1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পরিবার পরিকল্পনার বিপক্ষে মাদ্রাসা ছাত্ররা?

সমীর কুমার দে ঢাকা
৩১ জুলাই ২০১৮

পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি বাংলাদেশে স্বীকৃত৷ দেশের সর্বত্র এ পদ্ধতি গ্রহণ করছেন দম্পতিরা৷ তবে মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন কর্মকর্তারা৷ ডয়চে ভেলের মুখোমুখি তাঁদেরই একজন, মাহবুব উল আলম৷

প্রতীকী ছবিছবি: AFP/Getty Images

ডয়চে ভেলে:আপনি কোন এলাকায় কাজ করেছেন?

মাহবুব উল আলম: বর্তমানে আমি হেড কোয়ার্টারে কাজ করি৷ এর আগে আমি সিলেটে কাজ করেছি৷ সিলেটের গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলাতে কাজ করেছি৷ কুমিল্লা সদরে ও ব্রাক্ষণপাড়া, টাঙ্গাইলে কাজ করেছি৷ ফেনীতে কাজ করেছি৷

কোন এলাকায় আপনার সফলতা সবচেয়ে বেশি?

যদি সফলতার কথা বলেন, তাহলে পরিবার পরিকল্পনার সফলতা সারাদেশে একইরকম৷ কোনো এলাকায় খুব বেশি সফল হয়েছে বা কোনো এলাকায় অনেক কম, এমন না৷ তবে চট্টগ্রাম ও সিলেটের পরিস্থিতি একটু আলাদা৷ সারাদেশের অন্য জায়গার তুলনায় সিলেট ও চট্টগ্রামে আমাদের পরিবার পরিকল্পনার সূচক একটু পিছিয়ে রয়েছে৷ সেই হিসেবে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলাতে ২০০৭ সালে আমি কাজ শুরু করি এবং ২০০৯ সালে সেখান থেকে আমি চলে আসি৷ তখন ঐ এলাকায় একটা পরিবর্তন আমি লক্ষ্য করেছি৷ আমি বলব, একটা বড় ধরনের পরিবর্তন সেখানে হয়েছে৷ ওটা কিন্তু খুবই প্রত্যন্ত একটা এলাকা৷ 

‘‘দেশের সর্বত্র এ পদ্ধতি গ্রহণ করছেন দম্পতিরা’’

This browser does not support the audio element.

২০০৭ সালে যখন কাজ শুরু করেন তখন সেখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কেমন ছিল?

জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার উপজেলা ভিত্তিক বলা মুশকিল৷ কারণ আমাদের কাছে উপজেলা ভিত্তিক তথ্য থাকে না৷ আপনি যদি বলেন, সেখানে পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণ করতেন কতভাগ মানুষ? সেটা আমি বলতে পারব৷ আমি যখন কাজ শুরু করি, তখন সেখানে সক্ষম দম্পতিদের ১০০ জনের মধ্যে ৫২ জন পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণ করতেন৷ আর ২০০৯ সালে আমি যখন চলে আসি, তখন সেখানে সেটা বেড়ে ৫৯-৬০ ভাগে পৌঁছায়৷

ওখানে একটি পরিবারে গড়ে সন্তান তখন কতজন ছিল?

সন্তানের ব্যাপারেও জনসংখ্যার মতো আমাদের জাতীয় জরিপের উপর নির্ভর করতে হয়৷ তারপরও আমি বলতে পারি, ২০০৭ সালে ওখানে একটি পরিবারে গড়ে চারটি সন্তান ছিল৷ আর আমি যখন চলে আসি তখন ওখানে গড়ে একটি পরিবারে সন্তান প্রায় তিনজনে নেমে আসে৷ এটাও একেবারে পুরোপুরি তথ্য নির্ভর সেটা বলা যাবে না৷ কারণ আগেই বলেছি, এ সব তথ্য নির্দিষ্ট করে জানতে আমাদের জাতীয় জরিপের উপর নির্ভর করতে হয়৷

ওখানে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারে বাধা কি ছিল?

