রোবটের নানা কেরামতি আমরা দেখতে অভ্যস্ত৷ কিন্তু রোবটের রাশ নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন কখনো? শিল্পজগতের ভবিষ্যৎ ধীরে ধীরে সেদিকেই এগোচ্ছে৷ তারই কিছু নমুনা তুলে ধরছেন ইউরোপের দুই উদ্ভাবক৷
বিজ্ঞাপন
শিল্পকলা নাকি শুধু কাজের জিনিস? এর নাম ডিজাইন ফোর পয়েন্ট জিরো৷ রোবটের হাত শক্ত স্পঞ্জ কিউব দিয়ে এ সব তৈরি করছে৷ ডিজিটাল ডিজাইনার রিড ক্র্যাম বলেন, ‘‘একেবারে মৌলিক অবস্থায় এটাকে বসার টুল, সাইড টেবিল ইত্যাদি নানাভাবে বাড়ির কাজে লাগানো যায়৷ কিন্তু মানুষই এর সীমাহীন ব্যবহার করে দেখাচ্ছে, যার অনেকগুলি এমনকি আমরাও কল্পনা করতে পারি না৷''
এই ‘ইনস্টলেশন'-এর নাম ‘রোবোচপ'৷ এটা অনেকটা থ্রিডি প্রিন্টারের মতো কাজ করে, তবে অনেক ভালো ও দ্রুত, সেইসঙ্গে আরও ইন্টারঅ্যাকটিভ৷ কারণ ইউজার তার ডিজাইন সরাসরি রোবটকে পাঠিয়ে দিতে পারে৷ একটি ওয়েবসাইটে সে নিজস্ব ডিজাইন অনুযায়ী একটি কিউব-কে পছন্দমতো গড়ে তুলতে পারে৷ তারপর রোবোচপ তার বাস্তব রূপ দেয়৷ ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে কাজ হয়ে যায়৷ একজন বললেন, আগে এমনটা সম্ভবই ছিল না৷ ডিজাইনার না হয়েও এমন কিছু গড়ে তোলা যায়৷
জার্মানির ক্লেমেন্স ভাইসহার ও সুইডেনের রেড ক্রাম রোবোচপ উদ্ভাবন করেছেন৷ তাঁদের তৈরি করা রোবট ‘ডিজিটাল ইকোনমি'-র প্রতীক – অর্থাৎ ডিজিটাল ও শিল্পজগতের সংমিশ্রণ৷ ক্লেমেন্স ভাইসহার বলেন, ‘‘সব যন্ত্র কম্পিউটার-চালিত, তাদের নেটওয়ার্কে যুক্ত করলে অনেক বাড়তি ক্ষমতা পাওয়া যায়৷ আমরা এখানে যা করছি, সেটা অনেকটা তারই এক ‘এক্সট্রিম' উদাহরণ৷ আমরা সব সীমা ভেঙে দিয়ে ব্যবহারকারী ও যন্ত্রের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করছি৷''
রেস্তোরাঁয় খাবার পরিবেশন করবে রোবট?
রোবট, যন্ত্রের তৈরি মানুষগুলো শুধু যে চোখ পিটপিট তাকাতে আর শব্দ করতে পারে, তা নয়৷ চীনের বেশ কিছু রোস্তোরাঁয় আজকাল অতিথি আপ্যায়নেও কোমর বেঁধেছে তারা৷ চলুন যন্ত্রমানবের কাজ দেখতে ঘুরে আসা যাক সেরকমই একটি রেস্তোরাঁ থেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Zhang
আপনার অর্ডার, প্লিজ...
শুধু প্রযুক্তিগত চমক দেখানোই নয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ ব্যাপারে একেবারে সামনের সাড়িতে রয়েছে চীন৷ তবে সেই সব আধুনিক প্রযুক্তি আদৌ ব্যবহারযোগ্য কিনা – সেটা অবশ্য দেখার বিষয়৷ ছবিতে দেখুন অতিথিদের খাওয়ার অর্ডার নোওয়াসহ হাজারো কাজ নিয়ে মেতেছে রোবট৷
ছবি: picture-alliance/epa/P. Hilton
খাবার তৈরি!
