মাধ্যাকর্ষণহীনতার অনুভূতি একদিকে জীবনের স্মরণীয় ঘটনার মধ্যে পড়ে৷ অন্যদিকে সেই অবস্থায় মানুষের উপর বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে অনেক মূল্যবান তথ্য সংগ্রহ করা যায়, যা চিকিৎসাশাস্ত্র সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজে লাগে৷
বিজ্ঞাপন
পরিকল্পিত পরীক্ষার কাউন্টডাউন চলছে৷ অংশগ্রহণকারীরা মাথায় ইলেকট্রোড লাগানো টুপি পরেছেন৷ প্রথমে শান্ত অবস্থায় তাদের মস্তিষ্কের তরঙ্গ রেকর্ড করা হয়৷ তবে এমন অবস্থায় গবেষক ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের সবকিছু সামলাতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে৷ পরের ধাপে তাদের স্ট্রেস টেস্টে পাশ করতে হবে৷ মাধ্যাকর্ষণহীনতার কারণে মাঝেমধ্যে শরীরে অংশগুলির মধ্যে সমন্বয়ে ভুল হয়৷ তবে একজন মহাকাশচারীকে সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়৷
স্টেফান শ্নাইডার এই প্রকল্প পরিচালনা করছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘বিমান রওয়ানা হলেই এই আসনে আমাকে বসে তথ্য রেকর্ড করতে হয়৷ এখানে নানা রকম অ্যামপ্লিফায়ার রয়েছে৷ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী অন্যদিকে সাদা অংশে বসে থাকে৷ দ্বিতীয় একজন অপারেটর তার কাছে থাকে, শূন্যে দোলায়৷ সব তথ্য ওয়াইফাইয়ের সাহায্যে পাঠানো হয়৷ অর্থাৎ অংশগ্রহণকারীরা পুরোপুরি মুক্ত অবস্থায় শূন্যে ভাসতে পারেন৷ আইএসএস-এর মহাকাশচারীদের মতো অভিজ্ঞতা হয়৷''
মাত্র দুই মিনিট পর মাধ্যাকর্ষণহীনতার দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হচ্ছে৷ যাত্রীরা সব মিলিয়ে ৩০ বার এই অভিজ্ঞতার স্বাদ পাচ্ছেন৷ কল্পবিজ্ঞান কাহিনির মতো পেশির অনুশীলন চলছে, তবে এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের স্বার্থে৷
২০১৬ সালে বিজ্ঞানের কিছু অভিনব ও বিস্ময়কর উদ্ভাবন
চলতি বছর বিজ্ঞানীরা এমন কিছু আবিষ্কার করেছেন, যা দীর্ঘদিন মানুষের উপকারে আসবে, মানুষকে দীর্ঘজীবন লাভে সহায়তা করবে৷ আবিষ্কারগুলো সম্পর্কে জেনে নিন ছবিঘর থেকে৷
ছবি: imago/Science Photo Library
মাধ্যাকর্ষণ তরঙ্গের খোঁজ
জুন ২০১৬-তে মানুষ প্রথমবারের মত মাধ্যাকর্ষণ তরঙ্গ রেকর্ড করতে পেরেছে৷ বিজ্ঞানীরা ১৯৯২ সাল থেকে এই তরঙ্গের খোঁজ করছিলেন৷ তাঁদের ধারণা, এই তরঙ্গ নিয়ে গবেষণা করার ফলে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের উৎপত্তি ও বিস্তার সম্পর্কিত অনেক রহস্যের সমাধান করা যাবে৷
ছবি: imago/Science Photo Library
তিন বাবা-মায়ের সন্তান
২০১৬ সালের মে মাসে বিশ্বে প্রথমবারের মতো এমন এক সন্তান জন্ম নেয়, যে দুই নারীর ডিম্বাণু এবং এক পুরুষের শুক্রাণু নিয়ে পৃথিবীতে এসেছে৷ মেক্সিকোতে জন্ম নেয়া এই সন্তান একদম সুস্থভাবে ভূমিষ্ঠ হয়৷ বিজ্ঞানীরা জানান, মায়ের শরীরে যদি জিনগত কোনো রোগ থাকে, তবে এই উপায়ে শিশুটি সেই রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারে৷
ছবি: Getty Images/AFP/Carl Court
ডিএনএ কাটাছেঁড়া
এ বছর মার্কিন বিজ্ঞানীরা শুকরের শরীরে মানুষের অঙ্গের বিকাশে সফল হন৷ ‘জিন এডিটিং’ বা ডিএনএ কাটাছেঁড়ার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা শুকরের ভ্রুণে মানুষের স্টেমসেল প্রতিস্থাপিত করেন, এর ২৮ দিন পরে মানুষের সেই স্টেমসেল শুকরের দেহে বিকশিত হতে শুরু করে৷
