প্রজাতি, প্রকৃতি বা পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কস্টা রিকার কথা প্রথমে কারো মনে পড়বে না, অথচ সেখানে বেশ কয়েক দশক ধরে চলেছে পুনর্বনানীকরণ৷ ইতিমধ্যে দেশের পঞ্চাশ ভাগ বৃষ্টিপ্রধান ক্রান্তীয় বনানীতে ঢেকেও গেছে৷
বিজ্ঞাপন
বিপন্ন প্রজাতি হিসেবে পয়জন ডার্ট ফ্রগ-এর সুরক্ষার প্রয়োজন৷ জীববিজ্ঞানী ও পশুপ্রেমী হুয়ান কার্লোস ক্রুস বলেন, ‘‘এটা একটি এন্ডেমিক প্রজাতি, মানে এই ব্যাং শুধু কস্টা রিকায় পাওয়া যায়৷ শুধুমাত্র এখানে, আর ওসা উপদ্বীপে৷''
কাছেই সেই ব্যাঙের ডিমও খুঁজে পাওয়া গেল৷ বাঁদররা এগুলো খেতে খুব ভালোবাসে – তারা কাছাকাছি আছে নিশ্চয়৷ হুয়ান কার্লোস আর তার সতীর্থদের জন্য প্রমাণ যে, প্রজাতি সংরক্ষণে বিনিয়োগ করার উপযোগিতা আছে৷ কার্লোস জানালেন, ‘‘জঙ্গল বাঁচানোর জন্য আমরা মাঝেমধ্যে জমি কিনে নিই৷ গবেষণার কাজও বেশ খরচার৷ এই সব জীবজন্তুর উপর নজর রাখার সরঞ্জামও খুব দামি৷ ক্যামেরা ট্র্যাপ, রাডার, এ সবের খরচ খুব বেশি৷ কাজেই সংরক্ষণের কাজে আমাদের বিপুল অর্থের প্রয়োজন পড়ে৷''
ক্যাম্প থেকে রাজধানীতে
একটানা বৃষ্টির ফলে ঝর্ণাগুলো খরস্রোতা নদীতে পরিণত হয়েছে৷ বনের পথে যেতে প্রায়ই এই সব বাধার সম্মুখীন হতে হয়৷ তার চেয়ে ক্যাম্পে ফেরাই ভালো৷ ক্যাম্পে ফিরে হুয়ান কার্লোস গত সপ্তাহে তোলা সব ছবি দেখাচ্ছেন৷ জঙ্গলের মধ্যে কয়েকটা জায়গায় অটোম্যাটিক ক্যামেরা ট্র্যাপ লাগিয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷ ক্যামেরার রেঞ্জের মধ্যে কেউ বা কোনো জীবজন্তু নড়াচড়া করলেই ছবি ওঠে – যেমন খাবারের খোঁজে পেকারির দল; অথবা একটা জাগুয়ার৷
রাজধানী সান হোসেতে পৌঁছে আরেক দৃশ্য৷ কস্টা রিকা বহু দশক ধরে পুনর্বনানীকরণ চালাচ্ছে৷ ইতিমধ্যে দেশের ৫০ ভাগ রেন ফরেস্টে ঢাকা৷ পুনর্বনানীকরণের জন্য নতুন বিনিয়োগকারীদের সন্ধানে আছেন সরকার৷ সরকারি কর্মকর্তারা বোঝালেন, তারা কীভাবে বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের প্রজাতি সংরক্ষণ প্রকল্পে আগ্রহী করতে চান৷ কেননা প্রজাতি সংরক্ষণ বিভিন্ন শিল্প ও বাণিজ্য সংস্থা আর সেই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থেও বটে৷
কিছু গাছপালা, প্রাণী এবং মানুষেরও বিলুপ্তির আশঙ্কা!
অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এ সময় প্রাণী এবং গাছপালা বিলুপ্ত হচ্ছে দ্রুত গতিতে৷ এক গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে এই তথ্য৷ ছবিঘরে থাকছে এমন কিছু প্রাণী আর গাছপালার কথা, যেগুলো খুব তাড়াতাড়িই হয়ত পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে৷
ছবি: picture-alliance/WILDLIFE/M. Harvey
বিলুপ্তির মাত্রা ১০০ গুণ বেশি
যুক্তরাষ্ট্রের এই কালো ভালুক আর কতদিন দেখা যাবে কে জানে? এক গবেষণায় দেখা গেছে, গত শতকে জীববৈচিত্র কমেছে আগের চেয়ে প্রায় একশ’ গুণ বেশি হারে৷ বৃদ্ধির কারণ মানুষ৷ যুক্তরাষ্ট্রের কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এ বিষয়ে প্রকাশিত এক যৌথ প্রতিবেদনে বলেছে, বণাঞ্চলে মানুষের যাতায়াত বেড়ে যাওয়ার কারণেই উদ্ভিদ এবং প্রাণীর বিলুপ্তি দ্রুততর হচ্ছে৷
ছবি: picture alliance/Bildagentur-online
তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে
সম্প্রতি দ্য ওয়ার্ল্ড কনজারভেশন ইউনিয়ন (আইইউসিএন) বিশ্বের ৪১ ভাগ উভচর এবং ২৬ ভাগ স্তন্যপায়ী প্রাণীই এখন চিরবিলুপ্তির ঝুঁকির সামনে৷ ছবির এই টিটিকাকা নামের বিশাল ব্যাঙগুলো এক সময় পেরু এবং বলিভিয়ার হৃদগুলোতে ঝাঁকে ঝাঁকে দেখা যেত৷ এখন খুব কম দেখা যায় এদের৷ কয়েক বছর পর হয়ত এই ধরণের ব্যাঙ শুধু ছবিতেই থাকবে৷
ছবি: picture alliance/WILDLIFE
মানুষই দায়ী
গত ৪০ বছর ধরে মানুষ প্রতি মিনিটে গড়ে অন্তত ২ হাজার করে গাছ কাটছে৷ তাহলে প্রতিদিন বিশ্বের বনাঞ্চল থেকে কী হারে গাছ কমছে ভেবে দেখুন! এর পাশাপাশি পরিবেশ দূষণ এবং উষ্ণায়নও নানাভাবে বাড়াচ্ছে মানুষ৷ এ সব বিষয় উদ্ভিদ এবং প্রাণীর বিলুপ্তিতে বড় ভূমিকা রাখছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিপন্ন মানবজাতি
মেক্সিকোর ন্যাশনাল অটোনমাস ইউনিভার্সিটির শিক্ষক জেরার্ডো সেবালোস মনে করেন, সতর্ক না হলে অনুমানের চেয়ে বেশ আগে মানুষও বিলুপ্ত হতে পারে৷ কিছু প্রাণীর সঙ্গে মানুষের অস্তিত্ব নির্ভরশীল – এ কথা বলে মৌমাছির উদাহরণ দিয়েছেন তিনি৷ মৌমাছি হারিয়ে গেলে অনেক রকমের খাবা তৈরি করা সম্ভব হবে না৷ ফলে একসময় দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে৷ দুর্ভিক্ষে অনেক মানুষ মারা গিয়ে মানবজাতির বিলুপ্তিকে ত্বরান্বিত করতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘দ্বিগুণ চেষ্টা করুন’
যৌথভাবে রচিত প্রতিবেদনে বিজ্ঞানীরা বিলুপ্তির হাত থেকে কিছু গাছপালা, প্রাণী এবং সর্বোপরি মানুষকেও বাঁচাতে বর্তমানের চেয়ে দ্বিগুণ প্রয়াস চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন৷ তাঁরা মনে করেন, এখন থেকে সতর্ক এবং সজাগ হলে বিলুপ্তি অনেকটাই বিলম্বিত করা সম্ভব৷
ছবি: picture-alliance/WILDLIFE/M. Harvey
5 ছবি1 | 5
