‘মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী'রা কি মানবাধিকার কাউন্সিলের উপযুক্ত?
২০ অক্টোবর ২০১৭
জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্যপদ পেয়েছে আফগানিস্তান, কঙ্গো ও পাকিস্তান৷ কিন্তু অধিকার রক্ষার প্রশ্নে এসব দেশের রেকর্ডনিন্দনীয়৷ এ নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন৷
বিজ্ঞাপন
জাতিসংঘের সম্মানজনক মানবাধিকার কাউন্সিলে এবার সদস্যপদ মিলেছে ১৫ টি দেশের, যার মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান, কঙ্গো ও পাকিস্তান৷ যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ নিয়ে কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে৷ জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি নিকি হ্যালি বলেন, এতেই বোঝা যায় কেন কাউন্সিলের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ কাউন্সিলকে বাঁচাতে এর সংস্কার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি৷
জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে পাকিস্তানের অন্তর্ভু্ক্তির সমালোচনা করে হিউম্যান রাইটাস ওয়াচ বলে, এ ইসলামি দেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নানাভাবে তুলে ধরেছে৷ অন্যদিকে, জাতিসংঘে পাকিস্তানের স্থায়ী সদস্য মালিহা লোদি বলেন, এ পদক্ষেপ মানবাধিকার রক্ষায় পাকিস্তানের দৃঢ় অঙ্গীকারের প্রতি সমর্থন৷ তাঁর মতে, ‘‘পাকিস্তানের নেতা, সংসদ ও বিচারবিভাগ অধিকার রক্ষার বিষয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে৷''
তবে মানবাধিকার কর্মীরা এ যুক্তিতে সন্তুষ্ট নয়৷ ‘‘এটা স্পষ্টভাবেই জাতিসংঘ ও এর আন্তঃসরকার ব্যবস্থায় এক ধরনের সংকট৷ সমস্যা হলো যে, পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশ দাবি করে যে, তারা মানবাধিকার রক্ষায় সচেষ্ট, কিন্তু বাস্তবে তারা তা করতে পারে না৷'' ব্রাসেলস-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়া ডেমোক্র্যাটিক ফোরামের নির্বাহী পরিচালক পাওলো কাসকা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা এ পরিস্থিতিতে খুশি হতে পারে না৷ আমার মনে হয়, আমাদের এখন মানবাধিকার রক্ষায় নতুন কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থার বিষয়ে ভাবতে হবে, যেখানে কিছু নীতিতে একমত হয়ে কাজ করবে৷''
সৌদি আরবের মতো দেশ, যেখানে প্রতিনিয়তই মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়, জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে তারাও গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে আছে৷
কেন পাকিস্তানকে নিয়ে আপত্তি?
যে দেশগুলোতে সংখ্যালঘুরা সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ‘মাইনোরিটি রাইটস গ্রুপ ইন্টারন্যাশনাল’ প্রতিবছর যেসব দেশে সংখ্যালঘুরা সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে আছে তার তালিকা প্রকাশ করে৷ ছবিঘরে ২০১৫ সালের জুলাইতে প্রকাশিত সবশেষ প্রতিবেদনের তথ্য থাকছে৷
ছবি: DW
প্রথম: সিরিয়া
সুন্নিপ্রধান দেশ সিরিয়ায় শিয়া, বিশেষ করে আলাউইট সম্প্রদায়ের লোকজন সহ খ্রিষ্টান, কুর্দ, ফিলিস্তিনি ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা হুমকির মুখে রয়েছে৷ আইএস, হিজবুল্লাহ ছাড়াও সিরিয়ার শাসকপন্থি গ্রুপ সাবিহা এ সব হুমকির অন্যতম কারণ৷ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ‘মাইনোরিটি রাইটস গ্রুপ ইন্টারন্যাশনাল’ হুমকি বলতে গণহত্যা, রাজনৈতিক হত্যা ও সহিংস দমননীতি বুঝিয়েছে৷
