ইউক্রেনের বুচায় গণকবর পাওয়ার পরে গোটা বিশ্বেই আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ওই ঘটনাকে সামনে রেখে জাতিসংঘেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিতর্ক শুরু হয়েছিল। তারই জেরে ইউক্রেন জাতিসংঘে ভোটাভুটির প্রস্তাব দেয়। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে রাশিয়ার থাকা উচিত কি না, বৃহস্পতিবার তা নিয়ে ভোট হয়। সেখানে ৯৩-২৪ ভোটে রাশিয়া হেরে যায়। এবং মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্যপদ হারায়।
রাশিয়ার উপর কে, কত নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে
ইউক্রেনে হামলার পর থেকে রাশিয়ার উপর দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে পশ্চিমা দেশগুলো৷ সঙ্গে যোগ দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, জাপান৷ পাল্টা পদক্ষেপ নিচ্ছে রাশিয়াও৷ ছবিঘরে জানুন বিস্তারিত৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Smialowski
শীর্ষে যুক্তরাজ্য
রাশিয়ার উপর কারা কত নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে তার হালনাগাদ পরিসংখ্যান রাখছে বৈশ্বিক নিরাপত্তা ঝুঁকি ও নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কাজ করা ওয়েবসাইট কাস্টেলাম ডট এআই৷ তাদের হিসাবে ইউক্রেনে হামলার পর থেকে ক্রেমলিনের উপর সবচেয়ে বেশি ৮৭৮টি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাজ্য৷ এই তালিকায় রুশ ব্যাংক, ড্রোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে আব্রাহোমোভিচের (ছবি) মতো ধনকুবের কিংবা পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লেভরভের সৎ কন্যাও রয়েছেন৷
ছবি: Mike Egerton/empics/picture alliance
সম্পদ জব্দ করছে সুইজারল্যান্ড
নিষেধাজ্ঞার আওতায় রাশিয়ার ৬১৭ কোটি ডলারের সম্পদ এরই মধ্যে জব্দ করেছে সুইজারল্যান্ড, যা আরো বাড়বে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার৷ ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়ার উপর সুইজারল্যান্ডের নিষেধাজ্ঞার সংখ্যা ৭৭৪টি৷
ছবি: Jean-Christophe Bott/EPA-EFE
আরো বাড়াতে চায় ইইউ
ইউক্রেনে হামলার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো একযোগে রাশিয়ার বিভিন্ন খাত, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবর্গের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে৷ কয়েক দফায় সংখ্যাটি দাঁড়িয়েছে ৭০৫-এ, যা আরো বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা চলছে৷ এছাড়া ফ্রান্সের অর্থ বিভাগ নিজেরাও আলাদাভাবে রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞার তালিকা করেছে, যার সংখ্যা ৬৯৬৷
ছবি: IAN LANGSDON/AFP/Getty Images
টার্গেটে মিডিয়া ব্যাক্তিত্বরাও
ক্যানাডার নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আছেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরাও৷ চলতি মাসের শুরুর দিকে রাশিয়ার গণমাধ্যম নির্বাহীসহ দশ জনের একটি তালিকা ঘোষণা করে দেশটি৷ তাদের মধ্যে রয়েছেন রাশিয়ান টেলিভিশন নিউজ নেটওয়ার্ক আরটির প্রধান সম্পাদক মার্গারিটা সিমোনিয়ানও৷ সব মিলিয়ে ইউক্রেনে রুশ হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৫২৬ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ক্যানাডা৷
ছবি: Muhammed Ibrahim Ali/IMAGESLIVE via ZUMA Press Wire/picture alliance
বিনিয়োগকারীরাও ছাড় পাচ্ছে না
অস্ট্রেলিয়ায় সম্পদ আছে রাশিয়ার এমন ধনকুবেরদের উপর নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে দেশটি৷ গত সপ্তাহে এই তালিকায় যুক্ত হয়েছেন কুইন্সল্যান্ডে অ্যালুমিনা পরিশোধনাগারের বিনিয়োগকারী ওলেগ দেরিপাস্কা (ছবি)৷ ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত রাশিয়ার উপর ৪৭৯টি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটি৷
ছবি: picture.alliance/dpa/Tass/V. Smirnov
অন্যদের চেয়ে কম যুক্তরাষ্ট্র
রাশিয়ার বিরুদ্ধে সবচেয়ে সরব যুক্তরাষ্ট্র৷ তবে মিত্র দেশগুলোর তুলনায় এখনও তাদের নিষেধাজ্ঞার তালিকাটি ছোট৷ কাস্টেলাম এর হিসাবে হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত ক্রেমলিনের উপর ২৯৩ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ওয়াশিংটন৷ তবে ২৪ মার্চ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, রাশিয়ার পার্লামেন্ট ডুমা ও এর ৩২৮ সদস্য এবং ৪৮টি প্রতিরক্ষা সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র৷
ছবি: Brendan Smialowski/AFP
তৎপর জাপানও