ছবি: picture-alliance/Chromorange/Bilderbox
কার্বন ডাই-অক্সাইডকে পাথরে রূপান্তর
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্ব যে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, তা থেকে বাঁচতে উত্তর মেরুর কাছে আইসল্যান্ডে বিজ্ঞানীরা কার্বন ডাই-অক্সাইডকে চুনাপাথরে রূপান্তর করতে সফল হন৷
ছবি: imago/blickwinkel
হিলিয়ামের সম্ভার
তানজানিয়ায় হিলিয়াম গ্যাসের বিশাল সম্ভারের খোঁজ পাওয়ায় চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন৷ বিমানের টায়ারে ব্যবহৃত এই গ্যাসের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় এমআরআই এবং স্ক্যানিং মেশিনে৷
ছবি: CHROMORANGE
এইচআইভি-র ভ্যাকসিন
এইডস-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ২০১৬ সালে বিজ্ঞানীরা সফলতা দেখিয়েছেন৷ প্রথমবারের মত বিজ্ঞানীরা এইচআইভি ভাইরাস নির্মূল করতে পারে এমন ভ্যাকসিন বানিয়েছেন৷ ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বেশ কয়েকটি দেশে এই মুহূর্তে এই ভ্যাকসিনের ‘ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল’ চলছে৷
ছবি: AP
অন্তহীন তথ্য ভাণ্ডার
ন্যানো স্ট্রাকচার ব্যবহার করে মার্কিন বিজ্ঞানীরা একটি ছোট গ্লাস ডিস্ক বানিয়েছেন৷ ভীষণ ছোট একটি ডিস্কে ৩৬০ টেরাবাইট ডাটা বা তথ্য সংরক্ষণ করা যায়৷ ১,০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপামাত্রায় ডিস্কটি গলে না বা নষ্ট হয় না৷ আর বড় ডিস্কে অসংখ্য তথ্য জমা রাখা যায়৷
ছবি: Getty Images
রকেটের পুনর্ব্যবহার
যুক্তরাষ্ট্রের রকেট কোম্পানি স্পেসএক্স প্রথমবারের মতো আবারও ব্যবহারযোগ্য রকেট এনেছে৷ সমুদ্রে ‘ফ্যালকন ৯’ লঞ্চ প্যাড থেকে উৎক্ষেপিত এই রকেট আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে পৌঁছে আবার সফলভাবে ফিরে আসে৷
ছবি: SpaceX
সুপারসনিক গতি
মার্কিন স্টার্টআপ কোম্পানি ‘হাইপারলুপ’ এ বছর এক অভিনব প্রযুক্তি বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করেছে৷ এর ফলে ভবিষ্যতে মানুষের পক্ষে ভ্যাকুয়াম টিউবের মধ্য দিয়ে ঘণ্টায় এক হাজার কিলোমিটারেরও বেশি গতিতে ছোটা সম্ভব হবে৷
ছবি: Hyperloop Technologies
চালকবিহীন গাড়ি
মানুষের কল্পনায় ছিলো এমন গাড়ি, যা নিজে থেকেই চলবে৷ সেই কল্পনাকে বিজ্ঞানীরা বাস্তব রূপ দেন এই বছর৷ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে চালকবিহীন গাড়ি পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হচ্ছে৷
ছবি: APTN
10 ছবি1 | 10
চলচ্চিত্র পরিচালকরাও এমন ‘রিডিউসড গ্র্যাভিটি এয়ারক্রাফট'-এ চড়ে প্রেরণা গ্রহণ করেন৷ এর মাধ্যমে তাঁরা নিজেদের চলচ্চিত্রে এমন কোনো দৃশ্য এবং তার সঙ্গে যুক্ত অনুভূতিকে যতটা সম্ভব বাস্তবসম্মত করে সাজাতে পারেন৷ স্পোর্টস মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ড. স্টেফান শ্নাইডার বলেন, ‘‘মাধ্যাকর্ষণহীনতার অনুভূতি আসলে অবর্ণনীয়, কারণ, প্রকৃতির মধ্যে এমনটা দেখা যায় না, বরং প্রকৃতির নিয়ম ভাঙতে হয়৷ নানাভাবে সেই প্রচেষ্টা চালানো হয়৷ যেমন পাইলট জানালেন যে, তাঁর মনে হয় তিনি টিলার প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছেন৷ আরেক পা এগোলেই সোজা নীচে পড়ে যাবেন৷ আমার নিজের মনে হয়েছে, পায়ের নিজস্ব সেন্সর না থাকায় যেন অবিশ্বাস্য গতিতে ছিটকে বাইরে পড়ে যাচ্ছি৷''
