1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌মানুষের পাশে মানুষ দাঁড়াচ্ছে

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
২৭ এপ্রিল ২০২০

কলকাতাসহ রাজ্যের একাধিক জায়গায় উপার্জনহীন, দুঃস্থ, অনাহারে থাকা মানুষের মুখে দু’বেলা খাবার তুলে দিতে নিঃস্বার্থভাবে এগিয়ে আসছে মানুষ৷ নিজেদের খরচে দু’বেলা খাওয়ানোর ব্যবস্থা হয়েছে অনেক এলাকায়৷

ছবি: DW/S. Bandopadhyay

উত্তর কলকাতার দর্জিপাড়ায় বহু পুরনো এক মিষ্টির দোকান৷ লক ডাউনের কারণে এখন তাদের ব্যবসা প্রায় বন্ধ৷ কিন্তু এক অসাধারণ মানবিক উদ্যোগ নিয়েছেন দোকানটির বর্তমান মালিক চন্দ্রকান্ত ঘোষ, তাঁর পরিবার, বন্ধুরা এবং এখন পাড়ার অন্যান্য বাসিন্দারাও৷ লক ডাউন শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০০ জন মানুষকে দুবেলা খেতে দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন তারা৷ নিজেদের পকেটের পয়সা খরচ করে৷ 

‘‘আমার জন্মদিন ছিল, ওখানে সবাইকে খাওয়ালাম’’

This browser does not support the audio element.

কিন্তু খেতে আসছেন কারা?‌ কাদের খাওয়ানো হচ্ছে?‌ চন্দ্রকান্ত ঘোষ, পাড়ার সবার ‘ভোম্বলদা' জানালেন, ‘‌‘এরা ধরুন, ‌পরিস্থিতির শিকার যারা৷ এদেরকে আপনি দুঃস্থ বলতে পারবেন না৷ এদের ফেসগুলো দেখলেই বুঝতে পারবেন যে, এরা কাজ থাকলে কাজ করে খাবারই লোক৷ আজকে কোনো কাজ পাচ্ছে না, সঞ্চয়টা শেষ হয়ে গেছে, তাই এখন (‌খাওয়াতে হচ্ছে)৷‌'‌'‌

চন্দ্রকান্তবাবু জানাচ্ছেন, লক ডাউন যেদিন শুরু হয়, সেদিন তাঁর বাড়িতে স্ত্রী এবং মেয়ে রান্না করে দিয়েছিলেন৷ সেদিন প্রথম আটজনকে খাইয়েছিলেন৷ সেই সংখ্যাটা বাড়তে বাড়তে আজ প্রায় ৩০০ জনে পৌঁছেছে৷ এলাকার ছেলেরা এখন সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে৷ রাস্তার ধারেই রান্না হচ্ছে৷ পাড়ার ছেলেরাই পরিবেশন করছে৷ কিন্তু ৩০০ জনকে রোজ দু'‌বেলা খাওয়ানো বিরাট খরচের ব্যাপার৷ সামাল দিচ্ছেন কীভাবে? চন্দ্রকান্ত ঘোষ জানাচ্ছেন, ‘‌‘‌২৫ তারিখ থেকে শুরু করে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত, প্রথম লক ডাউনের যে স্টেজটা ছিল, ১৪ তারিখ, আমি বলেছিলাম, ওই তারিখ অবধি আমি নিজে মানুষকে পরিষেবা দেবো৷ ১৫ তারিখ থেকে আমি একটা টিম তৈরি করি বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে৷ ওই বন্ধুবান্ধবদের টিম নিয়ে আমি এটাকে এখন সচল রাখতে পেরেছি৷ এবং এখানে যেসব মানুষজন আছেন, বা সচেতন নাগরিক বলা যায়, তাঁরা প্রচুর মানসিকভাবে হেল্প করছে, শারীরিকভাবে হেল্প করছে৷ আর যুবশক্তি তো আছেই৷ তারা রান্না করছে, পরিবেশন করছে৷'‌'‌

যে কোনো ভালো কাজই যেমন আরো অনেক লোককে উদ্বুদ্ধ করে, এক্ষেত্রেও তাই ঘটছে৷ এলাকারা বাসিন্দারা স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে এগিয়ে এসেছেন৷ যেমন ইন্ডিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের কর্মী সন্দীপ দে সরকার৷ তিনি স্বেচ্ছায় যুক্ত হয়েছেন এই সমাজসেবায়৷ স্থানীয়দের থেকে চাঁদাও কি তোলা হচ্ছে?‌ সন্দীপবাবু জানালেন, ‘‌‘‌না না, কোনো চাঁদা তোলার ব্যাপার নেই৷ একদম স্ব ইচ্ছায় যারা এসে দিচ্ছে, তাদের কাছ থেকেই নেওয়া হচ্ছে৷ আমরা কারো কাছ থেকে এক পয়সাও চাইনি আজ পর্যন্ত৷ আড়াইশ লোক রোজ খাচ্ছে৷ এবং আমি আমার নিজের তরফ থেকে গত শনিবার দিন মাংস-ভাত খাইয়েছি৷ আমার জন্মদিন ছিল সেদিন, আমি ওখানে সবাইকে খাওয়ালাম৷ এবং সবাই মিলে এগিয়ে আসছে এখন৷ যে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে, বলছে, বাহ্‌, সুন্দর!‌ সবাই সাহায্য করছে এখন৷ সবাই এগিয়ে আসছে৷'‌'‌ 

‘‘এরা কাজ থাকলে কাজ করে খাবারই লোক’’

This browser does not support the audio element.

এই কাজে সরকার, বা কোনো রাজনৈতিক দলের সাহায্য পাচ্ছেন কি?‌ এই প্রশ্নে সন্দীপবাবুর সোজা জবাব, ‘‌‘‌কারো কাছ থেকে সাহায্য নেবো না আমরা৷ কোনো ব্যানার নয়, কোনো পলিটিকাল পার্টির ইনভলভমেন্ট এখানে করতে দেবো না৷ আমরা নিজেরা, সব নিজেরা দেখবো৷ রান্না থেকে শুরু করে সব, আমাদের ছেলেরা, বাচ্চা বাচ্চা ছেলেরা হেল্প করছে৷'‌'‌

এখানে অবশ্যই উল্লেখ করা দরকার যে, উত্তর কলকাতার এই পাড়াটিই শুধু নয়, সারা রাজ্য, গোটা দেশ থেকে খবর আসছে, মানুষ ঠিক এভাবেই মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন৷ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই নতুন করে গড়ে উঠছে এক সামাজিক বন্ধন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