রয়েল বেঙ্গল টাইগার সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সাফল্য সত্ত্বেও ভারতে চিতাবাঘের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে৷ মানুষখেকো চিতাও অনেক ক্ষেত্রে মানুষের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে৷ তাদের সুরক্ষার লক্ষ্যে বিচ্ছিন্ন কিছু উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
বনের চিতার মানুষ শিকার
06:49
মানুষের উপর চিতার হামলা
৬ বছর বয়সি ছেলেটি তার দাদি ও চাচির জিম্মায় বাসায় ছিল৷ কিন্তু ক্ষুধার্ত এক চিতাবাঘ তার পিছু নিয়েছিল৷ কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সব শেষ হয়ে গেল৷ সেই ভয়ঙ্কর দৃশ্যের সাক্ষী ছিলেন দীপা দেবী৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমরা বাইরে চুলা জ্বালিয়েছিলাম৷ আমি কড়া ও রান্নার তেল নিয়ে এসেছিলাম৷ বাচ্চাটা আমাদের সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল৷ আমার শাশুড়িও সেখানে ছিলেন৷ চিতাবাঘ অন্য দিক থেকে এলো৷ দেখলাম সেটি কীভাবে বাচ্চাটার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো৷ আমরা বিহ্বল হয়ে পড়েছিলাম৷ কয়েক সেকেন্ড পর নিজেদের সামলে নিয়ে ‘চিতাবাঘ, চিতাবাঘ' বলে চিৎকার শুরু করলাম৷ তারপর সবাই মিলে নীচে ধেয়ে গেলাম৷''
যে ছবিতে ধরা পড়েছে প্রকৃতির শক্তি
এ বছরের ‘ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার অফ দ্য ইয়ার’ এর পুরস্কার জিতেছেন টিম ল্যাম্যান৷ এর জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়েছে তাঁকে৷ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে আরও যেসব ছবি জিতেছে সেগুলো দেখলে আপনি বিস্মিত অথবা দুঃখ ভারাক্রান্ত হতে পারেন৷
হলদে সবুজ ওরাংওটাং
এই একটি ছবিতে ৫০ হাজার প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলেছেন টিম ল্যাম্যান৷ আর জিতে নিয়েছেন ‘ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফি অফ দ্য ইয়ারের’ সেরা পুরস্কার৷ ইন্দোনেশিয়ার রেইন ফরেস্টে বিলুপ্ত হতে যাওয়া বোর্নিয়ান ওরাংওটাংয়ের ছবি এটি৷ বেশ কিছুদিন চেষ্টা করে অনেক উঁচু এই গাছটিতে উঠে ক্যামেরা সেট করতে হয়েছে ল্যাম্যানকে৷ একসাথে ৬ টি ছবি তুলেছেন তিনি৷ ছবিগুলোর মাধ্যমে বিলুপ্ত হতে যাওয়া প্রাণিটির গল্প জানিয়েছেন৷
কাক আর চাঁদ
মাত্র ১৬ বছরের ব্রিটিশ আলোকচিত্র শিল্পী গিডেয়ন নাইট জিতে নিয়েছেন ‘ইয়ং ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার অফ দ্য ইয়ারের’ খেতাব৷ তার ছবিতে তেমন বিশেষত্ব না থাকলেও রোমান্টিক ছবিটিতে একটি রহস্য লুকিয়ে আছে, যাতে রূপকথার আভাস পাওয়া যায়৷
প্যাঙ্গোলিন
আলোকচিত্রী পল হিল্টনের এই ছবি তোলার সময় এ দৃশ্য সহ্য করতে নিশ্চয়ই কষ্ট হয়েছিল৷ যে কাউকে এ ছবি আহত করবে৷ ৪ হাজার মৃত প্যাঙ্গোলিন জমা করে রাখা হয়েছে এখানে৷ চীন ও ভিয়েতনামে এই মাংসের খুব চাহিদা৷ আর তাদের চামড়া ও হাড় ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়৷ এই প্রাণীগুলোর আটটি প্রজাতিই রয়েছে হুমকির মুখে৷
