অ্যাম্বুল্যান্স প্রচুর টাকা চাইছে। মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে রওনা দেন বাবা-ছেলে। বিনা পয়সায় দেহ বাড়িতে পৌঁছে দেয় একটি সংস্থা। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিল পুলিশ।
বিজ্ঞাপন
বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, উপকারীকে বাঘে খায়। সেই প্রবাদের বাস্তব রূপ কি দেখা গেল জলপাইগুড়িতে? উপকার করতে গিয়েছিলেন অঙ্কুর দাস। সেই উপকার করতে যাওয়াই কাল হলো। তাকে গ্রেপ্তার করলো পুলিশ।
কী হয়েছিল?
জলপাইগুড়ি থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরের জায়গা ক্রান্তি থেকে লক্ষ্মীরানি দেওয়ানকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় জলপাইগুড়ির সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি সেখানেই মারা যান। রাতের বেলায় মৃতদেহ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করতে যান মৃতার স্বামী জয়কৃষ্ণ দেওয়ান। কিন্তু তাকে জানিয়ে দেয়া হয়, তিন হাজার টাকা না দিলে কোনো অ্যাম্বুল্যান্স যাবে না।
ক্রান্তি থেকে জলপাইগুড়ি আসার সময় জয়কৃষ্ণের অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া লেগেছিল নয়শ টাকা। তাদের তিন হাজার টাকা দেয়ার ক্ষমতা ছিল না। বাবা-ছেলে তখন ঠিক করেন, মৃতদেহ ঘাড়ে করে হেঁটে যাবেন। সকালবেলা তারা হাঁটা শুরু করেন। খুব বেশিদূর যেতে পারেননি। মৃতদেহ নামিয়ে রেখে পাশে বসেন তারা। তখন কিছু মানুষ বলেন, গ্রিন জলপাইগুড়ি নামে একটি সংগঠন শববহনকারী গাড়ি করে মৃতদেহ বিনা পয়সায় বাড়ি পৌঁছে দেয়।
আনিস থেকে হাঁসখালি, তদন্ত কোথায় দাঁড়িয়ে
ছাত্রনেতা আনিস খানের মৃত্যু থেকে শুরু করে বগটুই, হাঁসখালি পর্যন্ত একের পর এক ঘটনার তদন্ত এখন কোথায় দাঁড়িয়ে?
ছবি: Satyajit Shaw/DW
আনিস নিয়ে রিপোর্ট পেশ
গত মঙ্গলবার আনিস খানের মৃত্যু নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে প্রোগ্রেস রিপোর্ট পেশ করেছে পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল(সিট)। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে একজন হোমগার্ড ও একজন সিভিক ভল্যান্টিয়ারকে গ্রেপ্তার করেছে তারা। দুইজন এখন বিচারবিভাগীয় হেফাজতে আছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কী জানিয়েছে সিট
সিট ৮২ পাতার রিপোর্ট পেশ করেছে। সেখানে তারা তদন্তের বিবরণ দিয়ে জানিয়েছে, এখন তাদের তদন্ত একেবারে শেষ পর্যায়ে। হাইকোর্টে আগামী ২৫ এপ্রিল আবার মামলার শুনানি হবে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারেন বাবা
আনিসের বাবা সালেম খান বলেছেন, রাজ্য পুলিশের উপর তার কোনো ভরসা নেই। তার অভিযোগ, পুলিশই তার ছেলেকে মেরেছে। তাই তিনি সিবিআই তদন্ত চান। যদি দরকার হয়, তার জন্য তিনি সুপ্রিম কোর্টে যাবেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ক্ষমা চাইতে হবে
বিচারপতি রাজশেখর মান্থা জানিয়েছেন, বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে সালেম খান নানা ধরনের কথা বলছেন। তার মধ্যে বেশ কিছু কথা আপত্তিকর। সালেম খানকে হলফনামা দিয়ে ক্ষমা চাইতে বলেছেন তিনি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
বগটুই নিয়ে সিবিআই
রামপুরহাটের বগটুই-কাণ্ডের তদন্ত করছে সিবিআই। দুইটি ঘটনার আলাদা তদন্ত হচ্ছে। একটা ভাদু শেখের হত্যার এবং অন্যটি গ্রামে বাড়িতে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে মারার। এখনো পর্যন্ত মোট ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার মধ্যে সিবিআই করেছে জনা সাতেককে। বাকিদের পুলিশ আগে করেছিল।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
মুম্বই থেকে গ্রেপ্তার
গত ৭ এপ্রিল মুম্বই থেকে চারজনকে গ্রেপ্তার করে সিবিআই। অভিযোগ, এই চারজন মূল অভিযুক্ত লালন শেখের ঘনিষ্ঠ ও বগটুই-কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। এছাড়া সমীর শেখ নামে একজনকে প্রথমে দীর্ঘ জেরা করার পর গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উপরের ছবিতে বগটুইতে তদন্তরত সিবিআই অফিসাররা ।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
হাঁসখালির তদন্ত
হাঁসখালিতে তৃণমূল নেতার বাড়িতে তার ছেলের ঘরে গিয়ে বিছানার চাদর ও রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেছে সিবিআই। সূত্র জানাচ্ছে, যেহেতু মেয়েটির দেহ পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, তাই এখানে তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করতে অসুবিধা হচ্ছে। এই অবস্থায় বিছানার চাদর ও রক্তের নমুনা খুবই কাজে লাগবে বলে সিবিআই মনে করছে। উপরের ছবিতে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতার ছেলেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কতদিন লাগবে?
