1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মাদ্রাসা ছাত্রী হত্যাচেষ্টা: অধ্যক্ষের পক্ষে মিছিলে কারা?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১০ এপ্রিল ২০১৯

ফেনীর সেই মাদ্রাসা ছাত্রী এখন লাইফ সাপোর্টে আছেন৷ সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার ব্যবস্থা হলেও এখনই তাঁকে সেখানে পাঠানো যাচ্ছেনা৷ এদিকে, অধ্যক্ষের পক্ষ নেয়ার অভিযোগে সোনাগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) প্রত্যাহার করা হয়েছে৷

Bangladesch - Studentin wurde mit Feuer angegriffen nachdem Sie sich weigerte Vorwürfe sexueller Belästigung fallen zu lassen
ছবি: bdnews24

ফেনীর মাদ্রাসা ছাত্রী এখনও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের আইসিইউতে আছেন৷ তাঁকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে৷ গত শনিবার তাঁকে তারই মাদ্রাসার ছাদে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়৷ তাঁর শরীরের ৮০ ভাগেরও বেশি পুড়ে গেছে৷ উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেয়ার কথা থাকলে এই মুহূর্তে তা সম্ভব হচ্ছে না৷

বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বুধবার সাংবাদিকদের জানান, ‘‘আজ (বুধবার) সকালে তাঁকে নিয়ে আমরা আবারও সিঙ্গাপুরের চিকিৎসদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেছি৷ তাঁরা আমাদের কাছে কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেয়েছেন৷ আমরা তা পাঠিয়েছি৷ সেখানকার মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, রোগীর এখন যে অবস্থা, তাতে তাঁকে জার্নি করে সিঙ্গাপুরে নেয়া কঠিন হবে৷ তাঁকে বিদেশে নেয়ার ব্যাপারে আরও অপেক্ষা করা উচিত৷’’ 

এরইমধ্যে বার্ন ইউনিটে ওই ছাত্রীর একটি অপারেশন করা হয়েছে৷ এর মাধ্যমে তাঁর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘‘তাঁর শরীরের চামড়াটা ফুটো ফুটো হয়ে যাওয়ায় সে শ্বাস নিতে পারছিল না৷ আমরা অপারেশন করে শ্বাস নেওয়ার ব্যবস্থা করেছি৷ তাঁর অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে৷ আর ফুসফুস ও কিডনি কার্যকর আছে৷’’

রিমান্ডে অধ্যক্ষ

মামলার প্রধান আসামি ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজউদ্দৌলা আগে থেকেই কারাগারে আছেন৷ তিনি এই ছাত্রীকেই গত ২৭ মার্চ নিজ কক্ষে যৌন হয়রানি করেন বলে অভিযোগ৷ ওই দিনই ছাত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার এবং তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ আইনে মামলা হয়৷ ওই ছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টার মামলায়ও অধ্যক্ষসহ আট জনকে আসামি করা হয়৷ অজ্ঞাত পরিচয় আসামিও রয়েছে৷ পুলিশ আদালতের মাধ্যমে অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়েছে৷ মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করা আরো পাঁচ জনকে পাঁচ দিন করে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত৷ তাদের মধ্যে মাদ্রাসার ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক আফছার হোসেন ও ছাত্রীর সহপাঠী আরিফুর ইসলাম রয়েছে৷

মামলার এজাহারে স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মামলা করায় ছাত্রীটিকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়৷ এর আগে মামলা তুলে নিতে হুমকি দেয়া হয়েছে৷

এই অধ্যক্ষ আগেও গ্রেপ্তার হয়েছিলেন৷ তার বিরুদ্ধে নাশকতা ও নানা অভিযোগে আরো ৬টি মামলা আছে বলে জানা গেছে৷

সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মোয়াজ্জেম হোসেন

This browser does not support the audio element.

কার কী ভূমিকা ছিল

ছাত্রীর ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান ডয়চে ভেলের কাছে অভিযোগ করেন, সোনাগাজী থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনও অধ্যক্ষের পক্ষ নিয়েছিলেন৷ তিনি ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনাকে ‘নাটক' বলে অভিহিত করেছিলেন৷ ‘‘আমার বোনের নিরাপত্তাহীতার কথা জানানোর পরও কোনো নিরাপত্তা দেয়া হয়নি,'' বলেন তিনি৷

এদিকে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টার পর ওসি প্রকাশ্যেই সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন যে, এটা আত্মহত্যার চেষ্টাও হতে পারে৷ তবে বুধবার তিনি ডয়চে ভেলের কাছে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন৷ তিনি দাবি করেন, ‘‘শনিবারের বিষয়টিকে আমি আত্মহত্যা চেষ্টার ঘটনা বলিনি৷ আর ২৭ মার্চ ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনাকেও আমি নাটক বলিনি৷ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছি৷''

ওসির বিরুদ্ধে মামলার এজাহার পরিবর্তনের চেষ্টারও অভিযোগ আছে৷ তিনি ছাত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টার ঘটনার প্রতিবাদে যাতে কোনো মিছিল বের না হয় সেজন্যও তৎপর ছিলেন বলে অভিযোগ৷

ওসি অভিযোগ অস্বীকার করলেও বুধবার তাকে এইসব অভিযোগে বদলি করা হয়েছে৷ আর মামলার তদন্ত থানাকে বাদ দিয়ে ‘পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন'কে দেয়া হয়েছে৷

আমরাতো আসি আর যাই আমাদের কাছে এত খোঁজ থাকেনা: এনামুল করিম

This browser does not support the audio element.