ছবি: Reuters/SANA
দ্বিতীয়: সোমালিয়া
সরকারের সঙ্গে আল-শাবাব জঙ্গি গোষ্ঠীর সংঘাত এখনও চলছে৷ আর এর শিকার হচ্ছে বান্টু (বেশিরভাগ খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী) ও বেনাদিরি (বেশিরভাগ ইসলাম ধর্মাবলম্বী) গোষ্ঠীর মানুষজন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Y. Warsame
তৃতীয়: সুদান
দেশটির দারফুর অঞ্চলে বসবাসকারী নন-আরব মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর খার্তুম সরকারের নিপীড়নের অভিযোগে দু’টি বিদ্রোহী গোষ্ঠী ২০০৩ সালে সরকারের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে৷ সেটি এখনও চলছে৷ ফলে দারফুরে বসবাসকারী ফুর, জাঘাওয়া, মাসালিট সহ অন্যান্য গোষ্ঠীর মানুষদের জীবন সংকটে রয়েছে৷
ছবি: GetttyImages/AFP/C. Lomodon
চতুর্থ: আফগানিস্তান
বিদেশি সৈন্য চলে যাবার পর সেখানে আবারও তালেবানের শক্তি বেড়েছে৷ ফলে হাজারা, পশতুন, তাজিক, উজবেক, তুর্কমেন, বেলুচি সহ অন্যান্য গোষ্ঠীর মানুষের উপর নির্যাতনের আশঙ্কা বাড়ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/Aref Karimi
পঞ্চম: ইরাক
দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৫ শতাংশ শিয়া সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত৷ তারপরও সেখানে শিয়া গোষ্ঠীর লোকজনের জীবন বিপদমুক্ত নয়৷ সংকটে রয়েছে সুন্নি, কুর্দ, তুর্কমেন, খ্রিষ্টান, ইয়াজিদি, শাবাক, বাহাই, ফিলিস্তনি সহ অন্যান্যদের জীবনও৷
ছবি: Reuters/T. Al-Sudani
ষষ্ঠ: ডিআর কঙ্গো
স্থানীয় মায়ি-মায়ি মিলিশিয়া, উগান্ডা ও রুয়ান্ডার বিদ্রোহী এবং কাতাঙ্গান বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কারণে মানুষের প্রাণ যাওয়া অব্যাহত আছে৷ ফলে সংকটে আছে হেমা, লেন্ডু, হুতু, লুবা, লুন্ডা, টুটসি, বাটওয়া সহ আরও কয়েকটি গোষ্ঠীর জনগণ৷
বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের হামলায় সংকটে রয়েছে ইসলাম ধর্মাবলম্বী রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের লোকজন৷ এছাড়া কচিন, কারেনি, কারেন, মন, রাখাইন, শান, চিন এবং ওয়া জাতির জনগণও ভালো নেই সেখানে৷
ছবি: Reuters
বাংলাদেশ, ভারতের অবস্থান
‘মাইনোরিটি রাইটস গ্রুপ ইন্টারন্যাশনাল’-এর তালিকায় বাংলাদেশ ৪১তম আর ভারত ৫৪তম অবস্থানে আছে৷ বাংলাদেশে আহমদিয়া, হিন্দু সহ অন্য ধর্মাবলম্বীরা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী উপজাতির লোকেদের জীবন হুমকির মুখে রয়েছে বলে জানানো হয়েছে৷ আর ভারতে আসামিজ, বোড়ো, নাগা, ত্রিপুরা সহ অন্যান্য উপজাতি এবং কাশ্মিরী, শিখ, মুসলিম ও দলিতরা হুমকির মুখে আছে৷ প্রতিবেদনটি পড়তে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: DW
9 ছবি1 | 9
জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে নিজেদের দেশের স্থান পাওয়াকে পাকিস্তানেরঅধিকার কর্মীরা বাকস্বাধীনতা রক্ষা ও দেশের সংখ্যালঘু অধিকার সমুন্নত করতে তাদের প্রচেষ্টার পক্ষে বাধা হিসেবে দেখছেন৷ দেশটিতে খ্রিস্টান, হিন্দু ও আহমেদিয়ার মতো সংখ্যালঘু সম্প্রদায় রাষ্ট্রীয়ভাবে বৈষম্যের শিকার৷ অন্যদিকে, ব্লাসফেমি আইনের কারণে গত কয়েক বছরে অনেকের মৃত্যু হয়েছে৷ জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে সদস্যপদ পাওয়ার পর সরকার সমর্থিত ব্লাসফেমি আইন কি সংশোধন করবে ইসলামাবাদ?
