একজন হাই তুললে আশেপাশের লোকজনও হাই তুলতে শুরু করে৷ ঠিক সেভাবেই নাকি স্ট্রেস বা মানসিক চাপও চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে৷ জার্মানির গবেষকরা হাতেনাতে তার প্রমাণ পেয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
আজকের যুগে স্ট্রেস বা মানসিক চাপ মোটেই বিরল নয়৷ ঘরে-বাইরে তার কারণেরও অভাব নেই৷ সংসারে অশান্তি, অফিসে বদরাগী বড়সাহেব, স্কুল-কলেজে পড়ার চাপ – তালিকাটা বেশ লম্বা৷ অতএব স্ট্রেস৷ কেউ চিৎকার চেঁচামেচি জুড়ে দেন, ঝগড়া করেন৷ কেউ বা মুষড়ে পড়েন৷ এর নানা রকম প্রতিক্রিয়া দেখা যায়৷ আশেপাশের লোকজনও সেটা টের পান৷ চাইলেও তাঁরা উদাসীন থাকতে পারেন না৷
আসলে অন্যদের এমন স্ট্রেস-জনিত পরিস্থিতির মধ্যে দেখলে শুধু নিজের মন নয়, শরীরের উপরেও তার ছাপ পড়ে৷ তখন ‘কর্টিসল' নামের এক হরমোন নিসৃত হয়৷ পরোক্ষ এই প্রতিক্রিয়াকে ‘এমপ্যাথেটিক স্ট্রেস' বলা হয়৷
স্ট্রেসে আক্রান্ত? তাহলে প্রয়োজন ওয়েলনেস বা রিল্যাক্সেশন
‘ওয়েলনেস’ বলতে সাধারণত বোঝায় রিল্যাক্স করাকে৷ যেমন স্টিমবাথ, মাসাজ, মাস্ক ইত্যাদি৷ আজকের এই যান্ত্রিক জীবনে যার প্রয়োজন দিনদিন বেড়েই চলেছে৷ আর সে কারণেই ওয়েলনেস শব্দটিও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফিটনেস এবং হ্যাপিনেস – অর্থাৎ ওয়েলনেস
বর্তমান যুগে চাকরিতে নানা সমস্যা, সংসার, সন্তান, পরিবেশ সবকিছু মিলিয়ে জীবনটা যেন যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে৷ যার ফলে স্ট্রেস বা মানসিক চাপের শেষ নেই৷ তাই শরীর এবং মন একসাথে সুস্থ রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ এই চাপের কারণে মানুষের ভেতর বাড়ছে অস্থিরতা৷ আর এই অস্থিরতাকে যেন কিছুটা কমানো যায় এবং পুরোপুরি ভালো বোধ করা যায়, তার জন্য প্রয়োজন ওয়েলনেস৷
ছবি: Fotolia/Kzenon
ওয়েলনেস সেন্টার
গত কয়েক বছরে মানুষের জীবনে স্ট্রেসের মাত্রা যেমন বেড়ে গেছে, ঠিক সেভাবেই জার্মানিতে ওয়েলনেস সেন্টারের সংখ্যাও বেড়ে গেছে৷ যেখানে মাসাজ থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়৷ মানুষ শারীরিক এবং মানসিকভাবে ভালো বোধ করতে চায় এবং কী ভাবে তা সম্ভব, সে ব্যাপারে সহযোগিতা করাই ওয়েলনেস সেন্টারগুলোর কাজ৷
ভালো বোধ করা
‘মানুষ শারীরিক এবং মানসিকভাবে ভালো বোধ করতে চায় এবং কী ভাবে তা সম্ভব, সে ব্যাপারে সহযোগিতা করা এবং সঠিক পথ দেখানোই ওয়েলনেস সেন্টারগুলোর কাজ’ – বলেন বলেন জার্মানির অল্ডেনবুর্গ শহরের ওয়েলনেস অ্যাকাডেমির মার্গিট কেনেমুন্ড৷
ছবি: Madlens Fotozauber/Margit Kennemund
নানা ব্যবস্থা
ওয়েলনেসের জন্য রয়েছে নানা রকম আলো, তেল, রং, সুগন্ধী, মোম, চা, পানীয়-কত কি! আর সংগীত তো রয়েছেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
চাপ মুক্ত
‘‘ওয়েলনেস হচ্ছে স্ট্রেস বা চাপ মুক্ত করার এক পদ্ধতি৷ কী ভাবে সুস্থ ও সুখী থাকা যায়, কী ভাবে মানুষ ভালো বোধ করে তা শেখায়৷
ছবি: shoot4u/Fotolia
জলকেলি
ওয়েলনেসের ক্ষেত্রে পানির ব্যবহার খুবই উপযোগী৷ ছবি দেখেই বোঝা যায় যে এই পরিবেশ কার না ভালো লাগে!
