পেট্রাপোল বন্ধ থাকবে, গেদে-দর্শনা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পণ্য পাঠাতে আপত্তি নেই পশ্চিমবঙ্গের। কেন্দ্রকে নতুন শর্ত জানালো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।
বিজ্ঞাপন
করোনা কি সীমান্ত দেখে সংক্রমিত হয়? সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে এই প্রশ্নটি খুব গুরুত্ব পেয়েছে। কারণ, রাজ্য সরকার জানিয়েছে, পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে তাদের আপত্তি আছে, কিন্তু গেদে-দর্শনা সীমান্ত দিয়ে ট্রেনে পণ্য পরিবহণে তাদের আপত্তি নেই।
সমস্যার সূত্রপাত গত বুধবার। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্রসচিব পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়ে জানতে চান, কেন পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পণ্য পরিবহণ করতে দিচ্ছে না পশ্চিমবঙ্গ সরকার? এর ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তি লঙ্ঘিত হচ্ছে বলেও পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে জানান তিনি। দ্রুত যাতে সীমান্ত খুলে দিয়ে বাণিজ্য শুরু করা হয়, সেই নির্দেশও দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব
এরইমধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে করোনার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে৷ রপ্তানি ও প্রবাসী আয় কমেছে ব্যাপকভাবে৷ দেখা দিয়েছে দারিদ্র্য ও বেকারত্ব বাড়ার শঙ্কা৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
রপ্তানি ধস
লকডাউনের কারণে ইউরোপ ও অ্যামেরিকায় ব্যবসা বাণিজ্য, মানুষের কেনাকাটা কার্যত বন্ধ৷ এসব দেশের ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো তাই বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি কমিয়ে দিয়েছে, কয়েকশো কোটি ডলারের কার্যাদেশ বাতিল করেছে৷ এর প্রভাবে এপ্রিলে রপ্তানি আয় নেমে এসেছে মাত্র ৫২ কোটি ডলারে, যা আগের বছরে একই মাসের চেয়ে ৮২.৮৫% কম৷ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার হিসেব বলছে চলতি বছর সারা বিশ্বেই আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ৩২% পর্যন্ত কমতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Yu Fangping
প্রবাসী আয়ে টান
এপ্রিলে প্রবাসীদের টাকা পাঠানোর পরিমাণ ছিল ১০৮ কোটি ১০ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৪ ভাগ কমেছে৷ প্রবাসী আয়ের সিংহভাগই আসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে৷ জ্বালানি তেলের দাম কমায় তাদের অর্থনীতি বিপর্যয়ে পড়েছে৷ সেইসব দেশে কর্মরত বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থান নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা৷ এই ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি বছর বাংলাদেশের রেমিট্যান্স গত বছরের চেয়ে ২২ শতাংশ কমে যাবে, বলছে বিশ্বব্যাংক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo/R. Abd
চাকুরির অনিশ্চয়তা
দেশের ভিতরে যে লকডাউন পরিস্থিতি চলছে তার কারণেও বিভিন্ন শিল্প কারখানা ও সেবাখাতগুলোর কার্যক্রম প্রায় বন্ধ৷ এসব প্রতিষ্ঠানে যারা চাকুরি করছেন, যেসব ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা রয়েছেন তাদের কর্মসংস্থান নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকছে৷ এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক চীনে করোনার প্রকোপ শুরুর পর বলেছিল, বাংলাদেশের প্রায় নয় লাখ মানুষ কর্মসংস্থান হারাতে পারে৷ তবে এখন তৈরি পোশাক খাতেই অনেক শ্রমিকের চাকুরি হারানোর শঙ্কা রয়েছে৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
খাদ্য নিরাপত্তা