মানবাধিকার কর্মীরা লস্কর-ই-তৈয়বার মতো আন্তর্জাতিক ইসলামি জঙ্গি সংগঠনগুলোর সমর্থন জোগানোর দায়েও অভিযুক্ত করেন পাকিস্তানকে৷
গত মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জঙ্গি দমনে পাকিস্তানের অসহযোগিতার সমালোচনা করেন৷ এমনকি আফগান-পাকিস্তান সীমান্তে সক্রিয় জঙ্গি সংগঠনগুলোকে নিরাপদ আশ্রয় দেবার অভিযোগও তোলেন ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে৷
সরকার সমালোচক, ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগার থেকে শুরু করে অধিকার কর্মীদের অপহরণের মতো বিষয়ে শঙ্কা তুলে ধরে পাকিস্তানের উদারপন্থিরা বলছেন, সরকারের নিরাপত্তা সংস্থা এসব অপহরণের জন্য দায়ী৷
এতসব অভিযোগকে পেছনে ফেলে জাতিসংঘের সম্মানজনক মানবাধিকার কাউন্সিলে পাকিস্তান জায়গা করে নেয়ায় ক্ষুদ্ধ অধিকার কর্মীরা বলেন, এর ফলে কর্তৃপক্ষ ভিন্নমতাবলম্বী এবং সংখ্যালঘুদের উপর দমন চালিয়ে যাবে নির্বিঘ্নে৷ বালুচিস্তানের রাজনীতিবিদ ও সেখানকার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ মেঙ্গাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে পাকিস্তানের এই অন্তর্ভু্ক্তি দেশে যাঁরা নিপীড়িত হচ্ছে, তাঁদের জন্য অপমান৷ সরকার বালুচিস্তানে সহিংসতা চালিয়েছে৷ এর মানে দাঁড়ায়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পাকিস্তানের মানবাধিকার বিষয়টি নিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখছে৷''
আহত আফগান যোদ্ধাদের কষ্ট
গত বছর প্রায় ১২ হাজার আফগান সৈনিক ও পুলিশকর্মী কর্তব্য পালন করতে গিয়ে তার মূল্য দিয়েছেন কোনো না কোনো অঙ্গ হারিয়ে – হাত, পা কিংবা চোখ৷ আজ তাঁরা প্রতিবন্ধী, অথচ সরকার বা সমাজের তরফ থেকে সাহায্য আসে অতি সামান্যই৷
২০১৫ সালে কুন্দুসে আহত হবার পর আফগান সৈনিক আবদুল রকিমকে চিকিৎসার জন্য কাবুলে দেশের বৃহত্তম সামরিক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়৷ সেখানে তাঁর দু’টি পা-ই কেটে বাদ দিতে হয়৷ এছাড়া তাঁর কোমরের কাছ থেকে একটি গোলার টুকরো অস্ত্রোপচার করে বার করে নিতে হয়৷ সারা দেশে আফগান সেনাবাহিনীর ছ’টি হাসপাতাল আছে; আরো দু’টি তৈরি করা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Christine-Felice Röhrs
দেশের সেবায়
মার্কিন পরিসংখ্যান অনুযায়ী শুধুমাত্র এ বছরের প্রথম চার মাসে আফগান নিরাপত্তাবাহিনীর ৪,২৩৮ জন সদস্য আহত ও আরো ২,৫৩১ জন নিহত হয়েছেন৷ ২০১৬ সালে নিহত নিরাপত্তাকর্মীদের সংখ্যা ছিল মোট ৭,০০০; আহত হয়েছিলেন প্রায় ১২,০০০৷
ছবি: Hussain Sirat
‘শুধু’ একটা পা কাটা গেছে
কাবুলের সামরিক হাসপাতালে সৈনিক সেফাতুল্লাহ৷ তাঁর কপাল ‘ভালো’ – কুনার প্রদেশে তালেবানের রাখা একটি মাইনবোমার উপর পা ফেলে শুধু তাঁর ডান পাটা হাঁটুর নীচে অবধি জখম হয়৷ দেশে অস্ত্রোপচার সম্ভব নয় বলে অনেক আহত সৈনিক জমি-জমা বেচে বিদেশে অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করেন৷