সিবিআইয়ের হাতে প্রচুর মামলা রয়েছে। ফলে হাঁসখালির তদন্ত কবে শেষ হবে তা বলা যাচ্ছে না। তবে সূত্র জানাচ্ছে, হাঁসখালি হলো ওপেন অ্যান্ড শাট কেস। ফলে খুব বেশিদিন লাগার কথা নয়। উপরের ছবিতে হাঁসখালি গ্রাম।
ছবি: Subrata Goswami/DW
তপন কান্দু হত্যার তদন্ত
পুরুলিয়ায় কংগ্রেস পুরসভা সদস্য তপন কান্দু হত্যা নিয়েও সিবিআই তদন্ত করছে। এই মামলায় এক প্রত্যক্ষদর্শীকে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলতে দেখা গেছে। তার মোবাইল পাওয়া যাচ্ছিল না। পুলিশ বৃহস্পতিবার তা উদ্ধার করেছে। কল-লিস্ট খতিয়ে দেখে বেশ কিছু সূত্র পাওয়ার ব্যাপারে তারা আশাবাদী। এই ঘটনায় কর্তব্যে গাফিলতির দায়ে চারজন পুলিশ কর্মীকে ক্লোজ করেছে রাজ্য সরকার।
ছবি: Subrata Goswami/DW
এসএসসি দুর্নীতি
এই মামলায় চারজনকে জেরা করেছে সিবিআই। সবে তারা তদন্ত শুরু করেছে। এখনো পর্যন্ত এই মামলায় তারা খুব একটা এগোতে পারেনি বলে সূত্র জানাচ্ছে।
ছবি: Central Bureau of Investigation
অনুব্রত মণ্ডল
সিবিআই গরুপাচার ও কয়লাকাণ্ড নিয়ে অনুব্রতকে জেরা করার জন্য ডেকেছিল। কিন্তু বীরভূমের তৃণমূল নেতা কলকাতা এসে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অনুব্রত চিকিৎসাধীন। সিবিআই তারপর আর এই বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
11 ছবি1 | 11
খবর পাওয়ার পর মৃতদেহ নিয়ে তারা ক্রান্তির বাড়িতে পৌঁছে দেন। বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু হয়। বাবা-ছেলের মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটার দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
এরপরই সক্রিয় হয় জলপাইগুড়ি অ্যাম্বুল্যান্স অ্যাসোসিয়েশন। সংস্থার সম্পাদক দিলীপ দাস পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত চলছে। সরকারকে কালিমালিপ্ত করার কাজ চলছে। গ্রিন জলপাইগুড়িও এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত।
পুলিশের ব্যবস্থা
পুলিশ যথারীতি গ্রিন জলপাইগুড়ির অঙ্কুর দাসকে গ্রেপ্তার করে। সেটাও তার ছেলের জন্মদিনের দিন। আর যে অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা বললো লক্ষ্মীরানির দেহ তিন হাজার টাকার কমে বাড়ি পৌঁছে দেবে না, তাদের কিছু হলো না।
রামপুরহাট-কাণ্ডে পুলিশকেও জেরা
রামপুরহাটের বগটুই গ্রাম কার্যত ঘিরে রেখেছে সিবিআই। চলছে একের পর এক জিজ্ঞাসাবাদ। গ্রেপ্তার আরও দুই।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বগটুইয়ে সিবিআই
বগটুইতে রীতিমতো সক্রিয় সিবিআই। বাড়ি বাড়ি ঢুকে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। সংগ্রহ করা হচ্ছে তথ্যপ্রমাণ।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
এসডিপিও-কে জেরা
এলাকার সাবেক এসডিপিও-কে বুধবার প্রায় চার ঘণ্টা জেরা করেছেন সিবিআইয়ের অফিসাররা। প্রশাসনের উপর রাজনৈতিক চাপ কতটা, তা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
পুলিশকে জেরা
স্থানীয় থানার সাসপেন্ড হওয়া আইসি-কেও বুধবার জেরা করা হয়েছে। পুলিশকে কারা ফোন করে যেতে নিষেধ করেছিল, সে বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করা হয়েছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
আরো জেরার সম্ভাবনা
পুলিশের আরো উচ্চপদস্থ কর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হতে পারে বলে সিবিআই সূত্র জানিয়েছে। গোটা ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে চাইছে সিবিআই।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
এখনো পর্যন্ত গ্রেপ্তার আট
বুধবারও দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এখনো পর্যন্ত এই ঘটনায় আটজনকে গ্রেপ্তার করা হলো। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে আটক ব্যক্তিরা পালিয়ে গিয়েছিল।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
অনুব্রতের পাশে মুখ্যমন্ত্রী
বগটুই নিয়ে বিজেপি একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং ফাইল বানিয়েছে। সেখানে এই ঘটনায় অনুব্রত মন্ডলের প্রত্যক্ষ যোগাযোগের কথা বলা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, বিজেপি সিবিআই-কে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
গ্রামে ফিরছেন সকলে
ঘটনার পর কার্যত মানুষশূন্য হয়ে গেছিল বগটুই গ্রাম। অনেকেই প্রাণের ভয়ে আত্মীয়দের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ঘটনার দিন রাতেই পরিস্থিতি আঁচ করে পুরুষরা পালিয়েছিলেন। একে একে সকলেই ফের গ্রামে ফিরছেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
7 ছবি1 | 7
প্রবীণ সাংবাদিক জয়ন্ত ভট্টাচার্য ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের আসল ছবিকে সামনে তুলে আনছে। বিভিন্ন জায়গায় এই ধরনের দুর্নীতি-চক্র গজিয়ে উঠেছে। তারা ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় কাজ করছে। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নেয় না। মানবিক অঙ্কুরের বিরুদ্ধে নেয়।''
বিচারকের সিদ্ধান্ত
অঙ্কুর দাসকে পুলিশ নিজের হেফাজতে রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু বিচারক পুলিশের আর্জি খারিজ করে অঙ্কুরকে জামিন দিয়েছেন।