খেলার সময় খেলা, পড়ার সময় পড়া- কিন্তু বাংলাদেশে মাদ্রাসাপড়ুয়া শিশুদের অনেককে খেলার সময়ও পড়তে হয়৷ দুরন্ত শৈশবের দেখা পায় না ওরা, হারিয়ে যায় কৈশোরকালও৷
বিজ্ঞাপন
রাজধানী ঢাকার স্কুলে শিক্ষকতা করেন মুহিব নেছার৷ বাংলায় স্নাতকোত্তর এই শিক্ষকের শৈশব ও কৈশোরকাল কেটেছে ছারছিনা দরবারের আলিয়া মাদ্রাসায়৷ বছর কয়েক আগের সেই স্মৃতি জানালেন এভাবে, ‘‘মাদ্রাসায় আমাদের অবসর সময় ছিল শুধু আসরের নামাজের পর ঘন্টাখানেক৷ তা-ও মাদ্রাসার গণ্ডির ভেতরেই থাকতে হতো৷ ফুটবল-ক্রিকেট এ ধরনের খেলার কোনো সুযোগ ছিল না৷ হাঁটাহাঁটি বা একটু দৌড়াদৌড়ি এই ছিল আমাদের খেলা৷ আমাদের বাজারে যাওয়ার অনুমতি ছিল সপ্তাহে শুধু এক দিন৷’’ পরিস্থিতি এখনো অনেকটা আগের মতোই রয়ে গেছে বলে মনে করেন মুহিব৷
গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের শিক্ষার পাঠক্রম আর পরীক্ষার চাপে সদাই ব্যস্ত থাকতে হয় খুদে পড়ুয়াদের৷ শহুরে শিশুদের জীবন আরো ঘরবন্দি৷ এতে আবার পড়ার তাড়ার পাশাপাশি মাঠ ও নিরাপত্তার ঘাটতিও জড়িত৷ তবে দেশের মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ খেলাধুলাসহ সব ধরনের বিনোদন থেকে বঞ্চিত হয়ে বেড়ে ওঠে ঐতিহ্যগত কারণেই৷ কঠোর নিয়মের মধ্যে থাকতে হয় বেশিরভাগ মাদ্রাসার আবাসিক শিক্ষার্থীদের৷
তবে সরকারের তত্ত্বাবধানে থাকা আলিয়া মাদ্রাসার পরিবেশ তুলনামূলক মুক্ত৷ সেখানে পাঠ্যক্রম অনেকটা স্কুল-কলেজের মতো৷ খেলাধুলা ও সংস্কৃতিচর্চারও যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে৷ আর সরকারি নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা কওমি মাদ্রাসায় আছে অনেক সীমাবদ্ধতা৷ পুরনো দিনের পাঠ্যক্রম অনুসরণ করছে তারা৷ এমনটাই জানালেন বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী৷ আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজমের এই সহকারি অধ্যাপক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কওমি মাদ্রাসায় শুধু ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া হয়৷ জাগতিক বিষয়গুলো সেখানে গৌণ৷ শরিয়তের কারণে কিছু বিষয়, যেমন টিভি দেখার মতো বিনোদনমূলক বিষয়গুলো সেখানে নিষেধ৷ খেলাধুলার ক্ষেত্রেও তারা নিরুৎসাহিত থাকে৷ এই কারণে কওমির ছাত্র-ছাত্রীরা ঘুমের সময় বাদ দিয়ে, বাকি সময় লেখাপড়ার মধ্যে থাকে৷’’
মাদ্রাসায় খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চা
বাংলাদেশে দু’ ধরনের মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা চালু আছে৷ একটি সরকার অনুমোদিত আলিয়া মাদ্রাসা, অন্যটি কওমি মাদ্রাসা৷ এসব মাদ্রাসায় খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ কেমন, তা জানা যাবে এই ছবিঘরে৷
ছবি: Sazzad Hossain
মাদ্রাসার সংখ্যা
বাংলাদেশে সরকার অনুমোদিত আলিয়া মাদ্রাসার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার৷ আর কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের হিসেবে, কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা ১৩,৭১০টি৷ অবশ্য বছর তিনেক আগে কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিস ডিগ্রিকে সাধারণ শিক্ষার স্নাতকোত্তর সমমান মর্যাদা দেয়া হয়৷ দুই ধারা মিলিয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ৷
দুই মাদ্রাসার দুই চিত্র
