1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সংকটে স্পেন

২১ অক্টোবর ২০১২

স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদ ইউরোপের সুন্দরতম শহরগুলির মধ্যে একটি৷ প্রাদো মিউজিয়াম থেকে প্লাজা মায়র কি ব্যার্নাবেউ স্টেডিয়াম সেখানে৷ পর্যটকদের জন্য এবার সেখানে যোগ হচ্ছে এক নতুন আকর্ষণ: ইউরোভেগাস৷

ছবি: AP

দায়ে পড়লে মানুষ কতো কিছুই না ভাবে, কতো কিছুই না করে৷ ইউরোপের সেরা সেরা শহরগুলোও দৃশ্যত তার ব্যতিক্রম নয়৷ তাই মাদ্রিদের পৌরপিতারা মার্কিন বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে মাথা খাটিয়ে ঋণ সংকট সামলানোর একটা পন্থা বার করেছেন: ইউরোপে সভ্যতা, সংস্কৃতির অন্য সব নিদর্শন থাকতে পারে, কিন্তু লাস ভেগাস তো নেই৷ কাজেই মাদ্রিদের দোরগোড়ায় একটা ইউরোভেগাস সৃষ্টি করলে কেমন হয়?

মাদ্রিদের ১৩ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে আলকর্কন শহরতলি৷ সেখানে লাস ভেগাসের কায়দায় একটি সুবিশাল ক্যাসিনো কমপ্লেক্স গড়ে তোলা হবে৷ বারোটি হোটেলে মোট ৩৬,০০০ ঘর থাকবে৷ সেই সঙ্গে ছ'টি ক্যাসিনোয় রুলেট খেলার অন্তত এক হাজার টেবিল, সেই সঙ্গে আঠেরো হাজার পিনবল মেশিন৷ এছাড়া একাধিক থিয়েটার ও গল্ফ ক্লাব৷ এবং পনেরো হাজার দর্শকের একটি স্টেডিয়াম৷

প্রকল্পের মোট খরচ ধরা হচ্ছে ১৭ বিলিয়ন ইউরো৷ শুধু নির্মাণপর্বেই আড়াই লাখ মানুষ চাকরি পাবে, বলে আশা করছেন মাদ্রিদের পৌর প্রশাসন এবং মার্কিন বিনিয়োগকারীরা৷ ঋণ সংকটে স্পেনের অন্যান্য বহু শহরের মতো মাদ্রিদেরও হাত শূন্য, ভাঁড়ার খালি৷ কাজেই ইউরোভেগাসের মতো একটি প্রকল্প থেকে যদি হঠাৎ অর্থবৃষ্টি শুরু হয়, তা'তে পৌর কর্মকর্তাদের আপত্তি কোথায়?

মাদ্রিদের ১৩ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমের আলকর্কন শহরতলিতে হবে প্রস্তাবিত ইউরোভেগাসছবি: DW

কিন্তু আলকর্কন, যেখানে ইউরোভেগাসের মায়াপুরী সৃষ্টি হবে, সেখানকার বাসিন্দারা খুব খুশি নন৷ তাছাড়া এই দৈত্যাকার প্রকল্পের অর্থনৈতিক যৌক্তিকতাও সকলের কাছে পরিষ্কার নয়৷ ‘ইউরোভেগাস নো' বা ‘ইউরোভেগাস নয়' প্রতিরোধ আন্দোলনের মুখপাত্র আনা রেভুয়েল্টা বলেন:

‘‘প্রকল্পের প্রতি ওটাই আমাদের মূল সমালোচনা৷ যে অর্থনৈতিক আদর্শ থেকে আজ আমাদের এই সংকট, সেই অ-টেকসই মডেলে ফিরে গিয়ে যে আমরা সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে পারব, তা' আমরা মনে করি না৷ এর ফলে সংকট শুধু আরো ঘনীভূত হবে৷''