সহকারী পরিবেশমন্ত্রী পাত্রিসিয়া মাদ্রিগাল বললেন, ‘‘আজই কাগজে একটা লেখা বেরিয়েছে, ন্যাশনাল পার্কগুলো কীভাবে পার্কের চারপাশের মানুষদের উপকার করছে৷ কাজেই আমরা দেখছি যে, সংরক্ষণ দারিদ্র্য উপশমের একটা পন্থাও বটে৷ আমরা এখন বুঝতে পারছি যে, সংরক্ষণ আর উন্নয়ন একই ফর্মুলার দু'টি দিক৷ কথাটা বলা খুব সোজা, কিন্তু করাটা ততো সোজা নয়৷''
বায়োফিন প্রকল্প
সেই জন্যেই কস্টা রিকা আন্তর্জাতিক বায়োফিন প্রকল্পে শামিল৷ বিশেষজ্ঞরা সরকার ও বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে একত্রে ভেবে দেখছেন, কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশ প্রকল্পগুলির জন্য অর্থসংস্থান করা যায়৷ প্রকল্পের নানা দিক আছে৷ খামারচাষি উগো কামাচো প্রতিবছর কয়েক’শ ইউরো পরিমাণ টাকা পান, যাতে তিনি তাঁর অংশের চারণভূমিতে নতুন করে গাছ লাগান৷ বায়োফিন কস্টা রিকার সমন্বয়কারক গিয়ের্মো সুনিয়েগা নিয়মিত অতিথিদের নিয়ে আসেন প্রকল্প দেখাতে৷
খামারচাষি উগো কামাচো জানালেন, ‘‘এটা তো আমার আসল কাজ নয়৷ আমার গরুর পাল আছে, কাঠের জন্য গাছ আছে, আর সরকারের কাছ থেকে একটা ছোট পেনশন আছে৷'' বায়োফিন প্রকল্প না থাকলে উগো তাঁর গাছগুলো অনেক আগেই কাছের কোনো করাতকলকে বিক্রি করে দিতেন৷ এই তো কিছুদিন আগে কে যেন তাঁকে গাছ কাটার জন্য অনেক টাকা দিতে চেয়েছিল৷ কিন্তু উগো গাছ বেচতে পারেন না – এই হলো বায়োফিন-এর সঙ্গে তাঁর চুক্তি৷ সুনিয়েগা জানেন যে, উগোর মতো খামারচাষিদের পক্ষে পরিস্থিতি খুব সহজ নয়৷ তিনি উগোকে আরো বেশি টাকা জোগাড় করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷
জীববৈচিত্রের অসাধারণ মুহূর্ত যখন ক্যামেরাবন্দি
বিচারকদের জন্য ভীষণ কষ্টকর ছিল কাজটি৷ কিন্তু এরপরও সেরা হিসেবে তারা বেছে নিয়েছেন অসাধারণ একটি স্থিরচিত্রকে৷ এখানে থাকছে সেরা ছবিগুলোর কয়েকটি৷
ছবি: Michael Nichols/Wildlife Photographer of the Year 2014
বরফ এবং পাখি
১৫ থেকে ১৭ বছর ক্যাটাগরিতে পুরস্কার জিতেছে এই ছবিটি৷ ছবিটি তুলতে সুইডিশ ফটোগ্রাফারকে বরফের মধ্যে গর্ত খুঁড়ে পাখিটির জন্য খাবার রাখতে হয়েছিল৷ আর তার ফলেই অসাধারণ এই ছবিটির জন্ম৷
ছবি: Edwin Sahlin/Wildlife Photographer of the Year 2014
প্রাকৃতিক বিশেষ ‘এফেক্ট’
চিলির আগ্নেয়গিরির অসাধারণ এই ছবিটি তুলেছেন ফ্রান্সিস্কো নেগ্রোনি৷ বিশ্বের পরিবেশ ত্যাটাগরিতে এটি পুরস্কার জিতে নিয়েছেন৷
ছবি: Francisco Negroni/Wildlife Photographer of the Year 2014
ইয়াং ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার অফ দ্য ইয়ার
বাংলাদেশ হলে এই আলোকে বলা হতো ‘কনে দেখা আলো’৷ সেই আলোতে উত্তর পূর্ব স্পেনে কাকড়া বিছার এই ছবিটি তুলেছেন কার্লোস পেরেজ নাভাল৷ পাঁচ বছর বয়স থেকে ছবি তোলা শুরু করেন তিনি৷ এ বছর পেয়েছেন ইয়াং ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার অফ দ্য ইয়ারের পুরস্কার৷