গত বছরের মে থেকে চলতি বছরের এপ্রিল, এই সময়ে বাংলাদেশে চাল উৎপাদন হয়েছে ৩.৫৩ লাখ মেট্রিক টন৷ নতুন বছরে তা ১০ লাখ মেট্রিক টন বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসডিএ৷ সরকারের খাদ্য গুদামে ১০ লাখ মেট্রিক টন চাল মজুদ আছে৷ বোরো মৌসুমে আরো ২০ লাখ মেট্রিক টন ধান-চাল সংগ্রহ করবে সরকার৷ সেক্ষেত্রে খাদ্যাভাব দেখা দেয়ার আশংকা তেমন নেই৷ কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে মানুষের হাতে খাদ্য কেনার টাকা থাকবে কিনা৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
দারিদ্র্য বাড়ছে
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে বর্তমানে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা সোয়া তিন কোটির বেশি৷ এর বাইরে গত দেড় যুগে আড়াই কোটি মানুষ দারিদ্র্যতা থেকে বেরিয়ে এসেছেন৷ উপার্জন না থাকলে দ্রুতই তারা আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারেন৷ ব্র্যাকের সাম্প্রতিক এক জরিপেও দেখা গেছে করোনার প্রভাবে দেশের নিম্নবিত্তের আয় ৭৫ ভাগ কমে গেছে, হতদরিদ্র বা যাদের দৈনিক আয় ১৬০ টাকার কম এমন মানুষের সংখ্যা ৬০ শতাংশ বেড়ে গেছে৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
সরকারের প্রণোদনা
অর্থনীতি বাঁচাতে বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশের সরকারও আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছে, যার আকার ৯৫ হাজার কোটি টাকার বেশি৷ এর বড় একটি অংশ দেয়া হবে বৃহৎ, মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্প আর কৃষি খাতে ঋণ হিসেবে৷ পাশাপাশি লক-ডাউনের কারণে যারা কাজ হারিয়েছেন তাদের ব্যাংক হিসাব তৈরি করে এককালীন নগদ অর্থ প্রদানের কথা বলা হয়েছে৷ প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বাড়ানোরও৷
ছবি: Reuters/A. Rahman
টাকার সন্ধান
বাজেটের ঘাটতি মেটাতে এরিমধ্যে ব্যাংক থেকে সারাবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ঋণ করে ফেলেছে সরকার৷ নতুন ঋণ নেয়া হচ্ছে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির কাছ থেকে৷ বিভিন্ন খাতের ব্যয় কমিয়েও অর্থ সংস্থানের পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷ সবশেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা ছাপিয়েও পরিস্থিতি সামাল দেয়া যেতে পারে৷ তবে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে, এমন আশঙ্কায় টাকা ছাপানোর পক্ষে নন কোনো কোনো অর্থনীতিবিদ৷
ছবি: DW
মন্দার শঙ্কা
বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে মহামন্দার আশংকা করছেন অর্থনীতিবিদরা৷ এর প্রভাব পড়বে বাংলাদেশেও৷ এরইমধ্যে চলতি বছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমার পূর্বভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবি৷ মন্দার ধাক্কা বাংলাদেশ কতটা সামলাতে পারবে তা বৈশ্বিক পরিস্থিতির পাশাপাশি নির্ভর করছে সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার উপরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
8 ছবি1 | 8
বস্তুত, গত বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে হাজার হাজার ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে ওই সীমান্তে। প্রতিটি ট্রাকেই রয়েছে অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রী। অভিযোগ, আটকে থাকার কারণে বেশ কিছু পণ্য নষ্টও হয়ে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, যে সমস্ত ট্রাক বাংলাদেশে চলে গিয়েছিল, সেগুলিকেও পশ্চিমবঙ্গে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। ফলে চরম অব্যবস্থা তৈরি হয়েছে এলাকায়। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যুক্তি ছিল, সীমান্ত খুলে দিলে বাংলাদেশ থেকে করোনা সংক্রমণ পশ্চিমবঙ্গে ঢুকে পড়বে। এ হেন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকারের চিঠির উত্তরে পশ্চিমবঙ্গ সরকার জানিয়েছে, গেদে সীমান্ত দিয়ে রেলপথে পণ্য পরিবহণে তাদের আপত্তি নেই। কিন্তু সড়ক পথে আপত্তি আছে।