এছাড়া মার্কিন বিনিয়োগকারীরা অথবা মাদ্রিদ প্রশাসন, কোনো তরফই প্রকল্পের স্বচ্ছতা নিয়ে বিশেষ চিন্তিত নন৷ বাসিন্দা কিংবা নাগরিকদের সব কিছু ঠিক মতো করে কোনোকিছুই বলা হচ্ছে না৷ ইউরোভেগাস বিরোধীদের খবর অনুযায়ী প্রকল্পের মোট বিনিয়োগের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ আসবে লাস ভেগাস স্যান্ডস নামধারী সংস্থাটির কাছ থেকে৷ বাকিটা ব্যাংকের কাছ থেকে ধার নিতে হবে৷

তবে আলকর্কন'এর রাজমিস্ত্রি, ছুতোর মিস্ত্রি গোত্রীয় মানুষ, কিংবা কাঠগুদাম, লোহালক্কড়ের দোকানদাররা মুনাফা করার স্বপ্ন দেখছেন৷ জোসে আন্তোনিও বাড়ি তৈরির মালমশলার দোকানদার৷ তিনি বলেন:

‘‘এই প্রকল্পটা শুরু হলে দারুণ হবে৷ এখানে যে পরিমাণ বেকারত্ব, তা'তে আমাদের চাকরির দরকার৷ তা'হলে এতোদিন পরে আবার বাড়ি তৈরির ব্যবসায় কিছুটা প্রাণ ফিরবে৷''

ঋণ সংকট কাটাতে ইউরোভেগাসের প্রস্তাব একটি অ-টেকসই মডেল, মত প্রকল্প বিরোধীদেরছবি: DOMINIQUE FAGET/AFP/GettyImages

ইউরোভেগাসের কাজ শুরু হবার কথা ২০১৬ সালে৷ শেষ হবে ২০২২'এ৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাস স্যান্ডস'এর দৃষ্টিতে এই প্রকল্প হল তাদের প্রেস্টিজ প্রকল্প৷ এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র এবং এশিয়ার পর ইউরোপেও ঘাঁটি গাড়ার স্বপ্ন দেখছে লাস ভেগাস স্যান্ডস৷ সংস্থার প্রধান মাইক লেভেন ইতিমধ্যেই ঢাক পেটাচ্ছেন:

‘‘আমরা কর থেকে আদায় বাড়াই, চাকরি তৈরি করি, পর্যটন বাড়াই৷ এবং তাই দিয়ে আমরা জাপান, কোরিয়া, ভিয়েতনাম এবং এবার স্পেনের মতো দেশে যাচ্ছি৷ সেটাই হল আমাদের ব্যবসা৷''

নাগরিক অধিকার আন্দোলনকারী আনা রেভুয়েল্টা কিন্তু এ'সব চটকে ভুলতে রাজি নন৷ ‘ইউরোভেগাস নো' আন্দোলনের হিসেব অনুযায়ী, প্রকল্পের উদ্যোক্তারা যা বলছেন, তার মাত্র ২০ শতাংশ চাকরি সৃষ্টি হবে৷ তা'ও আবার যতোদিন নির্মাণের কাজ চলবে, ত'তোদিন অবধি৷ তার পরে থাকবে শুধু হোটেল-রেস্তোরাঁর কম মাইনে, এবং কম নিরাপত্তার চাকরি:

‘‘লাস ভেগাস স্যান্ডস কোম্পানি শ্রমিক সংগঠন গঠনের অনুমতি দেয় না৷ সিঙ্গাপুর কিংবা ম্যাকাও'তে তাদের যে সব কোম্পানি আছে, সেখানকার শ্রমিকরা স্পেনের শ্রমিকদের মতো চাকুরির নিরাপত্তার কোনো গ্যারান্টি পায় না৷''

ওদিকে মাদ্রিদের ইউরোভেগাস ব্যবসা লাভজনক না হলে, লাস ভেগাস স্যান্ডস আবার পাততাড়ি গুটোবে৷ কিন্তু অবকাঠামোয় অনর্থক অর্থব্যয়ের দায়টা মাদ্রিদের করদাতাদেরই থেকে যাবে৷

প্রতিবেদন: রাল্ফ বোজেন/এসি
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