সরকার অনুমোদিত আলিয়া মাদ্রাসাগুলোতে খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ থাকলেও বেশিরভাগ কওমি মাদ্রাসাতেই সেই সুযোগ নেই৷
ছবি: DW/M. Mamun
বছরে দুটো ক্রীড়া প্রতিযোগিতা
আলিয়া মাদ্রাসাগুলো নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড৷ এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক কায়সার আহমেদ ডয়চে ভেলেকে জানান, বোর্ডের অধীনে প্রতিবছর শীত ও গ্রীষ্মকালে দুটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়৷ যদিও তিনি মনে করেন, মনিটরিংয়ের অভাব কিংবা শিক্ষকদের উদাসীনতার কারণে জাতীয় পর্যায়ের খেলাধুলায় স্কুল-কলেজের ছেলে-মেয়েদের চেয়ে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে আছে৷
ছবি: Privat
কওমি মাদ্রাসার কথা
বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব ও ‘আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম’-এর সহকারী অধ্যাপক মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কওমি মাদ্রাসায় শুধু ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া হয়৷ জাগতিক বিষয়গুলো সেখানে গৌন৷ শরিয়তের সীমাবদ্ধতার কারণে কিছু বিষয়, যেমন টিভি দেখার মতো বিনোদনমূলক বিষয়গুলো সেখানে নিষিদ্ধ৷ খেলাধুলার ক্ষেত্রেও তারা নিরুৎসাহিত করে থাকে৷’’
ছবি: Privat
আছে ব্যতিক্রম
ঢাকার নূরীয়া হাজারীবাগ মাদ্রাসা একটি কওমি মাদ্রাসা৷ সেখানকার নূরানী বিভাগের প্রধান শিক্ষক হাফেজ মো: মুজিবুল হক মনে করেন, শিক্ষার্থীদের একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য খেলাধুলা ও বিনোদনের প্রয়োজন আছে৷ তিনি জানান, তার মাদ্রাসায় প্রতি বৃহস্পতিবার গজল ও কেরাতের উপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়৷ এছাড়া বছরে তিনবার গজল ও কেরাত প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়৷
ছবি: Sazzad Hossain
সরকারি সহায়তা প্রয়োজন
ফেঞ্চুগঞ্জের মদিনাতুল উলুম শাহ মালুম মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা ফখরুল ইসলাম জানান, তার মাদ্রাসায় শরীরচর্চার শিক্ষক নেই৷ তবে ছেলেরা সময় পেলে মাদ্রাসার সামনের মাঠে খেলাধুলা করে৷ মাদ্রাসা থেকে কোনো সরঞ্জাম দেয়া হয় না৷ শিক্ষার্থীরাই ব্যাট-বল নিয়ে আসে৷ তিনি বলেন, ‘‘খেলাধুলার জন্য সরকারের সহায়তা পেলে ভালো হয়৷’’ ছবিতে ঢাকার হাজারীবাগের আল-জামি’আ মাদীনাতুল উলূম মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Sazzad Hossain
ফুটবল খেলতে ভালো লাগে
ঢাকার নূরীয়া হাজারীবাগ মাদ্রাসার শিক্ষার্থী তানিমের (১২) ফুটবল খেলতে ভালো লাগে৷ তাই বিকেল হলেই সে মাঠে ফুটবল খেলতে যায়৷
ছবি: Sazzad Hossain
খেললে পড়াশোনায় মন বসে
ঢাকার নূরীয়া হাজারীবাগ মাদ্রাসার আরেক শিক্ষার্থী হাছান (১৫) মনে করে, খেলাধুলা করলে মন ভালো থাকে, পড়াশোনায় মন বসে৷
ছবি: Sazzad Hossain
মন ভালো থাকে
নূরীয়া হাজারীবাগ মাদ্রাসার শিক্ষার্থী মোঃ ইমরান হোসাইন ক্রিকেট, ফুটবল ও ব্যাডমিন্টন খেলতে ভালোবাসে৷ খেলাধুলা করলে মন ভালো থাকে বলে মনে করে সে৷
ছবি: Sazzad Hossain
কওমিতে সৃজনশীল চর্চার সুযোগ কম
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক (সম্পাদক, প্রকাশনা বিভাগ) আনোয়ার কবীর ডয়চে ভেলেকে বলেন, কওমি ধারায় সৃজনশীল চর্চার সুযোগ অনেক কম৷ কারণ, তারা নিজেরাই সিলেবাস নিয়ন্ত্রণ করে৷ তাই কওমি-পড়ুয়া শিশুদের গোঁড়ামিমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে তৃণমূল পর্যায়ে সৃজনশীল চর্চা প্রসারিত করতে হবে বলে মনে করেন তিনি৷