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে শুরু থেকেই সরব জাপান৷ রাশিয়ার রাজনীতিবিদ, তাদের স্বজনদের উপর নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে দেশটি৷ তার মধ্যে আছেন ডুমার ১১ সদস্য, ব্যাংকার, শিল্পপতিও৷ ২২ ফেব্রুয়ারির পর এখন পর্যন্ত মোট ৮৮টি নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে তারা৷
ছবি: The Yomiuri Shimbun/AP Images/picture alliance
নিষেধাজ্ঞায় শীর্ষে রাশিয়া
রাশিয়া এখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হওয়া দেশ৷ মোট সাত হাজার ৩৮৬টি নিষেধাজ্ঞার বোঝা বিশ্বের অন্যতম এই পরাশক্তির কাঁধে৷ এর মধ্যে চার হাজার ৩৬২টি দেয়া হয়েছে ইউক্রেনে হামলা শুরুর পরে৷ এর আগে নিষেধাজ্ঞা পাওয়া দেশের তালিকায় শীর্ষে ছিল ইরান (৩৬১৬৷ এরপর রয়েছে সিরিয়া (২৬০৮), উত্তর কোরিয়া (২০৭৭), ভেনেজুয়েলা (৬৫১), মিয়ানমার (৫১০) ও কিউবা (২০৮)৷
ছবি: Mikhail Klimentyev/AP/picture alliance
নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য
২২ ফেব্রুয়ারির পর থেকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরোপিত চার হাজার ৩৬২টি নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বেশিরভাগই দেয়া হয়েছে ব্যক্তির উপরে৷ তিন হাজার ৯১৫টি নিষেধাজ্ঞাই এ সংক্রান্ত৷ আর বাকি ৪৩৭টি দেয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানের উপরে৷
ছবি: Anton Novoderezhkin/Tass/imago images
রাশিয়ার পাল্টা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী অস্টিনসহ বিভিন্ন কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে ক্রেমলিন৷ অন্যদিকে ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোসহ ৩১৩ জনের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ এছাড়াও মার্চের শুরুতে রাশিয়া ‘অবন্ধুসুলভ’ ৪৮ দেশের তালিকা প্রকাশ করে৷ বুধবার পুটিন ঘোষণা দিয়েছেন দেশগুলোকে রাশিয়ার গ্যাসের মূল্য শোধ করতে হবে রুবলে৷
ছবি: Bai Xueqi/ Xinhua News Agency/picture alliance
10 ছবি1 | 10
জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে ৪৭টি দেশের প্রতিনিধি আছে। ইউক্রেন এবং রাশিয়া দুই দেশই তার সদস্য। বস্তুত, দুই দেশেরই মেয়াদ শেষ হবে ২০২৩ সালে। কিন্তু বুচার ঘটনা সামনে আসার পরে ইউক্রেন জাতিসংঘে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সরব হয়। ঠিক হয়, রাশিয়া মানবাধিকার কাউন্সিলের প্রতিনিধিত্ব করতে পারেব কি না, তা নিয়ে ভোটাভুটি হবে। ইউক্রেন সংকট নিয়ে এই নিয়ে চতুর্থবার ভোটাভুটি হলো জাতিসংঘে। জাতিসংঘের নিয়ম হলো, মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে কাউকে বিতাড়িত করতে হলে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট প্রস্তাবের পক্ষে থাকতে হবে।
এদিনের ভোটে প্রস্তাবের পক্ষে অর্থাৎ, রাশিয়াকে মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে বিতাড়নের পক্ষে ভোট দিয়েছে ৯৩টি দেশ। রাশিয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছে ২৪টি দেশ। ভোটদানে বিরত থেকেছে ৫৮টি দেশ। লক্ষ্যণীয়, এর আগের ভোটগুলিতে রাশিয়ার পক্ষে এত ভোট পড়েনি। এদিন চীনের মতো রাষ্ট্র রাশিয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছে। এতদিন তারা ভোটদানে বিরত থাকছিল। ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ অবশ্য এদিনও ভোটদানে বিরত থেকেছে। ভারত প্রথম থেকেই ভোটাভুটি এড়িয়ে চলেছে।
বুচার ঘটনায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞার প্রস্তুতি
01:07
ইউক্রেনের বক্তব্য
রাশিয়া মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর জাতিসংঘকে ধন্যবাদ জানিয়েছে ইউক্রেন। তাদের দাবি, নতুন করে কিয়েভ অঞ্চল থেকে অন্তত ৩০০ জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ৫০ জন বেসামরিক ব্যক্তি। তাদের শরীরে আঘাতের স্পষ্ট চিহ্ন আছে। অন্যান্য অঞ্চলেও রাশিয়ার সেনার অত্যাচারের নিদর্শন মিলছে বলে ইউক্রেন দাবি করেছে। ইউক্রেনের বক্তব্য, রাশিয়া মানবাতাকে হত্যা করেছে। তাদের বিরুদ্ধে আরো কড়া শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত।
রাশিয়ার হুমকি
বুচার গণকবরের বিষয়টি প্রথম থেকেই অস্বীকার করছে রাশিয়া। তাদের দাবি, ওই ঘটনা তৈরি করা হয়েছে। এদিন ভোটের আগে রাশিয়া হুমকি দেয়, যে সমস্ত দেশ রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোট দেবে এবং অ্যামেরিকাকে সমর্থন করবে, তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবে রাশিয়া। শুধু তা-ই নয়, যে সমস্ত দেশ ভোটদানে বিরত থাকবে, তাদের বিরুদ্ধেও কড়া পদক্ষেপের হুমকি দেওয়া হয়েছিল। রাশিয়ার বক্তব্য, ভোটদানে বিরত থাকার অর্থ অ্যামেরিকাকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়া দেয়া।