সংবাদসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, শনিবার সকালেও ৩০৩ জন যাত্রী বিমানবন্দরের লাউঞ্জ হলে ছিলেন। এএফপির একজন সাংবাদিক এটা দেখেছেন। লাউঞ্জ হলের কাঁচের বাইরের অংশ এবং আশেপাশের প্রশাসনিক ভবনগুলো ত্রিপলে ঢেকে দেয়া হয়েছিল। সেখানে কারও প্রবেশের অনুমতি ছিল না।
বিমানসংস্থার আইনজীবী লিলিয়ানা বাকায়োকো বলেছেন, সমস্ত ক্রু সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এবং বিমানবন্দর ছেড়ে যাওয়ারঅনুমতি দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার প্যারিসের বিচার বিভাগীয় কর্তারা জানিয়েছিলেন, ‘মানব পাচারের' অভিযোগে ৩০০ জনের বেশি ভারতীয় যাত্রী নিয়ে নিকারাগুয়াগামী বিমানকে কর্তৃপক্ষ আটক করে৷ ফ্রান্সের পুলিশ দুই ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংগঠিত অপরাধ দমনে বিশেষজ্ঞদের একটি ইউনিট মানব পাচার সন্দেহের তদন্ত করছে৷ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷
প্যারিসের প্রসিকিউটর অফিসের বিবৃতি অনুসারে, এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি জানায়, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে রওনা দেয়া ফ্লাইটে যারা ছিলেন, তারা খুব সম্ভবত মানব পাচারের শিকার।
রোমানিয়া ভিত্তিক চার্টার কোম্পানি লিজেন্ড এয়ারলাইন্স দ্বারা পরিচালিত এ-৩৪০ বিমানটি বৃহস্পতিবার পূর্ব ফ্রান্সের ভ্যাট্রি বিমানবন্দরে জ্বালানির জন্য থামে৷ সেখানে তাদের আটক করা হয়।
প্রসিকিউটর অফিস শুক্রবার জানায়, "৩০৩ জন যাত্রী এবং কেবিন ক্রুদের পরিচয়পত্র পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে৷"
বিবৃতিতে যোগ করা হয়েছে, কর্মকর্তারা যাত্রীদের পরীক্ষা করে দেখছেন যে কোন পরিস্থিতিতে বিমানে রওনা দিয়েছিলেন৷ যাত্রীদের ভ্রমণের উদ্দেশ্যও পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
বিমানটিকে আটক করার পর যাত্রীদের প্রথমে সেখানে থাকতে বলা হয়েছিল৷ তারপরে তাদের টার্মিনাল বিল্ডিংয়ে স্থানান্তরিত করা হয়, যেখানে তাদের থাকার জন্য আলাদা বিছানার ব্যবস্থা করা হয়েছিল৷
এক্স-এ (সাবেক টুইটার) একটি বিবৃতিতে ফ্রান্সে ভারতীয় দূতাবাস বলেছিলো, প্যারিসের কর্তৃপক্ষ তাদের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানিয়েছে৷
সেখানে বলা হয়, "খবর পেয়েই দূতাবাসের দল বিমানবন্দরে পৌঁছেছে৷ আমরা পরিস্থিতি তদন্ত করছি এবং যাত্রীদের সুস্থতাও নিশ্চিত করার সব রকম ব্যবস্থা নিয়েছি।"
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বিমানটি সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে উড়েছিল। তবে সন্দেহের ভিত্তিতে এবং সুরক্ষার কারণে ফ্রান্সের বিমানবন্দরে যাত্রা স্থগিত করা হয়। ফ্রান্সের বিচার বিভাগ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
পাচারকারীর টাকা তুলতে ফ্রান্সে মাহমুদের সংগ্রাম
ইউরোপে স্থায়ী হতে ইরাক থেকে প্রথমে সুইডেনে যান মাহমুদ৷ সুইডেনে থাকা হয়নি৷ ফ্রান্স থেকে ব্রিটেনে যাওয়াও হয়ে ওঠেনি টাকার অভাবে৷ এখন চা, স্যান্ডউইচ বিক্রি করে টাকা জমাচ্ছেন মাহমুদ৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: Juan Medina/REUTERS
ভাগ্যগুণে বেঁচে আছেন মাহমুদ
দাওয়ান আনোয়ার মাহমুদ৷ ৩০ বছর৷ কয়েকদিন আগে পাচারকারীকে ১৬০০ পাউন্ড দিয়েছিলেন ফ্রান্স থেকে নৌকায় ব্রিটেনে পৌঁছে দিতে৷ কিন্তু নৌকার পরিস্থিতি দেখে আর সাহস হয়নি৷ ডুবে মরার ভয়ে পাচারকারীকে জানিয়ে দেন এই দফা তিনি যাবেন না৷ না গেলেও টাকা ফেরত পাননি৷ উল্টে পাচারকারীর লোকজন তাকে পিটিয়েছে, মোবাইল কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলেছে৷ তারপর আবার আশায় বুক বেঁধেছেন মাহমুদ৷
ছবি: Juan Medina/REUTERS
অস্থায়ী তাঁবুতে মানবেতর জীবন
গত সপ্তাহে মাহমুদ ছিলেন ফ্রান্সের উত্তরাঞ্চলের দুঁকির্ক অঞ্চলের রেল লাইনের কাছের জঙ্গলে গড়ে তোলা অস্থায়ী তাঁবুতে৷ শীতে এমন জায়গায় বাস করা খুব কঠিন৷ প্রচণ্ড ঠান্ডার সঙ্গে বৃষ্টি যোগ হলে গাছের ডাল, প্লাস্টিকের বোতল ইত্যাদি না পুড়িয়ে আগুন না পোহালে তাঁবুতে বেঁচে থাকা মুশকিল৷
ছবি: Juan Medina/REUTERS
বারবার নতুন ঠিকানায়
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলার পরের দিনই মাহমুদ জানতে পারেন, ফ্রান্সের পুলিশ তাদের এই জায়গা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে৷ সুতরাং আবার যেতে হবে নতুন ঠিকানায়৷ আরেক জায়গায় শুরু হবে অস্তিত্ব রক্ষার অবর্ণনীয় কষ্ট৷
ছবি: Juan Medina/REUTERS
ইরাক থেকে যেভাবে ফ্রান্সে...