এই ছোট্ট হিউম্যানয়েড রোবটগুলো খাবার পরিবেশনের ক্ষেত্রে খুবই পারদর্শী৷ এদের সুবিধা হলো এই যে, এরা ক্লান্ত হয় না আর কাজ করতেও কোনো ঝামেলা করে না৷ বরং ওরা শুধুই নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে জানে৷ অবশ্য রোবটের পরিবেশিত খাদ্য খেতে অতিথিদের কোনো অভিযোগ থাকলে, সেটা ভিন্ন ব্যাপার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ChinaFotoPress/MAXPPP
শেফকুক রোবট
রোবট শুধু অতিথিদের অর্ডারই নেয় না, তারা উনুনের সামনে দাঁড়িয়ে খাবার গরমও করে৷ ছবিতে দেখুন আগে থেকে তৈরি করা খাবার গরম করছে রোবট৷ তবে তরকারি কাটাবাছা বা এ ধরনের কাজগুলো মানুষ সহকর্মীদেরই আগে থেকে করে দিতে হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ChinaFotoPress/MAXPPP
নানা ধরনের রোবট
তবে সব রেস্তোরাঁর রোবট কিন্তু এই গ্যালারির ছবিগুলোর মতো দেখতে যন্ত্রমানবের মতো নয়৷ এখানে যে কাজটা করা হচ্ছে, সে অংশটুকুই দেখানো হচ্ছে৷ অর্থাৎ শুধু মাথাটাই দেখানো হচ্ছে, হাত বা পা নয়৷ রেস্তোরাঁর রান্নাঘরের রোবটগুলো, অর্থাৎ যে রোবটগুলো রেস্তোরাঁর অতিথিদের সামনে যায় না, সেগুলো এরকমই হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিনোদনেও রোবট
সাংহাই-এর কাছে এই রোবট-রেস্তোরাঁতে খাবারের চেয়ে কিন্তু বিনোদন অনুষ্ঠানই বেশি আনন্দদায়ক৷ ইন্টারনেটে করা মন্তব্য থেকে অন্তত এ তথ্যই জানা যায়৷ অর্থাৎ এই রেস্তোরাঁয় অতিথিরা খাবারের চেয়ে বিনোদনটাই বেশি উপভোগ করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Robichon
5 ছবি1 | 5
চলতি বছর জার্মানির হানোফার শহরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শিল্পমেলায় প্রায় ৩,৩০০ সংস্থা ভবিষ্যতের দিশা তুলে ধরেছিল৷ তার একটি বিষয় ছিল ‘ডিজাইন ফোর পয়েন্ট জিরো', যার মূলমন্ত্র হচ্ছে কনজিউমার বা গ্রাহকই উৎপাদন করবে৷ এই সফটওয়্যারের সাহায্যে সে কোনো ছবি ত্রিমাত্রিক মডেলে পাঠিয়ে থ্রিডি প্রিন্টিং করতে পারবে৷
নতুন এক ‘পিক-টু-কমিক-অ্যাপ' ছবি ও ভিডিও বিকৃত করে দেয়, যাতে ফেসবুক-এর মুখ চেনার ক্ষমতা সেগুলির উপর খাটানো সম্ভব না হয়৷ এক দর্শক বললেন, তিনি কারো মর্জির তোয়াক্কা না করে ইচ্ছামতো নির্দেশ দিতে পারেন৷ এ যেন মুক্তির এক অনুভূতি৷
ক্লেমেন্স ভাইসহার ও রেড ক্রাম নিজেদের জগতে ‘নতুন প্রজন্মের ডিজিটাল ডিজাইনার' হিসেবেই পরিচিত৷ মিউনিখে তাঁদের স্টুডিওয় তাঁরা ‘রোবোচপ' উদ্ভাবন করেন৷ সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল এর জন্য উপযুক্ত সফটওয়্যার গড়ে তোলা৷ ভাইসহার বলেন, ‘‘একবিংশ শতাব্দীর উপকরণ হলো সফটওয়্যার – অর্থাৎ কম্পিউটার কোড৷ এটা একটা টেক্সট ফাইল, যার মধ্যে কম্পিউটারের ডেটা প্রসেসিং-এর নির্দেশিকা রয়েছে৷ আজকাল সে সব দিয়েই পণ্যের রূপ দেওয়া হয়৷ বাস্তব আর ডিজিটাল জগতের মধ্যে ফিকে হতে থাকা সীমাই আমাদের জন্য ইন্টারেস্টিং৷
জীবন বাঁচাবে বাংলাদেশের রোবট
গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে রোবট নিয়ে কাজ হচ্ছে৷ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়ও বাংলাদেশের প্রতিযোগীরা এক্ষেত্রে সফলতার স্বাক্ষর রাখছেন৷
ছবি: RoboticsBD
আগুন নেভাবে রোবট
তৈরি পোশাক কারখানা সহ বিভিন্ন জায়গায় আগুন লাগার ঘটনা প্রায় ঘটে৷ এতে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে৷ আগুন নেভাতে ছুটে যান দমকল বাহিনীর কর্মীরা৷ ভবিষ্যতে হয়ত তাদের সঙ্গে যোগ দেবে রোবট৷ বাংলাদেশেই এ ধরনের রোবট তৈরির কাজ চলছে বলে জানান শিবলী ইশতিয়াক৷ রোবট তৈরির উপকরণ পাওয়া যায় এমন একটি ওয়েবসাইট রোবটিক্সবিডি ডটকমের অ্যাডমিন তিনি৷