ওখানে ধর্মীয় গোঁড়ামি আছে৷ অন্য এলাকায় ধর্মীয় নেতাদের যেভাবে সহযোগিতা পাওয়া যায়, গোয়াইনঘাট কিন্তু একটু আলাদা৷ ওখানে ধর্মীয় নেতাদের কাছ থেকে ওভাবে সহযোগিতা পাওয়া যায় না৷ ওখানে ধর্মীয় অন্ধত্ব রয়েছে, যেটা পরিবার পরিকল্পনার জন্য একটা বড় বাধা৷

সেই বাধা অতিক্রম করলেন কীভাবে?

এই বাধা অতিক্রম করতে আমরা অনেক ধরনের কর্মসূচি নেই৷ তার মধ্যে কিছু ছিল জাতীয় পর্যায় থেকে নির্দেশিত৷ মসজিদের ইমাম বা মুয়াজ্জেম এবং অন্যান্য যেসব ধর্মীয় নেতা আছেন, তাঁদের নিয়ে আমরা কর্মশালা বা সেমিনার করতাম৷ আপনারা জানেন, ওখানে অনেক মাদ্রাসা আছে৷ আমরা সেবার কার্যক্রম নিয়ে ওই মাদ্রাসাগুলোতে যেতাম৷ শিক্ষক ছাত্রদের বুঝাতাম৷ মেয়েদের মাদ্রাসায়ও যেতাম৷ তাদেরও এই জিনিসগুলো বুঝাতাম৷ এছাড়া আমরা যখন উপজেলা পর্যায়ে কোনো কর্মসূচি নিতাম, সেখানে শীর্ষস্থানীয় ধর্মীয় নেতাদের ওই অনুষ্ঠানগুলোতে আমন্ত্রণ জানাতাম৷ তখন তাঁদের সঙ্গে কথা বলতাম, তাঁদের বুঝাতাম৷ এভাবেই অতিক্রম করেছি৷ 

ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা কি কখনও আপনাদের কাজে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে?

প্রথম যখন ওখানে কাজ শুরু করলাম, তখন কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাধা ছিল৷ যেমন উদাহরণ হিসেবে বলি –আমাদের স্লোগান সম্বলিত পোস্টার কোনো মাদ্রাসার দেয়ালে লাগানো হলে তারা তুলে ফেলত৷ হয়ত বিকেলে লাগানো হয়েছে, সকালে গিয়ে দেখতাম পোস্টারগুলো ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে বা কালি দিয়ে মুছে দেয়া হয়েছে৷ খোঁজ নিয়ে আমি জানলাম মাদ্রাসার শিক্ষাদানের সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট, তাদের নির্দেশেই ওই পোস্টারগুলো ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে বা কালি দিয়ে মুছে দেয়া হয়েছে৷ তখন বিষয়টি আমরা প্রশাসনিকভাবে দেখিনি বরং তাদের উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করেছি৷ ইউএনওসহ উপজেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা – সবাই মিলে আমরা ওই মাদ্রাসায় যাই৷ সেখানে গিয়ে আমরা তাদের কাছ থেকে কেন ছিঁড়ে ফেলা হলো – সেটা নিয়ে কোনো কৈফিয়ত চাইনি৷ বরং বিষয়টি তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি৷ তারপর থেকে বিভিন্ন কর্মসূচিতে তাদের ডাকি৷ এভাবে এক, দেড় বছর চেষ্টার পর তাদের মানসিকতায় কিছুটা পরিবর্তন আমরা লক্ষ্য করি৷ তবে একেবারেই ইউটার্ন নিয়ে ঘুরে গেছে বিষয়টা তেমন ছিল না৷ প্রথমদিকে তারা যেভাবে বাধা দিতেন বা অনুষ্ঠানে ডাকলে আসতেন না, সেখান থেকে কিছুটা পরিবর্তন এসেছিল৷

জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারে দম্পতিদের মধ্যে কি কোনো ধর্মীয় গোঁড়ামি কাজ করে?

