পাঁচ মানবতাবিরোধী অপরাধীর যাবজ্জীবন
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
আজ সোমবার চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১৭৭ পৃষ্ঠার এ রায় ঘোষণা করেন৷ ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য বিচারপতি হলেন- বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম৷
২০২২ সালের ২৩ নভেম্বর এই মামলায় রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের শুনানি শেষে মামলাটির রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষামাণ রাখা হয়৷ পরে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের এ মামলায় রায় ঘোষণার জন্য ২০ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল৷
ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানিতে ছিলেন প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল, সুলতান মাহমুদ সিমন, সাবিনা ইয়াসমিন মুন্নি, রেজিয়া সুলতানা চমন ও ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল৷ অন্যদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম ও গাজী এম এইচ তামিম৷
প্রসিকিউটর মাহমুদ সীমন বলেন, এ মামলায় আসামি আটজন৷ এর মধ্যে ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল৷ তিনজন মারা গেছে৷ তারা হলো- জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য এম এ আব্দুল হান্নান, তার ছেলে মো. রফিক সাজ্জাদ (৬২) ও মিজানুর রহমান মিন্টু (৬৩)৷ গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছে- মো. হরমুজ আলী (৭৩), মো. আব্দুস সাত্তার (৬১) ও খন্দকার গোলাম রব্বানী (৬৩)৷ আর দুইজন আসামি পলাতক৷ তারা হলেন- ডা. খন্দকার গোলাম ছাব্বির আহমাদ (৬৯) ও মো. ফখরুজ্জামান (৬১)৷
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ ৩ নম্বর আমলি আদালতে মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম (৬৮) বাদী হয়ে এ মামলা করেন৷ পরে ৩ নম্বর আমলি আদালতে বিচারক মিটফুল ইসলাম মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর নির্দেশ দেন৷
মামলায় উল্লেখ করা হয়, ১৯৭১ সালের ২১ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তৎকালীন শান্তি কমিটির ময়মনসিংহ শহর শাখার আহ্বায়ক ছিলেন এম এ হান্নান৷ তার নির্দেশে রাজাকার কমান্ডার আনিসুর রহমান মানিক ও সামসুল হক বাচ্চুসহ পাক হানাদার বাহিনী এবং তাদের দোসররা ত্রিশালের কালির বাজার ও কানিহারী এলাকায় শতাধিক গণহত্যা, কয়েক কোটি টাকার সম্পদ লুণ্ঠন, ধর্ষণ, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগ করে৷
২০১৫ সালের ১০ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল আসামিদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করলে ওইদিনই হান্নানকে গুলশানে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতারর করা হয়৷ একই দিন তার ছেলে রফিক সাজ্জাদকে ওই এলাকার একটি অফিস থেকে গ্রেফতার করা হয়৷ ওই বছরের (২০১৫ সালের) ১৯ মে ত্রিশালের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমানের স্ত্রী রহিমা খাতুন এ মামলা করেন৷ ময়মনসিংহের ১ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক পরে এজাহারটি গ্রহণ করে ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর আদেশ দেন৷
একই অভিযোগে ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনের জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য আনিছুর রহমান (৭০) এবং জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বর্তমান সংসদ সদস্য এম এ হান্নানসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে লুণ্ঠন, ধর্ষণ, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অন্য একটি মামলা করা হয়৷
২০১৬ সালের ১১ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা আসামিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন শাখায় জমা দেয়৷ আসামিদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, হত্যা ও মরদেহ গুম- এই সাত ধরনের অপরাধের ছয়টি অভিযোগ আনা হয়৷
২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর মামলায় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য এম এ হান্নান ও তার ছেলেসহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল৷ এর মধ্যে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সহ ১৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়৷
একেএ/কেএম(বাংলা ট্রিবিউন)