1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘মানাতে না পারলে আর লকডাউন নয়’

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১ আগস্ট ২০২১

ঈদ উপলক্ষে ও রপ্তানিমুখী কারখানা খুলে দেয়ার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে আর লকডাউনের কার্যকারিতা দেখছেন না করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ৷

মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ফেরিঘাটে রোববার ঢাকামুখী মানুষের ভিড়৷ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS

বাংলাদেশে লকডাউনের মধ্যেই চালু হয়েছে রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা৷ শনিবার শ্রমিকদের কর্মস্থলে ফেরার চরম ভোগান্তির পর ১৬ ঘন্টার জন্য লঞ্চ ও বাস চালু হয়৷ এই পরিস্থিতিতে সংক্রমণ আরো বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির প্রধান৷

শনিবারের ঢাকামুখী জনস্রোত অব্যাহত ছিল রোববারও৷ কারখানা খোলার সিদ্ধান্তের ফলে আগের দিন শ্রমিকরা হেঁটে, ভ্যানে ও রিকশায় করে এসেছেন৷ শ্রমিকদের এই দুর্ভোগের পর তাদের ফেরার জন্য রোববার গণপরিবহণ চালুর ঘোষণা দেয় সরকার৷ সেই সুযোগে লঞ্চ, বাস ও সিটি সার্ভিস চালু হওয়ায় লকডাউনের কড়াকড়ি উঠে যায়৷ পোশাক খাতে ৪০ লাখ শ্রমিক কর্শরত হলেও মোবাইল ফোন অপারেটরদের হিসেবে কোরবানির ঈদে ঢাকার বাইরে গেছেন এক কোটি চার লাখ মানুষ৷ তাদের অনেকে লকডাউন শেষ হওয়ার আগেই ঢাকায় এসেছেন গাদাগাদি করে৷

বাংলাদেশ পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতুল্ল্যাহ বলেন, ‘‘মানুষ তো আসছে৷ বাস-লঞ্চ বন্ধ থাকলেও আসছে৷ তাদের তো আর থামানো যাচেছ না৷ কারাখানা খুললে শ্রমিকরা তো আসবেই৷ তারা ফেরিতে গাদাগাদি করে আসছেন৷ রিকশা-ভ্যানে করে আসছেন৷ স্বাস্থ্যবিধি বলতে কিছু নেই৷ এর চেয়ে বাস চলাচল অব্যাহত থাকলে ৮০ভাগ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানা হতো৷ আর হঠাৎ চালু আর বন্ধের সিদ্ধান্ত দিলে তো হবে না৷ পরিবহণ শ্রমিকরা তো আর বাসে বসে থাকেন না যে নির্দেশের সাথে সাথেই বাস চালু করে দেয়া যায়৷ এ কেমন সিদ্ধান্ত বুঝে উঠতে পারছি না৷’’

তারা স্বতঃস্ফুর্তভাবে এসেছেন: শহিদুল্লাহ আজিম

This browser does not support the audio element.

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের লকডাউনের এই লেজেগোবরে অবস্থার জন্য কার্যত ব্যবসায়ীদের দায়ী করেছেন৷ তিনি রোববার বলেন, ‘‘সরকারে সঙ্গে ব্যবসায়ীদের এরকম কথা ছিলো না৷ ব্যবসায়ীদের অনুরোধে রপ্তানিমুখী শিল্প-কলকারখানা বিধি-নিষেধের আওতামুক্ত করেছে সরকার৷ ব্যবসায়ীরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আশপাশের শ্রমিকদের নিয়ে প্রথমে কারখানা চালু করবেন৷ ঈদের ছুটিতে গ্রামে যাওয়া শ্রমিকরা ৫ আগস্টের পর কাজে যোগ দেবেন৷ এতে কেউ চাকরিচ্যুত হবেন না৷ কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র৷ বাঁধভাঙা জোয়ারে মতো স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে রাজধানীমুখী জনস্রোত৷ এতে করোনা সংক্রমণের হার ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে৷’’

