশ্যালিটি অর্ডার দেন: ভুট্টার ছাতু দিয়ে তৈরি ভাজা বড়ার সঙ্গে টুনা মাছ আর সবজি৷ হুগো শোনালেন, ‘‘এই রান্নায় আরো অনেক কিছু লাগে: অরেগানো, নুন, রসুন, ভিনিগার আর একটু ওয়াইন৷ এছাড়া মিষ্টি ক্যাপসিকাম গুঁড়ো৷''
ভাজা ছাতুর বড়ার জন্য মশলাপাতি হল রসুন, পুদিনা জাতীয় ‘স্যাভরি' আর ‘কারি-কেল'; এগুলো ফুটন্ত পানিতে দিতে হয়৷ তারপর মিহি ভুট্টার ছাতু মিশিয়ে পুরোটা ফুটিয়ে নিতে হয়৷ যতক্ষণ না জল শুষে আসে, ততক্ষণ নেড়ে যেতে হবে৷ এভাবে পুডিং-এর মতো একটা পদার্থ তৈরি হয়, যা সারা রাত ঠান্ডা হতে দিতে হবে৷ সবজির জন্য পেঁয়াজ আর টমেটো, সেই সঙ্গে ক্যাপসিকাম ছোট ছোট করে কাটতে হবে৷ তারপর কম আঁচে অলিভ অয়েলে নেড়েচেড়ে নিতে হবে৷ সবশেষে টুনা মাছের টুকরোগুলো ভাজতে হবে৷ ছাতুর পুডিং বড়ার মতো চারচৌকো করে কেটে ভেজে নিতে হবে৷
এবার আসুন, বসুন, চাখুন ছাড়া আর কিছু বলার নেই৷
মাছ খান, সুস্থ থাকুন
মাছে তেমন কোনো চর্বি নেই, রয়েছে প্রচুর প্রোটিন, যা শারীরিক ও মানসিকভাবে মানুষকে ফিট রাখতে সহায়তা করে৷ বলেন খাদ্য বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: DW/Sarah Wiertz
মাংসের বদলে মাছ
আজকাল প্রায়ই লক্ষ্য করা যায় অনেক জার্মানই মাংসের পরিবর্তে নানা ধরণের মাছ খেতে পছন্দ করেন৷ বিশেষকরে যাঁরা স্বাস্থ্য সচেতন তাঁরা তো অবশ্যই৷ মাছে তেমন কোনো চর্বি নেই, রয়েছে প্রচুর প্রোটিন, যা শারীরিক ও মানসিকভাবে মানুষকে ফিট রাখতে সহায়তা করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Schamberger
খাবারের মুকুট
জার্মানিতে মাছকে বলা হয় ‘খাবারের মুকুট’৷ মাছ মস্তিষ্কের রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে৷ জার্মান খাদ্য গবেষণা কেন্দ্রের পরামর্শ, প্রতিটি মানুষেরই সপ্তাহে অন্তত দু’দিন মাছ খাওয়া প্রয়োজন৷ মাছ হৃদরোগ ও ক্যানসার থেকেও দূরে থাকতে সাহায্য করে৷ মাছ বুদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করে৷
ছবি: AP
নানা জাতের মাছ
জার্মানিতে নানা রকম মাছ পাওয়া যায়৷ ছোট বড়, নদীর মাছ, সামুদ্রিক মাছ, লোনা পানির মাছ, হ্রদের মাছ, তাজা মাছ, হিমায়িত, ধূমায়িত এবং টিনজাত মাছ৷
ছবি: picture alliance/Bildagentur Huber
মাছ ভাজি
জার্মানরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাছ ভাজি খায়, আমাদের বাঙালিদের মতো রান্না করে খুবই কম খেয়ে থাকেন তাঁরা৷ ডয়চে ভেলের ক্যান্টিনে সপ্তাহে প্রায় দু’দিন মাছ দেওয়া হয়৷ ক্যান্টিনে এরকম একটি ট্রাউট মাছের ভাজির দাম ৭ ইউরো, বাইরে যার দাম প্রায় দ্বিগুণ৷
ছবি: Fotolia/Comugnero Silvana
কাটা মাছ
বাজারে পাঠানোর আগে এভাবেই মাছ ‘প্রসেস’ করা হয়৷ মাছ কেটে পরিষ্কার করে, কাঁটা বেছে ‘স্লাইস’ করে তবেই সেটা বাজারে যায়৷ তবে কিছুটা ছোট আকারের মাছ কার্প, ট্রাউট, হেরিং, সি ব্রাস ইত্যাদি মাছ আস্তই পাওয়া যায় বাজারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সখের জেলে
জার্মানিতে অনেকেই সখ করে মাছ ধরেন, তবে তাঁদের অবশ্যই মাছ ধরার লাইসেন্স থাকতে হবে৷ তাছাড়া যে কোনো জায়াগায় মাছ ধরা যায় না, শুধু যেসব জায়গায় অনুমতি রয়েছে সেখানেই মাছ ধরা সম্ভব৷
ছবি: DW
তাজা মাছের বাজার
এভাবেই সুন্দর করে সাজানো থাকে মাছের বাজারে মাছগুলো৷ দেখে মনে হয়, মাছগুলো যেন মাছ-প্রেমীদের ডাকছে৷ মাছ মস্তিষ্ককে সজাগ রাখে, তাই ডাক্তাররা মাছ খেতে সবসময়ই পরামর্শ দিয়ে থাকেন, বিশেষকরে ছাত্র-ছাত্রী এবং বয়স্কদের৷ তবে সবার জন্যই মাছ খুব উপাদেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ধূমায়িত মাছ
ধূমায়িত বা ‘স্মোক্ড’ মাছ জার্মানদের কাছে বেশ প্রিয়, বিশেষ করে রুটির সাথে তাঁরা এ ধরনের বিশেষ প্রক্রিয়ায় রান্না করা মাছ খেতে পছন্দ করেন৷ ম্যাকরেল নামের এক মাছ যার মধ্যে খুব সামান্য হলেও আমাদের ইলিশের স্বাদ খুঁজে পাওয়া যায়৷ তবে সেই মাছ ‘স্মোক্ড’ অবস্থায়ই বেশি পাওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/chromorange
বরফ দেওয়া মাছ
এভাবেই মাছকে যত্ন করে বরফের ওপর সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা হয়৷ শুধুমাত্র মাছের জন্য রয়েছে আলাদা বাজার, সেখানে এ ধরনের মাছ পাওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মাছ খান, সুন্দর আর স্লিম থাকুন
মাছ খাওয়ার পরামর্শ আজকাল চারিদিকে শোনা যায়৷ ডাক্তার থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য সচেতন যে কেউ এই পরমার্শ দেন৷ তবে ছোটবেলা থেকেই এই অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা৷ শরীরে আয়োডিনের ঘাটতিও পূরণ করে থাকে বেশ কিছু মাছ৷