ছবি: Carlos Perez Naval/Wildlife Photographer of the Year 2014
হাঙরের ছবি
মেক্সিকোর এই হাঙরের ছবিটি তুলেছেন রডরিগো ফ্রিস্কিওনে৷ ওয়ার্ল্ড ইন আওয়ার হ্যান্ডস ক্যাটাগরিতে পুরস্কার জিতেছে এটি৷
ছবি: Rodrigo Friscione Wyssmann/Wildlife Photographer of the Year 2014
স্কুইডের ডিস্কো
মাত্র তিন সেন্টিমিটার লম্বা এই স্কুইডটির ছবিটি তুলেছেন ফরাসি আলোকচিত্রী ফাবিয়েন মিশেনেট৷
ছবি: Fabien Michenet/Wildlife Photographer of the Year 2014
হামিং বার্ড
এই ছবিটি থেকেই আপনি মোটামুটি একটি ধারণা নিতে পারবেন কত অসাধারণ ছবি এবারের প্রতিযোগিতায় এসেছিল৷ ছবিটি দুটি হামিং বার্ডের৷ এই ছবিটি বার্ডস ক্যাটাগরিতে সেরা ছবির পুরস্কার জিতেছে৷
ছবি: Jan van der Greef/Wildlife Photographer of the Year 2014
বাদুড়
জার্মান একটি বাংকারে বাদুড়ের এই ছবিটি তুলেছেন লুকাস বোজিকি৷ ম্যামালস ক্যাটাগরিতে পুরস্কার জিতেছে এটি৷
ছবি: Łukasz Bożycki/Wildlife Photographer of the Year 2014
রোম্যান্টিক
ব্যাঙদের রোম্যান্টিক এই ছবিটি একই ক্যাটাগরিতে পুরস্কার জিতেছে৷
ছবি: Anton Lilja/Wildlife Photographer of the Year 2014
অসাধারণ ‘স্ন্যাপশট’
ফটোগ্রাফারের ভাগ্য ভালো এটি কোনো বিষধর সাপ নয়৷ মার্ক মন্টেস অসাধারণ এই ছবিটি তুলেছেন স্পেনে৷ ক্যাটাগরি ১১ থেকে ১৪ বছর৷
ছবি: Marc Montes/Wildlife Photographer of the Year 2014
ইগুয়ানা
এই ইগুয়ানাটাকে দেখে মনে হচ্ছে কিছুটা দ্বিধা রয়েছে তার মধ্যে৷ কোস্টারিকায় এই ছবিটি তুলে পুরস্কার জিতেছেন উইল জেনকিনস৷
ছবি: Will Jenkins/Wildlife Photographer of the Year 2014
সেরাদের সেরা
তানজানিয়ার জাতীয় পার্কের এই ছবিটিতে সিংহদের দেখা যাচ্ছে৷ এই ছবিটি দেখে মনে হতে পারে অনেক বছর আগে তোলা, যেখানে আশেপাশে কোনো মানুষের চিহ্ন নেই৷ ছবিটি তোলার জন্য ছয় মাস এই সিংহদের পর্যবেক্ষণ করেছেন ফটোগ্রাফার মাইকেল নিকল্স৷ আর তাই ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার অফ দ্য ইয়ার ২০১৪ জিতেছেন তিনি৷
ছবি: Michael Nichols/Wildlife Photographer of the Year 2014
11 ছবি1 | 11
এই ধরনের জমি বাঁচানোর জন্য কস্টা রিকার বছরে ৫০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন বলে সরকারের ধারণা – যা কিনা দেশের জিডিপি-র প্রায় এক শতাংশ৷ বায়োফিন কস্টা রিকার সমন্বয়ক গিয়ের্মো সুনিয়েগা বললেন, ‘‘ওটা খুব বেশি নয়৷ আর আমাদের মনে রাখতে হবে যে, এই টাকার অধিকাংশ আসবে খোলা অর্থবাজার থেকে, লোকে যখন বুঝবে, জীববৈচিত্র্যে বিনিয়োগ করা কতটা জরুরি৷'' সুনিয়েগা অশ্য মেনে নিচ্ছেন, যে তারা তাদের টাকা ফেরত পেতে চাইবে, কেননা এটা তো একটা বিনিয়োগ৷
স্কুইরেল মাঙ্কি নামধারী ছোট বাঁদরগুলোর জন্যই এই বিনিয়োগ করা চলে৷ কস্টা রিকার ওসা উপদ্বীপ ওদের আর একটা বাসস্থান কিনা৷