স্ত্রী ফুল
আলোকচিত্রী ভালতের বিনোতোসের ইটালির উত্তরাঞ্চলে নিজের বাড়িন উঠোনে এই হেজেল নাট বা হেজেল বাদামের গাছ৷ একটি গাছে একসাথে পুরুষ ও স্ত্রী ফুল ফোটে৷ সবচেয়ে কষ্টসাধ্য হলো বাতাসে যখন ফুলগুলো দোলে তখন স্ত্রী ফুলের (লাল রঙের) ছবি তোলা৷
শহরের উপকণ্ঠে চিতাবাঘ
মুম্বইয়ের উপকণ্ঠে সঞ্জয় গান্ধী জাতীয় উদ্যানের কাছে একটি সরু গলিতে রাতের বেলায় এই চিতাবাঘটির দেখা মিলেছিল৷ খাদ্যের খোঁজে বেড়িয়েছিল এটি৷ এই ছবিটি তুলেছেন নয়ন খনলকার৷ ‘আর্বান’ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছে এটি৷
পেঁচার শোক
সুইডিশ আলোকচিত্রী ম্যাটস অ্যান্ডারসন ‘সাদা-কালো’ ক্যাটাগরিতে পুরস্কারটি জিতেছেন এই ছবির জন্য৷ বসন্তের দিনগুলোতে অ্যান্ডারসন বনের মধ্যে হাঁটতে যেতেন৷ প্রায়ই দু’টো পেঁচা সঙ্গী হতো তাঁর৷ এর মধ্যে একটি একদিন মারা গেলো৷ অন্য পেঁচাটির দুঃখ তাঁকে স্পর্শ করলো৷ এই সাদা-কালো ছবির মাধ্যমে সেই শোককেই ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন তিনি৷
স্ন্যাপার পার্টি
প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমাঞ্চলে পূর্ণিমার সময় হাজারো ‘টু স্পট’ লাল স্ন্যাপার ডিম ছাড়ার জন্য এভাবে ঝাঁক বেঁধে ঘুরতে থাকে৷ আলো-আঁধারিতে শুক্রানু আর ডিম্বানু পানিতে খেলা করে৷ টনি উ এই ছবিটি তুলেছেন, যা জিতে নিয়েছে, ‘আন্ডার ওয়াটার’ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার৷
স্টারফিসের সঙ্গে খেলা
ক্যালিফোর্নিয়া উপসাগরে এই ছোট্ট সিন্ধু ঘোটকটিকে একটি স্টারফিসের সঙ্গে খেলতে দেখা যাচ্ছে৷ লুই হাভিয়ের সান্দোভাল এই ছবির জন্য ‘ইমপ্রেসন’ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার জিতেছেন৷
8 ছবি1 | 8
চিতাবাঘটি ছেলেটিকে মুখে নিয়ে খাদের মধ্যে চলে গেল৷ নিহত ছেলেটির চাচা পূরণ সিং সেই ঘটনার কথা স্মরণ করে বলেন, ‘‘চিতাবাঘের হামলার পর ছেলেটিকে পরে প্রাণহীন অবস্থায় পাওয়া গেল৷ আমি তখন বাজারে ছিলাম৷ কয়েকজন তরুণ তার দেহ উপরে নিয়ে আসে৷ নিজের কোলে নিয়ে দেখলাম ছেলেটির দেহ অসাড় রয়েছে৷''
সেই চিতাবাঘ ৩ দিন পর একই গ্রামে প্রবেশ করেছিল৷ এবার তার লক্ষ্য ছিল ১৫ বছরের একটি কিশোর৷ নিহত ছেলেটির চাচা বলেন, ‘‘চিতাবাঘ ছেলেটিকে তাড়া করেছিল৷ ছেলেটি টের পেয়ে দৌড়াতে শুরু করে৷ বাকিদের চিৎকার-চেঁচামেচিতে ভয় পেয়ে চিতা পালিয়ে যায়৷ দৌড়ানোর সময় ছেলেটি পড়ে যায়৷''
চিতা ধরার প্রচেষ্টা
জীবিত অবস্থায় চিতা ধরার প্রাথমিক প্রচেষ্টা হিসেবে এমন খাঁচা রয়েছে৷ তবে সাধারণত অনভিজ্ঞ চিতাগুলিই সেই ফাঁদে ধরা পড়ে৷ খাঁচায় বন্দি চিতাবাঘগুলিকে পরে ছেড়ে দেওয়া হবে৷ তবে মানুষখেকো চিতাবাঘ সাধারণত এমন ফাঁদে পা দেয় না৷ ৩-৪ জন নিহত হবার পর লকপট সিং রাওয়াতের মতো পেশাদারী শিকারীর ডাক পড়ে৷