ছবি: Privat
উদ্যোগ
কওমি শিক্ষাধারাকে মূলধারার সমান্তরাল করতে সরকারি কিছু উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে৷ কওমি মাদ্রাসা নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান ‘বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ’ বা বেফাক নেতাদের সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ আগের তুলনায় বেড়েছে৷ কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসকে বছর তিনেক আগে সাধারণ শিক্ষার স্নাতকোত্তর সমমান মর্যাদা দেয়া হয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
11 ছবি1 | 11
কওমি মাদ্রাসা নিয়ন্ত্রণ করে সরকারের বাইরে থাকা স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক)৷ তাদের ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, দেশে মোট কওমি মাদ্রাসা সংখ্যা ১৩৭১০৷ এর মধ্যে পুরুষদের জন্য ৯১০৮টি, আর নারীদের ৪৬০২টি৷ গত বছর তাদের পরীক্ষার্থী ছিল এক লাখ ৬১ হাজার ৬৩১ জন৷ বেফাকের বাইরেও আরো কওমি মাদ্রাসা আছে৷ অন্যদিকে সরকার অনুমোদিত আলিয়া মাদ্রাসার সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার৷ দুই ধারা মিলিয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০ লাখেরও বেশি বলে সংশ্লিষ্ট পরিসংখ্যানে জানা যায়৷ এই তথ্য থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, দেশের শিশুদের বড় একটা অংশ বিনোদনের কোনো খোরাক না পেয়েই বড় হচ্ছে৷
তবে কওমিতে না থাকলেও আলিয়া মাদ্রাসায় সৃজনশীল চর্চার অনেক দিক আছে৷ তাই এই ধারার শিক্ষার্থীদের মধ্যে অন্য বিষয় জানার সুযোগ বেশি রয়েছে বলে মনে করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরচিালক (সম্পাদক, প্রকাশনা বিভাগ) আনোয়ার কবীর৷ এই সাংবাদিক ও লেখক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কওমি ধারায় সৃজনশীল চর্চার সুযোগ অনেক কম৷ কারণ, তারা নিজেরাই সিলেবাস নিয়ন্ত্রণ করে৷ তাই রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে৷ তবে কর্তৃত্ব নয়, সহযোগিতার মানসিকতা দেখাতে হবে৷ এগিয়ে আসতে হবে কওমি পক্ষকেও৷’’
কওমি শিক্ষাধারাকে মূলধারার সমান্তরাল করতে সরকারি কিছু উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে৷ বেফাক নেতাদের সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে৷ নানা বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে৷ এরই অংশ হিসেবে বছর তিনেক আগে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থাকে সরকার স্বীকৃতি দিয়েছে৷ তাদের দাওরায়ে হাদিস পেয়েছে সাধারণ শিক্ষার স্নাতকোত্তরের সমমান৷ একে তখন যুগান্তকারী ঘোষণা হিসেবে দেখেছেন অনেকে৷ তবে কওমি-পড়ুয়া শিশুদের গোঁড়ামিমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতে তৃণমূল পর্যায়ে সৃজনশীল চর্চা প্রসারিত করতে হবে বলে মনে করেন সাংবাদিক ও লেখক আনোয়ার কবীর৷ এ প্রসঙ্গে ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘কওমি মাদ্রাসার শিশুরা রাষ্ট্রের একটি বড় অংশ৷ এদেরকে গোঁড়ামি বা কুসংস্কার মুক্ত করতে হলে সৃজনশীল বইপত্র দেয়া প্রয়োজন৷ এজন্য সরকারের পাশাপাশি কওমি সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে৷’’
