মন খারাপ আমার-আপনার সকলেরই হয়৷ কিন্তু এই মন খারাপ যখন একটি ‘ক্রনিক’ অসুখ বা মানসিক রোগে রূপ নেয়, বিশেষ করে গর্ভাবস্থায়, তখন তা চিন্তার বিষয় বৈকি৷ সে অবস্থায় ওষুধ খেলে তা বাচ্চার জন্য হতে পারে ক্ষতিকারক৷
বিজ্ঞাপন
গর্ভাবস্থায় বিষন্নতা নতুন কিছু নয়৷ হরমোনগত পরিবর্তনের সঙ্গে গর্ভাবস্থায় মানসিক রোগ বা ‘ডিপ্রেশন' দেখা দিতেই পারে৷ এমনকি সন্তান জন্মের পর জন্মোত্তর বিষন্নতাও দেখা যায় কোনো কোনো মায়ের মধ্যে৷ এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে অনেক মা-ই শক্তিশালী ‘অ্যান্টি ডিপ্রেসান্ট'-এর দ্বারস্থ হন৷ আর সেখানেই দেখা দেয় সমস্যা৷
গর্ভকালীন সময়ে আপনি যদি নিয়মিত এ ধরনের ওষুধ খান, তাহলে আপনার শিশুর ‘অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডার' (এডিএইচডি), অর্থাৎ ‘মনোযোগের অভাব এবং অতি-সক্রিয়তা' হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় বহুগুণ৷ অতীতে এডিএইচডি-র সঙ্গে মূলত জিনগত সম্পর্কের কথা বলা হলেও, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের ‘মলিকিউলার সাইকিয়াট্রি' বিভাগের অধ্যাপক রয় পেরলিস-এর গবেষণায় কিন্তু এমনটাই উঠে এসেছে৷
শৈশবেই উচ্চ রক্তচাপ; অবহেলা নয়
উচ্চ রক্তচাপ শুধু বয়স্কদের অসুখ নয়, শিশু-কিশোরদেরও হয়ে থাকে৷ তাই শিশুদের উচ্চ রক্তচাপকে অবহেলা না করে গুরুত্ব দেওয়া উচিত৷ কারণ তা না হলে তার ফল হতে পারে মারাত্মক৷
ছবি: Fotolia/pete pahham
শিশু ও উচ্চ রক্তচাপ?
‘শিশু ও উচ্চ রক্তচাপ’ –এ দুটো শব্দ যেন একসাথে মানায় না৷ উচ্চ রক্তচাপ যেন শুধু বয়স্কদের অসুখ – এমনটা মনে করেন অনেকেই৷ তবে এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল! বলেন গ্যোটিংগেন শহরের শিশু-কিশোর বিশেষজ্ঞ ও কার্ডিওলজিস্ট (হার্টের ডাক্তার) মার্টিন হুল্পকে-ভেটে৷
ছবি: DW
দেরিতে ধরা পড়ে
ডাক্তার হুল্পকে ভেটের কথায়, ‘‘জার্মানির শিশু-কিশোরদের মধ্যে চার থেকে পাঁচ ভাগেরই উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, তবে তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ধরা পড়ে অনেক দেরিতে৷’’
ছবি: DW/R. Breuer
গুরুত্ব দেওয়া হয় না
মিউনিখ টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসার রেনাটে ওবারহোফার বলেন, ‘‘শিশুদের উচ্চ রক্তচাপকে মোটেই গুরুত্ব দেওয়া হয় না৷ যদিও এর ফলে শিশুদের হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক পর্যন্ত হতে পারে৷ অসুখের দিক দিয়ে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক – এ দুটোই সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে৷’’
ছবি: Alexander Raths/Fotolia.com
স্কুলের স্ট্রেস
আগে শোনা যেত ‘স্ট্রেস’ শুধু বড়দের ক্ষেত্রে প্রয়োজ্য৷ কিন্তু আজকের দিনে সেটা আর ঠিক নয়৷ কারণ বাচ্চাদের স্কুল থকেই শুরু হয়ে যায় প্রতিযোগিতার যুদ্ধ, যার ফলে ওদেরও থাকে প্রচণ্ড মানসিক চাপ৷ আর উচ্চ রক্তচাপের প্রধান কারণই যে হলো মানসিক চাপ!
