সারা বিশ্বে মানবাধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক উদ্যোগকে ‘লজ্জাজনক এবং অকার্যকর' বলেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷ মানবাধিকার সংস্থাটির বার্ষিক প্রতিবেদনে এ মন্তব্য করা হয়৷
বিজ্ঞাপন
২০১৪ সালের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷ প্রতিবেদনে ইউক্রেন, নাইজেরিয়া, সিরিয়া, ইরাকসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মানবাধিকার লংঘনে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়৷ পাশাপাশি সেসব এলাকার সংকট নিরসন করে মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও পাশ্চাত্যের দেশগুলোর উদ্যোগের সমালোচনাও করা হয়৷
প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০১৪ সালে পাঁচ কোটি মানুষ ঘর ছাড়া হয়েছে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আর কখনো এক বছরে এত মানুষ গৃহহারা হয়নি৷
ইউক্রেনে মানবাধিকার লংঘনের জন্য ইউক্রেন সরকার এবং রুশপন্থি বিদ্রোহী দু'পক্ষকেই দায়ী মনে করে অ্যামনেস্টি৷ মানবাধিকার সংস্থাটির গবেষণা বিভাগের পরিচালক আনা নেইস্টাট বলেছেন, ‘‘সাধারণ মানুষদের জীবন রক্ষায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে দু'পক্ষই ব্যর্থ হয়েছে, ফলে যুদ্ধকালীন আইন লংঘিত হয়েছে৷''
অ্যামনেস্টির সেক্রেটারি জেনারেল সলীল শেঠি এর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দায়ী করে বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষ যতটা নৃশংস আক্রমন এবং দমন-পীড়নের শিকার হয়েছে সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্যোগ সেই তুলনায় অপ্রতুল৷''
এছাড়া অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে ইসলামি জঙ্গি সংগঠন বোকো হারাম এবং ইসলামিক স্টেটের ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসী কার্যকলাপেও তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে৷ সংস্থাটি মনে করে, বোকো হারাম এবং ইসলামিক স্টেট (আইএস) হত্যা, ধর্ষণ এবং ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের বাস্তুচ্যুত করার মাধ্যমে ব্যাপক হারে মানবাধিকার লংঘন করছে৷
হত্যা, আতঙ্ক আর ঘৃণায় আইএস
শুধু ইরাক আর সিরিয়া নয়, আজকাল বিশ্বের অনেক দেশেই ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর তৎপরতার কথা শোনা যায়৷ খেলাফত কায়েমের কথা বলে মধ্যপ্রাচ্যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা জঙ্গি সংগঠনটিকে নিয়েই আমাদের আজকের ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Jordan News Agency
তাদের কাছে নারী যেন বাজারের পণ্য
অনেক সময় আটক নারী ও শিশুদের আইএস জঙ্গিরা যৌন দাস হিসেবে ব্যবহার করে৷ সম্প্রতি আইএস-এর কবল থেকে পালিয়ে আসা ৪০ জনেরও বেশি ইয়াজিদি নারীর সঙ্গে কথা বলে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷ নারী ও শিশুদের সঙ্গে আইএস-এর এমন আচরণে নিন্দা জানিয়েছেন সবাই৷
ছবি: DW/Andreas Stahl
সাংবাদিক, এনজিওকর্মী হত্যা করে হুমকি
তাদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা বন্ধ না করায় যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করতে নিরপরাধ মানুষ হত্যার বেশ কিছু নজীর গড়েছে আইএস৷ বিমান হামলার প্রতিশোধের কথা বলে যুক্তরাষ্ট্রের দু’জন সাংবাদিক, একজন এনজিও কর্মী এবং ব্রিটেনের দু’জন এনজিও কর্মীর শিরশ্ছেদ করেছে তারা৷ ওপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক জেমস ফলিকে৷ গত আগস্টে তাঁর শিরশ্ছেদ করে ভিডিওচিত্র প্রচার করে আইএস৷
ছবি: dapd
মুসলমান হলেও রক্ষা নেই....
ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে সিরীয় শরণার্থীদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন পিটার কাসিগ৷ মুসলমান হিসেবে তাঁর নাম হয়েছিল আব্দুল রহমান কাসিগ৷ গত নভেম্বরে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হওয়ায় তাঁকেও হত্যা করে আইএস৷ হত্যার পর ভিডিও চিত্রও প্রকাশ করা হয়৷ নৃশংস এ ঘটনাকে ‘শয়তানের কাজ' হিসেবে বর্ণনা করেন বারাক ওবামা৷
ছবি: picture-alliance/AP/Kassig Family
জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবি, তারপর...