রাওয়াত এখনো পর্যন্ত গুলি করে ৫৩টি মানুষখেকো বাঘ মেরেছেন৷ তার মধ্যে ৫১টি ছিল চিতাবাঘ ও ২টি সাধারণ বাঘ৷ প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক হিসেবে বাঘ সম্পর্কে তাঁর ভালই জ্ঞান রয়েছে৷ রাওয়াত মনে করেন, ‘‘চিতাবাঘ মানুষখেকো হয়ে উঠলে তার আচরণ বদলে যায়৷ প্রথমত সেটি সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৮টার মধ্যে মানুষের বসতিতে হানা দেয়৷ সাধারণ চিতাবাঘ রাত ১১টা নাগাদ এসে ভোর ৩টা নাগাদ চলে যায়৷ দ্বিতীয়ত মানুষখেকো মানুষকে ভয় পায় না, কারণ মানুষই তার শিকার হয়ে ওঠে৷''
চিতাবাঘ-মানুষের সংঘাত
মানুষ ও চিতার মধ্যে সংঘাত প্রায় প্রতিদিন টের পাওয়া যায়৷ এখানে প্রতি বছর চিতার হামলায় কমপক্ষে ২৪ জন মানুষ প্রাণ হারায়৷ চিতাদের জন্য তার পরিণামও হয় ভয়ঙ্কর৷ গত দুই দশকে একশোরও বেশি চিতাবাঘকে মানুষখেকো ঘোষণা করা হয়েছে৷ প্রায় প্রত্যেকটিকে গুলি করে মারা হয়েছে৷ কিন্তু এর জন্য কি চিতাবাঘ দায়ী? লকপথ সিং রাওয়াত এই পরিস্থিতির প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, ‘‘পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হলে আমাদের চিতাবাঘেরও প্রয়োজন রয়েছে৷ ভারসাম্য বজায় রাখতে তাদেরও ভূমিকা রয়েছে৷ পরিবেশগত ভারসাম্যেও তাদের অবদান রয়েছে. তাই না? এমন সুন্দর প্রাণীকে গুলি করে আমার সত্যি দুঃখ হয়৷ তাদের বাসভূমি, খাদ্যশৃঙ্খল ধ্বংস করে মানুষই এই ট্র্যাজেডি সৃষ্টি করেছে৷ আমরা জঙ্গলে প্রায় সব কিছু ধ্বংস করে দিয়েছি৷ তারপর ক্ষুধার তাড়নায় চিতা কোনো শিশুর উপর হামলা করলে আমরা তাকে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি দেই৷ এটা মোটেই ন্যায্য নয়৷ আমরা ভুল করি, অথচ চিতার শাস্তি হয়৷''
সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী
বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শ্বাসমূলীয় বনাঞ্চল সুন্দরবন৷ এই বনের জলে-স্থলে বাস করে নানা রকম বন্যপ্রাণী৷ সুন্দরবনের উল্লেখযোগ্য কিছু বন্যপ্রাণীর তথ্য থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
নানা রকম বন্যপ্রাণী
সুন্দরবনে আছে প্রায় ৩২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৮ প্রজাতির উভচর, ৩২০ প্রজাতির আবাসিক ও পরিযায়ী পাখি আর প্রায় ৪০০ প্রজাতির মাছ৷ এছাড়া অগণিত কীটপতঙ্গও আছে এ বনে৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
বিশেষ বৈশিষ্ট্য
সুন্দরবনের প্রাণিদের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এদের প্রত্যেকেই সাঁতার কিংবা উড়তে সক্ষম৷ দুটির কোনো একটি বৈশিষ্ট্য না থাকলে সে প্রাণী সুন্দরবনে বেঁচে থাকতে পারেনা৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
বাংলা বাঘ
সুন্দরবেনের প্রধান পশু বেঙ্গল টাইগার বা বাংলার বাঘ৷ বাংলাদেশের জাতীয় পশুও এটি৷ সুন্দরবনের অতন্দ্র প্রহরী এ প্রাণীটিই এর জীববৈচিত্র্য, খাদ্য শৃঙ্খল ও পরিবেশ চক্রের প্রধান নিয়ন্ত্রক৷ অত্যন্ত বিপন্ন একটি প্রাণী হিসেবে বাঘ বেঁচে আছে আমাদের সুন্দরবনে৷ ২০১৫ সালে বন বিভাগ ক্যামেরা পদ্ধতিতে গণনা করে সুন্দরবনে ১০৬টি বাঘের সন্ধান পায়৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