ছবি: picture-alliance/dpa
খেলাধুলা
এর থেকে বেরিয়ে আসার জন্য প্রয়োজন পড়াশোনা বা স্কুলের অন্যান্য চাপের পাশাপাশি খেলাধুলা, গান-বাজনা বা কোনো হবি থাকা৷ যাতে শিশু, কিশোর-কিশোরীরা তাদের রাগ, দুঃখ, কষ্ট ভুলে গিয়ে মাথাটাকে পুরোপুরি অন্য দিকে ঘোরাতে পারে৷
ছবি: Khaneye Koudak Teheran
খাওয়া-দাওয়া
শিশু-কিশোররা খেতে পছন্দ করে ‘পিৎসা’, তেলে ভাজা ‘ফ্রেঞ্চফ্রাই’ বা এ ধরনের নানা খাবার৷ এ সব খাবারে থাকে প্রচুর তেল এবং লবণ৷ তাছাড়া কফিনসহ এনার্জি ড্রিংক বা মিষ্টি পানীয়ও অল্পবয়সিদের বেজায় পছন্দ৷
ছবি: MEHR
উচ্চ রক্তচাপ সহজে বোঝা যায় না
শিশু-কিশোরদের ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ সেভাবে বোঝা যায় না৷ তবে অনেকের ক্ষেত্রে হঠাৎ করে নাক দিয়ে রক্ত পড়া, মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি হতে দেখা দেয়৷ নিজের সন্তানের এ ধরনের পরিবর্তন দেখলে মা-বাবার সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা দরকার৷
অতিরিক্ত ওজন
অনেক সময় বংশগত ধারাকে উপেক্ষা করার উপায় থাকে না – তা উচ্চ রক্তচাপই হোক বা অতিরিক্ত ওজনের সমস্যাই হোক৷ তাই যাদের মা-বাবার অতিরিক্ত ওজন এবং উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে ছোটবেলা থেকে খাদ্যাভাসের দিকে নজর রাখা ও ব্যায়াম করা প্রয়োজন৷
ছবি: picture alliance/dpa
ধমনীর কাঠিন্য
কার্ডিওলজিস্টরা বলেন, ‘‘উচ্চ রক্তচাপের চেয়েও ধমনীর কাঠিন্য বা সমস্যা থেকে হৃদরোগ হতে পারে৷ এক্ষেত্রে ধমনী আস্তে আস্তে ছোট হয়ে আসে৷ তাছাড়া উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় ধুমপান, ডায়বেটিসসহ অন্যান্য অসুখও৷
ছবি: Fraunhofer MEVIS, Bremen
কিডনি নষ্ট হয়ে যাবার ভয়
উচ্চ রক্তচাপের ফলে অনেকের কিডনি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যেতে পারে৷ এ রকমটা হলে সারা জীবনের জন্য ডায়ালিসিসের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়৷ অথবা নিতে হয় কিডনি প্রতিস্থাপনের মতো ঝুঁকি৷
ছবি: imago/imagebroker
ওষুধ
প্রতিনিয়ত নানা ধরনের ওষুধ সেবনও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়৷ এক্ষেত্রে বলা যেতে পারে ‘হাইপার অ্যাকটিভ’, অর্থাৎ অত্যন্ত চঞ্চল বা অশান্ত ছটফটে বাচ্চাদের কথা৷ বহুক্ষেত্রে তাদের যে সমস্ত ওষুধ দেওয়া হতে থাকে, তা উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রক্তচাপ মাপা প্রয়োজন
‘‘যেসব বাচ্চার কিডনি, ইউরিনারি নালী এবং আয়োডিনের সমস্যা রয়েছে অথবা যারা হার্টে খুঁত নিয়ে জন্মেছে, তাদের ক্ষেত্রে নিয়মিত রক্ত চাপ মাপা প্রয়োজন৷’’ এই পরামর্শ দিয়েছেন জার্মানির শিশু-কিশোর ফেডারেল সমিতির বিশেষজ্ঞ ডা. ভল্ফরাম হার্টমান৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কিছু নিয়ম
নিয়মিত শরীরচর্চা অনেক রোগব্যাধিকে দূরে রাখে৷ তাই শৈশবেই শরীর চর্চা ও সুষম খাওয়া-দাওয়ার প্রয়োজন৷ বিশেষ করে যথেষ্ট কলা, বিভিন্ন বাদাম, আলু ইত্যাদি৷ অন্যদিকে লবণ জাতীয় খাবারকে না বলা দরকার৷ স্ট্রেস এড়িয়ে যোগ ব্যায়াম ও বিনোদনমূলক কোনো ব্যায়াম করাও যেতে পারে৷
ছবি: Fotolia/pete pahham
13 ছবি1 | 13
এডিএইচডি অসুখ হলে শিশুদের মধ্যে অন্যমনস্কতা, অতিরিক্ত চঞ্চলতা বা অতি আবেগের সমস্যা দেখা দেয়৷ এতে শিশুরা অতিরিক্ত মানসিক চাপ, অনিদ্রা, পড়াশোনায় অমনোযোগিতা ইত্যাদি সমস্যায় ভোগে৷ অনেকক্ষেত্রে অন্যান্য আচরণগত সমস্যা, যেমন অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যায়৷ এমনকি কখনো সখনো এডিএইচডি-র ফলে তাদের শারীরিক বিকাশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷
চিন্তার বিষয় এটাই যে, গর্ভধারণের পর কোনো মা যদি ‘অ্যান্টি ডিপ্রেসান্ট' জাতীয় ওষুধ হঠাৎ করে বন্ধ করে দেন, তাহলে এ সমস্যা আরও বাড়তে পারে৷ তবে সাধারণ, নিত্য-নৈমিত্তিক মন খারাপের ক্ষেত্রে ‘অ্যান্টি ডিপ্রেসান্ট'-এর প্রয়োজন হয় না৷ এ রকম ওষুধের প্রয়োজন হয় ‘ক্রনিক ডিপ্রেশন'-এর ক্ষেত্রে৷ মুশকিল হচ্ছে, মনের অসুখ, মন খারাপ বা গর্ভকালীন বিষন্নতা কখন যে মানসিক রোগের আকার ধারণ করে – সেটা বোঝাই সবচেয়ে কঠিন৷ তাই গর্ভাবস্থায় মায়ের মধ্যে মানসিক অসুখের কোনোরকম লক্ষণ শনাক্ত করা গেলে, অবিলম্বে বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া অত্যন্ত জরুরি৷
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে এডিএইচডি যেন একটি সাধারণ রোগে পরিণত হয়েছে৷ দেশটিতে প্রতি বছর ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সের প্রায় ৯ শতাংশ শিশুর মধ্যে ধরা পড়ছে এ রোগ৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, স্কুলগামী শিশুদের মধ্যে ৩-৫ ভাগ শিশুই এডিএইচডি-তে ভুগছে৷
‘রিটালিন' জাতীয় উত্তেজক ওষুধ ব্যবহারে শিশুদের আচরণে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব হলেও, এর ফল হতে পারে দীর্ঘমেয়াদি – এমনটাই ধারণা চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের৷