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করছেন প্রবীণ সাংবাদিক মিলন দত্ত। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ''করোনা কি কেবল সড়ক পথেই সংক্রমিত হয়? রেলে কি কোনও ছাড় আছে? না কি গেদে সীমান্তে করোনা কম হচ্ছে? পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই বক্তব্যের কোনও যুক্তি খুঁজে পাচ্ছি না।'' মিলনবাবুর বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গ দেশের অন্য রাজ্যগুলির সঙ্গে সীমানা বন্ধ করে দেয়নি। এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য পরিবহণ হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে যদি সমস্যা না থাকে, তা হলে বাংলাদেশ সীমান্তেও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। নিছক সংকীর্ণ রাজনৈতিক কারণে পশ্চিমবঙ্গ এই কাজ করছে।
প্রায় একই বক্তব্য সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর। ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, ''রাজ্য জুড়ে অরাজকতা চলছে। করোনা পরিস্থিতি সামলাতে এই সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। রাজনৈতিক স্বার্থে একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। এতে রাজ্যেরই ক্ষতি হচ্ছে। এটাও তেমনই এক সিদ্ধান্ত।'' সুজনবাবু জানিয়েছেন, শুধুমাত্র পেট্রাপোল সীমান্তেই নয়, উত্তরবঙ্গের বহু সীমান্তবর্তী এলাকাতেও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ভুল নীতির কারণে সাধারণ মানুষ চরম সংকটে পড়েছেন। আইন মেনে কাঁটাতার পেরিয়ে যে সমস্ত চাষী ও পারে চাষ করতে যান, তাঁদের ফসল মাঠেই নষ্ট হচ্ছে, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার লকডাউনের যুক্তি দেখিয়ে তাঁদের ফসল কাটতে যেতে দিচ্ছে না। এ নিয়ে বিডিও-কে ডেপুটেশন দিয়েও লাভ হয়নি। শুধু তাই নয়, বহু শ্রমিক খুলনায় কাজ করতে গিয়েছিলেন, তাঁদেরও ফেরানোর বিষয়ে সম্পূর্ণ উদাসীন রাজ্য সরকার। এমনই অরাজক পরিস্থিতি।
রাজ্যের স্বরাষ্ট্ররসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য আগেই জানিয়েছিলেন, পেট্রাপোল সীমান্তে কিছু আঞ্চলিক সমস্যা তৈরি হয়েছে। রাজ্য সরকার সে বিষয়গুলিকে মাথায় রেখেই সীমান্তে পরিবহণ বন্ধ রেখেছে। কী সেই আঞ্চলিক সমস্যা? স্থানীয় কিছু মানুষ রাস্তা অবরোধ করেছিলেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, সীমান্ত খুললে করোনার সংক্রমণ বাড়বে।
ভারত বাংলাদেশ যত চুক্তি
সাম্প্রতিক সময়ে ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক পেয়েছে অন্য এক মাত্রা৷ দুই দেশের সরকারের মধ্যে বেড়েছে পারস্পরিক যোগাযোগ, হয়েছে নানা চুক্তি, আর একে অপরকে দিয়েছে ‘সবচেয়ে পছন্দের দেশের’ মর্যাদা৷
ছবি: AFP/P. Singh
১০০ কোটি ডলার ঋণ ও ১৪ প্রকল্প
২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার একবছর পর ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম ভারত সফরে যান৷ সেসময় ১০০ কোটি ডলারের এলওসি বা ঋণরেখা অনুমোদন করে ভারত৷ এই অর্থে জনপরিবহন, সড়ক, রেলপথ সেতু আর অভ্যন্তরীন নৌপথের ১৪ টি প্রকল্প বাস্তবায়নের চুক্তি হয়৷
ছবি: Getty Images/G. Crouch
বন্দী বিনিময়
২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে দুই দেশের মধ্যে বন্দী বিনিময় চুক্তি হয়৷ ২০১১ সালের ১৩ই জানুয়ারি তা কার্যকর হয়৷ চুক্তি অনুযায়ী কোনো দেশের নাগরিক অন্য দেশে সাজাপ্রাপ্ত হলে তাকে অনুরোধক্রমে ফেরত পাঠাতে পারবে৷ তবে এর আগেই অনুপ চেটিয়াসহ ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদি নেতাদের গ্রেপ্তার করে দেশটিতে পাঠানো হয় বলে গণমাধ্যমে খবর বেরোয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Barreto
ছিটমহল বিনিময়
২০১৫ সালের জুন মাসে ভারত-বাংলাদেশের স্থল সীমান্ত চুক্তি অনুমোদন হয়৷ যার মাধ্যমে ২০১৫ সালের জুলাইতে দুই দেশের মধ্যে অমীমাংসিত ছিটমহল বিনিময় হয়৷ ভারতের ১১১টি ছিটমহল যুক্ত হয় বাংলাদেশের সাথে৷ একইভাবে ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলও হয়ে যায় ভারতের অংশ৷