১০ বছর আগে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেয়ায় ইরাকের পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল তাকে৷ ছয় মাসের জেল হলো৷ জেলে পুলিশের নির্যাতনে একটা পায়ে স্থায়ী সমস্যা দেখা দিলো৷ ২০১৫ সালে দেশ ছাড়লেন৷ সুইডেনে চলে গেলেন বোনের কাছে৷ ছয় বছর চেষ্টা করেও সেখানে থাকতে পারেননি৷ তার অভিবাসনের আবেদন প্রত্যাখ্য্যান করে সুইডেন সরকার৷
ছবি: Juan Medina/REUTERS
অস্থায়ী তাঁবুতেই বাড়তি আয়
সুইডেনে থাকার সময় কুর্দিদের এক রেস্তোরাঁয় কাজ করতেন মাহমুদ৷ ওই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েই এখন অস্থায়ী তাঁবুতেও বাড়তি আয়ের চেষ্টা করেন৷ স্যান্ডউচ, চা, কাবাব, রুটি, মুরগির কলিজা ইত্যাদি রান্না করে যা আয় হয় তা থেকে কিছু টাকা জমিয়ে রাখেন৷ পাচারকারীকে টাকা দিতে হবে, পাচারকারী তাকে নিরাপদে ব্রিটেনে পৌঁছে দেবে- এই স্বপ্ন স্থায়ী হয়ে গেছে মাহমুদের মনে৷
ছবি: Juan Medina/REUTERS
নিরাপদ যাত্রা ব্যয়বহুল
ব্রিটেনে যাওয়ার জন্য এক পাচারকারীকে ১৬০০ পাউন্ড দিয়েছিলেন মাহমুদ৷ নির্দিষ্ট দিনে গিয়ে দেখেন নৌকায় তিল রাখার জায়গা নেই৷ ছোট নৌকায় ৪৮ তম যাত্রী হওয়ার সাহস হয়নি বলে পিটুনি খেয়ে, মোবাইল হারিয়েও ফিরে এসেছেন মাহমুদ৷ তবে আশা ছাড়েননি৷ ভাবছেন ২৫০০ থেকে ৩০০০ পাউন্ড খরচ করে কম মানুষ নেয়া হয় এমন নৌকায় যাবেন৷ আরেকটু বেশি টাকা জমাতে পারলে যাবেন ট্রাকে৷ ট্রাকে যেতে চাইলে ৪০০০ পাউন্ড দিতে হবে মানবপাচারকারীকে৷
ছবি: Juan Medina/REUTERS
দৈনিক আয়
স্যান্ডউইচ, চা, কাবাব, রুটি ইত্যাদি বিক্রি করে দিনে ৪০ থেকে ৭০ ইউরো আয় করেন মাহমুদ৷ তবে পুরো টাকা সঞ্চয় করতে পারেন না৷ নিজের খাওয়ার খরচ তো আছেই, পাশাপাশি দুজন সহকারীকে প্রতিদিন দিতে হয় ২৫ ইউরো৷
ছবি: Juan Medina/REUTERS
লক্ষ্যে স্থির মাহমুদ
সুইডেনে থাকতে পারেননি৷ ফ্রান্সেও মেলেনি উন্নত জীবনের নিশ্চয়তা৷ তাতে কী! মাহমুদের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য একটাই এবং সেই লক্ষ্যের কথা সরাসরিই জানান সবাইকে, ‘‘আমার কাছে ফ্রান্স বা ইউকে বা জার্মানি বা বেলজিয়াম- সবই সমান৷ আমি এখানে এসেছি নতুন করে জীবন শুরু করতে৷ এখনো তা-ই চাই৷’’