1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মানবাধিকার পরিস্থিতি

সমীর কুমার দে ঢাকা
১১ জানুয়ারি ২০১৯

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র এক প্রতিবেদনে বলেছে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি ছিল চরম উদ্বেগজনক৷ মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, পরিস্থিতির উন্নয়নে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করা প্রয়োজন৷ 

ছবি: bdnews24.com

আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধ এবং তাদের হেফাজতে সাড়ে চারশ'রও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে৷ এর অর্ধেকের বেশি নিহত হয়েছে শুধু মাদকবিরোধী অভিযানেই

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মাদকবিরোধী অভিযানের নামে যেভাবে প্রায় তিনশ'র কাছাকাছি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, এটা কোনো মানবাধিকার কর্মী মেনে নিতে পারেন না৷ আমরা গত এক যুগ ধরে বলে আসছি স্বাধীন তদন্ত কমিশন করার জন্য৷ এটা করা হলে যারা দোষী, তাদের বিচারের আওতায় আনা যেতো৷ কিন্তু আমাদের রাজনীতিবিদরা এসব দেখেও না দেখার ভান করে থাকেন৷ দিনশেষে তাঁরা এটা থেকে ফায়দা লুটতে চান৷ নির্বাহী বিভাগের কেউ বিচারক হলে তো আর বিচার বিভাগের দরকার থাকে না৷ তাই বিচারের কাজটা বিচার বিভাগের হাতেই ছেড়ে দেওয়া উচিত৷’’

আমাদের রাজনীতিবিদরা দেখেও না দেখার ভান করে থাকেন: নূর খান

This browser does not support the audio element.

সংবাদ সম্মেলনে পর্যবেক্ষণের তথ্য প্রকাশ করে আসকের উপ-পরিচালক নীনা গোস্বামী বলেন, ২০১৮ সালে আইন-শৃঙ্খলার বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে এবং তাদের হেফাজতে ৪৬৬ জন নিহত হয়েছেন৷ এর মধ্যে ৪ মে থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযানে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন ২৯২ জন৷ ২০১৭ সালে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ১৬২ জন নিহত হয়েছিলেন বলে জানান তিনি৷

নীনা গোস্বামী বলেন, ২০১৮ সালে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ, গুম ও নিখোঁজ করা হয়েছেন ৩৪ জনকে৷ এদের মধ্যে ১৯ জনের সন্ধান পাওয়া গেছে, যাদের অধিকাংশই বিভিন্ন মামলায় আটক রয়েছেন৷ গত বছর জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে অন্তত ৪৭০টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে৷ এতে নিহত হয়েছেন ৩৪ জন৷

মানবাধিকার পরিস্থিতি ছিল চরম উদ্বেগজনক: শিপা হাফিজা

This browser does not support the audio element.

আসকের নির্বাহী পরিচালক শিপা হাফিজা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘২০১৮ সালে মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে৷ শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমিয়ে আনা হয়েছে৷ বৃদ্ধি পেয়েছে নারী শিক্ষার হার ও স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রেও অগ্রগতি অব্যাহত আছে৷ এই কথাগুলো আমরা বলেছি৷ পাশাপাশি এ-ও বলেছি, সার্বিকভাবে মানবাধিকার পরিস্থিতি ছিল চরম উদ্বেগজনক৷ আমরা সব সময় বলে আসছি, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের তদন্তে একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের কথা৷ আমরা চাই না, একটি স্বাধীন দেশে এসব হত্যাকাণ্ড হোক৷’’

আসক বলছে, নির্বাচনকালীন সহিংসতায় নিহতদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৯ জনই মতাসীন দল আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থক৷ এর বাইরে বিএনপির চারজন ও একজন আনসার সদস্যের পাশাপাশি ১০ জন সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন৷ পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে কোন্দলের জেরে ৭০১টি রাজনৈতিক সংঘাতের ঘটনায় ৬৭ জন নিহত এবং সাত হাজার ২৮৭ জন আহত হয়েছেন৷

আমরা চাই না একজন মানুষও বিনা বিচারে মারা যাক: কাজী রিয়াজুল ইসলাম

This browser does not support the audio element.

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আইন ও সালিশ কেন্দ্র যে পরিসংখ্যান দিয়েছে সেটা তারা কোথা থেকে পেয়েছে, তারাই বলতে পারবেন৷ তবে আমি বলতে পারি, আমরা চাই না একজন মানুষও বিনা বিচারে মারা যাক৷ আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছি, সেগুলো যদি বাস্তবায়ন করা হয়, তাহলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে সেটি আমি বলতে পারি৷ পাশাপাশি আমরাও সুয়োমুটো হিসেবে নিয়ে বেশ কিছু ঘটনার তদন্ত করছি৷ শেষ হলে এসব রিপোর্ট আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেবো৷’’

আসকের সিনিয়র সমন্বয়ক আবু আহমেদ ফয়জুল ফরিদ বলেন, ‘‘গতবছর গৃহকর্মী নির্যাতন ও অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে ৫৪টি আর যৌতুকের কারণে ও পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৯৫ জন নারী৷ এছাড়া গতবছর ২০৭ জন সংবাদিক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, প্রভাবশালী ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি, সন্ত্রাসী, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের দ্বারা শারীরিক নির্যাতন ও হামলার শিকার হয়েছেন৷ এছাড়া হত্যার শিকার হয়েছেন তিনজন সাংবাদিক৷’’

বিচার বিভাগের কাজটা বিচার বিভাগকে করতে দিন: ড. মিজানুর রহমান

This browser does not support the audio element.

কিন্তু মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি কিভাবে সম্ভব? মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘অপরাধ দমন করতে সব সরকারই চায়৷ এটা তাদের চাওয়ারই কথা৷ কিন্তু আমাদের সরকারগুলো অপরাধ দমন করতে গিয়ে যদি আইনের কিছু বিষয় উহ্য থাকে, তাহলে কোনো সমস্যা নেই বলেই তারা মনে করেন৷ আসলে অপরাধ দমন করতে হবে আইনের মধ্যে থেকেই৷ তা না হলে একটা অপরাধ দমন করতে গিয়ে আপনি আরেকটা অপরাধের জন্ম দিচ্ছেন৷ সেটা তো হতে পারে না৷ আমি মনে করি, নির্বাহী বিভাগের কাজ যেটা, সেটাই তারা করুন৷ আর বিচার বিভাগের কাজটা বিচার বিভাগকে করতে দিন৷ আপনারা যদি দু’টো দায়িত্বই পালন করতে যান, তাহলে তো আইনে ব্যত্যয় হবেই৷ সেটা তো মানুষ মেনে নিতে পারে না৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