বিজ্ঞান যখন আনন্দ দেয়, তখন আর কী বলার থাকতে পারে! বিমানে চালানো পরীক্ষার ফলাফল গোটা বিশ্বের মানুষের কাজে লাগবে৷ যেমন পেশি ও হাড়ের রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে এই তথ্যের প্রয়োজন আছে৷ তবে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন মহাকাশযাত্রীরা৷
চীনের উচ্চাভিলাষী মহাকাশ কর্মসূচি
মহাকাশ গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মতো স্থানে পৌঁছতে চায় চীন৷ ২০২২ সালে নিজস্ব স্পেস স্টেশন বানাতে চায় দেশটি৷
ছবি: Picture-Alliance/dpa/H. H. Young
ষষ্ঠবারের মতো
সোমবার (১৭ অক্টোবর, ২০১৬) সকালে চীন ৬ষ্ঠ বারের মতো তাদের মহাকাশচারীদের মহাকাশে পাঠালো৷ ‘শেনজু-১১’ বা ‘পবিত্র তরী’ নামের একটি রকেট দুজন নভোচারীকে নিয়ে দুই দিন পর চীনেরই স্পেস ল্যাব ‘তিয়ানগং-২’-তে পৌঁছবে৷
ছবি: Picture-Alliance/dpa/H. H. Young
অভিজ্ঞ মহাকাশচারী
জিং হাইপেং ও চেন ডং মহাকাশে থাকবেন ৩০ দিন৷ সেখানে তাঁরা অ্যারোস্পেস মেডিসিন ও অ্যাটোমিক স্পেস ক্লক নিয়ে গবেষণা করবেন বলে জানিয়েছে চীনা বার্তা সংস্থা শিনহুয়া৷ নভোচারী জিং হাইপেংয়ের এটি তৃতীয় মিশন৷ মহাকাশে তিনি তাঁর ৫০ তম জন্মদিন পালন করবেন৷
ছবি: Picture-Alliance/dpa/H. H. Young
স্পেস ল্যাব ‘তিয়ানগং-২’
পৃথিবী থেকে ৩৯৩ কিলোমিটার উঁচুতে এই ল্যাবটি অবস্থিত৷ গত মাসে এটি চালু করা হয়৷ এর দৈর্ঘ্য নয় মিটার৷ ওজন ১৩ টন৷ ‘তিয়ানগং-২’ বা ‘স্বর্গীয় প্রাসাদ-২’এ দুটি কেবিন আছে৷ একটি বসবাসের জন্য ব্যবহৃত হয়৷ অন্যটিতে রয়েছে সোলার প্যানেল, ইঞ্জিন, ব্যাটারি ইত্যাদি৷
ছবি: picture alliance/dpa/A. Xin
প্রথম স্পেস ল্যাব
২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে চীন তাদের প্রথম স্পেস ল্যাব ‘তিয়ানগং-১’ মহাকাশে প্রেরণ করে৷ গত মার্চে এর মিশন শেষ হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সর্বাধুনিক রকেট
‘শেনজু-১১’ পাঠানো হয় ‘লং মার্চ-২এফ’ ক্যারিয়ার রকেট ব্যবহার করে৷ ৪৬৪ টন ওজন ও ৫২ মিটার দীর্ঘের এই রকেটটি গোবি মরুভূমির কাছে অবস্থিত ‘জিউকুয়ান স্যাটেলাইট লঞ্চ সেন্টার’ থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot/Y. Zhiyuan
উচ্চাভিলাষী মহাকাশ কর্মসূচি
মহাকাশ বিষয়ে তাদের সক্ষমতা দেখাতে চাইছে চীন৷ তাই আগামী এপ্রিলে তারা প্রথমবারের মতো একটি স্পেস কার্গো পাঠাতে চাইছে৷ সেটিতে করে ‘তিয়ানগং-২’ স্পেস ল্যাবের জন্য জ্বালানি ও উপকরণ নিয়ে যাওয়া হবে৷
ছবি: Reuters
নিজেদের স্পেস স্টেশন চায় চীন
বর্তমান পরিকল্পনা অনুযায়ী, মহাকাশে থাকা ‘আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন’ বা আইএসএস (ছবিতে দেখা যাচ্ছে) এর কার্যক্রম ২০২৪ সালে শেষ হয়ে যাবে৷ চীন চাইছে ২০২২ সালের মধ্যে নিজেদের একটি স্পেস স্টেশন তৈরি করতে৷ তাহলে ২০২৪ সালের পর চীনের ঐ স্টেশনটিই হবে একমাত্র স্থায়ী স্পেস স্টেশন৷