ছবি: AFP/Getty Images
নদীর পানি বন্টন
বাংলাদেশের ভারতের অভিন্ন নদীর সংখ্যা ৫৪ টি৷ এর মধ্যে শুধু গঙ্গা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি আছে৷ যদিও পানি বন্টনের ক্ষেত্রে এই চুক্তি ভারত মানছে না বলে অভিযোগ আছে৷ অন্যদিকে পাঁচ দশক ধরে তিস্তা চুক্তির চেষ্টা চললেও তা সম্ভব হচ্ছে না দেশটির উদাসীনতার কারণে৷ যার ফলে এখন একতরফাভাবে নদীটির পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে ভারত৷
ছবি: DW/A. Chatterjee
ভারসাম্যহীন বাণিজ্য
১৯৭২ সালে প্রথম বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর হয়৷ ২০১৫ সালে স্বাক্ষর হয় এ বিষয়ে নতুন চুক্তি৷ এর আওতায় দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত হাটসহ আরো কিছু বাণিজ্য সম্পর্কিত চুক্তি হয়েছে৷ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের আকার ছিল ৯১৪ কোটি ডলার৷ যার সিংগভাগই ভারতের অনুকূলে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Dutta
উন্নয়ন সহযোগিতার কাঠামো
২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকালে একটি উন্নয়ন সহযোগিতাবিষয়ক কাঠামোগত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়৷ যার মধ্যে আছে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, পানি সম্পদ; বিদ্যুৎ; শিক্ষা, সাংস্কৃতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি ইত্যাদি৷
ছবি: Getty Images/AFP/M.U. Zaman
দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ বৃদ্ধি
এই চুক্তি সম্পর্কে ভারতীয় দূতাবাসের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ‘‘দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে এক দেশ অন্য দেশের ভূখণ্ড থেকে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও রক্ষার লক্ষ্যে এ চুক্তি হয়েছে৷ ভারত ও বাংলাদেশ একে অপরকে ‘সবচেয়ে পছন্দের দেশ’-এর মর্যাদা দিয়েছে৷’’
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Swarup
বাংলাদেশ ভারতের পণ্য পরিবহন
দুই দেশের মধ্যে হওয়া বাণিজ্য চুক্তি অনুযায়ী এক দেশ আরেক দেশের জল, স্থল ও রেলপথ ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে পণ্য ট্রানজিটের সুবিধা নিতে পারে৷ ২০১৬ সালে মাশুলের বিনিময়ে ভারতকে আশুগঞ্জ নৌ বন্দর দিয়ে বহুমাত্রিক ট্রানজিট সুবিধা দেয় বাংলাদেশ৷ সড়কপথে ট্রানজিট দিতে ২০১৫ সালে আখাউড়া অগরতলা সীমান্ত দিয়ে পরীক্ষামূলক চালান পাঠানো হয়৷ যা পরবর্তীতে নিয়মিত হয়নি৷
ছবি: DW/M. Mamun
ভারতের রেল যাবে বাংলাদেশ হয়ে
আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে কোলকাতা থেকে ছেড়ে আসা ট্রেন বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে শিলিগুড়ি যাবে৷ ২০১১ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় এ বিষয়ক একটি চুক্তি হয়৷ চুক্তি অনুযায়ী এজন্য দুই দেশকে তাদের অংশের রেলপথ নির্মাণ করতে হবে৷ বাংলাদেশ অংশের সাত কিলোমিটার রেলপথ আগামী বছরে জুন মাসের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা৷
ছবি: DW/P. Mani
সাবরুমের মানুষে জন্য ফেনীর পানি
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে সাতটি সমঝোতা সই ও চুক্তি হয়েছে৷ একটি সমঝোতার আওতায় ফেনী নদীর ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি প্রত্যাহার করতে পারবে ভারত৷ ওই পানি তারা ত্রিপুরার সাবরুম শহরে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ প্রকল্পে ব্যবহার করবে৷
ছবি: AFP/P. Singh
বন্দর ব্যবহার করে পণ্য পরিবহন
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করে ভারত আটটি রুটে তার উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোদে পণ্য আনা নেয়া করতে পারবে৷ এজন্য স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর বা পদ্ধতি কী হবে, তা নির্ধারণে একটি সমঝোতা স্বাক্ষর হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক সফরে৷
