1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
দুর্নীতিভারত

মাধ্যমিকে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ, অন্তর্ঘাতের দোহাই দপ্তরের

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ৷ ইংরেজি প্রশ্নপত্রের ছবি দিয়ে টুইট বিজেপি রাজ্য সভাপতির৷ মন্ত্রীর মুখে অন্তর্ঘাতের তত্ত্ব৷

Indien Westbengalen | Madhyamik Prüfung
ছবি: Payel Samanta/DW

বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গে শুরু হয়েছে মাধ্যমিক পরীক্ষা৷ রাজ্যের সবচেয়ে বড় এই পরীক্ষা নির্বিঘ্নে শেষ করার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ৷ কিন্তু পরীক্ষার দ্বিতীয় দিনেই উঠলো প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ৷

শুক্রবার ছিল মাধ্যমিকের ইংরেজি পরীক্ষা৷ নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী বেলা বারোটায় পরীক্ষা শুরু হয়৷ এর কিছু পরে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ তুলে টুইট করেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার৷

দুপুর একটা ৪২ মিনিটে করা টুইটে সুকান্ত অভিযোগ করেন, ইংরেজির প্রশ্ন ফাঁস হয়ে গিয়েছে৷ প্রশ্নপত্রের ছবিও টুইটারে তুলে ধরেন তিনি৷ সুকান্ত লেখেন, ‘‘আজ সকাল থেকেই এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষার ইংরেজি প্রশ্নপত্র বলে এই প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে৷ প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে কিনা তা কিছু সময়ের মধ্যে স্পষ্ট হয়ে যাবে৷’’

সুকান্তের টুইটের অল্প সময় পরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ছবিগুলি ছড়িয়ে পড়ে৷ দুপুর তিনটে অবধি পরীক্ষা চলে৷ এই সময়ের মধ্যে জোর জল্পনা চলে, এগুলি সত্যি ইংরেজি প্রশ্নপত্র কিনা! পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর দেখা যায়, এটাই এবারের ইংরেজি প্রশ্ন৷ এর ফলে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ তীব্র হয়ে ওঠে৷

শনিবার পর্ষদ জানিয়েছে, ১৬ পৃষ্ঠার ইংরেজি প্রশ্নপত্রের যে তিনটি পৃষ্ঠার ছবি ছড়িয়ে পড়েছিল, তার সম্ভাব্য উৎস চিহ্নিত করা হয়েছে৷ মালদহ জেলা প্রশাসনকে এই সংক্রান্ত তথ্য দেয়া হয়েছে৷ কোন ব্যক্তি, কীভাবে এই কাজ করেছে, তা নির্ধারণ করার জন্য সাইবার অপরাধ তদন্তকারীরা তদন্ত চালাবেন৷

সর্ষের মধ্যে ভূত থাকলে প্রশাসনকে দিয়ে সমাধান হবে না: চন্দন মাইতি

This browser does not support the audio element.

পরীক্ষা চলাকালীন প্রশ্নপত্র কোনভাবেই বাইরে আসার কথা নয়৷ এ বিষয়ে গোপনীয়তা রাখতে পর্ষদ ঢালাও ব্যবস্থাপনার কথা জানিয়েছিল পরীক্ষা শুরুর আগে৷ মূলত প্রশ্নপত্র ফাঁস আটকাতে একটি রিয়েল টাইম অ্যাপ্লিকেশন চালু করা হয় যাতে কেন্দ্রীয়ভাবে পুরো বিষয়টির উপর নজরদারি চালানো হচ্ছে৷

এত দিন পরীক্ষা শুরুর এক ঘন্টা পর পরীক্ষার্থীরা উত্তরপত্র জমা দিয়ে প্রশ্ন নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে যেতে পারত৷ কিন্তু এ বছর থেকে নিয়ম করা হয়েছে, এক ঘন্টা পর পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে বেরোতে চাইলে উত্তরপত্রের সঙ্গে প্রশ্ন জমা দিয়ে যেতে হবে, যাতে দু'ঘণ্টা পরীক্ষা বাকি থাকার সময় প্রশ্ন বাইরে না আসে৷

একইসঙ্গে বাড়তি নিরাপত্তা হিসেবে পরীক্ষা কেন্দ্রে নিযুক্ত পুলিশ ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছেও মোবাইল রাখতে দেওয়া হচ্ছে না যাতে প্রশ্নফাঁস রোখা যায়৷ এমন বজ্র আঁটুনি থাকা সত্ত্বেও কীভাবে পরীক্ষা শুরুর ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যে বিজেপি রাজ্য সভাপতি কাছে প্রশ্নের ছবি চলে এল, তা নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে৷ শনিবার ভূগোল পরীক্ষা হয়েছে, ৪ মার্চ শেষ হবে মাধ্যমিক৷ এর মধ্যে শুক্রবারের ঘটনায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে পড়ুয়া ও অভিভাবক মহলে৷

শিক্ষা দপ্তর এটাকে প্রশ্ন ফাঁস বলে মানতে চায়নি৷ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায়ের দাবি, পৌনে বারোটায় প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়৷ তখন সব পরীক্ষার্থী হলের ভিতরেই ছিল৷ ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লেও পরীক্ষার উপর এর কোনো প্রভাব পড়েনি৷ তাই একে ফাঁস বলা যায় না৷

শিক্ষা দপ্তরের কাছে এটা অন্তর্ঘাত৷ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর মন্তব্য, ‘‘জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি৷ হল থেকে বেরিয়ে কে এই অন্তর্ঘাত করল তা দেখতে হবে৷’’ পর্ষদ সভাপতি বলেন, ‘‘পর্ষদকে কালিমালিপ্ত করতে কেউ অন্তর্ঘাত করেছে৷ কীভাবে এটা হল সেটা তদন্ত করে দেখতে প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি৷’’

এই অন্তর্ঘাতের তত্ত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অ্যাডভান্স সোসাইটি অফ হেডমাস্টার এন্ড হেডমিস্ট্রেস এর রাজ্য সম্পাদক চন্দন মাইতি৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শিক্ষা দপ্তরের অন্তর্ঘাত বলার মানে কী? তারা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিক৷ সর্ষের মধ্যে ভূত থাকলে প্রশাসনকে দিয়ে এর সমাধান হবে না৷ হাই কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে দিয়ে তদন্ত করাতে হবে৷’’

টাকা দিলে প্রশ্নপত্র মিলবে, এটা অসম্ভব নয়: রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী

This browser does not support the audio element.

শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রশ্ন যখন বেরিয়েছে তখন পরীক্ষার্থীরা হলে ঢুকে গিয়েছিল৷ তাই পরীক্ষায় এর প্রভাব পড়েনি ঠিকই৷ কিন্তু পরীক্ষা চলাকালীন প্রশ্ন বাইরে আসার দায় শিক্ষা দপ্তরের৷ শুধু অন্তর্ঘাতের কথা হাওয়ায় ভাসিয়ে দিলে চলবে না৷’’

একে শিক্ষার সার্বিক অবমূল্যায়নের সঙ্গে জুড়ে দেখছেন শিক্ষাবিদ রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ফাঁকা উত্তরপত্র জমা দিয়ে চাকরি মিলেছে৷ এবার টাকা দিলে প্রশ্নপত্র মিলবে, এটা অসম্ভব নয়৷নিয়োগ দুর্নীতিতে সরকারের পদস্থ মানুষজনই ধরা পড়েছেন, প্রশ্নফাঁসের ক্ষেত্রেও অন্তর্ঘাত থাকতে পারে৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