মাদ্রাসায় বাদ্যযন্ত্র নিয়ে দ্বন্দ্বে সরকার ও হেফাজত
২৫ জুলাই ২০১৯কিন্তু সরকারের এই উদ্যোগকে ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলছে হেফাজত ইসলাম৷ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠন আর জঙ্গিবাদকে সমূলে দূর করার লক্ষ্য নিয়েই এমন উদ্যোগ নিয়েছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়৷
এ প্রসঙ্গে সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ জানান, মাদ্রাসা পড়ুয়া লাখো শিক্ষার্থী দেশের সংস্কৃতির বাইরে চলে যাচ্ছে৷ মঙ্গলবার পাঁচটি মাদ্রসার শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি সাংস্কৃতিক আয়োজন করা হয়৷ ওই অনুষ্ঠানেই তাঁদের কিছু সরঞ্জাম দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী৷
মাদ্রাসা বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী সম্পর্কে কে এম খালিদ বলেন, ‘‘ইসলামিক কালচার নিয়েও তাঁরা চিন্তা ভাবনা করে না, দেশের কালচারও নিয়েও ভাবে না৷ রাষ্ট্রীয় ইতিহাস তাঁরা সঠিকভাবে জানতে পারে না৷ এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয় শিষ্টাচার, রাষ্ট্রীয় সংস্কৃতি, স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস, মুসলিম কালচার—সবই তাঁদের কাছে পৌঁছে দিতে চাই৷''
তিনি বলেন, ‘‘শুরু করেছি৷ দেখি, কতদূর যেতে পারি?'' প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ‘‘এই মূহূর্তে সরঞ্জাম বলতে, আর্থিক অনুদানের কথা ঘোষণা দিয়েছি৷ তাঁরা তাঁদের প্রয়োজন মতো সেটি কিনে নেবে৷ যেটি ধর্ম এবং সংস্কৃতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয়৷''
তবে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত আছে হেফাজত ইসলামের৷ সংগঠনটির মিডিয়া সমন্বয়ক ফখরুল জানান, ‘‘এটা কোনোক্রমে মেনে নেয়া যায় না, বাদ্যযন্ত্র ইসলামের সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক৷''
ফখরুল জানান, ‘‘বাদ্যযন্ত্র শরীয়তে ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম৷ হারাম কার্যক্রম কোনো মাদ্রাসা শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত করবে এটা কোনোক্রমে মেনে নেয়া যায় না৷'' তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতারা বৈঠকে বসবেন৷ বৈঠকের পর তাঁরা মন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করবেন৷
সরকারের এই উদ্যোগ প্রত্যাহারে জোর দাবি ও প্রতিবাদ জানানো হবে বলেও জানান হেফাজতে ইসলামের মিডিয়া সমন্বয়ক৷
বিষয়টি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের নজরে আনা হলে তিনি জানান, ‘‘আমরা তো কেবল শুরু করলাম৷ এ ধরনের কিছু আসেনি আমার কাছে৷''
এই উদ্যোগ ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয় বলে মনে করেন প্রতিমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, ‘‘তাঁরাই সিদ্ধান্ত নেবেন, তাঁরা কিভাবে করবেন৷ এ দেশের ইতিহাসকে ধরে রাখা, মুসলিম ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য যদি কোনো কালচারাল অনুষ্ঠান করে, সেখানে তো সাংঘর্ষিক কিছু নাই৷''
‘‘জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কোনো অনুষ্ঠান বা দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে যদি তাঁরা কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে—সেটা সাংঘর্ষিক হবে কেন?''—জানান প্রতিমন্ত্রী৷
তিনি আরো বলেন, ‘‘সুফি মাদ্রাসাতে যাঁরা আছেন, কওমি মাদ্রাসাতে যাঁরা আছেন, তাঁরাই সিদ্ধান্ত নেবেন কিভাবে করবেন৷ তাঁদের ওপর ছেড়ে দিয়েছি, ছেড়ে দিতে চাইছি৷ চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছি, দেখা যাক কি হয়৷ যেখানে বাধা আসবে সেখানে নিশ্চয় আমরা ক্লিয়ার করবো, এভাবে করা উচিত৷ তাঁরাও পরামর্শ দেবেন, কিভাবে করা উচিত৷''
এদিকে, সংস্কৃতির এই উদ্যোগ সম্পর্কে অবগত নন বলে জানিয়েছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি আরো বলেন, ‘‘আলোচনা করে দেখি৷ এটা সমন্বয় করেই করতে হবে৷ মাদ্রাসাও তো বিভিন্ন প্রকারের আছে৷ মাদ্রাসা বলতে আজকাল একরকম বুঝায় না, অনেক রকম আছে৷''
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে, তাঁকে পাওয়া যায়নি৷ তবে তাঁর একান্ত সচিব বলেছেন, এটি ফতোয়ার বিষয়৷ তাই বিষয়টি ফাউন্ডেশনটির ফতোয়া বোর্ডের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷ এ বিষয়ে মতামত জানতে লিখিত আবেদনের পরামর্শ দেন তিনি৷ বলেন, ‘‘হাদিস কোরানের উদ্ধৃতি দিয়ে কোথায় জায়েজ আছে, কোথায় জায়েজ নাই—এ বিষয়ে আপনাকে জানিয়ে দেবে৷''