ছবি: DW/U. Danisman
চুক্তি থাকলেও হত্যা থেমে নেই
সীমান্তে হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে ২০১১ সালে বিজিবি-বিএসএফ একটি চুক্তি করে৷ নেয়া হয় সীমান্ত পারাপারে অস্ত্র ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত৷ তবে সীমান্তে দেশটির আচরণে তার প্রতিফলন নেই৷ গত ১০ বছরে ২৯৪ বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যা করেছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ৷
ছবি: S. Rahman/Getty Images
12 ছবি1 | 12
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পশ্চিমবঙ্গে এমনিতেই করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে রাজ্য সরকার তথ্য 'গোপন' করেছে। এখন আসল চিত্র সামনে আসছে। গোটা বিশ্বে যেখানে করোনায় মৃত্যুর হার চার শতাংশের নীচে, সেখানে পশ্চিমবঙ্গে তা প্রায় ১০ শতাংশ। এর থেকেই প্রমাণিত হয়, রাজ্য সরকার করোনা প্রতিরোধে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশ সীমান্ত আটকে রেখে রাতারাতি অবস্থার উন্নতি হবে না। বস্তুত বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, সীমান্ত বন্ধ রেখে যদি সত্যিই করোনা থেকে রক্ষা পাওয়া যেত, তা হলে প্রতিবেশী রাজ্যগুলির সীমানাও বন্ধ করে দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু সেটা সম্ভব নয়। এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পাঠাতেই হয়। এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকদের আনা নেওয়া করতেই হয়। বাংলাদেশ সীমান্ত বন্ধ রেখেও আসলে পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ ব্যবসায়ীদের সমস্যায় ফেলা হচ্ছে। কারণ, বাংলাদেশ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় ভারতের সব চেয়ে বড় বাণিজ্যবন্ধু। বছরে প্রায় ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ব্যবসা হয় দুই দেশের মধ্যে। এবং এর ফলে সব চেয়ে বেশি উপকৃত হন পশ্চিমবঙ্গের ছোট এবং মাঝারি ব্যবসায়ীরা। সীমান্তে অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রীর পরিবহণ বন্ধ করে অকারণে সেই ব্যবসায়ীদের সমস্যায় ফেলছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
কোনও কোনও বিশেষজ্ঞ মনে করছেন এটা আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংকীর্ণ রাজনীতি। ঠিক যে কারণে তিনি তিস্তা জলবন্টন চুক্তি ঝুলিয়ে রেখেছেন, ঠিক সে কারণেই এখন পণ্য পরিবহণ বন্ধ করে রেখেছেন। তিস্তা চুক্তি ঝুলিয়ে রেখে তিনি উত্তরবঙ্গের এক অংশের মানুষের ভোট কিনতে চান। তাঁদের বোঝাতে চান, বাংলাদেশকে জল না দিয়ে তিনি আসলে পশ্চিমবঙ্গের উপকার করছেন। যদিও বিজ্ঞানী ও গবেষকদের অনেকরই বক্তব্য, এই যুক্তি বাস্তবসম্মত নয়। তিস্তার জল বাংলাদেশকে ছাড়লে রাজ্যের খুব বড় ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। একই রকম ভাবে উত্তর ২৪ পরগনায় পণ্য পরিবহণ বন্ধ রেখে তৃণমূল সরকার স্থানীয় মানুষের ভোট কিনতে চাইছে বলে অনেকে মনে করছেন। দেখানোর চেষ্টা করছে, এলাকাবাসীকে নিয়ে তারা কতটা চিন্তিত। মনে রাখা দরকার, শেষ লোকসভা ভোটে ওই অঞ্চলে তৃণমূলের ফলাফল খুব ভালো হয়নি। ২০২১ সালে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন।
সংকীর্ণ রাজনীতি করতে গিয়ে সংকট আরও বড় না হয়ে যায়। পণ্য পরিবহণ নিয়ে বাংলাদেশ এখনও মুখ খোলেনি। কিন্তু চাইলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তি সামনে এনে ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে পারে। মাত্র কয়েক মাস আগে পেঁয়াজ রপ্তানি নিয়ে দুই দেশের কূটনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছিল। তিস্তা চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশ যথেষ্ট ক্ষুব্ধ। এই পরিস্থিতিতে নতুন করে এই সংকট তৈরি করে বাংলাদেশের সঙ্গে বৈরিতা তৈরি হলে তা ভারতের পক্ষে মোটেই ভালো হবে না। ভালো হবে না পশ্চিমবঙ্গের জন্যও।