যুদ্ধে অঙ্গ হারিয়েছেন, এমন কিছু আফগান সৈনিক কাবুলে আফগান সেনাবাহিনীর একটি স্পোর্টস হলে ক্যানাডার ইনভিক্টাস গেমস-এর জন্য প্র্যাকটিস করছেন৷ সারা বিশ্বের প্রতিবন্ধী সেনাসদস্যদের জন্য এই ইনভিক্টাস গেমস একটি বিশেষ সুযোগ৷ কিন্তু আফগানিস্তানে অঙ্গহানির পরে যে সব সৈন্য সরকারের সাহায্য পেয়ে থাকেন, তাঁদের এক হিসেবে ভাগ্যবান বলা চলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Christine-Felice Röhrs
বেঁচে থেকে লাভ?
মতিউল্লাহ ২০০৯ সালে কান্দাহারে গুরুতরভাবে আহত হন৷ অঙ্গচ্ছেদের পর তিনি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন৷ পরে তিনি একটি ইউটিউব ভিডিওতে দেখেন, অন্যান্য দেশের প্রতিবন্ধীরা কি করতে পারেন ও নিজের সাহস ফিরে পান৷ মতিউল্লাহ আজ ‘‘বীরদের জন্য সাহায্য’’ নামের একটি এনজিও-র হয়ে কাজ করেন৷ তবে এখানেও তিনি ব্যতিক্রম, কেননা তিনি স্কুল পাস, তাঁর পরিবার তাঁকে সাহায্য করে থাকে ও তাঁর বাবা একজন সরকারি কর্মকর্তা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Christine-Felice Röhrs
একেবারে একা সম্ভব নয়
শারীরিক ও মানসিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অধিকাংশ সাবেক আফগান সৈন্য ও পুলিশকর্মীকে একাই নিজেদের পথ করে নিতে হয়, কেননা তাঁরা প্রায় কোনোরকম সাহায্য পান না৷ তাঁদের অনেকেই লেখাপড়া জানেন না; অপরদিকে তাঁরা কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেতে পারেন, সে বিষয়ে সরকারের তরফ থেকেও তাঁদের কিছু জানানো হয় না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Christine-Felice Röhrs
হাসপাতালে জায়গা কুলোয় না
অধিকাংশ ন্যাটো সৈন্য বিদায় নেওয়ার পর দেশে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের দায়িত্ব প্রায় পুরোপুরি আফগানিস্তানের উপর এসে পড়েছে – যার একটি ফল: ক্রমেই আরো বেশি নিরাপত্তাকর্মী গুরুতরভাবে আহত হচ্ছেন৷ আফগান সেনাবাহিনীর ছ’টি হাসরাতালে আর আহতদের জায়গা হচ্ছে না৷ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবার পর তাঁদের পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বা সামর্থ্যও আফগানিস্তানের নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Christine-Felice Röhrs
7 ছবি1 | 7
অন্যদিকে, পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলে, জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে এ অন্তর্ভুক্তি নিয়ে অপপ্রচার চালিয়েছিল ভারত৷ ভারতের বিরুদ্ধে কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগও তোলে পাকিস্তান৷ ‘‘ভারত পাকিস্তানকে কোনো সম্মানজনক আন্তর্জাতিক অবস্থানে দেখতে চায় না৷ দিল্লী এখন বলছে, আমরা এর যোগ্য না৷ আন্তর্জাতিক মহলে পাকিস্তানের গুরুত্ব পাওয়াকে মেনে নিতে পারে না ভারত,'' ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ পার্টির নেতা উজমা বুখারি এ কথা বলেন৷
‘এ অন্তর্ভুক্তি নৈতিক চাপ'
