মানুষ এই মুহূর্তে যা যা দেখতে চায়, শুনতে চায় সেসব নিয়ে বললে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ অবশ্যই বাড়তি গুরুত্ব পাবে৷ অবশ্য সেসবের জন্য ২৫ শে মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে কেন সেটা খুব বড় প্রশ্ন৷
বিজ্ঞাপন
বিশ্বের অন্য সব দেশের মানুষের মতো বাংলাদেশের জনগণও এখন নভেল করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে৷ প্রতিটি দিবস, প্রতিটি রজনীই এখন দুশ্চিন্তার৷ এই পরিস্থিতিতেই মহান স্বাধীনতা দিবসকে সামনে রেখে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্যই দিয়েছেন সড়ক, পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের৷
বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের কাছে মহান স্বাধীনতা দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম৷ তবে এখন সময়টা খুব খারাপ৷ বিশ্বের প্রতিটি দেশের সরকারের সামনেই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মানুষকে করোনার হাত থেকে বাঁচানো৷ এ বড় কঠিন চ্যালেঞ্জ৷ অনেকেই বলছেন, অন্যরকম এক 'বিশ্বযুদ্ধ' পরিস্থিতি চলছে বিশ্বজুড়ে৷
এই যুদ্ধে সব দেশ, সব মানুষই প্রায় সমান অসহায়৷ কারণ, কেউ জানে না কিভাবে ধ্বংস করা যাবে করোনা ভাইরাস৷ ভ্যাকসিনই এখনো আবিষ্কৃত হয়নি, ধ্বংস করবে কী করে!
তাই বাঁচার উপায় মাত্র দুটো৷ সংক্রমণ এড়ানোর সব ব্যবস্থা করা এবং কেউ সংক্রমিত হয়েছে বা হতে পারে মনে হলে, তাকে আলাদা করে নিয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং চিকিৎসা করা৷
করোনায় সবচেয়ে বিপর্যস্ত দশ দেশ
করোনায় এ পর্যন্ত কোন দশটি দেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি সংক্রামিত হয়েছে, মৃত্যু কোন দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি? দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Reuters/F. Lo Scalzo
১০. জার্মানি
মোট আক্রান্ত ১৫ হাজার ৩২০জন৷ মারা গেছেন ৪৪জন৷ সুস্থ হয়েছেন ১১৫জন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Meissner
৯. নেদারল্যান্ডস
মোট আক্রান্ত দুই হাজার ৪৬৮জন৷ মারা গেছেন ৭৭জন৷ সুস্থ হয়েছেন দুইজন৷
ছবি: AFP/R. de Waal
৮. দক্ষিণ কোরিয়া
মোট আক্রান্ত আট হাজার ৬৫২ জন৷ মারা গেছেন ৯৪ জন৷ সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৫৪০জন৷
ছবি: Reuters/Kim Kyung-Hoon
৭. যুক্তরাজ্য
যুক্তরাজ্যে মোট আক্রান্ত হয়েছেন দুই হাজার ৭১৬জন৷ মারা গেছেন ১৩৮ জন৷ সুস্থ হয়েছেন ৬৫জন৷
ছবি: Getty Images/C. Furlong
৬. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
মোট আক্রান্ত ১৪ হাজার ২৫০জন৷ মারা গেছেন ২০৫ জন৷ সুস্থ হয়েছেন ১২১জন৷
ছবি: AFP/J. Edelson
৫. ফ্রান্স
মোট আক্রান্ত ১১ হাজার ১০জন৷ মারা গেছেন ৩৭২ জন৷ সুস্থ হয়েছেন ১২জন৷
ছবি: picture-alliance/abaca/A. Marechal
৪. স্পেন
মোট আক্রান্ত ১৮ হাজার ৭৭জন৷ মারা গেছেন ৮৩৩জন৷ সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ১০৭জন৷
ছবি: Reuters/E. Alonso
৩. ইরান
মোট আক্রান্ত ১৮ হাজার ৪০৭জন৷ মারা গেছেন এক হাজার ২৮৪জন৷ সুস্থ হয়েছেন পাঁচ হাজার ৯৭৯জন৷
ছবি: Reuters
২. চীন
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্ত রয়েছেন চীনে৷ সেখানে মোট আক্রান্ত ৮১ হাজার ১৯৯জন৷ মারা গেছেন তিন হাজার ২৫৩জন৷ কিন্তু আক্রান্ত যেমন বেশি, তেমনি সুস্থ হয়ে ওঠা মানুষও সেখানে সবচেয়ে বেশি৷ চীনে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৭১ হাজার ২৬৬জন৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/Vernon Yuen
১. ইটালি
মোট আক্রান্ত ৪১ হাজার ৩৫ জন৷ করোনা সংক্রমণের কারণে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন ইউরোপের এই দেশে৷ সেখানে মৃতের সংখ্যা তিন হাজার ৪০৫৷ আক্রান্তের তুলনায় সুস্থ হওয়ার হার সেখানে এখনো কম৷ মোট সুস্থ হয়েছেন চার হাজার ৪৪০জন৷