চিত্রা হরিণ
সুন্দরবনে সবচেয়ে বেশি যে প্রাণীটি দেখা যায় তা হলো চিত্রা হরিণ৷ সুন্দরবনের সব জায়গাতেই দলে দলে চিত্রা হরিণ দেখা যায়৷ স্ত্রী চিত্রা হরিণের কোনো শিং নেই তবে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ চিত্রা হরিণের তিন শাখা বিশিষ্ট শিং থাকে৷ চিত্রা হরিণ বাঘের সবচেয়ে প্রিয় খাবার৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
মায়া হরিণ
সুন্দরবনে খুবই কম পরিমাণে আছে মায়া হরিণ৷ দেখতে অনেকটা ছাগলের মতো বলে অনেকে একে বন ছাগলও বলে থাকে৷ গাঢ় বাদামি রংয়ের এ হরিণ বনের ভেতরে একা চলতে ভালোবাসে৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
বানর
সুন্দরবনে প্রাণীদের তালিকায় হরিণের পরই বানরের স্থান৷ সুন্দরবনে এরা হরিণের সঙ্গে সহাবস্থান করে থাকে৷ এজন্য হরিণকে বানরের সুহৃদও বলা হয়৷ বাঘের আগমনের খবরও হরিণকে দেয় বানর৷ সুন্দরবনের গাছে ডালেই তাদের বসবাস৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
বন্য শুকর
সুন্দরবনের শুকর আকারে বেশ বড়৷ কালো ও লাল মিশ্রিত গায়ের রং৷ এসব বন্য শুকর দেখতে অনেকটা ভল্লুকের মতো৷ অনেকটা শান্ত স্বভাবের প্রাণি হলেও দাঁতাল পুরুষ বন্য শুকর খুবই হিংস্র স্বভাবের হয়৷ হরিণের পরেই শুকর বাঘের প্রিয় খাবার৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
উদ্বিড়াল
উদ্বিড়াল বা ভোঁদড় দেখতে অনেকটা বেজির মতো৷ এদের গায়ের রং কালচে সাদা৷ সুন্দরবনের খালের পাড়ে এদের বিচরণ দেখা যায়৷ পানির মধ্যে ডুব দিয়ে এরা সহজেই মাছ শিকার করতে পারে৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
লোনা পানির কুমির
সুন্দরবনে সরীসৃপ প্রজাতির সবচেয়ে বৃহৎ সদস্য কুমির৷ সাধারণত এরা ৫-৭ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে৷ সারা বছর গভীর পানিতে থাকলেও বেশি শীতের রৌদ্রময় দিনে খালের চরে এদের রোদ পোহাতে দেখা যায়৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
গুই সাপ
গুই সাপ দেখতে অনেকটা কুমিরের মতো৷ একটি পূর্ণবয়স্ক গুইসাপের ওজন পাঁচ থেকে ছয় কেজি পর্যন্ত হয়৷ এরা গড়ে লম্বায় এক মিটার পর্যন্ত হয়৷ এদের জিহ্বা সাপের জিহ্বার মতো লম্বা৷ চোখ উজ্জ্বল ও মাঝারি৷ এরা খুব দ্রুত গাছে উঠতে, পানিতে সাঁতরাতে ও ডাঙায় চলতে পারে৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
সাপ
নানা রকম সাপ রয়েছে সুন্দরবনে৷ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অজগর, সঙ্খচুড়, গোখরা, বেড়া, ফনিমনসা, গেছো সাপ ইত্যাদি৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
ডলফিন
