মানা হলো আরো দাবি, আংশিকভাবে কাজে ফিরছেন চিকিৎসকরা
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
শনিবার থেকে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে জরুরি পরিষেবা বিভাগে কাজে যোগ দেবেন জুনিয়র ডাক্তাররা।
বিজ্ঞাপন
শুক্রবারই তারা বিধাননগরে স্বাস্থ্যভবনের কাছ থেকে অবস্থান-বিক্ষোভে ইতি টানবেন। জুনিয়র ডাক্তাররা জানিয়েছেন, শুক্রবার মিছিল করে তারা নিজেদের জায়গায় ফিরে যাবেন। তারপর নিজের নিজের হাসপাতালে গিয়ে বিভাগ-ভিত্তিক তালিকা তৈরি করবেন। যে সব জায়গায় তাদের কাজে যোগ দেয়া খুব জরুরি, সেখানে তারা কাজ শুরু করবেন। তারা এখনই বর্হিবিভাগ ও পূর্ব পরিকল্পিত অস্ত্রোপচারে যোগ দেবেন না।
আন্দোলন চলবে
আন্দোলনকারীদের তরফে দেবাশিস হালদার বলেছেন, তারা আন্দোলনের রাস্তা থেকে সরে আসছেন না। দরকার হলে তারা আবার সম্পূর্ণ কর্মবিরতিতে যাবেন। ২৭ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের শুনানির দিকে নজর থাকবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। দাবিপূরণ না হলে তারা আবার কর্মবিরতিতে যাবেন।
অনিকেত হালদার বলেছেন, অভয়ার ন্যায়বিচার ও হাসপাতালে ভয়মুক্ত পরিবেশের জন্য তাদের আন্দোলন চলতে থাকবে।
আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, রাজ্যের অনেক এলাকা বন্যার জলের তলায় চলে গেছে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে বন্যা কবলিত এলাকায় বিশেষ স্বাস্থ্য শিবির খুলবে ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট। সুপ্রিম কোর্টে তাদের আইনি লড়াই চলবে। তেমনই তারা রাজপথে নেমে প্রতিবাদও জানাবেন।
নবান্ন থেকে ফিরে কীভাবে প্রতিবাদ করে রাত কাটালেন জুনিয়র ডাক্তাররা
দাবি ছিল, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের লাইভ স্ট্রিমিং করতে হবে। সরকার মানেনি। বৈঠক হয়নি। বিক্ষোভে ডাক্তাররা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বিক্ষোভে ফিরলেন প্রতিনিধিরা
দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তারা দাঁড়িয়ে ছিলেন নবান্ন সভাঘরের সামনে। ঢোকার জন্য নাম লিখে সই করেছিলেন। কিন্তু সরকার বৈঠকের লাইভ স্ট্রিমিংয়ের দাবি না মানায় তারা আর ভিতরে ঢোকেননি। বাইরে অপেক্ষা করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী নবান্ন থেকে চলে যাওয়ার পর তারা আবার বিধাননগরে স্বাস্থ্যভবনের সামনে প্রতিবাদের জায়গায় ফিরলেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
'দরকার হলে আরো ৩৩ দিন রাস্তায় থাকব'
বিক্ষোভস্থলে ফিরে এসে সাংবাদিকদের কাছে জুনিয়র ডাক্তাররা বললেন, ''আমরা ৩৩ দিন ধরে আন্দোলন করছি। দরকার হলে আরো ৩৩ দিন রাস্তায় থেকে আন্দোলন করব। আমরা চেয়ার চাই না। বিচার চাই।''
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ভরসা রেখেই
জুনিয়র ডাক্তাররা জানিয়েছেন, ''আমরা মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারের উপর ভরসা রেখেই নবান্ন গেছিলাম। আমরা বিচার চাই। আমরা চাই, এরকম ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে আর না হয় তার নিশ্চয়তা। আমরা চাই, যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, যারা ঘটনা ধামাচাপা দিতে চেয়েছিলেন, তাদের শাস্তি দিতে হবে।''