ছবি: Reuters/Policlinico Gemelli
10 ছবি1 | 10
এসব কাজে বাংলাদেশ যে অনেকাংশে ব্যর্থ তা অস্বীকার করলে সত্যের অপলাপ হবে৷
সংক্রমণ অনেক দেশে অনেক বেশি হয়েছে, মৃতের সংখ্যাও বাংলাদেশি খুব বেশি নয়- এসব বলে লাভ নেই৷ বলার আগে তাকাতে হবে ইটালি, স্পেন, ইরান, জার্মানিসহ করোনার আক্রমণে কাবু এবং প্রায়-কাবু দেশগুলোর দিকে৷
করোনা প্রথম আঘাত হেনেছিল চীনে৷ সংক্রমিতের সংখ্যা, মৃতের সংখ্যা প্রতিদিন হু হু করে বাড়ছিল সেখানে৷ কোয়ারান্টাইন, হোম কোয়ারান্টাইন, আইসোলেশন, লকডাউন ধাপে ধাপে মানুষকে সবগুলো পর্যায়ের মধ্য দিয়ে যেতে বাধ্য করেছে তারা৷ সব সীমাবদ্ধতা মাথায় রেখেই নিশ্চিত করেছে চিকিৎসা৷ ফলে চীন এখন প্রায় নিশ্চিন্ত৷
ইটালি শুরুতে একেবারেই চীনকে অনুসরণ করেনি৷ একমাস আগে করোনায় সে দেশে প্রথম ব্যক্তির মৃত্যুর পর স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী কনটে বলেছিলেন, ‘‘"পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে৷’’
আসল কাজগুলো ঠিকভাবে না করে শুধু মুখের কথায় করোনাকে কিন্তু বাগে আনা যায়নি৷ মাত্র এক মাসের ব্যবধানে মৃতের সংখ্যায় চীনকে ছাড়িয়ে অনেক দূর এগিয়ে গিয়ে ইটালি এখন ধুঁকছে৷
বৃহত্তর স্বার্থে অনেক সময় ‘‘আগে তিতা, পরে মিঠা’’ নীতি উত্তম। তার চেয়েও উত্তম ‘‘কথা কম, কাজ বেশি’’ নীতি৷ তাতে শৃঙ্খলা থাকে, কার্যসিদ্ধিও হয়৷
কিন্তু বাংলাদেশে প্রায় সব সংকটেই আমরা উল্টো চিত্র দেখি৷ দায়িত্বশীলদের কাছ থেকে শুরুতে খুব বেশি 'দায়িত্বহীন' কথা শুনতে হয়৷ তাতে অবস্থার আরো অবনতি হয়৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার উপক্রম হলে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সক্রিয় হতে হয় প্রধানমন্ত্রীকে৷ একেবারে কাম্য না হলেও বহুবার এমনই হয়েছে৷
করোনা-সংকটেও আমরা একই পরিস্থিতির মুখোমুখি৷ সংক্রমিত এবং মৃতের সংখ্যা বাড়ছে৷ দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসছে শঙ্কিত হবার মতো খবর৷
গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, এখন বাস্তবতা মেনে বিজ্ঞানসম্মত সিদ্ধান্ত না নিলে থার্ড স্টেজ, অর্থাৎ সবচেয়ে ভয়ঙ্কর পর্যায়ে চলে যেতে পারে বাংলাদেশ৷ এত ঘনবসতিপূর্ণ দেশে সেই পরিস্থিতি হলে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে৷
আশা করি, ২৫ শে মার্চের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের আলোকে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেবেন৷ সেখানে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় দেশের আরো কোনো কোনো অঞ্চল লকডাউন করা হবে, নাকি সারাদেশেই চলাচলে কিছুদিনের জন্য বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে - এ এ বিষয়েও সরকারের সিদ্ধান্ত জানার আগ্রহ থাকবে সবার৷ এমন সিদ্ধান্তে কালক্ষেপনেরই চরম মাশুল দিচ্ছে ইতালি৷ দক্ষতা, সমন্বয়হীনতা এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থতার মাশুল আর যেন দিতে না হয় বাংলাদেশকে৷
করোনা ভাইরাসের কারণে স্তব্ধ ইউরোপ
সামাজিক দূরত্ব ও ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞার কারণে ইউরোপের বড় শহরগুলির রাজপথ প্রায় খালি৷ করোনা ভাইরাসের প্রসার থামাতে ইউরোপে একের পর এক কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/T. Camus
প্যারিসে লকডাউন
গত মঙ্গলবার দেশজুড়ে লকডাউন জারি করার পর প্যারিসের ব্যস্ত রাজপথ জনশূন্য হয়ে পড়েছে৷ কেনাকাটা, ডাক্তারের কাছে বা কাজে যাওয়া ছাড়া বাসার বাইরে যাবার নিয়ম নেই৷ বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়ে চলায় প্যারিসের মেয়র অবশ্য আরও কড়া পদক্ষেপের ডাক দিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/T. Camus
জার্মানির রাজধানীতে জনজীবন স্তব্ধ
চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল রবিবার জার্মানিতে আরও কড়া পদক্ষেপের ঘোষণা করেছেন৷ প্রকাশ্যে দুই জনের বেশি একসঙ্গে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার৷ নয় দফার এই পদক্ষেপের আওতায় মানুষের মধ্যে কমপক্ষে দেড় মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে৷ রেস্তোরাঁ, সেলুন ইত্যাদি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এক ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগের কারণে রোববার ম্যার্কেল নিজে কোয়ারেন্টাইনে যেতে বাধ্য হয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Schreiber
বিদেশিরা অনাকাঙ্ক্ষিত, সীমান্ত বন্ধ
দেশের মধ্যে মানুষের চলাচলের উপর কড়া নিয়ম চালু করার পাশাপাশি জার্মানি দেশে বিদেশিদের প্রবেশ কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে৷ সে কারণে দেশের ব্যস্ততম বিমানবন্দর ফ্রাংকফুর্টে কার্যকলাপ অনেক কমে গেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Probst
বাভেরিয়ার মানুষ গৃহবন্দি
করোনা ভাইরাসের মোকাবিলা করতে জার্মানির দক্ষিণে বাভেরিয়া রাজ্যে গত সপ্তাহে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে৷ কমপক্ষে দুই সপ্তাহের জন্য নির্ধারিত পদক্ষেপের আওতায় মানুষের জমায়েত নিষিদ্ধ৷ রেস্তোরাঁসহ অনেক দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷
ছবি: Imago Images/Zuma/S. Babbar
ব্রিটেনে সামাজিক দূরত্বের আবেদন
করোনা ভাইরাসের হুমকি রুখতে ব্রিটেন সব বার, পাব ও রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সব নাগরিকের উদ্দেশ্যে অতি প্রয়োজনীয় নয়, এমন ভ্রমণ বন্ধ রাখার আবেদন করেছেন৷ সেইসঙ্গে অনির্দিষ্ট কালের জন্য মানুষে-মানুষে সরাসরি যোগাযোগ এড়িয়ে চলতে বলেছেন জনসন৷
ছবি: AFP/T. Akmen
মহামারির কেন্দ্রস্থল মিলান
সাম্প্রতিক কালে বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসের কেন্দ্রস্থল চীন থেকে ইটালিতে স্থানান্তরিত হয়েছে৷ সে দেশে ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতদের সংখ্যা মারাত্মক হারে বেড়ে গেছে৷ ১০ই মার্চ ইটালিতে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/L. Bruno
ভ্যাটিকানের দরজা বন্ধ
ইটালির উত্তরে লম্বার্ডি অঞ্চলে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বাড়ার পর দেশের বাকি অংশেও জনজীবন স্তব্ধ হয়ে গেছে৷ রোম ও ভ্যাটিকান সিটিতে মানুষের সমাবেশের উপর কড়া নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়েছে৷ সেন্ট পিটার্স চত্বরের মতো পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় এলাকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷
ছবি: Imago Images/Zuma/E. Inetti
স্পেনের অবস্থা গুরুতর
রোববার স্পেনের সরকার দেশে জরুরি অবস্থার মেয়াদ আগামী ১১ই এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে৷ ফলে ১৪ই মার্চ থেকে প্রায় এক মাস পর্যন্ত স্পেনেল জনজীবন স্তব্ধ থাকবে৷ ইউরোপে ইটালির পর স্পেনেই করোনা ভাইরাস সবচেয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে৷ বিশেষ করে বার্সেলোনা ও মাদ্রিদ শহরে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়ে চলেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/X. Bonilla
অস্ট্রিয়ায় সংক্রমণের হার কমছে
সপ্তাহান্তে অস্ট্রিয়ায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা প্রায় ১৫ শতাংশ বেড়ে গেছে৷ তবে এর আগে ৪০ শতাংশ সংক্রমণের হারের তুলনায় তা অনেক কম৷ সরকার দেশজুড়ে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে কড়া পদক্ষেপ নেবার ফলে সুফল দেখা যাচ্ছে৷ আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে সংক্রমণের হার আরও কমানোর লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে কর্তৃপক্ষ৷