এ কাউন্সিলে সৌদি আরব ও পাকিস্তানের সমর্থনে অনেকে বলছেন, দেশগুলো তাদের নাগরিকদের মানবাধিকার রক্ষায় আগের চেয়েও আরো বেশি নৈতিক চাপ অনুভব করবে৷ সৌদি আরবের কথা ধরা হলে, দেশটি ধীরে হলেও আগের চেয়ে ইতিবাচকভাবে সেখানকার মানবাধিকারের বিষয়গুলো সংস্কারের দিকে এগুচ্ছে৷ সম্প্রতি সেখানে নারীরা গাড়ি চালানোর অধিকার পেয়েছে৷ নারীদের নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষায় বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে আফগান সরকার, যদিও আরো অনেক কিছুই করার রয়েছে এ বিষয়ে৷
পাকিস্তানও কি তাদের দায়িত্ব পালন করবে?
সংসদ ও ক্ষমতাসীন সামরিক শক্তির মধ্যে একটি দ্বন্দ্বের জেরে পদচ্যুত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে সমর্থন জানিয়েছে পাকিস্তানের উদারপন্থী রাজনীতিবিদরা৷ সেখানকার মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সংশয় কাজ করছে৷ যতক্ষণ পর্যন্ত একটি শক্তিশালী নির্বাচিত বেসামরিক সরকার না আসছে, ততক্ষণ পর্যন্ত জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে সদস্য পদ কোনো কাজে আসবে না৷
পাকিস্তান: অগুনতি সন্ত্রাসী হামলার একটি দশক
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার সঙ্গীদের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী যুদ্ধে যোগ দেয়ার পর, চড়া মূল্য দিতে হয়েছে পাকিস্তানকে৷ উগ্রপন্থিদের হাতে দেশটির কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে ইতিমধ্যেই৷ ছবিঘরে দেখুন সেই মর্মান্তিক কাহিনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/A Majeed
২০০৭ – সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাবর্তনের দিন করাচিতে হামলা
২০০৭ সালের ১৮ অক্টোবর করাচিতে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর গাড়িবহরে জোড়া বোমা হামলার ঘটনা ঘটে৷ সে সময় দীর্ঘ আট বছর পর দেশে ফিরছিলেন তিনি৷ হামলায় বেনজির বেঁচে গেলেও, প্রাণ হারায় ১৩৯ ব্যক্তি৷ কিন্তু এর মাত্র দু’মাস পর, ২৭ ডিসেম্বর, রাওয়ালপিন্ডিতে অপর এক হামলায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন পাকিস্তানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/N. Khawer
২০০৮ – ওয়াহ বোমা হামলা
ওয়াহ-তে অবস্থিত ‘পাকিস্তান অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরিস’-এ জোড়া আত্মঘাতী বোমা হামলায় প্রাণ হারায় ৬৪ ব্যক্তি৷ ২০০৮ সালের ২১ আগস্টের সেই হামলাই এখনও পর্যন্ত পাকিস্তানে কোনো সামরিক স্থাপনায় সবচেয়ে বড় হামলার ঘটনা৷ জঙ্গি গোষ্ঠী ‘তাহরিক-ই-তালেবান’ (টিটিপি) সে সময় ঐ হামলার দায় স্বীকার করেছিল৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Khan
২০০৮ – রাজধানীর হোটেলে সন্ত্রাসী হামলা
পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে অবস্থিত মারিয়ট হোটেলে বিস্ফোরকভর্তি ট্রাক দিয়ে হামলা চালানো হয়৷ ২০০৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বরের সেই হামলায় প্রাণ হারায় কমপক্ষে ৬০ ব্যক্তি, আহত ২০০৷ হতাহতদের মধ্যে ২০ জন বিদেশিও ছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Matthys