দম্পতিদের মধ্যে তো অবশ্যই কাজ করে৷ এখনও আমাদের গ্রামে, বিশেষ করে সিলেট এলাকায় আমি দেখেছি যে, কোনো পরিবার গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত নিতে গেলে আশপাশের মসজিদে গিয়ে ইমাম সাহেবের সঙ্গে আলাপ করে৷ তাঁর কাছ থেকে পরামর্শ নেয়৷ আর জন্মনিয়ন্ত্রণের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়ে তো অবশ্যই আলাপ করে৷ সবসময় যে সঠিক পরামর্শ পেয়েছেন তাঁরা, তা কিন্তু নয়৷ অনেকসময়ই পরামর্শ ঠিক থাকে না৷ 

যাঁরা জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন, তাঁদের জীবনযাত্রার মান কি উন্নত হয়েছে?

আমি হয়ত সুর্নিদিষ্ট তথ্য উপাত্ত দিয়ে বলতে পারব না৷ তবে এটা বলতে পারি যে, পরিবার পরিকল্পনার সঙ্গে মানুষের মানবাধিকার বা জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের একটা সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে৷ এবার আমাদের জনসংখ্যা দিবসের মূল প্রতিপাদ্য পরিবার পরিকল্পনা ও মানবাধিকার৷ দেখেন একজন নারী কাকে বিয়ে করবেন? কয়টা সন্তান নেবেন? জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নেবেন কিনা – সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার কিন্তু তাঁরই৷ সেই অধিকারগুলো বাস্তবায়নের জন্যই আমরা কাজ করছি৷ একজন নারী যদি এই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, তাহলে ওই নারীর পরিবার হবে ছোট পরিবার, সুখি পরিবার৷ ঐ নারীও তখন হবেন সামাজিকভাবে ক্ষমতায়িত৷

জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণে আপনারা কি শুধুই উদ্বুদ্ধ করেন নাকি কোনো প্রণোদনা দেন?

জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণের সঙ্গে আর্থিক কোনো প্রণোদনার সম্পর্ক নেই৷ আমরা আর্থিক কোনো প্রণোদনা কাউকে দেই না৷ আমরা বিনামূল্যে সাতটা পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি বিতরণ করে থাকি৷ এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি চারটা পদ্ধতি – ইমপ্লান্ট, আইইউবি, পুরুষ ও নারী বন্ধ্যাকরণ৷ এই চারটা সেবা নিতে গেলে গ্রহীতাকে বারবার হাসপাতালে আসতে হয়৷ যেমন পুরুষ বন্ধ্যাকরণ পদ্ধতি নিতে গেলে তাঁকে ঐদিন হাসপাতালে থাকতে হয়৷ তিনি এরপর দু'দিন কাজে যেতে পারেন না৷ এই কারণে আমরা তাঁকে কিছু মজুরি ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিয়ে থাকি৷ এই দু-তিন দিন তিনি যে কাজ করতে পারলেন না, তাতে তাঁর সংসার চলবে কীভাবে? তাই তাঁর মজুরির সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ আমরা তাঁকে দেই৷ এর বাইরে এই পদ্ধতিগুলো নিতে কারো যদি চিকিৎসা সেবার প্রয়োজন হয়, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াজনিত সেই চিকিৎসাটাও আমরা তাঁকে বিনামূল্যে দিয়ে থাকি৷

মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে কোনো বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়েছেন কি?

পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি সামাজিকভাবে স্বীকৃতি একটা কর্মসূচি৷ এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আমি সকলের সহযোগিতা পেয়েছি৷ সরকারি, বেসরকারি, এনজিও প্রতিনিধি, এমনকি জনপ্রতিনিধি – সবাই আমাকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছেন৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