এদিকে সময়ের পরিবর্তনে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের কিছু বিষয়ে পরিবর্তন এসেছে৷ তাদের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়৷ গতবছর বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মুভ ফাউন্ডেশনের এক জরিপমতে, মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ৬৫ শতাংশ ফেসবুক ব্যবহার করে৷ তাদের প্রায় সবার আছে স্মার্টফোন৷ এ বিষয়ে আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজমের সহকারী অধ্যাপক মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী বলেন, ‘‘মাদ্রাসায় যারা আবাসিক থাকে, সেই ছাত্রছাত্রীদের বয়স ২০-এর নীচে হলে তাদের সাধারণত স্মার্টফোন ব্যবহার করতে দেয়া হয় না৷ অনাবাসিক যারা বা যারা মাদ্রাসার গণ্ডি পার হয়ে গেছেন, কিংবা বয়স ১৮ পার হয়েছে, তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয়৷ তারা স্মার্টফোন ব্যবহার করে থাকে৷’’
গতবছর জুনের ছবিঘরটি দেখুন...
বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসা ও শিক্ষা
কওমি মাদ্রাসা বেসরকারি ইসলাম ধর্ম ভিত্তিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান৷ ঢাকার কামরাঙ্গির চরে এমনই এক মাদ্রাসা জামিয়া নূরিয়া ইসলামিয়া৷ সেখানে একটা গোটা দিন কাটিয়ে কওমি শিক্ষা ব্যবস্থার নানা দিক ক্যামেরায় তুলে ধরেছেন মুস্তাফিজ মামুন৷
ছবি: DW/M. Mamun
সরকার কর্তৃক স্বীকৃতি
বাংলাদেশে প্রচলিত দু’ ধরনের মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে কওমি মাদ্রাসা একটি৷ উনিশ শতকে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রতিষ্ঠিত দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসার মাধ্যমে বাংলাদেশেও কওমি শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন হয়৷ দীর্ঘকাল ধরে কওমি মাদ্রাসা সরকারের আর্থিক সহায়তা ছাড়াই সাধারণ জনগণের সহায়তায় পরিচালিত হয়ে আসছিল৷ সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক স্বীকৃতি লাভ করেছে ইসলামি এ শিক্ষা ব্যবস্থা৷
ছবি: DW/M. Mamun
১৪ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী
বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস)-এর ২০১৫ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৩ হাজার ৯০২টি কওমি মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪ লাখেরও বেশি৷ তবে বেসরকারি হিসেব মতে, সারা দেশে কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা ২০ হাজারের বেশি৷
ছবি: DW/M. Mamun
মাদ্রাসার একটি ক্লাসরুম
কওমি শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিচালিত ঢাকার জামিয়া নূরিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার প্রাথমিক স্তরের একটি শ্রেণিকক্ষ৷ এ শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রাথমিক স্তরে আরবির পাশাপাশি বাংলা, ইংরেজিসহ সাধারণ শিক্ষাও দেওয়া হয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
সহশিক্ষায় বাধা নেই শিশুদের
কওমি শিক্ষা ব্যবস্থায় সহশিক্ষা স্বীকৃত নয়৷ তাই মহিলাদের শিক্ষার জন্য আলাদা কিছু প্রতিষ্ঠান আছে৷ তবে প্রাথমিক স্তরে শিশুদের সহশিক্ষার কোনো বাধা নেই৷
ছবি: DW/M. Mamun
স্বতন্ত্র শিক্ষা বোর্ড দ্বারা পরিচালিত
বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোর একাংশ পরিচালিত হয় স্বতন্ত্র একটি শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমে৷ ‘বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া’ (বেফাক) নামের এই শিক্ষা বোর্ড কওমি মাদ্রাসার পরীক্ষাসহ নানা বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে থাকে৷