ছবি: STR/AFP/Getty Images
স্বয়ংক্রিয় বা রিমোট কন্ট্রোল
ইশতিয়াক বলেন, ‘‘বাংলাদেশে অনেক ফ্যাক্টরি আছে যেগুলো অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা ততটা ভালো না৷ তাই কিছু কিছু রোবট ডেভেলপ করার চেষ্টা চলছে যেগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে আগুন নেভানোর কাজ করবে৷ অথবা সেগুলো রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে চালানো যেতে পারে৷'' এ ধরনের রোবটকে কোথায়, কীভাবে কাজে লাগানো যায় তা নিয়ে বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে কথাবার্তা চলছে বলে জানান তিনি৷
ছবি: RoboticsBD
কোয়াডকপ্টার
ইশতিয়াক বলেন, বর্তমানে কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল তাদের অনুষ্ঠান নির্মাণকাজে কিংবা সরাসরি কোনো অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতে বাংলাদেশে তৈরি কোয়াডকপ্টার ব্যবহার করছে৷
ছবি: Getty Images
সাগরে ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা
কোয়াডকপ্টারের আরেকটি সম্ভাব্য ব্যবহারের কথাও জানান ইশতিয়াক৷ সাগরে ডুবে যাচ্ছে এমন কোনো ব্যক্তির কাছে কোয়াডকপ্টারের মাধ্যমে লাইফ জ্যাকেট ও ভেস্ট পাঠিয়ে তাঁর প্রাণ বাঁচানো যেতে পারে৷
ছবি: RoboticsBD
ঘরের কাজে রোবট
ভ্যাকুয়াম ক্লিনার সহ ঘরের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে এমন সব রোবট ডেভেলপ করতে গবেষণা করছেন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা৷
ছবি: AP
অনলাইনে রোবট তৈরির যন্ত্রপাতি
রোবটিক্সবিডি ডটকমে (http://store.roboticsbd.com/) গেলে রোবট তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো পাওয়া যাবে৷ আগে এসব বিদেশ থেকে আমদানি করতে হতো৷
ছবি: store.roboticsbd.com
শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়ছে
ইশতিয়াক জানান, সাইট চালুর শুরুর দিকে অর্থাৎ ২০১২ সালে তেমন একটা ব্যবসা করতে না পারলেও পরের দুই বছরে বিক্রি বেড়েছে প্রায় দুইশো শতাংশ৷ এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘‘আজকাল শিক্ষার্থীরা ইউটিউব সহ অন্যান্য মাধ্যমে বিদেশে রোবট নিয়ে যেসব কাজ হচ্ছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারছে৷ ফলে তারাও এ বিষয়টির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে৷’’
ছবি: RoboticsBD
প্রশিক্ষণ
যারা রোবট বানানোর চেষ্টা করছেন তাদের আরেকটু সহায়তা করতে রোবটিক্সবিডি বেশ কিছু কোর্সও পরিচালনা করে থাকে৷
ছবি: RoboticsBD
8 ছবি1 | 8
বাস্তব আর ডিজিটাল জগতের মধ্য নেটওয়ার্কিং-এর আরেকটি উদাহরণ ‘আর-এইটিন উলট্রা চেয়ার' নামের এক কার্বন চেয়ার৷ সেন্সর-এর সাহায্যে বসার সময় চেয়ারের উপর চাপ নির্ণয় করা হয়৷ কয়েক'শ মানুষ এই সেন্সর-লাগানো চেয়ারে বসেছেন এবং এভাবে তারাও ‘স্রষ্টা' হয়ে উঠেছেন৷ ডিজিটাল ডিজাইনার রিড ক্র্যাম বলেন, ‘‘শুধু রেসিং কার তৈরির সময়ই সেন্সরের ব্যবহার হয় না৷ এই প্রযুক্তি আমাদের জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে৷ ইন্টারনেটে কিছু করলেই যেমন কেউ না কেউ তা টের পায়৷ খেলাধুলার ক্ষেত্রেও চারিদিকে সেন্সর লাগানো থাকে৷ এ ক্ষেত্রে লক্ষ্য ছিল সবচেয়ে হালকা চেয়ার তৈরি করা এবং ডিজাইন প্রক্রিয়ার সময় সবকিছু ‘অপটিমাইজ' করা৷''
এই উদ্ভাবক-জুটি মানুষ ও যন্ত্রের মধ্যে সীমা বার বার অস্পষ্ট করে তোলেন৷ ২০১০ সালে তাঁরা লন্ডনের ট্রাফালগার স্কোয়্যারে রোবট-দের বার্তা আকাশে প্রোজেক্ট করেছিলেন৷ সারা বিশ্বের ইউজাররা সেই সব বার্তা পাঠিয়েছিলেন৷ তারা আবার সেই বার্তা ভিডিও হিসেবে ফেরত পেয়েছিলেন৷ ফলে তারা বেশ সন্তুষ্ট হয়েছিলেন৷