সুন্দরবনের নদীতে দেখা যায় দুই প্রজাতির ডলফিন৷ এর একটি শুশুক এবং অন্যটি ইরাবতি৷ সুন্দরবনের নদী ও খালের মোহনায় এদের দেখা যায়৷ তবে সাম্প্রতিক সময়ে সুন্দরবনের নদীগুলো দিয়ে মালবাহী জাহাজ চলাচল করায় বিপন্ন এ প্রাণীটির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
নানান পাখি
সুন্দরবনকে পাখির স্বর্গরাজ্য বলা যায়৷ খাদ্যের প্রাচুর্য, অফুরন্ত গাছ আর জনমানবহীন পরিবেশের কারণে পাখিদের কাছে সুন্দরবন খুবই নিরাপদ আশ্রয়স্থল৷ এ বনের অধিবাসী ৪০০ প্রজাতির পাখির মধ্যে ৩২০ প্রজাতির স্থানীয় বা আবাসিক, আর ৫০ প্রজাতিরও বেশি অনাবাসিক বা পরিযায়ী৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
প্রজাপতি
সুন্দরবনে দেখা যায় নানান রংবেরংয়ের প্রজাপতি৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
14 ছবি1 | 14
পরিবেশ বিপর্যয়ের পরিণাম
প্রত্যেক বছর গ্রীষ্মে হিমালয়ের কোলে উত্তরাখণ্ড রাজ্যে প্রায় ৩,০০০ দাবানলের ঘটনা শনাক্ত করা হয়৷ আগুনের ফলে পাইন বনের নাজুক ইকোসিস্টেম ধ্বংস হয়ে যায়৷ জঙ্গলের ইতিহাসবিদ অজয় রাওয়াত এমন ঘটনার মারাত্মক পরিণতি তুলে ধরেন৷ তাঁর মতে, ‘‘জঙ্গলের ইকোসিস্টেমের প্রসঙ্গ তুললে মনে রাখতে হবে যে গাছপালার প্রয়োজন রয়েছে৷ সঙ্গে ছোট গাছ, ঝোপঝাড়, জংলি ফুল ও ফলের গাছও থাকতে হবে৷ কিন্তু সে সব উধাও হয়ে যাচ্ছে, শুধু গাছ অবশিষ্ট রয়েছে৷ মাটির উপরের স্তরের উদ্ভিদ আর আগের মতো না থাকায় ছোট প্রাণীদের লুকানো বা বাসা বাধাঁর জায়গা হারিয়ে যাচ্ছে৷ এমন ছোট প্রাণী না থাকলে প্যান্থার কী করবে? সেটি গ্রামের দিকে গিয়ে গরু, মোষ, কুকুরের মতো গৃহপালিত প্রাণী শিকার করবে৷''
এই পাহাড়েও সেই সমস্যা দেখা যাচ্ছে৷ চিতাবাঘ সম্পর্কে প্রায় সবারই প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা রয়েছে৷ অত্যন্ত দক্ষ শিকারি হিসেবে পরিচিত পূর্ণবয়স্ক চিতার দিনে ৫ থেকে ৬ কিলো মাংসের চাহিদা থাকে৷ চিতাবাঘ এক দিনের বেশি ক্ষুধা চেপে রাখতে পারে না৷ বাগেশ্বর জেলার বাসিন্দা রমেশ কান্ডপাল চিতাবাঘের হামলার একটি ঘটনা সম্পর্কে বলেন, ‘‘চাষের জমিতে ঘাসের মাঠ দেখে একটি গরু চরতে এসেছিল৷ সেটা ছিল সন্ধ্যার সময়৷ চিতাবাঘ গরুর উপর হামলা চালিয়ে সেটিকে টেনে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে খেয়ে নেয়৷ এমন ঘটনা আরও ঘটবে৷ কয়েকদিন পর চিতাটি অন্য কাউকে মেরে ফেলবে৷ চিতার ভয় সবসময়ে রয়েছে৷''
রাওয়াত প্রায়ই ছাত্রছাত্রী ও নারীদের জন্য সেমিনার ও সচেতনতা কর্মসূচির আয়োজন করেন৷ তিনি চিতাবাঘ ও মানুষ – দুই পক্ষেরই সুরক্ষা চান৷
এই পাহাড়ের মানুষ কয়েক শতাব্দী ধরে চিতাবাঘের সঙ্গে ঘর করছে৷ কিন্তু মানুষের মনে এমন দুশ্চিন্তা এর আগে কখনো দেখা যায় নি৷ বাচ্চারা আর নিশ্চিন্তে খেলাধুলা করতে পারে না৷ সবসময়ে তাদের নজরদারি ও সুরক্ষার প্রয়োজন হয়৷
নিঃসঙ্গ চিতাবাঘেরও সুরক্ষার প্রয়োজন৷ এখনো পর্যন্ত চিতাবাঘ সংরক্ষণের কোনো পরিকল্পনা নেই৷ শুধু কত সংখ্যক চিতাবাঘ প্রতিদিন তাদের বিচরণক্ষেত্র ও জীবন হারাচ্ছে, সেই সংখ্যা জানা যায়৷