জাপানের দুই নাগরিককে জিম্মি করে প্রথমে ২০০ মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ দাবি করে আইএস৷ মুক্তিপণ না পাওয়ায় হারুনা ইউকাওয়াকে হত্যা করলেও সাংবাদিক কেনজি গোতোকে আটকে রাখে৷ গোতো এবং জর্ডানের বৈমানিক আইমান মাজ-আল-কাসাবেহকে জিম্মি করে তাঁদের প্রাণের বিনিময়ে জর্ডানে আটক আইএস-এর এক নারী যোদ্ধার মুক্তি দাবি করা হয়৷ তাঁকে মুক্তি না দেয়ায় কেনজি গোতো এবং আইমান মাজ-আল-কাসাবেহকে হত্যা করে আইএস৷
ছবি: Reuters/www.reportr.co via Reuters TV
ইরাকে শুরু....
গত বছরের জুন মাসে ঝটিকা আক্রমণের ইরাকের মোসুল দখল করে নেয় আইএস৷ সুন্দিদের এই জঙ্গি সংঠনটি তারপর ইরাকের বেশ বড় একটা অংশে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে৷ সিরিয়াতেও দখল করে নেয় কিছু এলাকা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
বাংলাদেশেও তৎপর আইএস...
আইএস সরাসরি যুদ্ধ করছে ইরাক আর সিরিয়ায়৷ যোদ্ধা সংগ্রহ করা হচ্ছে বিশ্বের প্রায় সব প্রান্ত থেকে৷ জার্মানি, বৃটেন, ফ্রান্স, বেলজিয়ামের মতো ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে জঙ্গি মনোভাবাপন্নরা গিয়েছে ইরাক, সিরিয়ায়৷ এশিয়ার দেশগুলোতেও তৎপর আইএস৷ বাংলাদেশেও আইএস সমর্থক সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কয়েকজনকে৷
ছবি: Reuters
জুতার নীচে আইএস!
আইএস-এর প্রতি ঘৃণাও বাড়ছে সারা বিশ্বে৷ ইরাকের স্থপতি আকীল খ্রীফ তো আইএস জঙ্গিদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করতে বেছে নিয়েছেন অভিনব এক উপায়৷ পুরোনো জুতা সংগ্রহ করে তার নীচে জুতার পরিত্যক্ত ফিতা, বোতাম ইত্যাদি দিয়ে ফুটিয়ে তুলছেন আইএস জঙ্গিদের চেহারার আদল৷ আকীল খ্রীফ মনে করেন, আইএস জঙ্গিদের স্থান জুতার নীচেই হওয়া উচিত৷
ছবি: Armend Nimani/AFP/Getty Images
বৈমানিককে পুড়িয়ে মারা এবং জর্ডানের ‘প্রতিশোধ’
আটক নারী যোদ্ধাকে মুক্তি না দেয়ায় জর্ডানের বৈমানিক আইমান মুয়াত আল-কাসেসবেহ-কে নৃশংসভাবে পুড়িয়ে মারে আইএস৷ ক্ষুব্ধ হয়ে পাল্টা ব্যবস্থা নিতেও দেরি করেনি জর্ডান৷ আইমান মুয়াত আল-কাসেসবেহ-কে (ওপরের ছবি) হত্যা করে আইএস ভিডিও প্রকাশের পরই তাদের নারী যোদ্ধা সাজিদা আল-রিশোয়াই ও আরেক কর্মীকে ফাঁসিতে ঝোলায় জর্ডান সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Jordan News Agency
8 ছবি1 | 8
অভিবাসন প্রত্যাশীদের প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের দৃষ্টিভঙ্গিরও কঠোর সমালোচনা রয়েছে প্রতিবেদনে৷ সিরিয়া, লিবিয়া এবং নাইজেরিয়া ছাড়তে বাধ্য হওয়া মানুষদের প্রতি ইইউ যথেষ্ট সহানুভূতিশীল আচরণ করছে না – এমন মত প্রকাশ করে অ্যামনেস্টি বলেছে, ‘‘ইইউ বাঁচানোর চেষ্টা না করে মানুষকে ভূমধ্যসাগরে ঝাঁপ দিতে বাধ্য করছে৷'' অ্যামনেস্টির দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ইউরোপে অভিবাসন প্রত্যাশীদের মধ্যে ৩,৪০০-র মতো মানুষ ভূমধ্যসাগরে ডুবে মারা গেছে৷
জাতি সংঘের পাঁচ স্থায়ী সদস্যের কেউ কেউ ‘ভেটো' ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে – এমন ইঙ্গিত দিয়ে এর সমালোচনাতেও মুখর হয়েছে অ্যামনেস্টি৷ বিশেষ করে সিরিয়া প্রসঙ্গে মানবাধিকার সংস্থাটি মনে করে, সেখানে ব্যাপক মানবাধিকার লংঘনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ব্যবস্থা নিতে পারেনি মূলত চীন এবং রাশিয়ার বিরোধিতার কারণে৷