কিন্তু বিজিএমইএ'র সহ-সভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম দাবী করেন ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য সঠিক নয়৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা কাউকে লকডাউনের মধ্যে আসতে চাপ দেইনি৷ যারা এসেছেন তারা স্বতঃস্ফুর্তভাবে এসেছেন৷’’ তিনি জানান, ‘‘রোববার পোশাক কারখানায় ৯০ ভাগের বেশি শ্রমিক উপস্থিত ছিলেন৷ বাকিরা লঞ্চ ও বাস চালুর সুযোগে চলে আসবেন আশা করি৷’’ যারা ঢাকা আসছেন তাদের সবাই তৈরি পোশাক শ্রমিক না উল্লেখ করে তিনি বলেন সেখানে অন্য খাতের শ্রমিক ও পেশার লোকজনও আছেন৷

এদিকে ঈদের বিরতির আগে-পরে দুই দফা লকডাউনেও করোনা সংক্রমণ কমেনি৷ বরং সংক্রমণের হার সার্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে৷ গত ২৪ ঘণ্টার হিসাবে করোনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৯৭ শতাংশে, যা এ পর্যন্ত গড় হারের প্রায় দুই গুণ৷ ১ জুলাই প্রথম দফা লকডাউন শুরুর আগের দিন ৩০ জুন এই হার ছিলো ২৫ দশমিক ১৩ শতাংশ৷ ওইদিন ২৪ ঘণ্টায় মারা যান ১১৫ জন৷ এখন দৈনিক মৃত্যু ২০০-এর উপরে৷ গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ২৩১ জন৷ সারাদেশে এ পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন ২০ হাজার ৯১৬ জন৷ এর মধ্যে গত সপ্তাহেই মারা গেছেন এক হাজার ৪৪৪ জন৷

এমন পরিস্থিতিতে লকডাউনের কার্যকারিতা ও ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে৷ ৫ আগস্টের পর লকডাউন আর থাকবে কীনা তা নিশ্চিত নয়৷ তবে বিধিনিষেধ থাকছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন৷

আমি ব্যাক্তিগতভাবে আর লকডাউনের পক্ষে নই: ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ

This browser does not support the audio element.

সার্বিক পরিস্থিতি দেখে লকডাউন ও করোনা পরিস্থিতি নিয়ে রীতিমত হতাশা প্রকাশ করেছেন করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ৷ তিনি বলেন, ‘‘১ জুলাই থেকে ১৪ দিনের লকডাউনে সংক্রমণ কমে আসছিল৷ আমরা তখন আরও ১০ দিন লকডাউনের সুপারিশ করেছিলাম৷ কিন্তু তা না করে ঈদে লকডাউন তুলে দেয়া হলো৷ ফলে সংক্রমণকে যে আটকানো হয়েছিলো তা আবার খুলে গেল৷ সংক্রমণ বাড়ল৷ দ্বিতীয় দফায় এবার পোশাক কর্মীদের গাদাগাদি করে যেভাবে ঢাকা আনা হলো তাতে আর কিছুই থাকলো না৷ সংক্রমণ এখন আরো বেড়ে যাবে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘আমি ব্যক্তিগতভাবে আর লকডাউনের পক্ষে না৷ এভাবে যদি প্রশাসন লকডাউন না মানাতে পারে তাহলে মনে হয় আর লককডাউন করাটা ঠিক হবে না৷ তা না করে বিধিনিষেধগুলো মানানো জরুরি৷ এখানে কোন ছাড় দেয়া যাবে না৷’’

তবে এই বিশেষজ্ঞ আরও মনে করেন, এ অবস্থায় অফিস খুললেও বেশিরভাগ মানুষের ঘরে থেকে কাজ করা এবং গণপরিবহণ, দোকান, কলকারখানায় স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে৷ দ্বিতীয়ত, প্রচুর পরীক্ষা করে তার ভিত্তিতে আইসোলেশন ও কোয়ারান্টিনের বিষয়গুলোতে জোর দিতে হবে৷ তৃতীয়ত, মাসে এক থেকে দেড় কোটি টিকা দিতে হবে৷ এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে পারলে লকডাউনের প্রয়োজন নেই৷

তবে এসব বিষয়ে জাতীয় কারিগরি বিশেষজ্ঞ কমিটির আরো দুই দিন পর্যবেক্ষেণ করে সরকারকে তাদের মতামত জানাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি৷ চলমান লকডাউন শেষ হবে ৫ আগস্ট৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