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কখনো গান
তারপর রাতজুড়ে চললো প্রতিবাদ। গান হয়ে উঠলো সেই প্রতিবাদের হাতিয়ার। একটা গান শেষ হচ্ছে, তারপর শুরু হচ্ছে আরেকটা গান। এই গান উজ্জীবীত করে, এই গান মন-প্রাণকে চাঙ্গা রাখে। এই গান অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে শেখায় বলে মনে করেন জুনিয়র ডাক্তাররা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কখনো নাটক
কখনো আবার নাটক করছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। পথনাটক। রঙ্গব্যাঙ্গের হুল থাকে সেই নাটকে। সেই নাটকে তৈরি হয় প্রতিবাদের ভাষা। এ সবই প্রতিবাদকারীদের বিক্ষোভে বাড়তি প্রেরণা জোগায় বলে তারা জানিয়েছেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ঢাকের তালে
কখনো আবার ডাকের তালে গানের সঙ্গে শুরু হয় নাচ। সাধারণ নাচ নয়। প্রতিবাদের নাচ। অন্যায়, অবিচার ঝেঁটিয়ে বিদায় করার জন্য নাচ। নিজেদের শপথ মেনে চলার জন্য নাচ।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
সারারাত ধরে
এভাবেই প্রতিবাদ চলতে থাকে। কেউ ডাফলি বাজান। কেউ গিটার। রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করা জুনিয়র ডাক্তাররা অপেক্ষা করতে থাকেন, রাত ভোর হয়ে সূর্য ওঠার জন্য, তাদের ন্যায় পাওয়ার প্রহরের জন্য।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
পাশে কারা?
সিনিয়র ডাক্তারদের অনেকে প্রতিবাদে এসে জানিয়ে দিয়েছেন, জুনিয়র ডাক্তাররা কাজে যোগ না দিলেও শাস্তি দেয়া যাবে না। যদি দেয়া হয় তাহলে তারাও প্রতিবাদে নামবেন। জুনিয়র ডাক্তারদের সর্বভারতীয় সংগঠনগুলি জানিয়ে দিয়েছে, কাউকে শাস্তি দেয়া হলে, তারা আবার আন্দোলনের রাস্তায় যাবে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
8 ছবি1 | 8
আরো দাবি মানা হলো
জুনিয়র ডাক্তারদের আরো কিছু দাবি মেনেছে রাজ্য সরকার। মুখ্যসচিবের বৈঠকের পর জুনিয়র ডাক্তাররা লিখিতভাবে তাদের দাবি ই-মেইল করে জানিয়েছিলেন। রাজ্য সরকার বিকেলে তার জবাব দিয়েছে।
স্বাস্থ্যসচিব সেখানে জানিয়েছেন, ডিউটি রুম, শৌচাগার, পানীয় জল ও সিসিটিভি নিয়ে মোডিক্যাল কলেজ সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবে। মেডিক্যাল কলেজগুলির নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখার জন্য সাবেক ডিজি সুরজিৎ কর পুরকায়স্থকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কাজের জায়গায় যৌন নিগ্রহের অভিযোগ-সহ সব কমিটি বহাল রাখা হবে।
স্বাস্থ্যসচিব জানিয়েছেন, পর্যাপ্ত নারী পুলিশের ব্যবস্থা করা হবে। রাতে স্থানীয় থানার মোবাইল টিম থাকবে। সব স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে বিপদ সংকেত বা প্যানিক অ্যালার্মের ব্যবস্থা করা হবে। কোথায় কতগুলি শয্যা খালি আছে কেন্দ্রীয় স্তরে তা নজরে রাখা হবে এবং ডিজিটাল বোর্ডে সেই তথ্য থাকবে।
রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, চিকিৎসক, নার্সদের খালি পদ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পূরণ করা হবে। রোগী বা তাদের আত্মীয়দের কোনো অভিযোগ থাকলে তা দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা হবে।