ছবি: Ahr-Resort/Bad Neuenahr-Ahrweiler
জল আর জল
আহ কি আরাম! এভাবে জলের সাথে খেলা শুধু আনন্দই নয় ভীষণ আরাম৷ সপ্তাহান্তে যে কোনো বয়সিদের জন্যই আনন্দদায়ক ৷
ছবি: ISNA
মাসাজ
সারাদিনের কাজের পর এরকম একটি মাসাজ হলে মন্দ হয়না, তাইনা? চকলেট, নানা ধরনের তেল ফুল, ক্রিম – কত রকম মাসাজ৷
ছবি: Fotolia/putilov_denis
ভালো লাগা
ওয়েলনেস অর্থাৎ সবদিক দিয়ে যেন ভালো ফিল করাকেই বোঝায়৷ পায়ের লোম ভালোভাবে পরিষ্কার করলে যে কোনো হালকা পোশাকেই মেয়েদের দেখতে ভালো লাগে৷ কাজেই এখানে ভালো লাগা বা বোধ করাটাই বড় কথা৷
ছবি: picture-alliance/ZB
মাস্ক
ভালো বোধ করা মানে দেখতে ভালো লাগা অবশ্যই৷ তাই সৌন্দর্যচর্চায় মাস্ককে বাদ দেয়া যায়না৷ যার ত্বকে যেরকম মাস্ক স্যুট করে, বা কার কতটা স্ট্রেস সে রকম একটি মাস্ক ব্যবহারের পরে যে কেউ ভালো বোধ করবে৷ অর্থাৎ আয়নায় নিজের চেহারা দেখে ভালো লাগলেই ভালো বোধ হয়৷
ছবি: Fotolia/Valua Vitaly
হালকা খাবার
শরীর এবং মন ভালো রাখার জন্য যত কিছুই করা হোক না কেন, খাবার যদি স্বাস্থ্যকর না হয়, তাহলে বাকি নিয়মকানুনের আর তেমন কোনো মূল্য নেই৷ ফিটনেস এবং হ্যাপিনেসের জন্য চাই অবশ্যই স্বাস্থ্যকর খাবার৷
ছবি: picture-alliance/dpa
11 ছবি1 | 11
জার্মানির লাইপসিশ শহরে মাক্স প্লাঙ্ক ইনস্টিটিউট-এর এক গবেষক দল এ বিষয়ে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছেন৷ ড্রেসডেন প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ও এই প্রকল্পে অংশ নিয়েছে৷ এর আওতায় ১৫১ জন মানুষকে জেনেশুনে এমন পরিস্থিতির মধ্যে ফেলা হয়েছিল, যাতে তাঁদের স্ট্রেস হয়৷ জটিল অঙ্ক থেকে শুরু করে চাকরির ইন্টারভিউ-এর মতো পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁদের৷ দর্শক হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল আরও ২১১ জনকে৷ তাঁদের মধ্যে কয়েকজন আবার পরিচিত, কয়েকজন অপরিচিত৷ বিশেষ আয়নার অপর প্রান্তে বসে অথবা লাইভ ভিডিও সম্প্রচারের মাধ্যমে তাঁরা স্ট্রেস-জনিত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে পেরেছিলেন৷
এই পরীক্ষার সময় দেখা যায় যে, প্রায় ২৬ শতাংশ পর্যবেক্ষকের শরীরে যথেষ্ট মাত্রায় ‘কর্টিসল' নিসৃত হয়েছে৷ পরিচিত মানুষকে স্ট্রেস-এর মধ্যে দেখলে সেই মাত্রা বেড়ে প্রায় ৪০ শতাংশ হয়ে যায়, অপরিচিতদের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা ১০ শতাংশ৷ সরাসরি দেখলে ৩০ শতাংশ এবং ভার্চুয়াল পরিস্থিতির ক্ষেত্রে ২৪ শতাংশ মানুষ পরোক্ষ স্ট্রেস-এ ভোগেন৷ অর্থাৎ টেলিভিশনে কোনো সিরিয়াল বা অনুষ্ঠান দেখেও মনে এমন স্ট্রেস হতে পারে৷ অতএব স্ট্রেস দূরে রাখতে হলে অন্যদের স্ট্রেস থেকেও নিজেকে দূরে রাখতে হবে৷