‘মানব চিড়িয়াখানা' : ইউরোপে বর্ণবাদের ভয়ঙ্কর এক অতীত
১৭ এপ্রিল ২০২৩ইউরোপীয়রা বাঘ, ভালুকের সঙ্গে খাঁচায় বন্দি মানুষও দেখতেন খুব মজা করে৷
জার্মানির হামবুর্গ, পর্তুগালের লিসবন এবং বেলজিয়ামের ব্রাসেলস- ইউরোপের বিখ্যাত এই তিন শহরে খুব ঘটা করে আয়োজন করা হতো অপুষ্টিতে কাহিল অশ্বেতাঙ্গ মানুষদের প্রদর্শনী৷ কলঙ্কের এই ইতিহাস অবশ্য ইউরোপের সবাই প্রায় ভুলতে বসেছেন৷ মানুষের এমন বর্ণবাদী ‘এথনোগ্রাফিক এক্সিবিশন'-এর কথা জার্মানি, পর্তুগাল ও বেলজিয়ামের বেশির ভাগ মানুষ জানেন না এবং যারা জানেন, তারা তা স্বীকার করেন না৷
ইউরোপের তখনকার শাসকরা মানবতার প্রতি চরম অবজ্ঞা প্রকাশ করা এসব প্রদর্শনীর আয়োজন করতেন মূলত ‘ইউরোপীয় সভ্যতার' আধিপত্য জাহির করতে৷ ইতিহাসবিদদের মতে, ১৫ শতকের গোড়ার দিকে শুরু হয়ে এই প্রবণতা চলেছে উনিশ শতকের ষাটের দশক পর্যন্ত৷
জার্মানিতে ‘মানব চিড়িয়াখানা'
জার্মানিতে উপনিবেশ থেকে মানুষ অপহরণ করে এনে চিড়িয়াখানায় ঢুকিয়ে রাখাকে স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত করেছিলেন ব্যবসায়ী কার্ল হাগেনবেক৷ তার কোম্পানি জার্মানির হামবুর্গ শহরের চিড়িয়াখানায় প্রথম মানুষ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করে ১৮৭৪ সালে৷ সেই থেকে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত হামবুর্গ চিড়িয়াখানায় ‘মানুষ প্রদর্শনী' ছিল দর্শনার্থীদের জন্য বিশেষ এক আকর্ষণ৷ কার্ল হাগেনবেক আর বেঁচে নেই৷ তবে হামবুর্গ চিড়িয়াখানা এখনো আছে৷ এখনো চিড়িয়াখানাটির পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে কার্ল হাগেনবেক-এর হাগেনবেক কোম্পানি৷
সম্প্রতি জার্মানির সংবাদমাধ্যম এনডিআর-কে দেয়া সাক্ষাৎকারে ইউরোপে ‘মানব চিড়িয়াখানা'র অতীত নিয়ে কথা বলেছেন ইতিহাসবিদ ইয়্যুর্গেন সিমার৷ সেখানে তিনি বলেছেন, হামবুর্গ চিড়িয়াখানার মতো ইউরোপের বিভিন্ন চিড়িয়াখানায় পরিকল্পনা করেই মানুষ রাখা হতো৷ মানবতার প্রতি এমন অপমানজনক অতীতের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ইয়্যুর্গেন সিমার৷ তবে ক্লাউস হাবেরবেক-এর সন্তান কার্ল মনে করেন, সে আমলের শিল্প এমনই ছিল এবং শিল্পের দাবি পূরণ করতেই বাঘ, ভালুকের মতো মানুষও দেখানো হতো চিড়িয়াখানায়৷
পর্তুগালে মানুষ যখন ‘চিড়িয়া'...
পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত ছিল চিড়িয়াখানায় মানুষ প্রদর্শনীর রমরমা৷ তখন পর্তুগাল শাসন করছিলেন স্বৈরাচারী শাসক আন্তনিও ডি অলিভিয়েরা সালাসার৷ তার উদ্যোগে ১৯৪০ সালের ওয়ার্ল্ড এক্সিবিশনে খাঁচায় বন্দি মানুষ দেখেছেন কয়েক হাজার মানুষ৷
ব্রাসেলসের ‘কালো অধ্যায়'
বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ১৯৫৮-র ওয়ার্ল্ড ফেয়ার, অর্থ্যাৎ বিশ্ব মেলার মতো বড় আয়োজনেও পশু-পাখির মতো প্রদর্শিত হয়েছে মানুষ৷
ইউরোপিয়ান নেটওয়ার্ক অ্যাগেইন্স্ট রেসিজম (ইএনএআর)-এর প্রত্নতাত্ত্বিক ও অ্যাক্টিভিস্ট ব্রাসেলসের ওই কালো আধ্যায়ের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে্ন ৷ তার মতে, চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশনের ব্যাপক প্রসার এবং মানুষের মধ্যে পর্যটনে আগ্রহ রাতারাতি খুব বেড়ে যাওয়ার কারণে ইউরোপের দেশগুলো ‘মানব চিড়িয়াখানা‘র ধারণা থেকে সরে এসেছে৷
ফেরেঙ্ক গাল/ এসিবি