২০০৯ – পেশোয়ারে হামলা
পাকিস্তানের পেশোয়ারে নারী ও শিশুদের বাজার হিসেবে পরিচিত ‘মিনা বাজারে’ একটি গাড়ি বোমা হামলায় ১২৫ ব্যক্তি নিহত ও ২০০ ব্যক্তি আহত হয়৷ পাকিস্তান সরকার এই হামলার পেছনে তালেবান জড়িত বলে দাবি করলেও, জঙ্গি গোষ্ঠী তালেবান এবং আল-কায়দা – উভয়েই সেই হামলার দায় অস্বীকার করে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A Majeed
২০১০ – ভলিবল ম্যাচে আত্মঘাতী হানা
পাকিস্তানের বানুর একটি গ্রামে ভলিবল খেলা চলাকালে আত্মঘাতী হামলায় প্রাণ হারায় ১০১ ব্যক্তি৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Azam
২০১১ – চারসাদার পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে হামলা
পাকিস্তানের খাইবার পাকতুনখার চারসাদা জেয়া একটি পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে জোড়া বোমা হামলায় ৯৮ ব্যক্তি নিহত ও ১৪০ জন আহত হয়৷ ২০১১ সালে ১৩ মে ক্যাডেটরা যখন প্রশক্ষিণ শেষে দশদিনের ছুটিতে নিজ নিজ বাড়ি যাওয়ার পথে বাসে উঠছিল, তখন হামলার ঘটনাটি ঘটে৷ বলা হয়ে থাকে, ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতেই নাকি ঐ হামলা চালায় তালেবান৷
ছবি: Getty Images/AFP/H. Ahmed
২০১৩ – পেশোয়ারে চার্চে বোমা হামলা
২০১৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পেশোয়ারের ‘অল সেইন্ট চার্চে’ জোড়া আত্মঘাতী হামলায় ৮২ ব্যক্তি প্রাণ হারায়৷ ‘তাহরিক-ই-তালেবান’ বা টিটিপি সংশ্লিষ্ট জঙ্গি গোষ্ঠী জুনদাল্লাহ সেই হামলার দায় স্বীকর করে৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Khan
২০১৪ – পেশোয়ারে স্কুলে হত্যাযজ্ঞ
২০১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর টিটিপি-র সাতজন বন্দুকধারী পেশোয়ারের আর্মি পাবলিক স্কুলে হামলা চালায়৷ তারা ১৫৪ ব্যক্তিকে হত্যা করে, যাদের মধ্যে ১৩২টি শিশু ছিল৷ পাকিস্তানের ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা৷
ছবি: AFP/Getty Images/A Majeed
২০১৫ – করাচিতে বাসে হামলা
২০১৫ সালের ১৩ মে আটজন বন্দুকধারী করাচিতে একটি বাসে হামলা চালিয়ে ৪৬ ব্যক্তিকে হত্যা করে৷ নিহতদের সবাই শিয়া মুসলমান ছিল৷ এই হামলারও দায় স্বীকার করে জুনদাল্লাহ বা ‘আল্লাহ-র সেনা’ নামের জঙ্গি গোষ্ঠী৷
ছবি: STR/AFP/Getty Images
২০১৬ – হাসপাতালে বোমা হামলা
চলতি বছরের ৮ আগস্ট পাকিস্তানের কোয়েটায় সরকারি হাসপাতালে আত্মঘাতী বোমা হামলা এবং গুলিতে ৭০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারায়৷ নিহতদের অধিকাংশই আইনজীবী, যাঁরা অজ্ঞাত বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত বেলুচিস্তান বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিলাল আনওয়ার কাসির মরদেহ নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন৷