ছবি: DW/M. Mamun
ক্লাস হয় আরবি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী
কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা সেশন পরিচালনা হয় আরবি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী৷ সাধারণত বেফাক আওতাধীন মাদ্রাসাগুলোর নতুন সেশন শুরু হয় আরবি ক্যালেন্ডারের শাওয়াল মাসের ১০ তারিখ থেকে৷
ছবি: DW/M. Mamun
পড়া ও শোয়ার জায়গা একটাই
ঢাকার জামিয়া নূরিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার একটি শ্রেণিকক্ষ৷ এই কক্ষটি শিক্ষার্থীদের থাকার জায়গাও৷ সাধারণত কওমি মাদ্রাসাগুলিতে পাঠদান এবং শিক্ষার্থীদের থাকার জায়গা একই হয়ে থাকে৷
ছবি: DW/M. Mamun
সর্বক্ষণের সঙ্গী একজন শিক্ষক
কওমি মাদ্রাসার প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি একজন শিক্ষকও থাকেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
রুটিনমাফিক জীবন
কওমি মাদ্রাসাগুলো সম্পূর্ণ আবাসিক ব্যবস্থায় পরিচালিত৷ তাই শিক্ষার্থীদের সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন রুটিনের মধ্য দিয়ে সময় অতিবাহিত করতে হয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
উচ্চশিক্ষার সুযোগ
কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থার একটি অংশ হিফজুল কোরান (বানানভেদে কোরআন)৷ এ বিষয়ের শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র পবিত্র কোরান শরীফ মুখস্থ করে থাকেন৷ তবে হিফজুল কোরান শেষ হলে কওমি মাদ্রাসাগুলোতে অন্য বিষয়ে উচ্চশিক্ষারো সুযোগ আছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
সর্ব্বোচ্চ শ্রেণি দাওরায়ে হাদিস
জামিয়া নূরিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের একটি শ্রেণিকক্ষ৷ এটি কওমি শিক্ষা ব্যবস্থার সর্বোচ্চ শ্রেণি৷ সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার এই শ্রেণিকেই মাস্টার্স-এর সমমান বলে ঘোষণা করেছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
পড়াশোনার মূল মাধ্যম আরবি
কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিস শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের হাদিস সম্পর্কিত বিষয়ে বিস্তারিত পড়ানো হয়৷ এ বিষয়ে পড়ানোর মূল মাধ্যম আরবি ভাষা৷ হাদিসের যথাযথ ব্যাখ্যা আরবি ভাষাতেই সম্ভব, এমনটাই মনে করা হয়ে থাকে৷
ছবি: DW/M. Mamun
আছে উর্দু এবং ফারসি ভাষাও
বাংলাদেশের কাওমি মাদ্রাসাগুলোয় প্রাথমিক স্তরে আরবির সঙ্গে বাংলা, ইংরেজি ইত্যাদি পড়ানো হলেও উচ্চস্তরে আরবি ছাড়াও পড়ানো হয় উর্দু এবং ফারসি ভাষা৷
ছবি: DW/M. Mamun
গরিব ছাত্রদের জন্য ফ্রি খাবার
কওমি মাদ্রাসাগুলোয় গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে৷ তবে সামর্থবানদের থাকা ও খাওয়ার জন্য নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করতে হয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
মেঝেতেই খাওয়া-দাওয়া, পড়াশোনা
শিক্ষা কার্যক্রম, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে টেবিল-চেয়ারের ব্যবহার নেই কওমি মাদ্রাসাগুলোয়৷ ইসলামি সুন্নত অনুসরণে পাঠদান কার্যক্রম, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি সম্পন্ন হয় মেঝেতেই৷