এদিকে মাদ্রাসার গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান হলেন ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক টি কে এনামুল করিম৷ ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ গ্রেপ্তার হলেও তার বিরুদ্ধে আর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি৷ ছাত্রীটিকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টার পর তড়িঘড়ি করে সোমবার অধ্যক্ষকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়৷ এর আগে ১০ দিনেও তার বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হলো না জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক করিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ত ছিলাম৷ আর একটা ঘটনার পর এখন আমরা জানছি যে, আগেও অনেক অপরাধ করেছে, আগেতো জানতাম না৷’’

ছাত্রীর নিরাপত্তার ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ কেন নেয়া হয়নি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমরাতো আসি আর যাই৷ আমাদের কাছে এত খোঁজ থাকেনা৷’’

অধ্যক্ষকে রক্ষায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ?

অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা ফুলগাজী উপজেলা জামায়াতের আমীর ছিলেন৷ তিন বছর আগে মামলাসহ নানা অভিযোগে তাকে জামায়াত থেকে বহিষ্কার করা হয়৷ এরপর আওয়ামী লীগ নেতাদের আশ্রয়ে তিনি অধ্যক্ষের পদ টিকিয়ে রাখেন৷ জামায়াত থেকে বহিষ্কারের পর প্রথমে তিনি পৌর আওয়ামী লীগ নেতা ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ মামুনের সহায়তা নেন৷ এরপর মামুনকে বাদ দিয়ে তিনি আরেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদুর রহমানের সহায়তা নেন৷ মাকসুদ মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সদস্য৷

মাদ্রাসাটির মালিকানায় শহরে তিন তলা একটি মার্কেট আছে, যা থেকে মাসে তিন লাখ টাকা আয় হয়৷ এছাড়া মাদ্রাসার আরো অনেক আয় আছে৷

অধ্যক্ষের পক্ষে মিছিল

২৭ মার্চ যৌন হয়রানির মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে অধ্যক্ষ জেলে গেলে পরের দিন ২৮ মার্চ তার মুক্তির দাবিতে শিক্ষার্থীদের একাংশকে দিয়ে মাকসুদ শহরে মিছিল বের করান৷ ওই মিছিলে মাদ্রাসা ছাত্রলীগের সদস্যরাও অংশ নেয়৷ মিছিল শেষে সমাবেশে যৌন হয়রানির মামলাকে মিথ্যা বলে দাবি করা হয়৷ আর তারাই ছাত্রীর পরিবারকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দেয়৷ অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ নেতা মামুনও কিছু শিক্ষার্থীকে দিয়ে যৌন হয়রানির বিচারের দাবিতে মানববন্ধনের আয়োজন করেন৷ তবে কথা বলার জন্য তাদের কাউকেই টেলিফোনে পাওয়া যায়নি৷

অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আগেও ছিলো: রুহুল আমীন

This browser does not support the audio element.

অধ্যক্ষের পক্ষে অবস্থার নেয়ার অভিযোগ আছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমীনের বিরুদ্ধেও৷ তিনি মাদ্রাসার গভর্নিং বডির ভাইস প্রেসিডেন্ট৷ তবে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘২৭ মার্চ যৌন হয়রানির পর আমিই মাদ্রাসায় গিয়ে ওসিকে খবর দিয়ে অধ্যক্ষকে আটক এবং মামলার ব্যবস্থা করি৷ তবে ওই ঘটনার পর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকসুদ অধ্যক্ষের পক্ষে তার মুক্তির দাবিতে শহরের জিরো পয়েন্টে শিক্ষার্থীদের দিয়ে মিছিল করায়৷ আরেকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর মামুন অধ্যক্ষের কিরুদ্ধে অবস্থান নেয়৷’’

তিনি গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি হিসেবে কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, ‘‘আমি উপজেলা নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম৷ আর সহ-সভাপতির তো কোনো পাওয়ার নেই৷’’

রুহুল আমীন বলেন, ‘‘অধ্যক্ষ খারাপ মানুষ, তার বিরুদ্ধে আগেও যৌন হয়রানির অভিযোগ আছে৷ আর পুড়িয়ে হত্যার ঘটনার আমি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